আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।
গত ২৪ এপ্রিল, ২০১৩ সাভার বাজারের কাছে রানা প্লাজা ধসে পড়ে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পে সবচেয়ে বড় আর সবচেয়ে মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি সংঘটিত হলো। ভবনটি ধসে পড়ার পর ধ্বংসস্তূপ থেকে প্রায় ৪ শ’র অধিক মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে আড়াই হাজারের ওপর। অনেককেই হাত অথবা পা কেটে বের করে আনতে হয়েছে ধ্বংসস্তূপ থেকে।
এখন চলছে দ্বিতীয় দফার উদ্ধার কর্ম। সেনাবাহিনী, র্যাব, ফায়ার সার্ভিস, নৌ বাহিনী পুলিশসহ হাজার হাজার সাধারণ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জীবিতদের উদ্ধার করছেন, উদ্ধার করছেন মৃতদেহ। এমন অভূতপূর্ব ঐক্য বাংলাদেশ তখনই দেখতে পায় যখন মানুষ বিপদে পড়ে।
অনেক কথা হচ্ছে সাভার ট্র্যাজেডি নিয়ে। কেউ দোষ দিচ্ছেন ভবন মালিক সোহেল রানাকে, কেউ দোষ দিচ্ছেন গার্মেন্ট মালিকদের।
বিরোধীদলের মনোভাব দেখে মনে হচ্ছে, সব দোষ সরকারের। প্রশ্ন হচ্ছে দোষী কী শুধু তাদেরই? একজন ভবন মালিক, চার বা পাঁচজন গার্মেন্ট মালিকের?
বাংলাদেশে গার্মেন্ট খাতে এর আগেও বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছিল। দেশে প্রথম তৈরি পোশাক কারখানায় আগুন লেগে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল ১৯৯০ সালে মিরপুরে। সারাকা গার্মেন্টেসে ৩২ জন শ্রমিক মারা যান। ১৯৯৭ সালে ঢাকায় সাংহাই অ্যাপারেল নামে একটি কারখানায় আগুন লেগে ২৪ জন শ্রমিক মারা গিয়েছিল।
২০০০ সালে বনানীর গ্লোব নিটিংয়ে আগুন লেগে মারা যান আরও ১২ জন। ২০০৪ সালে ছয়টি পৃথক ঘটনায় আগুনে পুড়ে ও পদদলিত হয়ে মারা যান ২১ জন। ২০০৫ সালে ১১ এপ্রিল সাভারের স্পেকট্রাম কারখানা ভবন ধসে মারা যান ৭৬ জন শ্রমিক, ২০০৬ সালে কেডিএস গার্মেন্টসে আগুন লেগে মারা যান ২৩ জন। বিজিএমইএর হিসাবে এখন পর্যন্ত ছোট-বড় তৈরি পোশাক খাতে ১৬৬টি ঘটনা ঘটেছে এবং এতে মারা যায় ২২২ জন। তবে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ন্যাশনাল লেবার কমিটির হিসাবে মারা যান প্রায় ৫০০ শ্রমিক, যাঁদের বেশির ভাগই মহিলা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ শ্রমিকের এ মৃত্যু নিয়ে কার কী লাভ অর্থাৎ রাজনীতিতে কী লাভ? ২৪ এপ্রিল সাভারে দুর্ঘটনার দিন এবং তার আগের দিন সারাদেশে ১৮ দলীয় জোটের টানা ৩৬ ঘণ্টার হরতাল ছিল। ঘটনার দিন সকাল ৯ টায় এ দুর্ঘটনা ঘটলে সারাদেশ থেকে ভিক্টিমদের আত্মীয় স্বজন সাভারে আসার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠে। কিন্তু দেশব্যাপী নাশকতামূলক হরতালের কারণে কোনো ধরণের যানবাহন চলাচল করতে পারছিল না। এমনকি উদ্ধারকর্মীরা সাভার গমনকালে একধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে হরতালপ্রিয় ১৮ দল সিদ্ধান্তে আসতে ব্যর্থ হয়।
একপর্যায়ে তারা সাভার এলাকাকে হরতালমুক্ত ঘোষণা করে। এর মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হরতাল প্রত্যাহারের মানবিক আবেদন জানান। এই প্রথমবারের মতো প্রতিপক্ষের আহ্বানে বিরোধী দল সাড়া দেয় এবং ৩৬ ঘণ্টা হরতালের তিন ঘণ্টা বাকি থাকতে সারাদেশ থেকে হরতাল প্রত্যাহার করে নেয়। পত্রিকা মারফত খবর এসেছে, বিরোধী দলীয় নেতাদের সিদ্ধান্তহীনতায় হরতাল প্রত্যাহার করতে প্রায় ৭ ঘণ্টা দেরি হয়। এমন একটি দুর্ঘটনায় হরতাল প্রত্যাহারে গড়িমসি করে দেশকে একটি দুর্যোগের দিকে ঠেলে দেওয়ার নাম কি রাজনীতি?
