আমাদের মেডিকেলের এক বড়ভাই ড.মাহতাব। তিনি আর্মিদের সাথে উঠাবসা করেন মানে তিনি এখন সিএমএইচ এর ডাক্তার। ডাক্তার রা এমনিতেই আধা কষাই হয় আবার আর্মি মানে তো আরো কাঠ খোট্টা। তবে উনার কাহিনি শুনে মনে হল মানুষ আসলে মানুষই.....আর্মি অথবা কষাই তার একটা কেমোফ্লজ। আমি আজকে উনার কাহিনি লিখলাম।
ঘটনা :৭
রোগীর নাম- জানা নাই
বয়স:২০
অভিভাবক: রোগীর বাড়ির কর্ত্রী
ঘটনা:
মাহতাব ভাই তখন আমাদের মেডিকেল এ ইমার্জেন্সিতে কাজ করেন। সারাদিন ব্যস্ত থাকতে হয় ইমারজেন্সিতে যেহেতু সমানে রোগী আসতে থাকে আর তারাতারি এক পেশেন্ট বাদ দিয়ে আরেক পেশেন্ট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তে হয়। কোনো রোগীকে বেশী সময় দেয়ার মত সময় হাতে থাকেনা। বেশী কথা শোনার ও টাইম থাকেনা। আর সারাদিন টানা কাজ করে বিদ্ধস্ত অবস্থা থাকে তাই কারো কথা শোনার মত মানসিক অবস্থাও নাই হয়ে যায়।
সেদিন আবার ভাইয়ার রাতে ডিউটি। রাতের ডিউটি যে কি বিরক্তিকর যারা রেগুলার রাতে মেডিকেলে ডিউটি করেন তারা সবাই মানবেন। মেডিকেল এ ভাল একটা বসার জায়গা পর্যন্ত থাকেনা। রাতে যারা নিশাচর নয় তাদের জন্য জিন্দেগী হারাম হওয়ার অবস্থা হয়।
এমতাবস্থায় মাঝরাতে এক মহিলা আসল সাথে কাজের মেয়ে।
কাজের মেয়ে টা ২০ বছর বয়স হবে। সমস্যা হল কাজের মেয়ের পেটে ব্যথা।
ভাইয়া দেখেই তো আন্দাজ করলেন যে মেয়েটা প্রেগন্যান্ট হতে পারে। কারন প্রায়ই এধরনের কেস আসে। কিন্তু ঐ মহিলা সমানে অস্বীকার করল তার কাজের মেয়ের কোথাও এরকম ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই, বাসা খুবই সুরক্ষিত।
কাজের মেয়েও বলল না ওর প্রেগন্যানট হওয়ার যেসব সাইন সিম্পটম আছে তার কোনোটাই নেই। ইমারজেন্সিতে আবার স্ট্রীপ টেস্ট করার মত ব্যবস্থা ছিলনা। স্ট্রীপ টেস্ট করার জন্য ঐ মেয়েকে গাইনীতে পাঠাতে হবে যেটা রাতের বেলায় ঝামেলা।
ভাইয়া তখন স্টেথো দিয়ে হার্ট বিট শুনতে চেষ্টা কোরলেন।
হমমমম উনার ধারনা সত্যি , মেয়েটার শরীরে তার নিজের হার্টবিট ছাড়াও আরেকটি প্রানের শব্দ পাওয়া যায়.....।
মেয়েটির বাচ্চার হার্টবীট।
মায়ের হার্ট বিট করছে লাবডাব লাবডাব......সাথে বেঁচে আছে আরেকটি প্রান সেটাও বিট করছে...টুকটুক টুকটুক....।
ভাইয়া পেলেন আরেকটি প্রানের সন্ধান। তাকালেন মায়ের চোখের দিকে। অসহায় চোখ।
বন্দীত্বের আর্তনাদ ভরা চোখ।
ভাইয়া ঐ মহিলাকে একটু বাইরে বসতে বললেন। বলললেন রোগীকে একটু টেস্ট করতে হবে আপনি বাইরে যান। মহিলা বাইরে গেল।
একা পেয়ে মেয়েটিকে ভাইয়া বললনে- দেখেন আমি ডাক্তার।
আমার কাছে তো লুকাতে পারবেন না। এখন ডাক্তার না , আমি তোমার ভাই হয়ে জিজ্ঞেস করছি। আমি জানি তুমি প্রেগন্যানট। আমি জানি এটা তুমিও জানো। কিন্তু এখন কি করতে চাও?
