আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জলের উপর বন - রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট

৪টা ডিঙ্গি নৌকায় বসে আছি ১১জন, মাঝিদের বৈঠার আঘাতে মৃদু দোলায় জল কেটে একটু একটু করে নৌকা এগিয়ে যাচ্ছে জলের উপর মায়াবী বনের দিকে। যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি আর মাঝে ঝোপ ঝোপ বন। মাথার উপর ঝুমমমম বৃষ্টি। গামছা-পলিথিন দিয়ে কোন রকমে ব্যাগ আর ক্যামেরা সুরক্ষা করে দিলাম ছাতা বন্ধ করে। বাড়িয়ে দিলাম দু’হাত বৃষ্টির; আর চোখ আকাশের পানে।

অসম্ভব ভালোলাগায় ভিজে গেলো চোখ। গাইলাম গান গুনগুন করে। এত ভালোলাগার মাঝেও মনের কোনে কোথাও কি একটু কষ্ট লুকিয়ে আছে?? এমন কেউ কি আমার নেই যাকে এত আনন্দের, ভালোলাগার অনুভূতিটা জানাতে পারি!! নেই মনেহয়... যাইহোক পিচ্চি মাঝি আমার দিকে তাকিয়ে এমন হাসি দিলো যার অর্থ এমন ‘পাগল’ জীবনে এই প্রথম দেখতেছে :-) গোয়াইঙ্ঘাট যাওয়ার পথে গাড়ীর গ্লাসে প্রতিটা ট্যুরেই একেকটা স্পেশাল স্মৃতি থাকে। ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকায় ঝুমমমম বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে হাওরের মাঝে রাতারগুলের স্মৃতি সেইরকমই যা জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত মনে থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পাঁচ বছর সিলেটে থেকেও কোনদিন জানা হয়নি এখানে রাতারগুল নামে একটা রিজার্ভ ফরেষ্ট আছে তাও সোয়াম্প ফরেষ্ট!! বছরের বেশিরভাগ সময় যার গাছগুলো অর্ধেক পানির নিচে থাকে ।

প্রথম আলোতে আর ফেসবুকে টুকটাক ছবি দেখে ক্রেজী ট্রাভেলার’রা একটু আড়মোড়া ভেঙ্গে নড়েচড়ে বসল। আরজু ভাই ফেসবুকে ইভেন্ট ক্রিয়েট করে ক্রেজী ট্রাভেলারদের সবাইকে আমন্ত্রন জানিয়ে দিল,তৈরি হয়ে গেলো দল। সিলেটের বিখ্যাত গুড়িগুড়ি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে নামলাম ভোর বেলায়। কোনরকম রুম ম্যানেজ করে ফ্রেশ হয়ে চলে গেলাম নাস্তায় ‘ইষ্টিমুটুম’ এ সাথে ছিল অতীতচারন। এরপর রওনা হয়ে গেলাম গোয়াইঘাটের দিকে।

বৃষ্টির থামার কোন লক্ষন নেই। কোথাও গুড়িগুড়ি কোথায় ঝুমঝুম বৃষ্টি। ভালোই লাগছিল। বৃষ্টি বরাবরই ভালো পাই কিনা ;-) আর যাত্রার মাঝের আড্ডাই হল ট্যূরের প্রধান আকর্ষণ। এর বর্ননা এখানে দেয়া যাবেনা হা হা ট্রলারে উঠার সময় বৃষ্টি তার আসল রুপ নিয়ে হাজির হলো।

সবাই ছইওয়ালা ট্রলারের নিচের কামরায় আশ্রয় নিলাম। প্রকৃতি নিজ হাতে গড়া সৌন্দর্য্যর বর্ননা করা আসলেই কঠিন। নয়ন জুড়িয়ে শুধু মনেই যা ধারন করা যায় যেখানে চোখ হলো ক্যামেরা আর মন হলো মেমোরি কার্ড। ধীরে ধীরে মনের মেমোরীকার্ড অসম্ভব ভালোলাগার কিছু ক্ষন আর স্মৃতি দিয়ে ভর্তি হতে থাকলো। আমাদের কমন-সেন্স যে আসলেই খুব কম তার আরেকটা জ্বলন্ত উদাহরণ পেলাম লোকালয় থেকে ২ঘন্টা দূরের হাওরের মাঝে।

যেখানে গাছের পাতা চুইয়ে জলের উপর টুপটুপ করে পানি পরার শব্দ আর বৈঠার ছলাত ছলাত শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ হবার কথা নয় সেখানে মানুষরূপী কিছু বানর বনের ভিতর ঢুকেই হাউকাউ শুরু করে দিল। কেন, কি কারনে যা এখনও বোধগম্য নয়। ইচ্ছা করতেছিল নৌকা থেকে নামিয়ে পানিতে চুবান দেই :-D যদিও দেয়া হয়নাই। উপায় না দেখে ওরা যেদিকে যায় আমরা তার উলটা দিকে ঘুরতে লাগলাম । সাত-আট ফিট পানির নিচে আর বাকি অংশ উপরে এরকম ঘন হিজল বনের মাঝে ঝুপ করে গাছগাছালির ডালপালার ফাঁক গলে ঢুকে গেলাম ভেতরে।

বাকীটা শুধুই মুগ্ধ হওয়া। ফেরার পথে আরেকটা সোয়াম্প ঝোপের ভিতর ঢুকে বন্ধ করে দেয়া হলো আমাদের ট্রলারের ইঞ্জিন। বাতাসের শনশন শব্দ, হাওরের পানির কুলকুল ধ্বনি আর গাছের পাতা থেকে পড়া পানির টুপটুপ শব্দ আর সাথে নিস্তব্ধ নীরবতা!! এর বেশী বর্ননা আর সম্ভব না; চোখ বন্ধ করলেই যা অনুভব করতে পারি এখনও। রাতের কীন ব্রীজ, সিলেট। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।