শুধু এখানেই শেষ নয়।
দেশের আপামর জনগণ যখন সাভারে উদ্ধারকাজে নিয়োজিত, দিনরাত পরিশ্রম করে আটকে পড়া দুর্ভাগা শ্রমিকদের উদ্ধারে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছিল, বিএনপি নেতৃবৃন্দ তখন শ্রমিকদের নানাভাবে উস্কানী দেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত। সরাসরি বলতে গেলে, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সাভারের রানা প্লাজা ধসে নিহতদের ২০ লাখ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এমপি। তবে একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়েন।
বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে স্পেকট্রাম দুর্ঘটনায় আহত-নিহতদের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, জানতে চাইলে মওদুদ আহমদ বলেন, রেকর্ডে দেখে বলতে হবে! বিগত বিএনপি সরকারের আমলে লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহতদের জন্য উন্নত প্রজাতির ব্লেক বেঙ্গল ছাগল ও নগদ ২০ হাজার টাকা আর বাড়তি হিসেবে সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সেই বিখ্যাত বাণী "আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছেন"। এমন একটি ক্রান্তিকালে বিএনপি নেতার এমন তামাশা না করলে হতো না?
সাভারে গার্মেন্টস ভবন ধস নিয়ে সবচেয়ে বেশি ফায়দা লুটার চেষ্টায় লিপ্ত আছেন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
স¤প্রতি তিনি নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর বালুর মাঠে আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় যে অভিযোগ করেন তা রীতিমতো দায়িত্বহীন ও উস্কানীমূলক। তিনি অভিযোগ তোলেন, লাশের সংখ্যা নিয়ে। অর্থাৎ সংখ্যায় বেশি লাশ তিনি কামনা করেন। তাহলে বেশি মানুষের সহমর্মিতা যেন তার আনুকূল্যে! এছাড়া তিনি একটি দাবীও তোলেন, নিহতদের প্রতি পরিবারের জন্য ২০ লাখ টাকা এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা। উল্লেখ্য, সরকার ইতিমধ্যে কিছু পদক্ষেপও নিয়েছে যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে।
সাভার সিএমএইচ সহ ঢাকা
মেডিকেল ও অন্যান্য মেডিকেলে আহতদের চিকিৎসা সেবার ক্রুটি নেই। এছাড়া প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো ধাপে ধাপে সরকার বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। নিখোঁজ তালিকা ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
তবে সবচেয়ে বড়ো যে অভিযোগ, সরাসরি উদ্ধৃতি করলে- “সরকার যদি সেনাবাহিনীকে সঠিক সময়ে নির্দেশনা দিতো তাহলে আরো মানুষকে বাঁচানো যেতো” মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সরকার প্রথম দু’দিন এ হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ”
বেগম খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও তিনি কিভাবে এ বক্তৃতা দেন? প্রথমত, সেনাবাহিনীর নবম ডিভিশনের উদ্ধারকারী প্রথম দলটি ঘটনার ৫০ মিনিটের মধ্যেই সেখানে উপস্থিত হন এবং সম্পূর্ণ উদ্ধার তৎপরতা তদারকি করতে থাকে।
