আসলে মানুষ কি আজব প্রানী আমি বুঝে পাইনা....এই মানুষই ভালবাসে, এই মানুষই ধোকা দেয়, এই মানুষই ঘৃণা করে, এই মানুষই মানুষ হত্যা করে আবার মানুষ ই জন্ম দেয় আরেক মানুষ, সৃষ্টি করে মানুষ....ধব্ংস ও করে মানুষ।
আগের লেখা ঘটনা-
ঘটনা-৪
ঘটনা-5
ঘটনা-৬
রোগীর নাম- মর্জিনা বেগম
বয়স- ৫০ বছর
অভিভাবক- ছেলে (বয়স- ৩০ বছর)
ঘটনা:
মর্জিনা বেগম হাসপাতালে যখন এসেছিলেন তখন উনার ঘাড় একদিকে পুরা বাঁকানো। দাঁড়াতে পারছেন না। উনার সাথে ছেলেটা শক্ত করে ধরে দাড় করি্যে রাখছে। তারপরও উনাকে দাড় করিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছেনা।
মামা হুইল চেয়ার নিয়ে আসল। ওখানে বসানো ও যাচ্ছেনা উনাকে। বেকে যাচ্ছেন। উনার ছেলেটা আতংকিত চোখে একে তাকে অনুরোধ করে যাচ্ছে তারাতারি চলেন ....তারাতারি উপরে চলেন..। তারাতারি মার চিকিতসা শুরু করতে হবে।
উনার মা কে নিয়ে উপরে আসা হল। উনার চিকিতসা শুরু হল।
উনার মা স্ট্রোক করেছেন। এক দিকে প্যারালাইজড হয়ে গেছে। উনি একদিক একেবারেই নাড়াতে পারছেন না।
সোজা হয়ে বসতেও পারছেন না। কথা বলছেন। কিন্তু স্পষ্ট না। মায়ের হঠাত এই পরিবর্তনে ছেলে স্তব্ধ হয়ে গেছে।
খাস না কেনো বাবা, কেনো কাপড় গুছিয়ে রাখিস না..ঘর গুছিয়ে রাখিসনা কেনো, পড়তে বসলিনা কেন, সন্ধ্যায় বাসায় ফিরিসনা কেনো, খাওয়া রেডি খেতে আয় তারাতারি, আর জালাসনে আজকে, তোদের জ্বালায় আর পারিনা.....কোথায় হারিয়ে গেল এগুলা? কোথায় পাবে তার মাকে আবার? মা আবার কবে বকা দিবে? আবার কখন মায়ের সাথে ছোটখাটো খুনসুটি হবে? মা তুমি তারাতারি ঠিক হয়ে যাও ...তোমাকে ছাড়া আর পারছিনা।
ছেলে আর্তনাদ করে কিন্তু কেউ শুনতে পায়না। ছেলের চোখ দিয়ে সমানে দড়দড় করে পানি পড়ছে।
" মা কি আর কোনো দিন ঠিক হবে না? আগের মত হবেনা আর?"
"হবে কিনা বলা যাচ্ছেনা, তবে চেষ্টা চালিয়ে যান, ঠিক হয়ে যেতে পারেন, একটা সম্ভাবনা আছে" ম্যাডাম বললেন
"কতদিন পরে মা ঠিক হবেন?"
