আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আধুনিক রূপকথা : হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা

sorry vai আধুনিক রূপকথা হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা প্লাবন ইমদাদ চারদিকে পিনপতন নীরবতা। নগরীর রুই-কাতলাদের মুখে কোনো কথা নেই। গভীর ভাবনায় নিমজ্জিত সবাই। সমস্যার কূল-কিনারা না পেয়ে সবাই দিশেহারা। সামান্য সয়াবিন তেল কি না তিল তিল করে গড়ে তোলা রাজ্যের ভাবমূর্তিকে এভাবে ধূলিসাৎ করে দেবে! বহু গোলটেবিল, চোখাটেবিল, ত্রিকোণ চৌকোণ-টেবিল বৈঠক বসেছে।

লাভ হয়নি। তেলের এ তেলেসমাতির নাটের গুরুদের খোঁজ দিতে পারছে না কেউ। পাইক-পেয়াদা, মন্ত্রী-উজির, কোতোয়াল কেউ না। দিশেহারা হয়ে তাই সবাই একত্রিত হয়েছে এই চূড়ান্ত বৈঠকে। সয়াবিনের এ খেলার শেষ দেখতে বাইরে আমজনতা অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ।

সকাল গড়িয়ে দুপুরও যখন গড়াতে বসেছে, এমন সময় রুদ্ধদ্বার বৈঠকের নীরবতা ভঙ্গ করে হাজির হলো এক কিম্ভূতকিমাকার লোক। সবাই বিস্মিত। এ তো সাক্ষাৎ হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা। যার কথা রূপকথায় শুনেছে সবাই, কিন্তু বাস্তবে রক্ত-মাংসের জীবন্ত রূপ নিয়ে হাজির হবে এমনটি কখনো ভাবেনি। বৈঠকের প্রধান চোখ বড় বড় করে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানালেন।

আলখাল্লা পরা, নীল চোখের বাঁশিওয়ালা বিনয়ের সঙ্গে বললেন, 'আমি আপনাদের এই সয়াবিন সমস্যা থেকে রেহাই দিতে পারি। ' প্রধান বললেন, 'তুমি তো বাঁশির সুরে ইঁদুর তাড়াও। সয়াবিনের মূল্য অস্থিরতার মতো এমন জটিল একটা রাষ্ট্রীয় ব্যাপার সমাধান করবে কী করে?' মৃদু হেসে বাঁশিওয়ালা উত্তর দিল, 'একবার আমার উপর আস্থা রেখে দেখুন পারি কি না। ' প্রধান কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, 'এর বিনিময়ে তোমাকে কত স্বর্ণমুদ্রা দিতে হবে?' বাঁশিওয়ালা বলল, 'আমার কোনো স্বর্ণমুদ্রা লাগবে না। কেবল এইটুকু কথা দিলেই হবে যে, সমস্যা সমাধান হয়ে যাওয়ার পর সয়াবিনের মূল্য স্থিতিশীল রাখার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে সুষ্ঠুভাবে পালন করতে হবে।

কালবিলম্ব না করে এ প্রস্তাবে সবাই রাজি হয়ে গেল। বাঁশিওয়ালা রাজপথে নেমে ঝুলি থেকে বের করল কালো কুচকুচে আঁকাবাঁকা এক বাঁশি। আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কি যেন বলে বাঁশিতে ফুঁ দিল। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল এক অদ্ভুত সুর। দীর্ঘ রাজপথ ধরে এগিয়ে চলল বাঁশিওয়ালা।

নগরবাসীকে অবাক করে দিয়ে সেই সুরে পাগল হয়ে বিভিন্ন অলিগলি আর সুরম্য অট্টালিকা থেকে একে একে দৌড়ে নেমে আসা শুরু করল অমায়িক চেহারার ভদ্রবেশী সয়াবিন মজুদদাররা। এরা সবাই নগরবাসীর খুব পরিচিত মুখ। কেউ জনদরদি-দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ, কেউ আবার জনগণের দোয়াপ্রার্থী ব্যবসায়ী। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাঁশিওয়ালার পেছনে রীতিমতো মিছিল দেখা গেল। বাঁশির সুরে নাচতে নাচতে তারা এগিয়ে চলল নগরীর উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে।

নগরীর প্রায় শেষ মাথায় লাল দালানের বন্দিশালার ফটক ধরে সে মিছিল বাঁশিওয়ালাকে অনুসরণ করে প্রবেশ করল কারাগারে। সেদিনই সয়াবিনের মূল্য সুবোধ বালকের মতো শান্ত হয়ে গেল। কিন্তু সপ্তাহখানেক অতিক্রম না হতেই এক অদৃশ্য শক্তির বলে একে একে বেরিয়ে এল সেই মজুদদাররা। সয়াবিনের মূল্য আবারও রাতারাতি নাচন-কোদন শুরু করে দিল। বাঁশিওয়ালা খবর পেয়ে আবারও ছুটে এল।

এবার সে বের করল সবুজ রঙের বাঁশি। নতুন সুরে এবার মজুদদার নয়, ছুটে এল আমজনতা। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার মিছিল নিয়ে বাঁশিওয়ালা ছুটে চলল দূর পাহাড়ের দিকে। বিশাল পাহাড়ি ঝরনার পাড়ে আসতেই সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ল স্বচ্ছ পানিতে। পান করে চলল সেই সুস্বাদু পানি।

শেষে বাঁশিওয়ালা সবাইকে বলল, 'এই পানি পান করার ফলে আজ থেকে তোমাদের আর তরকারিতে তেল খেতে হবে না। তেলকে তোমাদের মনে হবে ক্ষতিকর। পানি দিয়ে ডিম পোচ করে খাবে। যেসব রান্নায় তেল ছাড়া চলেই না, সেখানে একপোয়া তেলের বদলে এক চামচ তেল দিয়েই কাজ সারবে। দেখবে সেই তরকারিতেও তোমাদের জিহ্বা খুঁজে পাবে অমৃতের স্বাদ।

' তারপর থেকে নগরবাসীকে আর সয়াবিন কিনতে হয় না। যারা আগে গ্যালনের পর গ্যালন তেল কিনত, তারাও এখন ছোট্ট শিশি নিয়ে দোকানে যায়। পোয়াখানেক সয়াবিন তেল কিনলেই মাস কাবার। ওদিকে মজুদদারদের মাথায় হাত। তারা এখন আর কী মজুদ করবে? Plaban Imdad Kaler Kantho (Ghorar Dim), 12 December, 2010 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।