সাধারণ মানুষ যারা তাদের আত্মীয়স্বজনদের খোঁজে ভিড় জমাতে থাকেন, তাদের অনেকেই দায়িত্ববলে নিজেরাই লেগে যান উদ্ধার তৎপরতায় সহায়তা করতে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সেই উদ্ধারকর্ম সরাসরি দেখিয়েছে, হাজার হাজার মানুষ সেখানে উপস্থিত, এর মধ্যে লাশ সরানোর অভিযোগ এনে তিনি মূলত অসহায় শ্রমিক ও তাদের পরিবারের প্রতি এক ধরনের চরম উপহাস করছেন।
শুধু তাই নয়, তিনি সেনাবাহিনীর কর্তব্যবোধের প্রতিও অনাস্থা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবেন। ' বিএনপির এমকে আনোয়ার বলেছেন, 'তিনি নিশ্চিত রানা কোনদিনই গ্রেফতার হবে না এবং সাভার ট্র্যাজেডির বিচারও হবে না। ' ড. মোশাররফ বলেছেন, 'সরকারই রানাকে লুকিয়ে রেখেছে।
’
কিন্ত ......... গ্রেফতার হল।
নানাবিধ সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও যেভাবে উদ্ধার অভিযান চালানো হয়েছে এ জন্য সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, উদ্ধারকর্মী ও জনগণকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। বিপর্যয়ের ৫ দিন পরেও জীবন্ত মানুষ উদ্ধার এক অচিন্তনীয় ঘটনা। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব, লাশের উৎকট গন্ধের মধ্যে চরম জটিল একটি ধ্বংসস্তূপ থেকে আড়াই হাজারের বেশি মানুষকে উদ্ধার করার দ্বিতীয় উদাহরণ আর কোথাও আছে কি না জানা নেই? এই যে 'একজন জীবন্ত মানুষ থাকা সত্ত্বেও উদ্ধার অভিযান চলবে' এই মানবিকতার কোন তুলনা হয় না।
সাভার ট্র্যাজেডি মোকাবেলাতেও সরকার প্রশংসনীয় মনোবল ও কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে।
উদ্ধারকাজের যন্ত্রপাতির অভাব সত্ত্বেও সম্মিলিত উদ্ধারকর্মীরা যেভাবে দু’হাজারের বেশি মানুষকে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করেছে, তুরস্ক ও চীনের সা¤প্রতিক ভূমিকম্পেও তাদের উদ্ধারকাজে ততটা কৃতিত্ব দেখা যায়নি। উদ্ধারকাজে, ত্রাণকাজে, রক্তদানে এবারও জনগণ অকুণ্ঠ সাহায্য ও সহযোগিতা যুগিয়েছে। বিদেশী সাহায্য ছাড়াই এত বড় উদ্ধারকাজ যে সম্ভব তা অনেকেই ভাবতে পারেননি।
এবার দেখা যাক স্পেকট্রাম গার্মেন্টসে উদ্ধার কাজ কি ভাবে হয়েছিল। পুরোনো পত্রিকা ঘাটতে গিয়ে চোখে পড়লো, বিএনপি সমর্থিত আমার দেশ পত্রিকার ১৯ এপ্রিল ২০০৫ এর শিরোনাম- “আহতদের সাহায্য নেই, জীবিতদের বেতন হয়নি, শুধু দোয়া কুরআনখানি”! এবার দেখি সেই শিরোনামের ভেতর কী ছিলো লেখা- পলাশবাড়ি ট্রাজেডির ঘটনাস্থলে গত তিনদিন ধরেই নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় মৌলভী এনে ’সাফিনা খতম’ পড়ানো হচ্ছে।
