জালিমের ফাঁসি হোক, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হোক, রাজাকারদের ফাঁসি হোক মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘তোমরা খাও, পান করো, তবে অপচয় করো না। ’
পহেলা মুহররম শরীফ, পহেলা বৈশাখ, পহেলা জানুয়ারিতে ভালো বা বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা ও খাওয়ানোর মধ্যে আলাদা কোনো ফযীলত বা বরকত নেই।
অথচ যে ব্যক্তি পবিত্র আশূরা শরীফ উনার বরকতময় দিন তার পরিবার পরিজনের জন্য ভালো খাদ্যের ব্যবস্থা করবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে এক বৎসরের জন্য সচ্ছলতা দান করবেন।
অতএব, প্রত্যেক বান্দা-বান্দি ও উম্মতের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো,
পবিত্র আশূরা শরীফ উনার বরকতময় দিন সাধ্যানুযায়ী ভাল খাদ্যের ব্যবস্থা করে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ রেযামন্দী ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করা।
আরবী বছর উনার প্রথম মাস পবিত্র মুহররম শরীফ।
আরবী বারটি মাস উনাদের মধ্যে যে চারটি মাস উনাদেরকে হারাম বা সম্মানিত বলে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে, পবিত্র মুহররমুল হারাম মাস উনাদের মধ্যে অন্যতম। আসমান-যমীন সৃষ্টিকাল হতেই এ মাসটি বিশেষভাবে সম্মানিত হয়ে আসছে। আর এ পবিত্র মাস উনার ১০ তারিখটি পবিত্র আশূরা শরীফ হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত ও সম্মানিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘যে ব্যক্তি পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন তার পরিবার পরিজনের জন্য ভালো খাদ্যের ব্যবস্থা করবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে এক বৎসরের জন্য সচ্ছলতা দান করবেন। ’
এ প্রসঙ্গে একটি ওয়াকিয়া বর্ণিত রয়েছে, এক ব্যক্তি ছিলো গরীব ও আলিম।
একবার অসুস্থতার কারণে তিনি তিন দিন যাবৎ কাজ করতে পারলেন না। চতুর্থ দিন ছিল পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন। তিনি পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিনে ভাল খাওয়ার ফযীলত সম্পর্কে জানতেন। তখন ছিলো কাজী ছাহেবদের (বিচারক) যুগ। কাজী ছাহেব ধনী ব্যক্তি ছিলো।
তার কাছে পবিত্র আশূরা উনার ফযীলতের কথা বলে এবং নিজের অসুস্থতা ও পরিবারের অভুক্ত থাকার কথা এবং পবিত্র আশূরা উনার দিন ভাল খাওয়ার ফযীলতের কথা উল্লেখ করে দশ সের আটা, দশ সের গোশত ও দুই দিরহাম চাইলেন যে, ‘এই পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য হাদিয়া অথবা কর্জ হিসেবে দিন। ’ কাজী ছাহেব উনাকে যোহরের সময় আসতে বললো। যোহরের সময় কাজী ছাহেব বললো, আছরে আসতে। কিন্তু এরপরে আছরের সময় মাগরিব, মাগরিবের সময় ইশা এবং ইশার সময় সরাসরি নিষেধ করে দিলো। তখন গরিব আলিম ব্যক্তি বললেন, হে কাজী ছাহেব! আপনি আমাকে দিতে পারবেন না সেটা আগেই বলতে পারতেন, আমি অন্য কোথাও ব্যবস্থা করতাম।
কিন্তু তা না করে আমাকে সারাদিন ঘুরিয়ে এই শেষ মুহূর্তে নিষেধ করছেন? কাজী ছাহেব সেই গরিব, আলিম ব্যক্তির কথায় কর্ণপাত না করে ঘরের দরজা বন্ধ করে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো।
