আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভোটের পরে রোহিঙ্গাদের নির্যাতন

আমি একজন পর্যটন কর্মী। বেড়াতে, বেড়ানোর উৎসাহ দিতে এবং বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি। চরম মানবিক বিপর্যয়ের কবলে পড়েছেন রোহিঙ্গা মুসলিমরা। লাখখানেক রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইট ওয়াচের স্যাটেলাইট থেকে তোলা এক ছবিতে দেখা যাচ্ছে পুড়ে মাটিতে মিশে গেছে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উপকূলীয় চাওপিউ এলাকা।

মিয়ানমার সরকারের একজন মুখপাত্র এ ছবির সত্যতা স্বীকার করলেও রোহিঙ্গাদের জন্য কিছুই করছে না বলে বিবিসির ডেভিড লয়েন জানিয়েছেন। এ দিকে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের ঢুকতে বাধা দিচ্ছে। সীমান্তে পাহারা জোরদার করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা: দীপু মণি জানিয়েছেন, সরকার সীমান্ত খুলবে না। গতকাল জাতিসঙ্ঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) বাংলাদেশ সীমান্ত রোহিঙ্গাদের খুলে দেয়ার কথা বলেছেন।

তবে সরকার এ বিষয়ে সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইতিবাচক কোনো মনোভাব দেখায়নি। বর্তমানে সরকারি হিসাবে ২৫ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছেন। এর বাইরে আরো হাজার হজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে বলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে। এ রকম পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের দেশে জায়গা দিতে সরকার রাজি নয়। তবে তাদের মানবেতর জীবনযাপন ও হত্যা-লুণ্ঠন-নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের সহমর্মি অবস্থান কামনা করেছে।

প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, আরাকানের মুসলিমরা আশা করেছিলেন তারা সে দেশের জাতীয় আবাসিক সার্টিফিকেট পেতে যাচ্ছেন; কিন্তু বাস্তবে তাদের বিরুদ্ধে চলেছে জাতিগত দাঙ্গার সুযোগে সামরিক জান্তাদের সহায়তায় ভিন্ন ধর্মের লোকদের আক্রমণ। গত জুন মাসে একজন বৌদ্ধ নারীকে ধর্ষণের কথিত অভিযোগে রোহিঙ্গাদের ওপর আক্রমণ হয়। তবে গত সপ্তাহে সে দেশে নতুন করে যে দাঙ্গার সূত্রপাত সে সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য মেলেনি। বিবিসির বিশ্লেষক ডেভিড লয়েন বলছেন, এটি একটি জাতিগত নির্মূল চেষ্টা বলেই তার মনে হয়েছে। তিনি এও বলছেন, সেখানকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের রক্ষায় দেশটির সরকারের চেষ্টা যথেষ্ট নয়।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর হলোÑ সামরিক জান্তাদের মদদপুষ্ট রাজনৈতিক ইউএসডিপিকে সর্বশেষ নির্বাচনে জেতানোর জন্য সেখানকার মুসলমানদের স্বল্পমেয়াদি নাগরিক সনদ দেয়া হয়েছিল। এতে সেখানকার মুসলিমরা মনে করেছিলেন, তাদের বহুদিনের দাবি বোধ হয় এবার মেনে নেয়া হবে; কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। বরং নির্বাচনের কয়েক মাসের মাথায় তারা আবার আক্রান্ত হলেন। প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। এখানে প্রায় সঙ্ঘাত হয়ে থাকে এবং বৌদ্ধদের হাতে রোহিঙ্গারা মার খান।

জাতিসঙ্ঘের হিসেবে তারা বিশ্বের অন্যতম নির্যাতিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে চিহ্নিত হলেও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। স্থানীয় সংবাদদাতাদের উদ্ধৃত করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম যে সব খবর প্রচার করছে তাতে দেখা যাচ্ছে, রাখাইন প্রদেশের যে আট লাখ মুসলিম বাস করেন, তাদের বিরুদ্ধে কেবল সরকার নয় স্থানীয় বৌদ্ধধর্মীয় গুরুরাও দাঙ্গা উসকে দিচ্ছে। বর্মা অঞ্চলের জাতিগত সঙ্ঘাত নিয়ে কাজ করেন ল্যারি চাগান। তাকে উদ্ধৃত করে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, বৌদ্ধ ভিক্ষুরা মনে করে মালয়েশিয়া এক সময় বৌদ্ধদের দেশ ছিল। কিন্তু সেখানে ক্রমেই মুসলমানরা বেড়ে গিয়ে সেটি এখন ইসলামিক দেশে পরিণত হয়েছে।

বার্মায় মুসলিমদের অর্থাৎ রোহিঙ্গাদের মেনে নেয়া হলে এবং তাদের বংশ বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে দেশটি একই রকম হয়ে যেতে পারে। ল্যারি বলছেন, বার্মায় রোহিঙ্গারা অত্যন্ত কষ্টকর জীবনযাপন করছেন, তাদের নির্ধারিত চৌহদ্দির বাইরে যেতে দেয়া হচ্ছে না। এর কারণ তারা মসুলিম ও তাদের ভাষা বাংলা। এমনকি তারা রেঙ্গুনেও যেতে পারেন না। তাদের এলাকায় কোনো স্কুল পর্যন্ত নেই, এতে করে রোহিঙ্গা শিশুরা শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না।

তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে বার্মা স্বাধীন হওয়ার পর আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গারা ছিল না বলে দাবি করে সেখানকরা বৌদ্ধরা। অন্য দিকে রোহিঙ্গারা নিজেদের বর্তমানের রাখাইন রাজ্য যা আগে আরাকান হিসেবে পরিচিত ছিল তার ভূমিপুত্র বলে দাবি করেন। এর কোনো সমাধান এখন পর্যন্ত না হওয়ায় এ সঙ্কট টিকে আছে। ল্যারি বলছেন, সেখানে মুসলিমরা এতটাই নিপীড়নের শিকার যে তারা বিয়ে পর্যন্ত করতে পারেন না। তাদের বিয়ে করতে হলে বাংলাদেশে এসে বিয়ে করে যেতে হয়।

আবার বিয়ে করে বার্মায় ঢোকার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের অভিভাসন আইনে আটক করে। এ রকম এক সঙ্কটময় কাল অতিক্রম করছে বার্মার রোহিঙ্গারা ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।