আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আকাশেই কি দীপু মনির বাড়ি?

খুজে ফিরি আমি আলোর ঠিকানা। রাজার নেই যে ধন টুনার আছে সেই ধন এই রুপকথার গল্পের ঠিক টুনাই যেন আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি। কেননা যতই ক্ষমতার দিন একটু একটু করে শেষ হয়ে আসছে পরিসংখ্যান অনুযায়ী ততই ব্যস্ততার সাথে এলমেলোভাবে যেন দীপু দিদির বিদেশ সফর বেড়েই চলছে। শুধু গতমাসেই সে বিভিন্ন দেশে ৩০ দিনের মধ্যে ১৯ দিন বিদেশের মাটিতে কাটিয়েছে। গত মাসের তার সফরসুচীটি এমন ছিল যে সমুদ্রসীমার সালিসি মামলা নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটনে যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফুজিয়ানে যান চীনের আনন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অংশ নিতে। এরপর কাজাখস্তানে এশিয়ার দেশগুলোর আন্ত সম্পর্ক সম্প্ররসারণ (সিকা) বিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে। এটা শেষ করে জেনেভায় আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার আয়োজনে সংলাপে অংশ নেন তিনি। এই সংলাপ শেষে জাতিসংঘের ৬৭তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে যাত্রা। ঠিক এমন করেই তার বিদেশ ঘোরা হচ্ছে দিব্যি।

এবার আসি মুল পরিসংখ্যানে ক্ষমতায় ২০০৯ সালে আসার পর থেকে ঐ বছর সে মোট ৩৪ বার বিদেশ সফরে যায়। পরের দুই বছরে তা বেড়ে যথাক্রমে ৩৭ এবং ৪৪ এ উন্নিত হয়। আর চলতি ১০ মাসেই সে এই পর্যন্ত ৩৪ বার সম্পুর্ন করে ফেলেছে। বাকি দিনগুলোতে আরো কতদিন আছে তা হয়তো সে নিজেও জানেনা। দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ৪৬ মাসে দীপু মনি ১৪৯ বার বিদেশে গেছেন।

দেশের বাইরে থেকেছেন ৪৫২ দিন। সফরসূচি থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। দীপু মনির খসড়া সফরসূচি অনুযায়ী, নভেম্বরে চারটি সফরে দুই সপ্তাহ বিদেশে থাকার কথা রয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, একজন মন্ত্রীর বিদেশ সফরের সময় নির্দিষ্ট হারে হাতখরচ, দৈনিক ভাতা, ট্রানজিট ভাতা, টার্মিনাল ভাতা, আপ্যায়ন ভাতা, প্রতিনিধিদলের দলনেতা হিসেবে আনুষাঙ্গিক ভাতা, বিমানবন্দর কর ও বিমানভাড়া বরাদ্দ দেওয়া হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ২০০৯ সালের বিদেশ সফরের খরচ-সংক্রান্ত কিছু কাগজ ঘেঁটে দেখা যায়, ১৩টি সফরের ১০টি পৃথক বরাদ্দপত্রে দীপু মনির জন্য মোট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৬৬ লাখ ৭৮ হাজার ৮৫ টাকা।

এর মধ্যে বিমানভাড়া বাবদ দেওয়া হয়েছে ৪৮ লাখ ৮৩ হাজার ৯৯০ টাকা। সত্যিই মাথা খারপ করার মত তার আমলনামা। অথচ এরা একবারও কি ভেবে দেখেছে এই টাকা দিয়ে দেশের কতগুলো মানুষের ভাগ্য বদলে দেয়া যেতে পারত? না করেনি এরা কারন বিলাসিতাই এদের এখন একটা লক্ষ হয়ে দাড়িয়েছে। মহাজোট সরকার হয়তো এখন পুরোপুরিভাবেই ভুলে গেছে তাদের নির্বাচনী ইশতেহার। তথ্য অনুযায়ী দীপু মনির সফরগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হচ্ছে সেমিনার কিংবা আলোচনা অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক।

সুতরাং তার এই সফরগুলো আমাদের দেশের যে সকল কাজে লেগেছে তার মধ্যে এক নাম্বারে রাখা যেতে পারে আমাদের বৈদেশিক শ্রমাবাজার সম্পুর্নভাবে শেষ হওয়া আর দ্বিতীয়তে রাখা যেতে পারে আমরা যে সৌখন জাতী তার প্রমান দেওয়া বিশ্ব বাজারে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এ সফরগুলোর মধ্যে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হয়েছেন ৩৯ বার। দ্বিপক্ষীয় সফরে গেছেন ১৫ বার। অবশিষ্ট ৯৫টি সফর হচ্ছে বহুপক্ষীয়, অর্থাৎ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামের বৈঠকের আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য। বাহ! কি সুন্দর আমাদের এই সমাজ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর ১৪৯ বারের বিদেশ সফরে এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, ওশেনিয়া এবং আফ্রিকা মহাদেশের ৬৩টি দেশে গেছেন। এর মধ্যে ১০ বার, অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি সফর করেছেন যুক্তরাজ্য। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খান দীপু মনির তুলনায় বেশ কমই বিদেশে গেছেন। পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনকালে তিনি বিদেশে গেছেন ৬০ বারের মতো। অবশ্য তখন এই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন রিয়াজ রহমান।

