হ্যানিম্যান
এ পৃথিবীতে পিঁপড়েদের উদ্ভব হয়েছে বহু কোটি বছর আগে। এমনকি ডাইনোসরদের আবির্ভাবেরও অনেক পূর্বে। আজ থেকে প্রায় বিশ কোটি বছর আগে মধ্য এশিয়ার জলাভূমির কাছাকাছি সমতল অঞ্চলগুলোতে প্রথম পিঁপড়েদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। ক্রমান্বয়ে আবহাওয়া পরিবর্তনের সংগে সংগে এক দিকে যেমন পরিবেশের উষ্ণতা বাড়তে থাকে সাথে সাথে পিঁপড়েদের ব্যপকহারে বিস্তৃতি ঘটতে থাকে। জুরাসিকের প্রথমদিকে অর্থাৎ এখন থেকে প্রায় পনের কোটি বছর আগে নতুন ভূখন্ডের আবির্ভাব শুরু হয় এবং এশিয়া, ইউরোপ আর আমেরিকার মধ্যে সংযোগ ঘটে।
অনেক অনেক জলাশয়ের অবলুপ্তি ঘটে। সূর্যের তাপ বাড়ার পাশাপাশি পিঁপড়েদের সংখ্যা বেশি বেশি পরিমানে বেড়ে যায়। বৃহদাকারের সরীসৃ্প প্রাণীদের অবলুপ্তি ঘটে। নতুন নতুন ভূখন্ড সমুদ্রগর্ভে ঢুকে পড়ে। প্রকৃতির এতসব ভয়াবহ পরিবর্তনের পরেও পিঁপড়েরা এখনও পৃথিবীতে বেঁচে আছে।
বিশেষ করে পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ, মেক্সিকো মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায় পিঁপড়েদের প্রজাতির সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার। উত্তর আমেরিকায় নয়শ, ইউরোপে তিনশ, আফ্রিকায় চার হাজার, নিউগিনি, নিউব্রিটেন, নিউ আয়ারল্যান্ডসহ মেলানেশিয়ায় চারশ পঁচিশ, অস্ট্রেলিয়া এবং পোলেনেশিয়ায় দেড় হাজার প্রজাতির পিঁপড়ে আছে। পিঁপড়েদের একেকটি কলোনিতে পঞ্চাশ-ষাট হাজার পর্যন্ত পিঁপড়ে বাস করতে পারে। কলোনি বানাতে দশ-বারো বছর সময় লাগে। আর মাটি লাগে পঞ্চাশ- ষাট টন।
একবার এক কীটতত্ত্ববিদ এরকম একটা কলোনি অর্থাৎ পিঁপড়েদের গ্রাম খুঁড়ে বের করেছিলেন। সেটি ছিল দেড় মাইল লম্বা এবং প্রস্থেও সেরকম। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল পিঁপড়েদের সামাজিক প্রবণতা। গোষ্ঠীজীবণ এদের প্রাণ। একটা গোষ্ঠী বা দলে হাজার হাজার এমনকি লক্ষ লক্ষ পিঁপড়েরও বাস।
পিঁপড়েরা আপন সমাজে কাজের ধরণ অনুযায়ী বেশ কয়েকটি শ্রেণীতে বিভক্ত। এ গুলো হল – ছুতোর পিঁপড়ে, চোর পিঁপড়ে, রাখাল পিঁপড়ে, চাষী পিঁপড়ে, দাস পালক পিঁপড়ে, মল্ল পিঁপড়ে, ছিনতাইকারী পিঁপড়ে, সৈনিক পিঁপড়ে, ছত্রী পিঁপড়ে, জাহাজ পিঁপড়ে, ফসল কাটা পিঁপড়ে, পাতা কাটা পিঁপড়ে। মনে রাখবেন পিঁপড়েরা ক্ষুদ্র হলেও অনেকগুলো পিঁপড়েকে একটা ইউনিট হিসেবে ধরলে ইউনিটটাকে একটা বড় প্রাণীর সংগে তুলনা করা যেতে পারে। এই জীবটি সব শক্তিশালী প্রাণীর চেয়েও শক্তিধর। সবার চেয়ে বেশি সৃজনশীল এবং তুলনামূলকভাবে বেশি দীর্ঘজীবি।
যে সকল গুণ মানুষকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসিয়েছে তার প্রায় সবই পিঁপড়েদের মধ্যে দেখা যায়। শৃঙখলাবোধ হল সকল মানবিক গুণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। কর্তব্যবোধ থেকেই আসে শৃঙখলাবোধ। কর্তব্যবোধ যদি না-ই থাকে তাহলে আর সব গুণের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে বাধ্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।