আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শয়তানের শয়তানি

আমি জানি আমি জানি না শয়তানের শয়তানি ও স্বর্গ হইতে বিদায় । । আল্লাহ আদমকে [কোরান ও বাইবেল বর্ণিত মানুষের আদি পুরুষ] প্রথম কেন সৃষ্টি করেছিলেন ? তাঁর কি কোন ইচ্ছা অপূর্ণ ছিল যার প্রয়োজনে তিনি আদমকে বানিয়ে তার মাধ্যমে সেই সাধ আহলাদ মেটাতে চেয়েছিলেন ? তা হলে তো তাঁকে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলা যায় না। তাঁর নিশ্চয়ই অতৃপ্ত কোন খায়েশ ছিল । যে জন্য তিনি মানুষকে তৈরি করার মনস্থ করেন ।

এতে এটাও প্রমানিত হয় মানুষ আল্লাহরই কোন প্রয়োজনের ফসল - মানুষকে ছাড়া তিনি সম্পুর্ণ হতে পারছিলেন না। সে হিসেবে আবার মানুষ আল্লাহরই একটি পার্ট বা অংশ । রবীন্দ্রনাথের ভাষায়- ‘আমায় নইলে ত্রিভূবনেশ্বর তোমার প্রেম হত যে মিছে , তাই তোমার আনন্দ আমার পর তুমি তাই এসেছ নীচে । সেই প্রয়োজনটা কি ? বিভিন্ন নবী ও রসুল এবং লিখিত মাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন যে- ‘মানুষ হ’ল আমার প্রতিনিধি’ [২: ৩০] তার কাজ হবে আল্লাহকে প্রশংসা ও মহিমা কীর্তণ করা । কিন্তু মানুষকে বানিয়েই তিনি সন্তুষ্ট থাকলেন না, – তাকে নিয়ে গেলেন আগুনে তৈরি জ্বীন জাতির কাছে ।

তাদেরকে বললেন –এই মাটির তৈরি মানুষের সামনে তোমরা নত হও । তারা ক্ষুব্ধ কন্ঠে প্রতিবাদ করলো- ‘এতকাল তো আমররাই তোমার প্রশংসা করেছি,মহিমা কীর্তণ করেছি । আবার মানুষের কি প্রয়োজন ,ওরা তো সেখানে গিয়ে মারামারি করবে,রক্তপাত হবে,অশান্তি করবে । ’ আল্লাহ তৎক্ষনাৎ তার সঠিক কোন জবাব দিতে পারলেন না, কেবল বললেন -‘আমি যা জানি তোমরা তা জান না । ’ আপন মহিমা কীর্তণ ও প্রশংসা করার জন্য মানুষ তৈরির অর্থ তিনি তোষামদ ভালোবাসেন ।

আমাদের ক্ষুদ্র মস্তিস্ক বোঝে না যে চাটুকারিতা তার এত পছন্দ কেন । এখানে আরেকটি প্রশ্ন , জ্বীনরা কি করে আগে থেকেই জানলো যে মানুষ পৃথিবীতে গিয়ে মারামারি কাটাকাটি রক্তপাত করবে ? যারা, আল্লাহ যা শেখাতেন তার বাইরে কিছুই জানে না , তারা আগাম জেনে গেল কি করে যে মানুষ পৃথিবীতে গিয়ে সেখানে অশান্তি করবে ? জ্বীনরা কি তবে ভবিষ্যৎ দ্রষ্টাও ছিল ? এই গুন তো কেবল আল্লাহর হওয়ার কথা । আল্লাহ ভবিষ্যৎদ্রষ্টা হলেও মনে হয় জানতেন না যে ইডেন উদ্যানে আদম একাকীত্বের সমস্যায় পড়বে । ফলে কিছুদিন পর তার জন্য সঙ্গী হিসেবে এক নারী বানালেন, বিবি ‘হাওয়া’- পৃথিবীর প্রথম নারী । আল্লাহ নিজ হাতে বেহেশ্তি মাটি দিয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে যাকে বানালেন ,সে ছিল পুরুষমানুষ ।

কিন্তু বিবি হাওয়াকে বানানোর সময় আর মাটি নয়, বানালেন সেই পুরুষের পাঁজরের হাড় নিয়ে । এইটা হল পৃথিবীর প্রথম অসাম্য । পুরুষ আল্লাহর নিজের তৈরি , আর নারীকে বানালেন পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্য, তারই পাঁজরের হাড় থেকে । পরবর্তীতে আমরা নারীর প্রতি আল্লাহর বিমাতাসুলভ আচরণ আরও দেখবো। যেমনটা মনে করা হয় ,মানুষকে পৃথিবীতে পাঠানোর জন্যই বানিয়েছেন ,তা কিন্তু না ।

