আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিখ্যাতদের মজার ঘটনা- ১

১/ একবার রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের কাছে এক সাধু এসে উত্তেজিত স্বরে বলল,আমি ত্রিশ বছর সাধনা করে এখন হেঁটে নদী পার হতে পারি, আপনি কি সেটা পারেন ?পারলে করে দেখান দেখি ? স্মিত হেসে রামকৃষ্ণ বললেন,যেখানে এক পয়সা দিলেই মাঝি আমাকে নদী পার করে দেয় সেখানে এর জন্য ত্রিশ বছর নষ্ট করার পক্ষপাতি আমি নই ! ২/ ময়মনসিংহের ত্রিশালের দরিরাম পুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে দুখু মিয়া। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় রচনা এসেছে “বর্ষাকাল”। দুখু এমনিতেই অনেক ভালো ছাত্র। গত বার্ষিক পরীক্ষায়ও ক্লাসে সে প্রথম হয়েছিলো। এবারও তাকে ভালো রেজাল্ট করতে হবে।

তাই সে ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য পুরো রচনাটি লিখলো কবিতার আকারে। কিন্তু পন্ডিতমশাই খাতা পরে তো রাগে একেবারে ফেটে পড়লেন! “কি ?পরীক্ষার খাতায় মশকরা,রচনা তাও আবার পদ্যে,দাঁড়াও তোমার কবিতা গিড়ি ছুটাচ্ছি!”এই বলে তিনি দুখু মিয়াকে কড়া শাস্তি দিলেন আচ্ছামতন বেত্রাঘাত করে। দুখু মিয়াও কম যান না,তখুনি খাতাসহ হেডমাস্টার মশাইয়ের কাছে পন্ডিতমশাইয়ের বিরুদ্ধে নালিশ জানান। আত্নপক্ষ সমর্থন করে তিনি বলেন,“তিনি তো প্রশ্নপত্রের রচনাটাই লিখেছিলেন,রচনাটি গদ্যে নাকি পদ্যে লিখতে হবে তা তো বলা ছিলো না?”হেডমাস্টার সব শুনে বুঝলেন দুখু ঠিকই বলেছে,তিনি পন্ডিতমশাইকে পুরো নম্বর দিতে বললেন। কিন্তু ক্লাসে এসে পন্ডিতমশাই নাম্বার তো দিলেনই না বরং নালিশ জানানোর জন্য দুখুকে আবারো বেত্রাঘাত করলেন ।

এমনিতেই দুখু মিয়ার আত্মসম্মানবোধ ছিলো অত্যন্ত প্রখর,তার উপর দ্বিতীয়বার বিনা কারণে শাস্তি পেয়ে সে ছুটে বেড়িয়ে এলো ক্লাস থেকে। আর কখনোই অভিমানী দুখু আর ঐ স্কুলে যায়নি। তাঁর স্কুল জীবনের ইতি ঘটে এ ঘটনার মধ্য দিয়ে। আত্ম প্রত্যয়ী দুখু তারপর যোগদান করে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে। খুব বেশি পড়াশুনা করা সুযোগ হয় নি দুখু মিয়ার।

কিন্তু সেদিনকার সেই দুখু মিয়াই অল্প বিদ্যা নিয়ে বাংলা সাহিত্যে ঠিকই দখল করে নিতে পেরেছিলো নিজের আসন। হয়ে উঠেছিলো সবার প্রিয় কাজী নজরুল ইসলাম। ৩/ জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে জাগতিক নিঃসহায়তা জীবনানন্দ দাসকে মানসিকভাবে কাবু করেছিল এবং তাঁর জীবনস্পৃহা শূন্য করে দিয়েছিল। মৃত্যুচিন্তা কবির মাথায় দানা বেঁধেছিল। তিনি প্রায়ই ট্রাম দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কথা ভাবতেন।

তাঁর বন্ধুবান্ধবকেও এ ব্যাপারে বলতেন । কাকতালীয়ভাবে ১৪ই অক্টোবর, ১৯৫৪ তারিখে কলকাতার বালিগঞ্জে এক ট্রাম দুর্ঘটনায় তিনি আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীর মতে এ সময় দুই হাতে দুই থোকা ডাব নিয়ে ট্রাম লাইন পার হচ্ছিলেন কবি। ট্রামের ক্যাচারে আটকে তার শরীর দলিত হয়ে গিয়েছিল। ভেঙ্গে গিয়েছিল কণ্ঠা, ঊরু এবং পাঁজরের হাড়।

গুরুতরভাবে আহত জীবনানন্দের চিৎকার শুনে ছুটে এসে নিকটস্থ চায়ের দোকানের মালিক চূণীলাল এবং অন্যান্যরা তাঁকে উদ্ধার করে। ভর্তি করা হয় শম্ভূনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। চিকিৎসক ও সেবিকাদের সকল প্রচেষ্টা বিফলে দিয়ে ২২শে অক্টোবর, ১৯৫৪ তারিখে রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। গত এক শত বৎসরে ট্রাম দুর্ঘটনায় কোলকাতায় মৃত্যুর সংখ্যা মাত্র একটি। তিনি আর কেউ নন, কবি জীবনানন্দ দাশ।