মেয়েটির বাধভাংগা কান্না বের হতে শুরু করল তখন।
"কত অসহায় মেয়েদের জীবন তাই না?" ভাইয়া আমাকে বললেন।
ঐ কাজের মেয়ে ১৬ বছর বয়সে ঐ বাসায় কাজ করতে এসেছে। ঐ বাসায় মারধোর, খুনতির ছ্যাকা কোনো অত্যাচার ই বাদ নেই। মেয়েটি আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল। ওখানেও ফেইল।
অসহায় মেয়ে। মৃত্যুও তাকে সাহায্য করে না, মৃত্যুও দুর ভাগে। মা বাবা কোথায় কেউ আছে কিনা মেয়েটি জানেনা। এতিম মেয়ে সে।
এর সাথে আরো নির্যাতন শুরু হয়.....নির্যাতন চরমে পৌঁছে।
ঐ মহিলার ভাই মাঝে মধ্যে ঐ বাসায় আসে। এসে ঐ মেয়েকে নির্যাতন করে। তার উপরে যখন তখন এই অত্যাচার চলতে তাহকে। তার ফলাফল আজকের এই সন্তান।
মহিলা কি জানে? অবশ্যই জানে।
কারন তার সুরক্ষিত বাড়িতে তার অগোচরে কিছুই হয়না।
তবে কেন সে বাধা দেয় না? কারন......মহিলার কাছে কার স্বার্থ আগে? ভাই য়ের নাকি অজ পাড়াগাঁয়ের এক অনাথ মেয়ের?
অবশ্যই তার ভাইয়ের স্বার্র্থ। তার ভাই ফাও নিজের লালসা মিটাতে পারছে। এর থেকে বড় স্বার্থ হাসিল একটা বোনের কাছে কি হতে পারে?
ধিক ধিক ধিক!!!
এত বড় অপমান নারী হয়ে নারী জাতিকে!!!
এই ঘটনায় ঘৃনা কেমনে প্রকাশ করব!!! কাকে ঘৃনা দেখাব!!!
মহিলাও সন্দেহ করেছে মেয়েটা প্রেগন্যান্ট হতে পারে। তাই নিজেই হাসপাতালে নিয়ে এসেছে।
মহিলার স্বামী ডাক্তার। নিজের স্বামীকে বলতে পারত অন্য যেকোনো অসুখ বিসুখ হলে। এত বছর তাই করে এসেছে। কিন্তু এবার তো কুলাংগার ভাই জড়িত। এখন তাই মেডিকেলএ এসে ইমারজেন্সির শরনাপন্ন হয়েছেন।
মেয়েটা ভাইয়ার হাত ধরে অনুরোধ করে ভাই আমার কেউ নাই। আমি আপনাকে ভাইয়ের মত বলছি। আমি বাঁচতে চাই। এরা যদি জানে আমার পেটে তার সন্তান এরা আমাকে বাঁচতে দিবেনা। আমি এতদিন লুকিয়ে রেখে এসেছি।
এখন আর পারছিনা। আপনি শুধু বলেন আমার অন্য কোনো অসুখ করেছে। গ্রামে পাঠিয়ে দিলে ভাল। আমি গ্রামে চলে গেলে নিজে বাঁচব। সাথে পেটের সন্তানকেও যেভাবে পারি বাঁচাবো।
এরা আমাদের ২ জনের কাউকেই বাঁচতে দিবেনা ভাই। আপনি যেভাবে পারেন আমাদের বাঁচান!!!
মেয়েটির এই আকুতি, বেচে থাকার এই আকাংখা ভাইয়াকে স্পর্ষ করে। কিন্তু কি করতে পারেন উনি মেয়েটির জন্য!!!
একদিকে মানবিকতা অন্য দিকে ডাক্তারী বিদ্যা!! কোনটাকে বেছে নিবেন তিনি??
বেছে নিলেন মানবিকতাই। ঐ বদমাইশ মহিলাকে ডাকলেন। মেয়েটির প্রেগনেনসির কথা কিছুই বললেন না।
বললেন- না এমনি ইনফেকশন হয়েছে। আপনাদের সাথে থাকলে ইনফেকশন ছড়াতে পারে। বরং অন্যকোথাও পাঠিয়ে দেন। ওখানে সুস্থ হয়ে তারপর ফিরে আসুক।
জানিনা মহিলা হয়ত ভাইয়াকে ভুয়া ডাক্তার মনে করবে না কি কি মনে করবে।
ভাইয়া ততক্ষনে ঐ বদমাইশ মহিলার কাছে ভাল থাকার প্রয়োজন নেই বলে মনে করছেন।
সেটাই তো!! এক ভাইয়ের কাছে কার স্বার্থ আগে? এক বোনের নাকি এক হাই সোসাইটি ভদ্রমহিলার ?
হাই সোসাইটির মহিলাকে মনে পড়লে অদ্ভুত আঁধার দেখি, অন্ধ একটি সমাজ দেখি। যাদের সুপরামর্শ ছাড়া পৃথিবী অচল। যাদের মনে প্রেম নেই, মায়া নেই, করুনা নেই। অদ্ভুত আঁধার এবং অন্ধ একটি সমাজ ।
আগের ঘটনাগুলো:
ঘটনা-১
ঘটনা-২
ঘটনা-৩
ঘটনা-৪
ঘটনা-5
ঘটনা-৬ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।