আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হিরু ও সুপারম্যান জিম-এ

যা শিখেছি, সেখান থেকেই কিছু বলার ও করার চেষ্টা করি হঠাৎ করেই হিরুর কি যেন হল, সে জিম করবে। বডি বিল্ডআপ করবে। যে কথা সেই কাজ। খোঁজ নিতে গেল জিমে। প্রতি মাসে জিম খরচ ৪০০ টাকা।

কিন্তু আজ মাসের এগার তারিখ। আজ থেকে শুরু করলে এগার দিন কম করেই পুরো মাসের খরচ বহন করতে হবে। এটা মেনে নেয়া যায় না। জিম কর্তৃপক্ষের আবার ১৫ দিনের পাল্স এর ব্যবস্থা নেই। ঠেকায় পরেই হিরুর সিদ্ধান্ত আগামী মাস থেকেই শুরু করবে।

কিন্তু আগামী ১৯ দিন কি বসে থাকবে। উত্তেজনা তো আর ধরে রাখা যায় না। ঘরে বসেই শুরু হয়ে গেল জিম। দিন নেই রাত নেই সুযোগ পেলেই ৮-১০টা বুকডন, পানির বোতলকে ডাম্বল বানিয়ে মাসল উন্নয়ন, কাপড় চিপরানোর সময় হালকা একটু প্র্যাকটিস এমনকি তালা লাগানোর সময়ও অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ ইত্যাদি। এসব করে করেই মুটামুটি মাস শেষ।

এসে গেল কাঙ্খিত ১ তারিখ। মাসের প্রথম দিন। শুক্রবার। এই বারটাতে আবার জিম বন্ধ থাকে। অপেক্ষার মেয়াদ বাড়লো আরো চব্বিশ ঘন্টা।

যাক, চব্বিশ ঘন্টা পার হয়ে এবার গন্তব্যে হিরু। প্রথমদিন গিয়েই দেখে সবাই বিশাল বিশাল দেহের অধিকারী। এদের সামনে হিরোর দেহ নগন্য। তাতে কি, এই দেহ দেহ নয় আরো দেহ আছে, এই দেহরে নেব আমরা সেই দেহের কাছে। শুরু হলো হিরুর দেহ গঠন।

একবার এইটা আবার ওইটা। প্র্যাকটিস চলতেই আছে ক্রমান্বয়ে। হঠাৎ হিরু দেখে সুপারম্যান জিমে বিশাল বিশাল দুইটা ডাম্বল নিয়া সমানে রাউন্ড দিচ্ছে। দেখেতো হিরু রীতিমত থ। আরে সুপারম্যান ভাই ।

আপনি এখানে! হতাশ ভঙ্গিতে সুপারম্যান বলল, হ্যারে ভাই। দিনকাল ভাল যাচ্ছে না। ইদানিং কোন সিরিয়ালের অফার পাচ্ছি না। এদিকে শরীরটাও পরে যাচ্ছে। বয়সতো বাড়ছে।

বাবা-মা অন্য গ্রহের মানুষ হলেও তাদেরওতো বয়স বাড়তো। আমিতো তাদেরই সন্তান। মহামানব হইতে পারি, অমানুষ তো আর না। হিরোও মুখটা বেজাড় করে প্রশ্ন করলো, সিরিয়ালে অফার বন্ধ কেন? আরে, এখন সুপারম্যানের চাইতে টম ক্রুজের পাওয়ার বেশি। দেখনা সব ইম্পসিবলকে পসিবল বানাইয়া ফেলছে।

আর একটা মানুষ সব কাজ কিভাবে পারে! নৌকা বল, গাড়ী বল, প্লেন বল আর রকেট বল সবই চালাইতে পারে। আমি আর যেইটা পারি আর না পারি প্লেনতো আর চালাইতে পারি না। এর জন্যই চাহিদায় পিছিয়ে যাচ্ছি। আবার আগে শুধু ভিলেনের হাতেই সবুজ আলো থাকতো। এখন যেখানে সেখানে সবুজ লাইট।

ইভেন কম্পিউটারের ‘ক্যাপ্স লক’ অন করলেও সবুজ বাত্তি জলে। তাই আমি ওই মেশিনটাও চালাইতে পারিনা। এই জন্যে আমার ফেইসবুকেও আইডি নাই। তাই সাবসক্রাইবড ফ্যানও নাই। কিন্তু টম ক্রুজের ফ্যান কয়েক লাখ।

হিরু সুপারম্যানের দুঃখে দুঃখিত হইয়া বেশকিছুক্ষণ নীরবতা পালন করে ক্ষোভ ও সমবেদনা প্রকাশ করলো। এরপর বললো, ভাই আপনার মত বিখ্যাত হতে কি করতে হবে? আপনিতো আল্লাহর রহমতে খুব তাড়াতাড়ি বিখ্যাত হয়ে গেছেন। উত্তরে সুপারম্যান বললো, দেখ, সবসময় সবাই যেটা করে তুমি ঠিক তার উল্টাটি করবা। যেমন ধর, রাতকানারা রাতে চোখে কম দেখে আর আমি দিনে চশমা পড়ি রাতে পড়ি না, আবার মনে কর দিনে সবাই কাপড় কম পড়ে আর আমি দিনে সুট পড়ি আর রাতে গেঞ্জি। আর প্যান্টের উপর আন্ড......র পড়ার বিষয়টি তো আছেই।

