আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভিন্ন রকমের ঈদ

প্রজাপতির মত ডানা মেলে উড়ে বেড়ায় আমার ভাবনা গুলো, মাঝে মাঝে ওদের ছুঁতে পারি, মাঝে মাঝে হারিয়ে ফেলি... (১) মাহমুদুল হাসান, বয়স ২৩, ছাত্র। এই প্রথম সে বাবাকে ছাড়া ঈদের নামাজ পড়তে যাচ্ছে। সকালে মা থমথমে মুখে বাবার গত ঈদের পাঞ্জাবীটা বের করে দিয়েছে পরার জন্য। পাঞ্জাবীটা বাবা পড়তে পারেননি। রোজার ঈদটা হাসপাতালের বেডে শুয়েই তাকে কাটাতে হয়েছিল।

জায়নামাজ হাতে ঈদগাহে যেতে তার পা চলছে না। প্রতিটি কদম ভারী হয়ে যাচ্ছে, নিঃশ্বাস চেপে আসছে, চোখটাও কি জ্বালা করছে। অনুভব করছে দোতলার বারান্দায় কান্নাভেজা চোখে মা আর ছোট বোনটা দাঁড়িয়ে আছে, যেমনটি আগেও দাঁড়িয়ে বাবা আর তাকে দেখতো। এই দাঁড়িয়ে থাকা আর সেই দাঁড়িয়ে থাকার মাঝে কত পার্থক্য... । একটা দীর্ঘশ্বাস যেনও বেরিয়ে এলো বুকের ভেতর থেকে।

ছোটবেলা থেকেই ঈদের দিন মানে বারবার বাবা-মাকে সালাম করা, ডাবল, ট্রিপল সালামী নেয়ার চেষ্টা, মাকে দেখেছে সবাইকে লুকিয়ে বাবাকে সালাম করতে, ছোট্ট বোনটা শুধুমাত্র সালামী পাবার আশায় ঈদের দিন তাকে সালাম করে। সে নিজেও ঐদিন বড় ভাই সুলভ ওকে সালামী দেয়। এসব নিয়েই তার ঈদ ছিল। অথচ আজ বোনটাও যেন সেই চিরচেনা মুখটি লুকিয়ে অন্য মুখ ধারন করেছে। সারাক্ষন রান্নাঘরে মায়ের পাশে বসে ছিল।

গম্ভীর মুখে তার হাতে জায়নামাজ তুলে দিয়ে সামনে থেকে চলে গেছে। প্রতিবার ঈদের নামাজ শেষ হতেই তাকে আর পায় কে? বন্ধুবান্ধবদের সাথে হারিয়ে যায় সে সারাদিনের জন্য। কিন্তু আজ তার অন্য রকমের ঈদ। নামাজ শেষে মা আর বোনকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যেতে হবে। এ জীবনে কোন ঈদ বাবাকে ছাড়া করেনি।

এই ঈদেও তাই বাবার কবরটা ছুঁয়ে বাবাকে স্পর্শ করার মিথ্যা আনন্দ খোঁজার চেষ্টা করবে। (২) চম্পা, বয়স ২০, গার্মেন্টস কর্মী। ঘরের দাওয়ায় বসে গ্রামের ছেলে বুড়োদের ঈদগাহে যাওয়া দেখছে। বহুদিন পর সে বাবার বাড়িতে ঈদ করতে এসেছে। কোন কিছুই ভাল লাগছে না তার।

মা যেন বেশি বেশি আদর দেখাতে চাচ্ছে। এত আদরও তার ভাল লাগছে না, বিরক্ত লাগছে। পেটের ভেতর হঠাৎ ব্যথা করে উঠাতে তার মনে পড়ল সকাল থেকে সে এখনও কিছু খায়নি। আহারে! তার কারনে তার সন্তানটা না খেয়ে আছে। তাড়াতাড়ি করে সে রান্নাঘরে মায়ের কাছে যায়।

চম্পার মা মেয়ের মুখের দিকে একবার তাকিয়ে সেমাই আর মুড়ি দেয়। তারপর অন্যদিকে ফিরে কাপড়ের খুঁটে চম্পাকে না দেখিয়ে চোখ মুছে। মেয়েটার দিকে তাকালেই তার কান্না পায়। কত সখ করে দেখেশুনে মেয়েটাকে বিয়ে দিয়েছিল তিন বছর আগে। ভালোই ছিল মেয়েটা, মেয়ের জামাই মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় থাকতো, কিছুদিন পর মেয়েটা চাকরীও করতে শুরু করে।

মাসে মাসে যখন টাকা পাঠানো শুরু করল তারা তো খুবই অবাক। টাকার অভাবে মেয়েকে স্কুলে পড়াতে পারেন নি, লেখাপড়া না জেনেও মেয়ে চাকরী করছে, বেতনের টাকা বাবা-মাকে পাঠাচ্ছে- এ যেন তাদের কাছে অপার বিস্ময়। গ্রামের সবাই চম্পাকে ভাগ্যবতী বলতো। এখন পর্যন্ত এ গ্রামের কোন মেয়ে ঢাকায় থাকেনি, চাকরী তো বহু দূরের কথা। মেয়ের বাচ্চা হবে শুনে চম্পার বাবার সে কি খুশি।

সেই দিন থেকেই টাকা জমানো শুরু করেছে নাতি/নাতনীর জন্য। কপাল! যখন তারা দু’জনে নাতী বা নাতনীকে বরন করার সব আয়োজন শেষ করে এনেছে। ঠিক তখনি মেয়ের জামাইটা মরে গেল। এমন মৃত্যু! যা ওরা কখনো কল্পনাও করেননি। হঠাৎ করে বুকে ব্যথা করছে বলতে বলতেই মানুষটা শেষ।

ঈদের ছুটিতে চম্পাকে জোর করে তার বাবা বাড়ী এনেছে। মেয়েটা কিছুতেই আসতে চাইছিল না। ঢাকায় থাকবে, এও কি হয়? আসার পর থেকেই মুখ ভার করে আছে। বেশি কথা বলতেও ভয় করে, কথা বলতে গেলে বিরক্তি নিয়ে তাকায়। চম্পার মনে পড়ে, গত ঈদে মানুষটা ঈদের সালাম করতেই তাকে জড়িয়ে ধরেছিল।

বলেছিল, আগামী বছর বাবা-ছেলে একসাথে ঈদের নামাজ পড়বো। তখন চম্পার একবারের জন্যেও মনে হয়নি কোরবানীর ঈদের নামাজ-ই মানুষটা পড়তে পারবে না। তার যদি ছেলে সন্তান হয়, তাহলে আগামী ঈদে ছেলেকে সাথে নিয়ে ঈদের দিন মানুষটার কবরের কাছে যাবে ... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.