৪/ ব্রিটিশদের বিপক্ষে ফরায়েজী আন্দোলনের নেতা হাজী শরীয়তউল্লাহ্ ২০ বছর মক্কায় কাটিয়ে ১৮১৮ সালে ফিরে আসেন ফরিদপুরে। যাত্রা পথে তার নৌকায় ডাকাতদল আক্রমণ করে এবং তার যথাসর্বস্ব লুট করে নিয়ে যায়। ডাকাতেরা যে তাঁর টাকা পয়সা নিয়ে গেছে তা নিয়ে তাঁর তেমন দুঃখ ছিলোনা। কিন্তু ডাকাতরা তাঁর কিছু মূল্যবান বই নিয়ে যায়। তিনি বই গুলোর মমতা কিছুতেই ছাড়তে পাড়লেন না।

ফলে বই এর মমতায় তিনি নিজেই মিশে গেলেন ঐ ডাকাতগুলোর সঙ্গে,হয়ে গেলেন ডাকাত। কিন্তু তারপরই ঘটালেন আশ্চর্য এক ঘটনা। ইসলামের বাণী প্রচার করলেন ডাকাতদের মাঝে। অশিক্ষিত ও মন্দ স্বভাবের ডাকাতগুলো শরীয়তউল্লাহর সংস্পর্শে এসে ধীরে ধীরে নিজেদের চরিত্রই বদলে ফেললো। তারা ছেড়ে দিলো ডাকাতি করা এবং শিষ্য হয়ে গেল হাজী শরীয়তউল্লাহর।

আর হাজী শরীয়তউল্লাহ্ও ফিরে পেলেন তাঁর মহামূল্যবান বই। ৫/ লক্ষ্মীপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাঁর বাড়ি। ফ্যাশনসচেতন এই অভিনেতা ফুলপ্যান্ট কী, তা বুঝেছেন এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার সময়। ১৯৮৫ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার আগে বাবা মকবুল হুদা একটা ফুলপ্যান্ট বানিয়ে দিয়েছিলেন। এর আগে তিনি লুঙ্গি আর শার্ট অথবা পাঞ্জাবি পরেই স্কুল করেছেন।

এইচ এস সি পরার জন্য আসলেন ঢাকাতে। ঢাকায় এসে গ্রামের এই ছেলেটি দেখলেন, খুবই কঠিন কাজ ভালো কলেজে চান্স পাওয়া। বিষণ্ন মনেই বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলেন। একটি কলেজেও তাঁর ভর্তির সুযোগ হয়নি। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করলেন।

এবার তাঁর মিশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। ঢাকায় এসে প্রথমে একটি মেসে উঠলেন। তারপর কোচিং শুরু করলেন। রামপুরার একটি মেসে থাকেন তিনি। সেখান থেকে হেঁটে হেঁটে ফার্মগেটে এসে একটি মেয়েকে পড়াতেন।

মেয়েটি ঠিকমতো পড়ত না। তাই একদিন ইচ্ছেমতন মারলেন মেয়েটিকে । এ জন্য মেয়ের মা ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে ঐ মুহূর্তেই বৃষ্টির মধ্যে তাঁর বাড়ি থেকে বেরে করে দিয়েছিলেন। এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিও হলেন । একদিন খবর পেলেন পূর্ণিমা কাগজে লেখালেখির সুযোগ আছে।

হয়ে গেলেন পুরো দস্তুর সাংবাদিক। পূর্ণিমা কাগজ থেকে তাকে পাঠানো হলো হুমায়ূন আহমেদের কাছে , ঈদসংখ্যার লেখা “১০০১ টি প্রশ্নে হুমায়ূন আহমেদ” নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু সে দিন তিক্ত এক অভিজ্ঞতা নিয়ে অফিসে এসে বললেন, ‘আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন। ’ বিকেল বেলা হুমায়ূন আহমেদের ফোন অফিসে।

‘সকালে যে ছেলেটি এসেছিল, তাঁর সঙ্গে আমরা খারাপ ব্যবহার করেছি। তাঁকে আবার পাঠাও। লেখাটা দিয়ে দিচ্ছি। ’এই হুমায়ূন আহমেদের অনুপ্রেরণাতেই সেই সাংবাদিক হয়ে উঠলেন “কোথাও কেউ নেই” নাটকের “মতি ভাই” এবং সাথে সাথে এদেশের জনপ্রিয় এক টিভি নায়ক হিসেবে। তিনি আর কেউ নন,তিনি হলেন মাহফুজ আহমেদ।

