আমি একজন পর্যটন কর্মী। বেড়াতে, বেড়ানোর উৎসাহ দিতে এবং বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি। গ্রামীণ বাংকের ‘সার্বক্ষণিক’ ব্যবস্থাপনা পরিচালক নির্বাচনের জন্য গঠিত পরিচালনা পর্ষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দকার মোজাম্মেল হকের এককভাবে করা সিলেকশন কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন ঋণগ্রহিতাদের নির্বাচিত পরিচালক তাহসিনা খাতুন। আজ সকালে তিনি এই পদত্যাগপত্র জমা দেন বলে নয়া দিগন্তকে নিশ্চিত করেছেন।
তাহসিনা খাতুন চেয়ারম্যানের গঠন করা কমিটিকে ‘মনগড়া’ উল্লেখ করে এ কমিটিতে তার থাকা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে বোর্ড চেয়ারম্যানকে লেখা চিঠিতে তিনি বলেন, ‘আপনার কমিটিতে থাকা আমার সম্ভব নয়। ’
২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বোর্ডের ৯৭তম সভায় চেয়ারম্যান সিলেকশন কমিটি গঠন করেন। ওই সভাতেই পরিচালকমণ্ডলীর ঋণ গ্রহিতাদের নির্বাচিত ৯ জন সদস্য এটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
তাদের বক্তব্য ছিল, তারা ৯৩তম বোর্ড সভায় ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে যে কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, তা কার্যকর করাই অচলবস্থা নিরসনের একমাত্র উপায়।
গ্রামীন ব্যাংকের ৯৭ শতাংশ শেয়ারের মালিক গরিব ঋণগ্রহিতা নারীরা।
বাকি ৩ শতাংশের মালিক সরকার। আগস্ট মাসে সরকার গ্রামীণব্যাংক অধ্যাদেশ বদলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের জন্য পরিচালনা পর্ষদের সাথে আলাপ সাপেক্ষে একটি কমিটি গঠন করার কথা। কিন্তু ব্যাংকের চেয়ারম্যান খন্দকার মোজাম্মেল হক সেটি করেননি।
তিনি নিজেই কমিটির নাম প্রস্তাব করেন। ৯৭ তম বোর্ড সভার কার্যবিবরণীর একটি কপি নয়া দিগন্তের হাতে রয়েছে।
তার ৯৭.৩ এ লেখা রয়েছে, সভায় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান খন্দকার মোজাম্মেল হক সিলেকশন কমিটি গঠনের জন্য আলোচনার সূত্রপাত
করেন। এতে তিনি বলেন, গ্রামীণব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৮৩ সংশোধন করা হয়েছে। সম্প্রতি তা গেজেট আকারে প্রকাশও করা হয়েছে। সে অনুসানের একজন সার্বক্ষণিক ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের জন্য সিলেকশন কমিটি গঠন করা প্রয়োজন।
সভায় তিনি বলেন, সে জন্য ৫ সদস্যের একটি সিলেকশন কমিটি গঠন করা হবে।
এতে পরিচালকমণ্ডলীর ২ জন, বাইরে থেকে তিনজন থাকবেন। এ জন্য তিনি পরিচালকমণ্ডলীর পক্ষ থেকে এম শাহ আলম সারোয়ারের নাম প্রস্তাব করেন। একই সাথে তিনি ঋণগ্রহিতা সদস্যদের পক্ষ থেকে ১ জনের নাম প্রস্তাব করার আহবান জানান।
কার্যবিবরণীতে লেখা হয়েছে, খন্দকার মোজাম্মেল হক কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে ড. শাসুল বারীর নাম প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, ড. বারি জাতিসঙ্ঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক হাই কমিশনে কাজ করেছেন।
এছাড়া তিনি সোমালিয়ায় মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ দূত হিসাবে কাজ করেন। বর্তমানে তিনি আরআইবি নামে দরিদ্রবিষয়ক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তাছাড়া চেয়ারম্যান আরো দুজনের নাম প্রস্তাব করেন তারা হলেন ইন্সটিটিউট অব মাইক্রো ফিনান্সের নির্বাহি পরিচালক অধ্যাপক বাকী খলিলী ও আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট শিরিন শেখ মঈনুদ্দিন। সভার কার্যবিবরণী লেখা রয়েছে, পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচিত সদস্যরা এর বিরোধিতা করেন। তারা বলেন, ড. ইউনূসকেই প্রধান করে যে কমিটি করা হযেছিল ৯৩তম বোর্ড সভায়, সেটি যেন কার্যকর করা হয়।
আলোচনার একপর্যায়ে পরিচালক তাহসিনা খাতুন বলেন, সংশোধিত অধ্যাদেশে পরিচালকমণ্ডলীর সাথে আলাপ করে কমিটি গঠন করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু চেয়ারম্যান যে তিনজনের নাম প্রস্তাব করেছেন তাদের সম্পর্কে আমাদের কিছুই জানা নেই। তাই এটা নিয়ে আমাদের আলোচনারও কিছু নেই। আমাদের সাথে আলাপ আলোচনা ছাড়াই
চেয়ারম্যান খন্দকার মোজাম্মেল হক এদের নাম প্রস্তাব করেছেন তাই এ কমিটি নিয়ে আপত্তি আছে। এ ক্ষেত্রে তিনি পরিচালকমণ্ডলীর আগে প্রস্তাব করা কমিটি বাস্তবায়নের পক্ষে মতামত দেন।
কার্যবিবরণীতে লেখা হয়েছে, তাহসিনা খাতুনের বক্তব্যের জবাবে
পরিচালনা পর্ষদ চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘আপনাদের প্রস্তাবিত কমিটি কার্যকর করার কোনো সুযোগ নেই। ’ কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ড. ইউনূস কোর্টের রায় অনুসারে প্রায় ১০ বছর অবৈধভাবে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। তাছাড়া ড. আকবর আলী খান
বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালনের সময় গ্রামীণব্যাংকে অনেক অনিয়ম হয়েছে। তাকেও কমিটিতে রাখার সুযোগ নেই। খালেদ শামস সাহেব অসুস্থতার কারণে কমিটিতে থাকতে রাজি হননি।
তাই আপনাদের প্রস্তাবিত কমিটি কার্যকর করার সুযোগ নেই।
এ সময় তাহসিনা খাতুন সভায় বলেন, আমরা ব্যাংকের ৯৭ শতাংশ শেয়ারের মালিক। আইন পরিবর্তন করে আমাদেরকে আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তাই আমরাও আপনার প্রস্তাবিত সিলেকশন কমিটি মেনে নিতে পারি না।
বিতর্কের পর একতরফাভাবে খন্দকার মোজাম্মেল হক ড. শাসুল বারিকে চেয়ারম্যান করে সিলেকশন কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।