ইইইইয়েয়েয়েয়েয়েয়ে!! পেয়েছি আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর (মনে হয়) উপহার, নাইকন ডি৩২০০!! বাবা, তুমি এত ভালো কেন?? কী দরকার এত ভালো হওয়ার? কেন আমাকে বারবার বাধ্য কর তোমাকে আরও, আরও বেশি ভালবাসতে? কেন কিছু বলার আগেই সব বুঝে নাও?
খাওয়া-ঘুমানো-বই পড়া ছাড়া আর একটা জিনিস, যেটাকে আমি ভালোবাসি, সেটা হচ্ছে ছবি তোলা। আমি খুব ভালো ফটোগ্রাফার নই, ফটোগ্রাফি আমার হবিও নয়। শুধু আমার বোনের ছবি তুলতেই আমার ভাল লাগে। আমাদের ক্যামেরাটার ওপর শুধু আমারই একচ্ছত্র আধিপত্য। সেই ক্যামেরাটা যখন এক মাস আগে ছিনতাই হয়ে গেল, আমার মন খুব খারাপ হয়ে গেল।
এই ক্যামেরাটা আমি বহু কষ্টে নেট ঘাটাঘাটি করে বের করেছিলাম, মাত্র দশ মাস বয়স। কিন্তূ সে দেখতে কী সুন্দর ঝকঝকা নীল রঙের!! কোথাও যদি একটা ছবি তোলার সুযোগ থাকত, তাহলে আমার ক্যামেরার ডাক পড়ত। কারণ আমার ক্যামেরাটার চেয়ে ভালো ক্যামেরা আর ছিল না।
ক্যামেরা-মোবাইল-আইপড আমার স্হাবর সম্পত্তি। মোবাইল-ক্যামেরা হারিয়ে আমি কপর্দকশূন্য।
মাঝে মাঝে বিকাল-সন্ধ্যার হুমায়ূন আহমেদের কন্যা সুন্দর আলোতে ক্যামেরাটাকে মিস করতাম। অথবা ফিজিক্স পরীক্ষার সময় ক্যামেরা পড়ার সময় খালি একটু চিৎকার করে গলা ফাটিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছিল, এছাড়া ক্যামেরার আমার কোনো প্রয়োজনই ছিল না।
কিন্তু মনে হয় ক্যামেরা হারিয়ে আমি যত না কষ্ট পেয়েছি, বাবা তার চেয়েও বেশি কষ্ট পেয়েছে। তার জন্মদিনের দিন সে কেক কাটল না-কারণ কেকের ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা নেই। তাই বাবা যখন আমাকে দুইদিন আগে বলল যে নেট ঘেটে আরেকটা এইচডি ক্যামেরার মডেল বের করে দিতে, আমি আরচোখে আম্মুর দিকে তাকিয়ে জোরগলায় প্রতিবাদ করলাম।
কারণ আমি নিশ্চিত ওমরাহ করে, কাজিনের বিয়ে দিয়ে আম্মুর এখন অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। তারওপর বাবা কিনবে ইয়া বড় জাম্বো সাইজের গরু, এরমধ্যে ক্যামেরা কিনার কোনো মানেই হয় না। তাই বুকে পাথর চেপে আম্মুর মুখ চেয়ে আমি বললাম যে ক্যামেরা ছাড়াই আমি বেশ ভালো আছি। বরং আমি পরীক্ষার পরেই একটা ক্যামেরা কিনব। এবার আর সাইবার শট-ফট না, কিনব তো ডিএসএলআর।
বলেই বাবাকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ফুরুৎ করে পালিয়ে চলে এলাম।
দুইদিন বাবার এই ব্যাপারে কোনো সারাশব্দ নাই। আমিও ক্যামেরার কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে এদিক-সেদিক ঘুরঘুর করছি। আজকে রাতে আর কোনো কাজ না পেয়ে পা দুলিয়ে ক্রনিকেলস অফ নার্নিয়া দেখছি, এমন সময় বাবা এসে ফরমান জারি করল- আজকে আমরা কেউ রাত দুইটার আগে ঘুমাতে পারব না। আমি আর্লি রাইজার নই, রাত দুইটা মানে আমার কাছে মাত্র সন্ধ্যা।
কিন্তু তাও আজকেই কেন যেন প্রচুর ঘুম পাচ্ছিল। বহুকষ্টে পৌনে দুইটা পর্যন্ত বসে বসে কবি পড়ার চেষ্টা করলাম। তারপর আর থাকতে না পেরে আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম যে আমরা কী পনের মিনিট আগে ঘুমাতে পারি? কিন্তু বাবা তো আমাদেরকে ঘুমাতে দিবেই না, আবার বলল যে আরও নাকি আধঘন্টা লাগবে এবং আমি যেন আম্মুকে কষ্ট না দিয়ে তার জন্য এক কাপ কফি বানিয়ে আনি।
