আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান, প্রাণের আশা ছেড়ে সঁপেছি প্রাণ... প্রেম অমৃতধারা যতিই যাচি ততই করে প্রাণে অশণি দান।
যেখান থেকে খোঁজ পেলাম
আমার অতিপ্রিয়, ডাউনলোড পাগল এক ছোট ভাইয়ের হার্ডডিস্ক উপচে পড়ছে বলে কয়েক দিনের জন্য কিছু মুভি রুমমেটের সদ্য কেনা নোটবুকের গড়ের মাঠ হার্ডডিস্কে কপি করে রেখেছিলো। সেই ফোল্ডার ঘাটতে ঘাটতেই পাই সিনেমাটার খোঁজ। কুশীলব দেখেই আকৃষ্ট হয়ে মুভিটা দেখতে বসা।
কুশীলববর্ণন
জনি ডেপ, মিশেল ফাইফার, হেলেনা বনহ্যাম কার্টার্, ঈভা গ্রিন, ক্লোয়ি গ্রেস মোরেট্জ্, বেলা হীথকোট প্রমুখ।
পরিচালক টিম বার্টন। নিয়মিত সিনেমা দর্শকদের কাছে এদের কেউই তেমন অপরিচিত হবেন না; কেবল বেলা হীথকোট ছাড়া- ইনি নবাগতা অস্ট্রেলীয় অভিনেত্রী। এই সিনেমায় তার চরিত্র তিনটি- বালিকা বধু, বালিকা বধুর স্পিরিট এবং পূর্ণজন্ম প্রাপ্ত নায়িকা।
কাহানি সংক্ষেপ
কমেডি ফ্যান্টাসী হরর ঘরাণার এই সিনেমার কাহিনীতে নতুন কিছু নেই, এখান থেকে খানিকটা ওখান থেকে খানিকটা নিয়ে গড়ে পিটে নেয়া হয়েছে কাহিনী। সিনেমার আরম্ভ আঠারো শতকে লিভারপুল থেকে নয়া দুনিয়া পাড়ি দেয়া এক মাছ ব্যবসায়ী কলিন্স পরিবারের আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া নিয়ে।
এই পরিবারের একমাত্র উত্তরাধিকার বালক বার্নাবাস কলিন্স, এবং পারিবারিক ফরাসি হ্যান্ডমেইডের কন্যে অ্যাঞ্জেলিক এর আপত্য-প্রেমই কাহিনীর সকল সমস্যার উৎস। বার্নাবাস সুপুরুষ, পারিবারিক ঐতিহ্যে গরিয়ান, মার্জিত ভদ্রলোক; অধিকাংশ ললনাই তার জন্যে পরোক্ষে প্রত্যক্ষ্যে কামনার স্বপ্নজাল বুনতে থাকে। অ্যাঞ্জেলিকের মনে এই সব অসহনীয় ঈর্ষা বিষের অপদংশ হতে থাকে। অ্যাঞ্জেলিকের ব্লাক ম্যাজিকে পারদর্শীতা এবং বার্নাবাসের অপ্রতুল মনোযোগ সে ঈর্ষার আগুনে কেবল আরো বেশি জ্বালানি জুগিয়ে যায়। এইরকম চলতে চলতে বার্নাবাস সত্যি সত্যি একজনের প্রেমে পড়ে যায়- যোসেট্।
তারা বিয়ে করে- কিন্তু সুখ স্থায়ী হবার নয়; অ্যাঞ্জেলিকের ঐন্দ্রজালিক প্রতিহিংসায় মোহিত আত্ননিয়ন্ত্রনহীন যোসেট্ উইডোজ্ ক্লিফ থেকে ঝাপিয়ে পড়ে। বার্নাবাসও অসহনীয় কষ্টে সহগামী হয়, কিন্তু বিধিবাম- অ্যাঞ্জেলিকের অভিশাপে সে পরিনত হয় মৃত্যুহীন রক্তপিশাচে (অর্থাৎ কিনা ভ্যাম্পায়ার)। তারপর অ্যাঞ্জেলিকের প্ররোচনায় শহরবাসী বার্নাবাসকে লোহার কফিনে বন্দি করে সমাধিস্থ করে রাখে।
এর একশো ছিয়ানব্বই বছর পর, ১৯৭২ সালে, জনৈকা সুচরিতা ভিক্টোরিয়া উইন্টারস্ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে সুদূর নিউ ইয়র্ক থেকে কলিন্সপোর্টের সম্ভ্রান্ত কলিন্স পরিবারের ছোট ছেলে ডেভিডের গর্ভনেস পদে চাকরী নেবার আশায় সমুদ্রতীরের ঐ ছোট্ট শহরতলীতে গিয়ে হাজির হয়। বাড়ির তৎকালীন কর্ত্রী এলিজাবেথের সাথে সংক্ষিপ্ত বাক্যালাপেই কাজটা পেয়ে যায় সদ্য কৈশোর উত্তীর্ন ভিক্টোরিয়া।
