আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমেরিকা সন্ত্রাসবাদের কারখানা! নাফিস সেই কারখানার তৈরি মাল মাত্র।

গনজাগরনের মাধ্যেমে পরিবর্তন সম্ভব....মানুষের চিন্তার পরিবর্তন করাটা জরুরি ....বুদ্ধিবৃত্তিক পুনরজাগরনে বিশ্বাসী ২১ বছর বয়সী বাংলাদেশি তরুণ কাজী রেজওয়ানুল আহসান নাফিস নিউইয়র্ক শহরে এক অদ্ভুত ষড়যন্ত্রের দায়ে ‘হাতেনাতে’ গ্রেপ্তার হয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির বিরাট ক্ষতির কারণ ঘটিয়েছেন। তাঁর গ্রেপ্তারের খবর প্রথম প্রকাশ করেছে গ্রেপ্তারকারী গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। এ পর্যন্ত তাঁর ‘কৃতকর্ম’ সম্পর্কে দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে যা কিছু প্রকাশিত হয়েছে, তারও একমাত্র উৎস এফবিআই। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে চান না—এই তথ্যের উৎসও মার্কিন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। এখন পর্যন্ত রেজওয়ানুলের নিজের কোনো বক্তব্য সরাসরি তাঁর কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

সব মিলিয়ে ঘটনাটি অদ্ভুত। কিন্তু মোটেও নতুন নয়। ‘আন্ডারকভার অপারেশন’ বা ‘স্টিং অপারেশন’ নামে পরিচিত ‘ছদ্মবেশী’ বা ‘ফাঁদ পাতা’র মতো প্রতারণামূলক পদ্ধতিতে এফবিআই এর আগেও অনেক মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে তারা আমিনি আল খালিফি নামে মরক্কোর এক নাগরিককে ঠিক একই কায়দায় ওয়াশিংটন ডিসিতে গ্রেপ্তার করে। ২৯ বছর বয়সী ওই মুসলমান যুবককে তারা নকল আত্মঘাতী বিস্ফোরকসহ জামা (সুইসাইড ভেস্ট) ও অকেজো আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ করেছিল।

পরিকল্পনা ছিল, ওই জামা পরে খালিফি নির্বিচারে গুলি চালিয়ে লোকজনকে হত্যা করবেন। তার আগে ২০০৯ সালে নিউইয়র্কের রিভারডেল এলাকায় দুটি সিনাগগ (ইহুদি উপাসনালয়) বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করার দায়ে চারজন কৃষ্ণাঙ্গ মুসলমান যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদেরও হামলার পরিকল্পনায় সহযোগিতা করা, অর্থ ও নকল বিস্ফোরক জোগান দিয়েছিল এফবিআই। সংস্থাটি এই কাজে ব্যবহার করেছিল একজন পাকিস্তানি নাগরিককে, যিনি পাকিস্তানি ধনী ব্যবসায়ী সেজে তাঁদের সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করেছিলেন। ওই ঘটনার মামলায় একজন বিচারক এফবিআইয়ের এই কর্মপদ্ধতিকে ‘ক্রিয়েটিং টেরোরিজম’ বা সন্ত্রাসবাদ তৈরি করা হিসেবে বর্ণনা করে এর সমালোচনা করেছিলেন।

রেজওয়ানুল গ্রেপ্তারের পর ফ্রান্স টোয়েন্টিফোর ডট কমে বলা হয়, ভুয়া সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা তৈরি করে দেওয়া ও অর্থ জোগানোর মাধ্যমে এফবিআই যেসব ফাঁদ পাতা অভিযান পরিচালনা করে, তা নিয়ে আবার বিতর্ক শুরু হয়েছে। নাম উল্লেখ না করে বলা হয়, এই পদ্ধতির সমালোচকেরা মন্তব্য করেছেন, এ রকম অপারেশন ‘নাজুক ব্যক্তিদের ভুয়া সন্ত্রাসবাদী ষড়যন্ত্রের দিকে প্ররোচিত করছে। ’ বিলেতের গার্ডিয়ান অনলাইন মন্তব্য করেছে, ‘এফবিআই স্বীকার করেছে যে পুরো অপারেশনটি পরিচালনা করেছে তারাই। তাদের এই স্বীকৃতির ফলে তাদের বিরুদ্ধে ফাঁদ পাতার অভিযোগ অনিবার্যভাবে উঠবে। ’ এফবিআই শুধু স্বীকার করেনি, বরং গর্বের সঙ্গে দাবি করেছে যে রেজওয়ানুলকে দিয়ে পুরো ঘটনাটি তারাই ঘটিয়েছে।