আদম ও হাওয়া বানানোর পর তারা স্বর্গেই থাকতেন । মানুষকে পৃথিবীতে আনার কৃতিত্ব প্রধানত শয়তানের এবং কিছুটা সেই নারীর । প্রথমে আল্লাহ আদম ও হাওয়াকে ইডেন উদ্যানে নিয়ে ছেড়ে দিলেন,বললেন-‘তোমরা এখানে বসবাস কর ,যেখানে খুশী যাও,যা খুশী খাও ,কেবল এই বৃক্ষের [জ্ঞানবৃক্ষ] কাছে যেওনা,তার কোন ফল খেওনা । ’২:৩৫ কিন্তু শয়তান প্ররোচনা দিল এবং সেই প্ররোচনায় সাড়া দিয়ে নারী বিবি হাওয়া, বাইবেলে যার নাম ঈভ, সেই গাছের ফল খেল । এই নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ার কারণেই আমাদের এই পৃথিবীতে আসা।

জ্ঞানের স্পৃহা পুরুষের চাইতে নারীর বেশী তা এই ঘটনায় প্রমানিত হল । [ হালফিল পাকিস্তানের কিশোরী মালালা’র ঘটনাও সেই সাক্ষ্য বহন করে যে, নারীরা জ্ঞানের রাজ্যে অপাঙতেয় নয় বরং পুরুষের চাইতেও তারা বেশি আগ্রহী, জীবন দিয়ে হলেও তারা তা চায় । ] গন্ধম বৃক্ষের ঘটনায় এটাও প্রমানিত হল যে আদম ও হাওয়াকে পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি করে পাঠানো মোটেও পরিকল্পিত ছিল না । এটি ঘটনাচক্রে, শয়তানের কারসাজিতে হয়েছে , তাও কিছুদিনের জন্য। অর্থাৎ , আদম সৃষ্টি, তারপর তার জন্য হাওয়াকে তৈরি ,তাদের দুজনের স্বর্গবাস ,তারপর জ্ঞানবৃক্ষের ফল খেয়ে পাপের শাস্তি স্বরূপ পৃথিবীতে পাঠান –ইত্যাদি কোনকিছুই আল্লাহর পূর্বপরিকল্পিত ছিলনা ।

সবই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে , ঈশ্বরের দ্বিতীয় চিন্তা । তিনি ভাল পরিকল্পনাবিদও নন। মানুষের স্বর্গ হইতে বিদায় ও মর্তে আগমন সবই হল শয়তানের শয়তানি। ভাগ্যিস শয়তান এই কাজটি করেছিল এবং নারী প্রলুব্ধ হয়েছিল । সে কারনেই কত বিচিত্র ঘটনা ঘটল,বৈচিত্রপূর্ণ হল মানব জীবন ।

কেবলই যদি আল্লাহর গুন কীর্তণ , উদরপূর্তি এবং অনিঃশেষ সঙ্গম করাই হত জীবন- তাহলে ওই বেহেস্তি সময় কী বোরিংই না হত । পৃথিবীর প্রথম নারী এবং তার সেই শর্ত ভঙ্গ করার মধ্য দিয়েই আমরা পেলাম- বৈচিত্রপূর্ণ কোলাহল ভরা, জ্ঞানময় ,জীবনরসে ভরপুর এক মানব জীবন । তার ওই কৌতূহল ভরা জীবনজিজ্ঞাসাই আমাদের বাঁচিয়েছে- নইলে কি আমরা এই সুন্দর পৃথিবীতে আসতে পারতাম ! ভাবলে অবাকই লাগে, যদি পাপের শাস্তির তরেই ‘স্বর্গ হইতে বিদায়’ ,তবে পৃথিবী এত এত সুন্দর করে কেন বানিয়েছিলেন ? এখানে মানুষের আসা তো তাঁর পূর্বপরিকল্পনায় ছিল না । পৃথিবীটা তবে কার জন্য বানিয়ছিলেন । স্বর্গ কি এর চাইতেও সুন্দর ? ঠিক, -যে প্রথম থেকেই পৃথিবী মানুষের বাস যোগ্য অবস্থায় ছিল না ।

আল্লাহ সব প্রানীদের প্রাকৃতিক ভাবেই নিজেকে রক্ষা করার ব্যবস্থা করেছেন ,কেবল মানুষ ছাড়া । কেননা তার তো কোন প্ল্যানিং ছিল না মানুষকে পৃথিবীতে পাঠানোর। মানুষকে তার আপন বুদ্ধি খাটিয়ে এই পৃথিবীকে বাস যোগ্য করে নিতে হয়েছে । আজকের এই পৃথিবীর অনেকটাই মানুষের নিজের হাতের গড়া ।   ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।