আর হ্যা, সব সময় রংচটা জামাকাপড় পড়বে। তাতে সকলের চোখে পড়তে সুবিধে হয়। হিরু তো বেজায় বিপদে পড়ে গেল। সবাই যা করে তার উল্টোটা কেমনে করবে? একবার চিন্তা করে সিগারেটের ফিল্টারে আগুন ধরিয়ে সামনে দিয়ে টানবে আবার ভাবে এটা কিভাবে সম্ভব? বাম হাত দিয়েও তো খাওয়া সম্ভব নয়। য়্যা... ভাবতেই কেমন লাগে।

অনেক কষ্ট করে হিরু পোশাকের বিষয়টি ঠিক করলো। লাল পাঞ্জাবি ইন করে পড়বে, আর পাঞ্জাবির উপর হলুদ রঙের সেন্টু গেঞ্জি পড়বে( সুপারম্যান যেহেতু নিচের সাইটটায় পরিবর্তন এনেছে তাই এখন পরিবর্তন আনার জন্য বাকি আছেই উপরের সাইট। প্যান্ট হবে কলাপাতা রঙের। তিনটি কালারই চোখে লাগার মত। আর ঠিক করলো রাতের বেলায় সানগ্লাস পড়বে।

যে ভাবনা সেই কাজ । হিরু প্রতিদিন জিমে যায় এই পোশাক পড়ে। সবার কাছে মুটামুটি উল্লেখযোগ্য ভাবেই চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু সেটা কি হিরোর মত? মোটেই না। অসুভাকাঙ্খিরা তার এই কিম্ভূতকিমাকার মার্কা আচরন দেখে তার নাম দিয়েছে “সেন্টু গেঞ্জি বাবা(হলুদ)”।

সে এক মহা মুসিবত। এই গেল পোশাক। এবার আসি বডিতে। সেদিন কাঁদার রাস্তায় খাদে পড়ে এক গাড়ি আটকে গেছে। অনেকে টানাটানি করেও গাড়ি তুলতে পারছে না।

এদিকে বেশ কিছুদিন জিম করে হিরুর শরীর এখন বেশ হষ্টপুষ্ট। সে চিন্তা করলো এই এক সুযোগ বিখ্যাত হবার। একটানে যদি গাড়ি তুলে দিতে পারি তাহলেই হিট। বিশাল এক পাঠ নিয়ে হিরু গেল গাড়ির সামনে। আজব পোশাক পড়া এক লোককে আসতে দেখে সকলে থ হয়ে দাড়িয়ে রইল।

সো হোয়াট! নো তোয়াক্কা বাই হিরু। গাড়ির সামনে গিয়ে বাম্পার ধরে এক টান মেরে তুলে নিয়ে আসলো। কি, মনে করেছেন গাড়ি তুলে নিয়ে আসলো? না, সে টান দিয়ে বাম্পারই তুলে ফেলেছে। এই দেখেতো গাড়ির ড্রাইভার তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো। আর হিরু তো নিজের কেরামতিতেই অবাক।

গাড়ির ড্রইভার লাগিয়ে দিল ঝগড়া। জরিমানা দিতে হবে। কিন্তু হিরু তো আর ভাঙার জন্যে টান দেয়নি। তাতে কি, মালিকের কাছে জবাবদিহিতো ড্রাইভারকেই করতে হবে। অবশেষে হিরুকে ধরে তার মোবাইলফোনটি কেড়ে নেয় ড্রাইভার সম্প্রদায়।

আর হিরু নিঃস্ব রিক্ত হয়ে ফিরে আসে ঘরে। রাগ হতে থাকে সুপারম্যনের উপর। তার জন্যেই হিরুর আজ এই অবস্থা। মোবাইলের মধ্যে সুপারম্যনের মোবাইল নাম্বারটা ছিল। মোবাইলও গেছে নাম্বারও গেছে।

যাক কাল জিমে গেলে ওকে পাওয়া যাবে । তখন ও আন্ড....র এর উপর ফুলপ্যান্ট যদি না পড়াইছি তাহলে হিরুর নাম হিরু না। পরের দিন জিমে গিয়েও সুপারম্যানকে পাওয়া গেল না। খবর পেয়ে সেও সটকে পড়েছে। এরপর সুপারম্যান আর হিরু কোনদিনই জিমে আসেনি।

সব ঘটনাই স্মৃতি হয়ে গেছে। রয়ে গেছে শুধু হিরুর নিক নেম “সেন্টু গেঞ্জি বাবা(হলুদ)” ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।