আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেমন করে হারিয়ে গেল কুরবানীর ঈদ

নাজমুল ইসলাম মকবুল কেমন করে হারিয়ে গেল কুরবানীর ঈদ নাজমুল ইসলাম মকবুল হ্যা সত্যিই! হারিয়ে গিয়েছিল কুরবানীর ঈদ। আমরা ক’জনের কাছ থেকে। এমনভাবে হারিয়ে গিয়েছিল যে এক্কেবারে লাপাত্তা। অনেক খুজাখুজি করেও পাইনি। সে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।

দুনিয়ার মাটিতে জ্যান্ত অবস্থায় বসবাস করেও ঈদের দিনে ঈদ না পাবার টাটকা তরতাজা বাস্তব ও সরেজমিন অভিজ্ঞতা। ঈদ তো আর পাখি নয় যে উড়াল দিয়ে আমাদেরকে বোকা বানিয়ে চলে যাবে। কিন্তু সেদিন সত্যিই ঈদ আমাদেরকে বোকা বানিয়ে হাওয়া হয়ে গিয়েছিল আমাদের চারজনের মধ্য থেকে। ঘটনাটা সেই দুই হালি বা আট বছরের পুরনো। কিন্তু স্মৃতির পাতায় এখনও জ্বলজ্বল করছে।

পৃথিবীর সপ্তাশ্চার্য আগ্রার তাজমহল এক্কেবারে নিজ হাত দিয়ে ছুয়ে দেখার বাসনা ছিল আমার সেই ছোট্টবেলা থেকেই। সময় সুযোগ না হওয়ায় সম্ভব হয়নি। চারজন মিলে ভারত ভ্রমনের পরিকল্পনা করি। কিন্তু আজ কাল করে পবিত্র ঈদুল আযহার সময় ঘনিয়ে আসতে থাকে। আমাদের পরিকল্পনায় ছিল যাওয়া আসা দুদিন আর ভারতে তিনদিন মোট পাঁচদিনে সফর শেষ করা।

সে অনুযায়ী ঈদের ১০/১২দিন পুর্বে রওয়ানা দেই সিলেট থেকে রাতের ট্রেনযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে। পরিকল্পনা ছিল পরদিন সকালে ভারতীয় দুতাবাস থেকে ভিসা নিয়ে সোজা কলকাতা। কলকাতা থেকে দিল্লি। কিন্তু ভারতীয় দুতাবাসে গিয়ে আক্কেল গুড়–ম। অগণিত ভিসা প্রার্থিদের বেশ কয়েকটি লম্বা লাইন দেখে বুঝতে পারলাম ওইদিন লাইনে দাঁড়িয়ে লাভ হবেনা।

আর এত্তো লম্বা লাইনে দাঁড়ানোর ধৈর্য্যও আমার নেই। সাথের বন্ধুরা বেশ কয়েকঘন্টা দাঁড়িয়ে বিফল হয়ে হোটেলের পথ ধরলেন। সিদ্ধান্ত হলো পরদিন একটু আগেভাগে গিয়ে লাইনে দাঁড়াতে হবে। সেদিনও গিয়ে দেখা গেল একই কান্ড। পরের দিন কাকডাকা ভোরে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েও দুতাবাসে ঢুকা সম্ভব হয়নি।

আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমার ভারত সফরের দরকার নেই। ভারতের ভিসার জন্য এতো কষ্ট ভাল্লাগেনা। এরচেয়ে দুতাবাসে না গিয়ে ভ্রমনের কয়েকদিন পুর্বে সিলেটের সংশ্লিষ্ট এজেন্সিতে পাসপোর্ট জমা দিলে অনায়াসেই ভিসা পাওয়া যেত। আমি বাড়িতে ফেরত আসার কথা বললে সাথের বন্ধুরা অনেক কাকুতি মিনতি করে আমাকে রাখলেন। ওরা বললেন কাল মধ্যরাত হতে আমরা তিনজন গিয়ে লাইনে দাঁড়াব।