বাড়িতে সাকুল্যে আছেন ছয় জন, তার মধ্যে বাড়ির মালি এবং ডেভিডের বাবা বাদে আরও দুটি উৎসাহব্যঞ্জক সদস্য আছেন- ডক্টর জুলিয়া হফম্যান, পারিবারিক মনোচিকিৎসক এবং ডেভিডের বোন অতিআদরে উচ্ছন্নে যাওয়া ক্যারোলাইন।
ক্যারোলাইনের চোখে তার ভাই ডেভিড মস্তিষ্কবিকৃত, কেননা সে মাঝে মাঝেই তার মৃত মায়ের আত্মার সান্নিধ্য লাভ করে থাকে; এমন কি কথাবার্তাও বলে। ডেভিডের নিজস্ব যুক্তি এ প্রসঙ্গে আবেগেই সীমাবদ্ধ, কিন্তু এসব জেনেও ভিক্টোরিয়া ডেভিডের পক্ষেই যুক্তি দেখাতে চায়। ডেভিডের এসব কারণেই ভিক্টোরিয়াকে গভর্নেস হিসেবে ভালো লেগে যায়। সেই রাত্রেই ক্যারোলাইনের দরজায় এসে দাঁড়ায় যোসেট্ এর প্রেতাত্মা।
এইভাবে দিন যাচ্ছে, মাছের ব্যবসায় কলিন্সদেরও সেই গমক আর নেই, নতুন এক কোম্পানি উঠে এসেছে ইদানিং; নাম- অ্যাঞ্জেল বে। এই রকম এক রাতে বিদ্যুৎ লাইনের কর্মীরা খন্দ খুঁড়তে গিয়ে পেয়ে যায় বার্নাবাসের লোহার কফিন। মুক্তি পাবার পর, বার্নাবাসের প্রায় দু'শো বছরের শোনিতপিপাসা মেটাতে প্রাণ যায় উপস্থিত সকল কর্মীদের।
বার্নাবাস এসে উপস্থিত হয় তার পুরোনো বাড়িতে। এর পর থেকেই সিনেমার জটমুক্তি আরম্ভ।
তাই কাহিনী বর্ণন এপর্যন্তই সীমাবদ্ধ রাখা যাক।
যেমন লেগেছে অভিনয়
সবচেয়ে ভালো অভিনয় অবশ্যই জনি ডেপের, তারপর মিশেল ফাইফার। বনহ্যাম কার্টার ছোট চরিত্রে যা যতটুকু দেবার দিয়েছেন। ঈভা গ্রিনকে খল চরিত্রে তেমন মানায় নি। ক্লোয়ি মোরেট্জ্ এই বয়সেই অনেক পরিনত অভিনেত্রী, কিন্তু এর জন্য বরাদ্দ চিত্রনাট্য কেমন যেন চরিত্রবিচ্ছিন্ন মনে হয়েছে বার বার।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাস্ট বলা যায় হীথকোটকে। যোসেট্ দ্যুপ্রে চরিত্রে লাজুক ইউরোপীয় চেহারা, ভিক্টোরিয়া চরিত্রে জটিল গোপনীয়তা লালনকারী উপরে শান্ত মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে রাখা নিউইয়র্কার হিসেবে মানিয়েও গেছে ভালোভাবেই। এর ভিক্টোরিয়া চরিত্রের আমেরিকান ইংরেজি উচ্চারণ সত্যই মনে ধরার মতো।
মোদ্দাকথা
বিনোদন, তাছাড়া আর কিছু খোঁজা ঠিক সফল হবেনা সিনেমাটা থেকে। কখনও কখনও বিরক্তির উদ্রেকও করতে পারে ডায়লগগুলো।
সত্তরের দশকের পোশাকআশাকও সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে কি না তা নিয়ে সন্দেহ তোলা যেতে পারে নি:সন্দেহে। ফাউ হিসেবে রক লেজেন্ড অ্যালিস কুপারকে গোটা দুয়েক গান গাইতে দেখা যাবে। এটা একটা পাওনা। অতি দূর্বল কৌতুকের চেষ্টা আছে কয়েকবার। এর বাইরে আর কিছু আছে বলে মনে হলো না।
দেখবেন কী না?
ব্যাটলশিপ(২০১২) দেখেছেন? ওটা দেখলে এটাও দেখতে পারেন। একেবারে অখাদ্য না।
আরও কিছু কথা: এটা আমার প্রথম মুভি রিভিউ+পোস্ট। ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
আরও আরও কিছু কথা: এটা ওয়াচে থাকাকালীন লেখা পোস্ট তাই আবার দিলাম।
রিভিউ আরো আসছে। রিসেন্টলি যে সব মুভি দেখে বিরক্ত লেগেছে তাদের রিভিউ-ই হবে!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।