এইবার আমি সত্যি সত্যি মহা চিন্তায় পরে গেলাম। বাবার এত ফুর্তির কারণ কী হতে পারে? আমার বোন আশঙ্কা প্রকাশ করল যে নির্ঘাত রাত দুইটার পরে ডাউনলোড স্পিড বেড়ে যাবে, তখন নাকি আমাকে বাবার পছন্দসই অন্য কোনো মুভি ডাউনলোড করতে হবে।
এই ভয়ে একবার ভাবলাম ঘুমের ভান ধরে মটকা মেরে পড়ে থাকব নাকি, পরে মনে হল দেখি না বাবার ফন্দিটা কী। ঘুরতে ঘুরতে এমন সময় ফেসবুকে দেখি চাচাতো বোনের স্ট্যাটাস- চাচাতো ভাই যে গরু কিনেছে, সেই গরু এসে পৌঁছে গিয়েছে, কিন্তু এখনও চাচাতো ভাই এসে পৌঁছতে পারে নি। তার নাকি এখনও আধ ঘন্টা লাগবে ঢাকা থেকে আসতে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আমার এই চাচাতো ভাই একজন পেশাদার ফটোগ্রাফার।
সাথে সাথে আমি দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে ফেললাম।
নিশ্চয়ই বাবা তাকে দিয়ে ক্যামেরা আনাচ্ছে। কিন্তু আমার মনের এই সুপ্ত আশার কথা কাউকে বললাম না। একটু পরে দেখি বাবা লাফায় লাফায় নিচে চলে গেল। আমিও বাপকা বেটা, তিন গোয়েন্দা পড়ে পড়ে ভাত খেয়েছি, ঘাস খাইনি। আমিও এক দৌড়ে চলে গেলাম বারান্দায়।
গিয়ে দেখি বাবা রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুকছে। যখন ভাবা শুরু করেছই যে বাবা মনে হয় বিশুদ্ধ বাতাসই খেতে গিয়েছে , তখনই দেখি একটা বাইক এসে দাঁড়াল। বাইক থেকে নামল আমার ভাই, তার ব্যাগ থেকে বের হল আরেকটা ঝোলা। বাবা আবার সেই ঝোলাকে ভরল আরেক ঝোলায়, যেন দেখা না যায়। তারপর বাবা রওনা দিল উপরে।
আমি তো তখন আনন্দে বাক-বাকুম। দুই লাফে চেয়ারে বসে এমন ভাব করলাম যেন আমি এইমাত্র দুনিয়াতে ল্যান্ড করেছি। ক্যামেরা দেখা তো দূরে থাক, এটা খায় না মাথায় দেয় সেটাও জানি না। তারপর বাবা যেই নাইকন ডি৩২০০ ক্যামেরাটা বের করে দিল, দিলাম আমার গলা ফাটানো সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এক চিৎকার।
সেই থেকে মাত্র দুই ঘন্টায় আমি ২৪৪ টি ছবি তুলে ফেলেছি।
সেই ছবির ভেতরে আমার পারফিউমের বোতল থেকে শুরু করে মাম পানির বোতলের মুখের ছবিও আছে।
আমার বাবাটা কেন এত ভাল?? কেন সে আমাদের না বলা কথাগুলোও বুঝে ফেলে?? জীবনে কত ঈদই তো পার করলাম, কিন্তু এরকম ঈদ আমার জীবনে আর কখনও আসেনি বাবা। তুমি তো জানই যে আমি এরকমই-আমি যে কতটা খুশি হয়েছি, সেটা তোমাকে বোঝাতে পারব না বাবা, যেমন কখনও বলতে পারি নি যে তোমাকে কতটা ভালোবাসি। বাবা ঐ ডায়লগটা পার " তুমি আমার জন্য এক ফোঁটা চোখের পানি ফেলেছ, তোমার জন্য আমি জনম জনম কাঁদিব"? আজকে তুমি আমাকে নাইকনের এত সুন্দর ক্যামেরা কিনে দিয়েছ, আমার যখন অনেক অনেক টাকা হবে, তখন আমিও তোমাকে নকিয়া এন নাইন থেকে শুরু করে মার্সিডিজও কিনে দিব।
(লেখা এখানেই শেষ।
সকালে পোস্ট করেছিলাম, কীভাবে কীভাবে যেন আবার নিজেই ড্রাফট করে ফেলেছিলাম। এখন দয়া করে সকল ফটোগ্রাফার ভাই ও বোনেরা এগিয়ে আসেন এবং এই নগন্য ছোট ভাইকে একটু ডিএসএলআর ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার টিপস এবং ট্রিক্স শিক্ষা দেন) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।