"সেটাও নিশ্চিত না, আসলে কয়েকদিন না গেলে বলা যাবেনা"
ছেলের মনে আতংক গেলনা কিন্তু কিছুটা হলেও আশার সন্চার হয়েছে। ডাক্তার বলেছে মা আবার সুস্থ হয়ে যাবেন। মা সুস্থ হতে পারে.....মায়ের এখনো সম্ভাবনা আছে।
মা তুমি সুস্থ হয়ে যাও। আমি আর তোমাকে জ্বালাবো না।
ছেলেটিকে দেখতাম প্রতিদিন মা র জন্য সকালে স্যুপ নিয়ে আসত। নিজে হাতে বাটিতে ঢালত। চামচ দিয়ে আসতে আসতে করে মা কে খাইয়ে দিত।
প্যারালাইজড মা। মুখে খাবার ধরে রাখতে পারেন না। খাবার পরে যেত। ছেলেটি টাওয়েল দিয়ে মুছে দিত। আবার মুখে স্যুপ তুলে দিত।
ছেলেটির চোখের কোনায় দেখতাম পানি। একটু মুখ ঘুরিয়ে হয়ত চোখ মুছে নিত। আবার খাওয়াতে শুরু করত।
দুপুড়ে দেখতাম নিজে হাতে ভাত মাখিয়ে খাওয়াচ্ছে। সন্ধ্যায় দেখতাম বই পড়ে শুনাচ্ছে।
মায়ের ফিজিওথেরাপি দরকার ছেলে সাথে যাচ্ছে।
একটা সময়ে অবাক হলাম । অন্য কেউ কি নেই বাসায়? পরে শুনলাম বাবা নেই। বড় ভাই আছে। স্পেনে থাকে।
তাই মায়ের পাশে থাকার মত আপাতত এই ছেলেটিই আছে। একটা বায়িং হাউসে কাজ করত। কিন্তু এখন চাকরির চিন্তা বাদ। পুরোটা সময় মার পাশে।
রাতে তো মহিলা ওয়ার্ডে ছেলে ঘুমাতে পারেনা।
তাহলে রাতে কি করেন? নিজে চোখে দেখলাম.....কি বলব? এখনও এমন সন্তান পৃথিবীতে আছে!! ছেলেটি মহিলা ওয়ার্ডের সামনে যে দরজা সেখানে মেঝেতে শুয়ে থাকে। ওখান থেকে লক্ষ্য রাখে মায়ের কিছু লাগবে কিনা। সিস্টারকে বলে আছে। কোনো সমস্যা হলে ছেলে তো হাজির।
১৫ দিন উনারা হসপিটাল এ ছিলেন।
আমি শুধু ছেলেটার মমতা দেখতাম মায়ের প্রতি। এমন ছেলে কি ঘরে ঘরে জন্মায়??
অসুস্থ মা.....কিন্তু তার গর্বিত চোখ আমি দেখতাম। সবাই সন্তানের কাছে থেকে এই কর্তব্যপরায়নতা পান না। ধন্য উনি। ধন্য হয়েছেন উনার সন্তানের জন্য।
১৫ দিন পরে যেদিন চলে যাবেন.....ছেলেটিকে বলা হল আপনি এই ভাবে চিকিতসা চালাবেন।
ছেলেটি বলল- মা পুরো আগের মত হয়ে উঠবে তো?
আহারে বেচারার এই আশা কিভাবে ভেংগে দেয়া যা্য!!
"না পুরো সুস্থ না হলেও অনেক রিকভারী করবেন....."
"না না আমি চিন্তা করে দেখলাম এভাবে উন্নতি করতে থাকলে মা পুরো সুস্থ হয়ে উঠবেন...ঠিক না?" ছেলেটিকে আশাহত করা গেলনা....এই চোখে তাকিয়ে কেউ প্রশ্ন করলে তাকে আশাহত করা যায়না।
"হা.....চেষ্টা চালিয়ে যান"
" আমি পুরো চেষ্টা চালাবো" দৃঢ় প্রত্যয় ছেলেটির কন্ঠে
মর্জিনা বেগম ছেলের সাথে চলে গেলেন....দুর থেকে অনেকক্ষন দেখলাম।
মাঝে মাঝে এই ছেলেটির কথা মনে পড়লে একটা ছড়া মনে পরে যায়....যদিও হয়ত এইছড়াটা এজায়গায় অপ্রাসংগীক।
ছোটো বেলায় পড়েছিলাম, জাতীয় কবির লেখা-
মা গো! আমায় বল্তে পারিস
কোথায় ছিলাম আমি-
কোন্ না-জানা দেশ থেকে
তোর কোলে এলাম নামি?
আমি যখন আসিনি, মা
তুই কি আঁখি মেলে
চাঁদকে বুঝি বল্তিস-
ঐ ঘর-ছাড়া মোর ছেলে?
শুকতারাকে বল্তিস কি,
আয় রে নেমে আয়-
তোর রূপ যে
মায়ের কোলে বেশি শোভা পায়।
কাজলা দিঘির নাইতে গিয়ে পদ্মফুলের মুখে
দেখ্তিস কি আমার ছায়া, উঠ্ত কাঁদন বুকে?
গাঙে যখন বান আস্ত,
জান্ত না মা কেউ-
তোর বুকে কি আসতাম আমি
হয়ে স্নেহের ঢেউ?...
সবাই মায়ের সুসন্তান হয়ে বেচে থাকুক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।