ছবি কোন কিছুর সংখ্যা বাড়লে মন আনন্দে নেচে উঠে। যেমন বেতন বাড়লে, খেলায় বাংলাদেশের রান বাড়লে, দাওয়াতে খাবারের আইটেম বাড়লে,পরীক্ষায় নাম্বার বাড়লে। কিন্তু একটা জিনিস বাড়লে মন খুব খারাপ থকে আর সেটা হল মৃতের সংখ্যা। যখন মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকে তখন কষ্টের পরিধিও বেড়ে যায়। আজ গোটা বাংলা জুড়ে সেই কষ্ট।
রানা প্লাজায় যে দুর্ঘটনা ঘটল তা সত্যি মর্মান্তিক। এখন লাশ মিলছে শেষ পর্যন্ত কততে গিয়ে থামে তা বলা মুশকিল। দুর্ঘটনায় মৃত্যু বাংলাদেশের জন্য নতুন কিছু না। সমাজের উচু স্তরের মানুষগুলোর সামান্য ভুলে হাজার হাজার সাধারন মানুষের জীবন চলে যায়। আর গার্মেন্টস শিল্পে দুর্ঘটনা এখন একটা শিল্পে পরিনত হয়েছে।
আগুনে মরে, আগুনের গুজবে পদতলিত হয়ে মরে, এখন বিল্ডিং ধসে মরে। সত্যি মৃত্যু এখন শৈল্পিক। আমরা এখন আর মৃত্যু কেন্দ্রিক থাকি না। অপেক্ষায় থাকি যে কোন মন্ত্রী কিভাবে এই ঘটনা ব্যাখ্যা করবে। শ্রদ্ধেয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আইনমন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী।
তবে আমাদের মানতেই হবে যে আমরা জাতি হিসেবে গর্বিত যে আমরা এমন একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পেয়েছি। আগেরজন ও যে খারাপ ছিল তা নয়। তিনি এমন একটা তথ্য দিলেন যে স্বয়ং আজরাইল ও তার কাছে নির্দোষ। বিরোধীদলের লোকজন নাকি ভাঙ্গা পিলার ধরে নাড়িয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে (সুত্র বিবিসি বাংলার খবর ২৪.০৪.১৩ )। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যখন বলে “ওখানে যারা মারা গিয়েছে তারা মালামাল সরাতে গিয়েছিল।
মৃতের সংখ্যা খুব কম” তখন আর বলার কিছুই থাকে না। এর আগে ২০১২ এর নভেম্বরে তায্রিন ফ্যাশনের ১১১ জনের নিহত হওয়াকে সরকার দেখেছে নাশকতা হিসেবে। তার চারদিন পর ঢাকার দক্ষিন লালখানে গার্মেন্টসে আগুন লাগল আর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলল যে এটা বিরোধীদলের চক্কান্ত্র। আরে বাবা সব ই যদি চক্রান্ত হয় তাহলে প্রমান কর। সারা বাংলার মানুষকে জানিয়ে দে যে কারা এই নিরিহ মানুষ মারছে , লাশের রাজনিতি করছে।
আসলে তাদের বিবেচ্য বিষয় নিজে ক্ষমতায় আরোহণ আর বিরোধীদলকে সকল দোষে দোষীকরন। ইস! কেনজে সেরা উক্তিদাতাকে অস্কার কিংবা নোবেল দেওয়া হয় না। তাহলে এই দেশের মন্ত্রী এম্পি কিংবা তাদের পিএস গন এই পুরস্কার পেত। ভবন ধসের পর সাধারন মানুষ সবার আগে ছুটে গেছে সেখানে, কোন মন্ত্রী জায়নি, রক্ত লাগবে ঘোষণা আসতে দেরি- প্রচণ্ড রোদে দাঁড়িয় শত শত মানুষ রক্ত দিয়েছে শুধু মানবতার খাতিরে । মৃত্যুর মিছিল দেখে সবচেয়ে কষ্ট পেয়েছে সাধারন জনগন।
যারা এই শৈল্পিক মৃত্যুর শেষ চায়। কারন তারা খেটে খায় আর তারা জানে যে তাদের বেচে থাকতে হলে মৃত্যু কে শৈল্পিক ভেবেই মানতে হবে। আর এক দিক দিয়ে ভালো হল আবারও পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ শিরোনাম হল তার বুকে শৈল্পিক মৃত্যু দেখিয়ে। কারে বোঝাব আর কার কাছে বিচার চাইব? বাড়ি থেকে ডেকে এনে এতুগুল মানুষ হত্যা করে যদি কেউ পার পেয়ে যায় তাইলে তো সেই আলেকজেন্দারের ভাষায় “ সেলুকাস বড় বিচিত্র এই দেশ” ............ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।