আপনার পাসপোর্ট আমাদের নিকট দিয়ে দেবেন। আপনি সেখানে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে কষ্ট না করে ঘুমাবেন। পরদিন দশটার দিকে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা সেরে রিলাক্সেবুল মুডে গিয়ে আমাদের সাথে মুলাকাত করবেন। তাদের এসব পীড়াপীড়িতে আমি রাজি হয়ে গেলাম। পরদিন গিয়ে দেখি অগণিত পুরুষ মহিলার লম্বা লাইন।

তবে তারা লাইনের একটু সামনে আছেন। দেখা হলেই তাদের কাছ থেকে জানলাম তাদের মতো এভাবে সারারাত অগণিত লোক লাইনে থেকে রাত গুজার করেছেন। এছাড়া হাজার পাচশ টাকায় নাকি লাইন কেনাবেচাও চলে। সেদিন আমরা চারজন ভারতীয় দুতাবাসে ঢুকে পাসপোর্ট জমা দিলাম। কিন্তু আমরা তিনজনকে ভিসা প্রদান করা হলেও একজনের ভিসা আবেদন প্রত্যাখাত হলো।

পড়লাম আরেক মুশকিলে। একজনকে ফেলে রেখে যাওয়া যায় কি করে। অভিজ্ঞ কয়েকজনের সাথে বুঝাপড়া করলাম। ওরা পরামর্শ দিলেন পরদিন আবার পাসপোর্ট জমা দিলে ভিসা দিয়ে দেবে। পরদিন আবার আগের দিনের ভিসাপ্রত্যাখাত জনের ভিসা সংগ্রহ করা হলো।

এভাবে ৫/৬ দিন চলে যাবার ফলে ঘনিয়ে এলো পবিত্র ঈদুল আযহা। অর্থাৎ পরদিন ঈদ। বললাম বাড়ি চলে যাই। ঈদের পরে ভারত সফরে যাবো। সাথের বন্ধুরা নাছোড় বান্দা।

ওরা বললো এমনিতেই টুরিস্ট ভিসার মেয়াদ একমাস। বাড়িতে ফিরে গেলে আজ কাল বলে বলে একমাস পার হয়ে যাবে। আমরা কলকাতায় পৌছেই ঈদ করবো। ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের ঢল থাকায় ও কয়েকদিন পুর্বেই সকল টিকিট বিক্রয় হয়ে যাবার ফলে ঢাকা থেকে বেনাপোলগামী কোন বাসের টিকিট না পেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে একটি প্রাইভেট কার ভাড়া করলাম। ভোররাত তিনটার দিকে পৌছলাম বেনাপোল স্থল বন্দর।

ভয়ানক নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে ভোররাত সেখানে অতিবাহিত করার পর পরদিন প্রত্যুষে ইমিগ্রেশন শেষে ভারত সীমান্তে ঢুকলাম। সেখানে ঢুকেই আমরা পবিত্র ঈদুল আযহার জামাত পড়ার জন্য স্থানীয় ভারতীয়দের জিজ্ঞেস করতেই তারা প্রতিউত্তরে জানালেন ভারতে তারা পবিত্র ঈদুল আযহা পালন করেছেন আগের দিন। পবিত্র ঈদুল আযহার আনন্দময় দিনটি এভাবে ফসকে যাওয়ায় মনটি ভরে গেল বিষাদে। সেখান থেকে আরেকটি প্রাইভেট কার ভাড়া করে কলকাতা পৌছে ভাবলাম বাড়ীতেতো সকলেই গরু জবাই করে কুরবানীর গোশত খাচ্ছেন আয়েশ করে। তাই আমরাও একটু খাই।

কলকাতার একটি চাইনিজ রেস্তোরায় ঢুকে খাসি মুরগী আর বাংলাদেশের ইলিশ মাছ খেলাম আর ভাবলাম আমার দেশের মানুষ আজ ঈদের আনন্দে মশগুল, আর আমরা! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.