মনের দুঃখে আলিম লোকটি তখন কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলেন। পথে ছিলো এক খ্রিস্টানের বাড়ি। একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে কাঁদতে দেখে উক্ত খ্রিস্টান বয়স্ক ব্যক্তিকে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলো। কিন্তু বিধর্মী বিধায় খ্রিস্টানকে প্রথমে তিনি কিছু বলতে চাইলেন না।
অতঃপর খ্রিস্টানের অধীর আগ্রহের কারণে তিনি পবিত্র আশূরা শরীফ উনার ফযীলত ও নিজের বর্তমান অবস্থার কথা ব্যক্ত করলেন। খ্রিস্টান ব্যক্তি তখন উৎসাহী হয়ে উনাকে পবিত্র আশূরা শরীফ উনার সম্মানার্থে দশ সের আটা, দশ সের গোশত, দুই দিরহাম এবং অতিরিক্ত আরও বিশ দিরহাম দিলো এবং বললো যে, আপনাকে আমি পবিত্র আশূরা শরীফ উনার সম্মানার্থে প্রতিমাসে এ পরিমাণ হাদিয়া দিব। আলিম ব্যক্তি তখন তা নিয়ে বাড়িতে গেলেন এবং খাবার তৈরি করে ছেলে-মেয়েসহ আহার করলেন। অতঃপর দোয়া করলেন, “আয় আল্লাহ পাক! যে ব্যক্তি আমাকে সন্তুষ্ট করলো, আমার ছেলে-মেয়েদের মুখে হাসি ফোটালো, আয় আল্লাহ পাক! আপনি তার দিল খুশি করে দিন, তাকে সন্তুষ্ট করে দিন। ”
ওই রাতে কাজী ছাহেব স্বপ্ন দেখলো, স্বপ্নে কাজী ছাহেবকে বলা হচ্ছে, হে কাজী! তুমি মাথা উত্তোলন করো।
মাথা তুলে কাজী দেখতে পেলো যে, তার সামনে দুটি বেহেশতের বালাখানা। একটি স্বর্ণের আরেকটি রৌপ্যের। কাজী ছাহেব বললো, ‘আয় আল্লাহ পাক! এটা কি?’ গায়িবী আওয়াজ হলো, ‘এ বালাখানা দু’টি তোমার ছিলো। কিন্তু এখন আর তোমার নেই। কারণ তোমার কাছে যে গরিব আলিম লোকটি পবিত্র আশূরা শরীফ উপলক্ষে সাহায্যের জন্য এসেছিলেন তাকে তুমি সাহায্য করনি।
এজন্য এ বালাখানা দুটি এখন ওমুক খ্রিস্টান লোকের হয়েছে। ’ অতঃপর কাজী ছাহেবের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ঘুম থেকে উঠে ওজু ও নামায আদায় করে সেই খ্রিস্টানের বাড়িতে গেলো। খ্রিস্টান কাজী ছাহেবকে দেখে বিস্ময়াভুত হলো। কারণ কাজী ছাহেব খ্রিস্টানের পড়শি হওয়া সত্ত্বেও জন্মের পর থেকে এ পর্যন্ত কোনো সময় তার বাড়িতে আসতে দেখেনি।
অতঃপর খ্রিস্টান কাজী ছাহেবকে বললো, ‘আপনি এতো সকালে কি জন্য এলেন?’ কাজী ছাহেব বললো, ‘হে খ্রিস্টান ব্যক্তি! তুমি গত রাতে কি কোনো নেক কাজ করেছো?’ খ্রিস্টান ব্যক্তি বললো, আমার খেয়ালে আসে না যে, আমি কোনো উল্লেখযোগ্য নেক কাজ করেছি। তবে আপনি যদি জেনে থাকেন তাহলে আমাকে বলতে পারেন। তখন কাজী ছাহেব বললো, তুমি গত রাতে পবিত্র আশূরা শরীফ উপলক্ষে এক গরীব আলিমকে দশ সের আটা, দশ সের গোশত, দুই দিরহাম এবং তার সাথে আরো বিশ দিরহাম হাদিয়া করেছো এবং প্রতি মাসে উনাদেরকে এ পরিমাণ হাদিয়া দেয়ার ওয়াদা করেছো। খ্রিস্টান ব্যক্তি তা স্বীকার করলো। কাজী ছাহেব বললো, তুমি তোমার এই নেক কাজ এক লক্ষ দিরহামের বিনিময়ে আমার নিকট বিক্রি করে দাও এবং তুমি উনার সাথে প্রত্যেক মাসে যে ওয়াদা করেছ আমি উনাদেরকে তা দিয়ে দিবো।