যিনি নিজের সম্পর্কে বলেছেন, “ভাবি, একসময় আমি ছুটতাম মানুষের পেছনে পেছনে সাক্ষাৎকার নিতে, এখন উল্টোটা হচ্ছে। নানা পত্রিকার সাংবাদিক কেউ ছবি তোলেন, কেউ বা নানা প্রশ্ন করেন...সত্যি অতীতের সেসব দিন স্মরণ করে পুরোটাই কেমন অবিশ্বাস্য মনে হয়”। ৬/ এক দ্বাদশবর্ষীয় বালক অসাধারণ অভিনয় করল। অভিনয় দেখে আর্থার কোনান ডয়েল মুগ্ধ। ছেলেটিকে কাছে ডেকে বললেন, তুমি লেগে থাকো।

তোমার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। বালকটি বলল, স্যার, আমি খুব গরিব। আপনার এক বছরের উপার্জন যদি এখন আমায় দেন, তাহলে আমার আগামী পাঁচ বছরের উপার্জন আপনাকে দিতে রাজি আছি। কোনান ডয়েল মুখে বিরক্তি প্রকাশ করলেন। ছেলেটি পরে আমেরিকায় গেল।

এক বছর পর তার উপার্জন কোনান ডয়েলের উপার্জনকে ছাড়িয়ে গেল। ছেলেটি চার্লি চ্যাপলিন। ৭/ দার্শনিকদের কাজ-কারবারই ছিল অন্য রকম। উল্টোভাবে বলা যায়, এ রকম কাজ-কারবার করতেন বলেই তারা দার্শনিক ছিলেন। বিখ্যাত দার্শনিক প্লেটো একবার মানুষের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘মানুষ হচ্ছে পালকবিহীন দ্বিপদ একটি প্রাণী।

’ এই সংজ্ঞা শুনতে পেয়ে আরেক দার্শনিক ডায়োজেনিস একটি মুরগি জবাই করে সবগুলো পালক ফেলে দিয়ে প্লেটোকে পাঠিয়ে দিলেন। সঙ্গে একটি কাগজে লিখলেন, ‘এটাই তোমার সংজ্ঞায়িত মানুষ। ’ ৮/ সন্ধ্যা রাতে বাতী জ্বালিয়ে বই পড়ছে ছেলেটি। হঠাৎ তেলের অভাবে কুপিটি গেল নিভে। ছেলেটি তো চিন্তায় পড়ে গেল।

কি করবে এখন। এমন সময় সে দেখতে পেল একজন প্রতিবেশীর রান্নাঘরের জানালা দিয়ে বাইরে কিছু আলো বেরিয়ে আসছে। ছেলেটি করলো কি,সঙ্গে সঙ্গে বইটি নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে সেই আলোকিত জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে একমনে বইটি পড়তে লাগলো। এমন সময় সেই ঘরের কর্ত্রী জানালা দিয়ে কিছু গরম পানি বাইরে ফেললেন। আর অমনি এক আর্ত চিৎকার।

চিৎকার শুনে সবাই ছুটে এলো। দেখলো ছেলেটির শরীরে গরম পানি পড়েছে আর ছেলেটি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। এটা দেখে সবাই যেমন আশ্চর্য হলো তেমনি মর্মাহতও হলো। গৃহকর্ত্রী ছেলেটির গায়ে ঐষধ লাগিয়ে দিয়ে বললেন, “বাছা তোমার পড়াশুনার জন্য যত তেলের দরকার,সব খরচ আজ থেকে আমি দেব। তুমি লেখাপড়া চালিয়ে যাও।

লেখাপড়া করে অনেক বড় হও”। ছেলেটি আর কেউ নয়,তিনি পারস্য কবি শেখ সাদী । ৯/ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন গেছেন ময়মনসিংহে তাঁর গ্রামের বাড়ি বেড়াতে। গ্রামের এক মুরব্বি দেখা করতে এসে জয়নুলকে বললেন, “কিরে তুই নাকি বড় শিল্পী হইছস?দে তো আমার ছাতিটায় নাম লেইখ্যা?”জয়নুল আবেদীন খুব যত্ন করে এবং সময় নিয়ে ছাতায় নাম লিখে দিলেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে এ ঘটনা রাষ্ট্র হয়ে গেল গ্রামময়।

ব্যস,আর যায় কোথায়,গ্রামের প্রায় সবাই যার যার ছাতা নিয়ে হাজির। আর শিল্পাচার্য কি করবেন,অসীম ধৈর্যের সাথে প্রায় সবার ছাতাতেই নাম লিখে দিয়েছিলেন সেবার। ১০/ ১৭৯৯ সালে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধরত ছিলেন নেপোলিয়ান বেনোপোর্ট। একদিন তিনি সহকারীদের বললেন,১২০০ তুর্কি বন্দীকে মুক্তি দিতে। কিন্তু আদেশ দেয়ার ওই মুহুর্তেই বেদম কাশি শুরু হয় তাঁর।

বিরক্ত হয়ে বলেন,“মা সাকরি তাকস”(কি বিদঘুটে কাশি)। সহকারীরা ভুলে শুনলেন,“মাসাকরি তাওস”(হত্যা করো সবাইকে)। সেদিন সামান্য কয়েকটি শব্দের হেরফেরে প্রাণ গিয়েছিলো ১২০০ বন্দীর। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।