ফলে কিছু সম্মেলন ও সভায় প্রতিমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট বিভাগের মহাপরিচালক, রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনাররা প্রতিনিধিত্ব করেছেন। না গেলেই নয়! পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ১৪৯ বার বিদেশ সফরের মধ্যে ৯৫টি সফরে গেছেন বহুপক্ষীয়, অর্থাৎ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামের বৈঠকে অংশ নিতে। সার্ক, জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন ও কমনওয়েলথের মতো গুরুত্য¡পূর্ণ ফোরামে যোগ দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু এর বাইরে নিয়মিতভাবে অন্য বৈঠকে যোগদান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। একটি উদাহরনঃ ঢাকায় কর্মরত কূটনীতিকেরা জানিয়েছেন, গত বছরের নভেম্বরে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনকে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানিয়ে অনুষ্ঠানের মাঝপথে তাঁর ভারতযাত্রার বিষয়টি অনেকেরই নজর এড়ায়নি।

সামুদ্রিক সম্পদবিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের এক বৈঠকে যোগ দিতে তিনি গত বছরের ১৪ নভেম্বর রাতে বেঙ্গালুরুর উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। অথচ ওই সভায় স্বাগতিক ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন ভারতেরই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তার আমল নামায় আরও আছে ২০১২ সালের প্রথম নয়মাসে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনীর হাতে ২৮ জন বাংলাদেশী নিহত। হিইম্যান রাইট ওয়াচের ৮১ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান অনুসারে ২০১০ সালে বি এস এফ দ্বারা একশরো বেশি মানুষ নির্যাতিত হয়েছে। একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকেই ৯০০জন বাংলাদেশী মানুষ হত্যা করে বি এস এফ।

এদের মধ্যে বেশিরভাগই হত্যা করা হয় সিমান্তে ভারতীয়দের খেয়াল খুশি মত। সুতরাং দেখা যাচ্ছে প্রায় প্রতিটি সরকারই পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে দায়িত্ব্য দিয়েছিল সকল অযোগ্য লোকজনদেরকে। অথবা তাদের নিজস্ব স¦ার্থ রয়েছে সীমান্ত হত্যার মধ্যে। কিন্তু সবার ব্যর্থতাকে ছাপিয়ে এখন দীপু মনি শীর্ষে রয়েছেন। ক্ষমতায় আসার প্রথম ৩৪ বার ভ্রমনের একটা ব্যাখা না হয় দেয়া যেতে পারে।

কিন্তু এর পরের বছর থেকেই সরকারী টাকায় এক ঘন ঘন বিদেশ সফরের যৌক্তিকতা নিয়ে একটা প্রশ্ন থেকে যায়। নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম বছরে বিভিন্ন ফোরামে নিয়মিত অংশ নেওয়ার মাধ্যমে নিজেকে পরিচিত করা এবং অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলা, এটাই মুখ্য উদ্দেশ্য। কিন্তু বাস্তবে আমরা কি দেখছি? আমরা দেখব যে বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্বের সাথে আমাদের দিন দিন দুরত্ব্য ব্যাপক ভাবে বেড়েই চলেছে। আর এ মতপার্থক্য দূর করতে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দীন খান বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেন, পৃথিবীর কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রী এত ঘন ঘন বিদেশ সফর করেছেন বলে তো শুনিনি! আমাদের দেশে এমন কী সমস্যা তৈরি হলো কিংবা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে প্রভাব সৃষ্টির এমন কোনো ক্ষমতা কি আমরা অর্জন করেছি, যে জন্য তাঁকে বারবার বিদেশে যেতে হবে।

তা ছাড়া বিদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো বিনিয়োগও তো আসেনি। ভারত ও পাকিস্তানের কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদেশে কোনো বৈঠকে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নিজ দেশের স্বার্থ ও প্রভাবের বিষয়টি বিবেচনায় থাকে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের। আর প্রতিমন্ত্রী থাকায় ভারত ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বিদেশ সফরে সমন্বয় থাকে। এ ছাড়া মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে গুরুত্ব বিবেচনা করে কখনো কখনো জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকদের প্রতিনিধি হিসেবে পাঠায় ভারত ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু শুধু ব্যতিক্রম আমাদের দেশের দীপু মনিই।

তিনি আসলেই কি দেশের ভাবমুর্তি উজ্জল করছেন নাকি এই বাতি একেবারেই নিভিয়ে দেয়ার লক্ষে কাজ করছেন সেটাই এখন একটা বড় প্রশ্ন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।