মালিক পক্ষের কাউকে ঘটনাস্থলে পাওয়া না গেলেও কে এত দরদি হয়ে নিহতদের আত্মার মাগফিরাতের জন্য খতম পড়াচ্ছেন এ বিষয়ে পলাশবাড়ির হাজারো মানুষের মধ্যে জন্ম নিয়েছে কৌতুহল। স্পেক্ট্রাম সুয়েটার লিমিটেডের বেঁচে যাওয়া শ্রমিক ও শাহরিয়ার ফেব্রিক্স লিমিটেডে কর্মরত ব্যক্তিরা জানান, স্পেক্ট্রামের দুই মালিকের মধ্যে একজন আলহাজ আবুল হাশেম ফকিরই কুরআনখানি করাচ্ছেন। স্থানীয় মানুষের কৌতুহল ও প্রশ্ন, ১১ এপ্রিল ভবন ধসের ঘটনায় শতাধিক শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হলেও তারা কেউ এখনো সরকারি-বেসরকারি সাহায্য হিসেবে একটি কানাকড়িও পাননি । তাদের বেঁচে থাকা আত্মীয়স্বজনকে সাহায্য ও আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি। বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের গত মাসের বেতন দেয়া হয়নি, অথচ করছেন কুরআনখানি।
দুই অংশীদারের কেউই একবারের জন্যও অকুস্থলে আসেননি। তবে দুই অংশীদারের মধ্যে আবুল হাশেমের সম্পর্কে জানা গেছে অনেক চমকপ্রদ তথ্য। সোনালী ব্যাংকের সামান্য কেরানি থেকে কীভাবে তিনি এত বৈভবের মালিক হলেন- এটাই এখন পলাশবাড়ির মানুষের আলোচনার বিষয়।
এবার অন্যান্য পত্রিকার শিরোনাম দেখলে রীতিমতো চমকে উঠবার কথা। দৈনিক ইত্তেফাকের এপ্রিল ১৩, ২০০৫ সালে প্রথম পাতায় ছাপানো হয়- “যেভাবে ভবনটি নির্মাণ করা হয়” খবরের ভেতরে রয়েছে শাহরিয়ার হোসেন সাঈদ ভবনটি ৪ তলার অনুমোদন নিয়ে নির্মাণ করে ৯ তলা।
দৈনিক প্রথম আলোর ১৩ এপ্রিল ২০০৫ এর ২ পাতায় ছিলো- “ভবন ধসে পড়ার আলামত আগেই দেখা গিয়েছিল”। খবরের সারাংশ হলো- ভবনটি আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল কিন্তু মালিকপক্ষ কারখানার কর্মীরা ভবনটি ত্যাগ করতে চাইলেও কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেননি। দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার শিরোনাম- “দুর্যোগ মোকাবেলায় ব্যবস্থা নেই, এতটাই অসহায় আমরা” এছাড়া আরও একটি শিরোনামে ছিল- “ধসে পড়া ভবনের মালিক লাপাত্তা”। দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার শিরোনাম ছিলো- ভেসে আসছে লাশের গন্ধ, সাভারে ধসে পড়া ভবনে উদ্ধার কাজে ধীরগতি। আজকের কাগজ পত্রিকার শিরোনামে- “আহতরা খাবার খাচ্ছেন নিজের টাকায়”।
১২ এপ্রিল ২০০৫ সালের দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার শিরোনামে ছিলো- “মালিকের পক্ষে সাফাই গাইলেন বাণিজ্যমন্ত্রী”। আর বোধ হয় বেশি উদাহরণের প্রয়োজন হবে না।
এবার আসা যাক- ক্ষতিপূরণের কথায়। শ্রমিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিজিএমইএ একটা মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলো। জানা গেছে, নব্বইয়ের দশকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হতো মাত্র ২৫ হাজার টাকা, পরে তা বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়।
পরবর্তীতে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের আন্দোলনের চাপে ২০০১ সালে তা বাড়িয়ে ১ লক্ষ টাকা করা হয়। ১৯৮৫ সালের মারাত্মক দুর্ঘটনা আইনে নিহত পরিবারের পক্ষে ক্ষতিপূরণ মামলা করার অধিকার রয়েছে। অনেক আন্দোলনের পর স্পেকট্রাম গার্মেন্টসের এ ক্ষতিগ্রস্তদের বিএনপি সরকার জনপ্রতি মাত্র ১ লক্ষ টাকা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারাই এখন ২০ লক্ষ টাকা দেবার দাবী জানাচ্ছে। বরং আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ ফ্যাশন হাউজ ইনটেক্স অনুদান বাবদ ৫৪ লক্ষ টাকা পাঠায়।