’ খ্রিস্টান ব্যক্তি বললো, হে কাজী ছাহেব! আপনি কি জন্য এই সামান্য হাদিয়া করার বিনিময়ে আমাকে এক লক্ষ দিরহাম দিবেন সেটা স্পষ্ট করে বলুন? তখন কাজী ছাহেব তার স্বপ্নের কথা খুলে বললো যে, এই গরিব আলিম পবিত্র আশূরা শরীফ উপলক্ষে আমার কাছে সাহায্য চেয়েছিলো আমি তাকে সাহায্য করিনি। যার কারণে রাতের বেলা আমাকে স্বর্ণ ও রৌপ্যের দ্বারা তৈরি বেহেশতের দুটি বালাখানা স্বপ্নে দেখিয়ে বলা হচ্ছে, হে কাজী ছাহেব! ‘এ বালাখানা দু’টি তোমার ছিলো। কিন্তু এখন আর তোমার নেই। কারণ তোমার কাছে যে গরিব আলিম লোকটি পবিত্র আশূরা শরীফ উপলক্ষে সাহায্যের জন্য এসেছিলেন তাকে তুমি সাহায্য করনি। এজন্য এ বালাখানা দুটি এখন ওমুক খ্রিস্টান লোকের হয়েছে।
’ তখন কাজী ছাহেব বললো, তুমি তো খ্রিস্টান। তুমি তো এই বালাখানা পাবে না। কারণ, দ্বীন ইসলাম আসার পরে পূর্ববর্তী সমস্ত ধর্ম বাতিল হয়ে গেছে। কাজেই সেই ধর্মের উপর যারা থাকবে তারা জান্নাত লাভ করতে পারবে না। তখন খ্রিস্টান ব্যক্তি বললো, আমি যদি পবিত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি তাহলে কি এই বালাখানার মালিক হতে পারবো? তখন কাজী ছাহেব বললো, হ্যাঁ, তুমি যদি দ্বীন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করো তাহলে বালাখানা লাভ করতে পারবে।
তখন খ্রিস্টান ব্যক্তি বললো, হে কাজী ছাহেব, আপনি সাক্ষী থাকুন আমি এক্ষণি কালিমা শরীফ পড়ে মুসলমান হয়ে গেলাম। ” সুবহানাল্লাহ!
এখন ফিকিরের বিষয় যে, পবিত্র মুহররম মাস তথা পবিত্র আশূরা শরীফ উনাকে সম্মান করার কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত খ্রিস্টানকে ঈমান দিয়ে দিলেন এমনকি জান্নাত নছীব করলেন। সুবহানাল্লাহ!
যারা পবিত্র আশূরা উনার দিন রোযা রাখবে, তারা পবিত্র আশূরা শরীফ উনার রাত্রিতে ভালো খাদ্য খাবে। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার হিসেবে রাত্রি আগে আসে আর দিন পরে আসে।
বর্তমানে আমাদের দেশসহ অন্যান্য দেশে নববর্ষ উপলক্ষে বছরের পহেলা দিন যেমন- পহেলা মুহররম শরীফ, পহেলা বৈশাখ, পহেলা জানুয়ারিতে ভালো বা বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।
অথচ এর মধ্যে আলাদা কোনো ফযীলত বা বরকত নেই। আর এ দিন মুসলমানের জন্য কোনো আনন্দ বা খুশি প্রকাশেরও দিন নয়। বরং যারা মজূসী বা অগ্নিউপাসক কেবল তারাই খাছ করে নওরোজ বা নববর্ষ পালন করে থাকে অর্থাৎ বছরের পহেলা দিন উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে। সাথে সাথে হিন্দু ও বৌদ্ধরাও করে থাকে।
নববর্ষ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করা যেহেতু মজূসীদের খাছ রসম-রেওয়াজ তাই মুসলমানের জন্য এ দিনে আলাদাভাবে কোনো খুশি প্রকাশ করা এবং আলাদাভাবে কোনো ভালো বা বিশেষ খাবারের আয়োজন করা জায়িয নেই।
বর্ণিত রয়েছে- মহান আল্লাহ পাক উনার বিশিষ্ট ওলী হযরত ইমাম আবূ হাফস কবীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “কেউ যদি নববর্ষ উপলক্ষে একটা ডিমও ব্যয় করে তাহলে তার অতীত জীবনের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে।
কাফির-মুশরিক, বিধর্মী-বিজাতীয়দের তর্জ-তরীক্বা গ্রহণ ও পালন করা হতে বিরত থেকে পবিত্র মুহররমুল হারাম মাস ও পবিত্র আশূরা শরীফ উনাদের পবিত্রতা রক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলা উনাদের জন্য ফরয।
[সংগৃহীত। ] ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।