দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, জীবনটাই বদলে যাবে। নোয়াখালীর মজার কিছু প্রবাদ বাক্য (পর্ব ১)
আজকে আপনাদের নোয়াখালীর কিছু মজার প্রবাদ বাক্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো । যদি না বুঝেন সেই জন্য নিচে শুদ্ধ বাংলাতেও লিখে দিলাম
(১)
হেতে হুইসের হোন্দদি কুরাইল চালায়।
(হুইস- সুঁই, হোন্দেদি- গোড়াদি, কুরাইল- কুড়াল)
যেখানে অন্যের কাছে কোন কাজ করা অতি কঠিন মনে হয়, সেখানে অভিজ্ঞ লোক অতি সহজে তা সমাধা করতে পারে।
(২)
খানার আগ
দরবারের শেষ।
( খানার- খাওয়া, আগ- প্রথমে)
খেতে হবে আগে, রায় গুনতে হবে পরে। অভিজ্ঞ লোকেরা তা মেনে চলেন।
(৩)
ছৈয়ালের ভাঙ্গা ঘর
কবিরাজের নিত্য জ্বর।
( ছৈয়াল বাঁশ বেড়ার কারিগর)
ছৈয়াল এবং কবিরাজ সারা জীবন মানুষের উপকারে কাজ করে, অথচ নিজের অবহেলায় নিজের ঘরের প্রতি খেয়াল রাখেনা।
(৪)
চাচী,জেডি যতই ভালা মার মত নয়
চিড়া মুড়ি যতই খাওন ভাতের মত নয়।
(মায়ের মত আর কেউ নাই। অন্যেরা যত মহব্বতই দেখাকনা কেন মায়ের মত হবে না। )
(৫)
হরের হুত
কুত্তার মুত।
(হুত- ছেলে সন্তান, মুত- প্রসাব)
অপরের সন্তানের প্রতি নির্ভর করা যায়না যতটুকু আপন সন্তানের প্রতি করা যায়।
(৬)
আমনা হায়ন জায়গা
কুত্তা হালো বাগা।
(নিজের জায়গা নাই। অন্যের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়ে থাকে। অথচ কুকুর পালার ও শখ। )
(৭)
আগুনে মোম হানি
হেতেনের কাছে হেতি গেলে
ভুলি যায় বকনি।
(হানি- পানি, হেতেন- স্বামী হেতি- স্ত্রী, বকনী- গালী দেওয়া)
স্বামী স্ত্রীর সু-সর্ম্পক থাকলে পরিবারে কোন অশান্তি থাকে না।
(৮)
আমে ভাতে মিলি গেলে
বারাগা ভেটকাই রইছে।
(আপনে আপনে মিল হয়। আর অপর অমিল হয়। )
(৯)
ভাইয়ে ভাইয়ে বারা
এক বইনে জাল
আরেক বইনের গাল।
( ভারা- ভায়রা, ছোলায়- ঝগড়া করে, গাল- মুখের চেহারা)
ভাইয়ে ভাইয়ে আত্নীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হলে ও কোন ক্ষতি হলে বোনে বোনে ও ঝগড়া হয় এমনকি কঠিন আঘাত হানতে ও দ্বিধাবোধ করে না।
(১০)
মাইনেষের কুডুম আইলে গেলে
গরুর কুডুম লেইলে হুইসলে।
(আত্নীয়তার মধ্যে পরস্পর যাতায়াত থাকলে যেমনি আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায় তেমনি গরুর সম্পর্ক বুঝা যায় গরু যদি কাউকে জ্বীহবা দিয়ে লেহন করে। )
(১১)
জোয়ান্তী কালে দিলানা কা’ড়
শখ করি হিনতো
বুড়াতি কালে দিছে কা’ড়
চেঁছাই চেঁছাই আঁইটতো।
(কা’ড়-কাপড়(এখানে শাড়ী অর্থে), হিনতো- পরতো, আঁইটতো- হাঁটা, চেঁছাই- গড়াইয়া)
কেউ কাউকে সময়ের প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করে জিনিস পত্র না দিয়া অসময়ের দিলে তা নৈরাশ্যতাই প্রকাশ পায়।
(১২)
মাইচ্ছে টক্কা আঁর বোবা হুতে
বুইজবেন বেহাই আঁডাই নিতে।
একই অর্থে-
কাম দিচ্ছে আঁর কানা হুতে
টের হাইবেন বৌ আঁডাই নিতে।
( মাইরছে- জিতছে, আঁর- আমার, হুতে- ছেলে, আঁডাই- হাঁটাই)
দুই মুর্খ বেহাইর কথোপকথন । একজনের বোবা ছেলে অন্য জনের খোঁড়া মেয়ে। তবু ও তারা বিয়েতে খুশী।
(১৩)
হড়ি বউ রাজি থাইকলে
মোর্চা ধানের ও চাইল অয়।
( হড়ি- শাশুড়ী, মোর্চা- কাচা, অয়- হয়। )
পরিবারের মধ্যে শাশুড়ী বউয়ের মধ্যে মিল থাকলে সেই পরিবারে কখনও অশান্তি সৃষ্টি হয়না।
(১৪)
মাথাত থোয়না উনের ডরে
মাডিতে থোয়না হিমড়ার ডরে।
(থোয়না- রাখেনা, ডরে- ভয়ে। মাডিতে- মাটিতে, হিমড়া- পিঁপড়া)
সন্তানের প্রতি মাতার অতি আদর জনিত উভয় সংকট।
(১৫)
খুইজলে দেয়না একগা
তুপানে হড়ি গেলে
হিঁড়ে হিঁড়ে দেয়।
(কৃপণ লোকেরা সহজে কাউকে কিছু দিতে চায়না । কিন্তু যখন কোন কারণে কোন জিনিস নষ্ট হতে থকে তখন উপরি যেচে তাদিতে চায়। ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।