সংস্থাটি দাবি করেছে যে ‘জনগণের ও নিউইয়র্কবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুরো অপারেশনটি তারাই নিয়ন্ত্রণ করেছে, জনগণের জন্য বাস্তবিক কখনোই কোনো ঝুঁকি ছিল না। ’ প্রত্যেকটি ৫০ পাউন্ড ওজনের মোট ২০টি বিস্ফোরক তারা রেজওয়ানুলকে দিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ ভবন উড়িয়ে দেওয়ার জন্য। একটি মোটরভ্যানে করে সেগুলো ভবনটির কাছে নিয়ে যাওয়া, ভ্যানটি সেখানে পার্ক করে রাখা, ভবনটি থেকে কিছু দূরে ম্যানহাটনের একটি হোটেলে বসে রেজওয়ানুল যে মুঠোফোন ব্যবহার করে বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা করছিলেন, সেটিও ছিল তাদেরই দেওয়া। রেজওয়ানুল জানতেও পারেননি সেগুলো আদৌ বিস্ফোরক ছিল না। পুরো ঘটনাই একটা ‘ফেক টেরর প্লট’ বা ভুয়া সন্ত্রাসী ষড়যন্ত্র—যা একমাত্র রেজওয়ানুল ছাড়া আর কারও জন্য কোনো বিপদ ডেকে আনতে পারত না, পারেনিও।

এই সুনিশ্চিত নিরাপদ ‘সন্ত্রাসবাদী ষড়যন্ত্রের’ একমাত্র লক্ষ্য ছিল, রেজওয়ানুল আমেরিকার বিরুদ্ধে বিরাট এক আঘাত হানার আকাঙ্ক্ষা মনের মধ্যে পোষণ করেন। পোষণ করেন মাত্র। যুক্তরাষ্ট্রের মোট স্বর্ণের মজুদের বিরাট অংশের সংরক্ষণাগার, দেশটির সবচেয়ে সুরক্ষিত ভবনগুলোর অন্যতম ফেডারেল রিজার্ভ ভবনে হামলা চালানোর মতো বাস্তবিক সামর্থ্য মাত্র ২১ বছর বয়সী এই তরুণের ছিল না, যিনি মাত্র নয় মাস আগে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র গেছেন পড়াশোনা করতে। একা এমন সাহসও হয়তো তাঁর ছিল না, তাঁর বাবার বর্ণনা থেকে অন্তত সে রকমই মনে হয়। রেজওয়ানুল যদি মুসলমানদের বিরুদ্ধে আমেরিকার অন্যায়-অবিচারের প্রতিশোধের সুপ্ত ইচ্ছা বুকে ধারণ করেও থাকেন, যদি তিনি ওসামা বিন লাদেন ও আল-কায়েদার সন্ত্রাসবাদী দর্শনে উদ্বুদ্ধ হয়েও থাকেন, তাঁকে আমেরিকার আইনের আওতায় আটক বা বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব ছিল না।

সে জন্য তাঁকে নিষ্ক্রিয় (সুপ্ত) আমেরিকা-বিদ্বেষী থেকে সক্রিয় আক্রমণকারী হয়ে উঠতে প্রথমে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে, তারপর আক্রমণের পরিকল্পনা সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তা বাস্তবায়নে সব রকমের সহযোগিতা করা হয়েছে। আসলে নিছক সহযোগিতা নয়, পুরো ঘটনার বিবরণ থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, এফবিআই রেজওয়ানুলকে মানসিক ও আচরণগত দিক থেকে প্রত্যক্ষভাবে পরিচালনা করেছে। তিনি যদি সক্রিয় সন্ত্রাসবাদী হয়ে থাকেন, তবে তাঁকে তা করে তোলার দায় একান্তই এফবিআইএর। ফেডারেল রিজার্ভ ভবন উড়িয়ে দিতে গিয়েছিলেন যে রেজওয়ানুল, তিনি এফবিআইএর তৈরি। কিন্তু কেন? ‘সন্ত্রাসবাদী তৈরি করা’র গোয়েন্দা কর্মসূচির বদলে সন্ত্রাসের পথ থেকে সরে আসতে উদ্বুদ্ধকরণের একটা কর্মসূচি কি নেওয়া যায় না?  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।