পরবর্তীতে আরও সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয় সেটা আওয়ামীলীগ সরকারের চাপেই। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয়, এ পরিসংখ্যানটা হয়ত মওদুদ আহমেদের জানা নেই।
এছাড়া ২০০৫ সালে সাভারে স্পেকট্রাম গার্মেন্টস ভবন ধসের ঘটনায় হাইকোর্টের জারি করা রুলের জবাব দীর্ঘ আট বছরেও দেয়নি। ওই ঘটনায় সরকারের তদন্ত রিপোর্টও আদালতে দাখিল করা হয়নি। তবে শুধুমাত্র বিজিএমইএ দেয়া রুলের জবাবে বলেছিল, স্পেকট্রাম গার্মেন্টস ভবনের কোনো অনুমোদন ছিল না, যা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড দিয়ে থাকে।
এপর্যন্ত বাংলাদেশে ২১৭টি গার্মেন্ট ট্র্যাজেডি ঘটেছে, এর মধ্যে ২১২টিই হচ্ছে ভবন বা ফ্যাক্টরি ধসে যাওয়ার কারণে, বাকিগুলো আগুনের কারণে। এই ২১৭টি গার্মেন্ট ট্র্যাজেডির একটিরও কোন বিচার হয়েছে, শাস্তি হয়েছে কারও? হয়নি। এখনকার বিরোধীদল সাভার ট্র্যাজেডি নিয়ে রাজনীতি করছে, হরতাল আহ্বান করেছে, শ্রমিকদের দুর্দশায় মর্মাহত হয়ে পড়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তখন স্পেকট্র্রাম গার্মেন্টস দুর্ঘটনার সময় ক্ষমতায় ছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট। বিএনপি তো তখন এই মালিকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
কারণ স্পেকট্রামের এক মালিক ছিলেন বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতার জামাতা। আরেক কারখানার মালিক ছিলেন বিএনপির ফাইন্যান্সার। আর এবারও রানা প্লাজার গার্মেন্টস মালিকদের মধ্যে ৩ জনই বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত বলে জানা যায়।
তখন তাদের বিচার দাবি করেছিল আওয়ামী লীগ। তখন এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে হয়তো আজ সাভার ট্র্যাজেডি আমাদের দেখতে হতো না।
সাভার ট্রাজেডির বিষয়ে সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপ নিয়ে সমাজের সচেতন মহলে কোনো প্রশ্ন না উঠলেও বিরোধী দলীয় নেত্রী শুধুমাত্র রাজনৈতিক ফায়দা হাছিলের লক্ষ্যে একের পর এক দ্বায়িত্ব জ্ঞানহীন মন্তব্য অব্যাহত রেখেছেন যা মোটেই কাম্য নয়। ইতোমধ্যে ভবন মালিক ও গার্মেন্টস মালিকদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। যাই হোক, সাভার ট্রাজেডিতে সরকারের যথোপযুক্ত পদক্ষেপ এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিষয়ে কঠোর মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে মহাজোট সরকারকে সতর্ক হতে হবে যেন রানা মতো র্দুধর্ষ সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে ফায়দা হাসিল করতে না পারে।
আশা করা যায়, সরকার কর্তৃক গৃহিত পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে এধরনের ট্রাজেডির পুনরাবৃত্তি ঘটবেনা। সে সাথে বিরোধী দলীয় নেত্রীও দ্বায়িত্ব জ্ঞানহীন মন্তব্য হতে বিরত থাকবেন সেটাই জনগনের প্রত্যাশা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।