আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাবার বিষয়ে নীরবতা ভাঙলেন সঞ্জয় কন্যা ত্রিশালা

অবশেষে কয়েক মাসের নীরবতা ভেঙে মুখ খুলেছেন অস্ত্র মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বলিউডের অভিনেতা সঞ্জয় দত্তের মেয়ে ত্রিশালা দত্ত। সঞ্জয় দত্তের কারাদণ্ড, প্রিয় বাবার দুঃসময়ে পাশে না থাকার কারণসহ ভবিষ্যতে কেন বলিউডে পা রাখতে চান না, সে বিষয়েও কথা বলেছেন অভিমানী ত্রিশালা।
নিজের মনের কথা খুলে বলার জন্য ত্রিশালা বেছে নিয়েছেন তাঁর ব্লগকে। সম্প্রতি ত্রিশালা তাঁর ব্লগে লিখেছেন, ‘আপনারা সবাই হয়তো জানেন আমার বাবার ভাগ্যে কী ঘটেছে। অস্ত্র মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তাঁকে সাড়ে তিন বছর কারাভোগ করতে হবে।

এ বিষয়ে এত দিন কোনো কথা না বলায় আমাকে অনেক কটুকাটব্য শুনতে হচ্ছে। অনেকে বলছেন, আমি নাকি মানসিকভাবে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছি। কিন্তু তা ঠিক নয়। ’

ত্রিশালা লিখেছেন, ‘পরিবারের বড় মেয়ে হিসেবে আমাকে শক্ত থাকতেই হবে। আমার যমজ ভাই-বোন শরণ ও ইকরার সামনে ভালো একটি উদাহরণ স্থাপন করতে হবে আমাকে।

বাবাকে আমি অন্ধের মতো ভালোবাসি, আমৃত্যু এভাবেই ভালোবেসে যাব। তাঁর রক্ত বইছে আমার শরীরে। আমি তাঁর প্রথম সন্তান, তাঁর সবকিছু। ’

১৯৯৩ সালের মুম্বাই বিস্ফোরণ মামলায় অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে গত ২১ মার্চ সঞ্জয়কে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। বর্তমানে পুনের কেন্দ্রীয় ইয়েরাওয়াড়া কারাগারে বন্দী আছেন এই ‘খলনায়ক’ তারকা।

মামলায় সঞ্জয় এরই মধ্যে দেড় বছর সাজা খাটায় তাঁকে আর সাড়ে তিন বছর জেলের ঘানি টানতে হবে। শুরু থেকেই বিষয়টি নিয়ে ত্রিশালার আশ্চর্য নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল বিভিন্ন মহলে।

সঞ্জয়ের প্রথম স্ত্রী ও বলিউডের অভিনেত্রী প্রয়াত রিচা শর্মার মেয়ে ত্রিশালা। ত্রিশালার বয়স এখন ২৬ বছর, থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। বাবার দুঃসময়ে নিউইয়র্ক থেকে ত্রিশালার ভারতে না যাওয়ার ঘটনায় অনেকেই বেশ অবাক হয়েছিলেন।

অনেকেই ভেবেছিলেন, ভারতে না গেলেও অন্তত আদালতের রায় কিংবা সঞ্জয়ের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করবেন ত্রিশালা। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো কথা বলা তো দূরের কথা, অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে গণমাধ্যমের কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার পথ বেছে নেন তিনি। জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।

বাবার দুঃসময়ে নিজের নীরবতা প্রসঙ্গে সঞ্জয় কন্যা ত্রিশালা আরও লিখেছেন, ‘বাবার বিচার কার্যক্রম চলার সময় কিংবা কারাদণ্ডের আদেশ পাওয়ার পর আমি কেন ভারতে গিয়ে তাঁর পাশে দাঁড়াইনি, কেন আমি এ বিষয়ে কোনো কথা বলিনি, তা নিয়ে মনগড়া সব মন্তব্য করছেন অনেকে। এসব নিয়ে আমি খুবই বিরক্ত।

বাবা নিজেই হয়তো আমাকে এ বিষয় নিয়ে জনসমক্ষে কথা বলতে নিষেধ করেছেন—কখনো এমন প্রশ্ন কি উঁকি দিয়েছে অনুসন্ধানী কোনো মনে?’

‘২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসের পর থেকে আমি ভারতের মাটিতে পা রাখিনি। সে সময় মান্যতা ও বাবাকে ঘিরে নানা কেচ্ছা-কাহিনি প্রকাশ করছিল সংবাদমাধ্যমগুলো। তখন ভারতে গিয়ে আমিও নানা হয়রানির শিকার হয়েছিলাম। ট্যাবলয়েডগুলো নিয়মিত আমাকে ও বাবাকে নিয়ে মনগড়া সব খবর ছাপতে শুরু করে। প্রকাশিত বিভিন্ন খবরে দাবি করা হয়, বাবার সঙ্গে নাকি আমার একদমই বনিবনা হচ্ছিল না।

অথচ বিন্দুমাত্র সত্যতাও ছিল না সেসব খবরে। ’

‘ছয় বছর পর আবার কোনো নাটকের জন্ম দিতে চাইনি বলেই বাবার এমন দুঃসময়েও ভারতের মাটিতে পা রাখার সাহস আমার হয়নি। আমি চাইনি, আবার আমাকে ও বাবাকে ঘিরে ফালতু ও বানোয়াট সব কেচ্ছা-কাহিনি প্রকাশিত হোক। বর্তমানে আমার পরিবার চরম দুঃসময় পার করছে। আমার মনে হয়েছে, ভারতে গিয়ে নানা রসাল খবরের খোরাক হওয়ার চেয়ে নিউইয়র্কে থাকাটাই আমার ও পরিবারের সবার জন্য মঙ্গলজনক।

অথচ আপনাদের কেউ কেউ বিষয়টি নিয়ে আমার বিরুদ্ধে নানা কুত্সা রটাচ্ছেন। ভেতরের সবকিছু না জেনে হুট করে কারও সম্পর্কে আজেবাজে মন্তব্য করার প্রবণতা আমি মোটেও পছন্দ করি না। এ ধরনের আচরণ খুবই বিরক্তিকর ও অপ্রত্যাশিত। ’

প্রসঙ্গত, ১৯৮৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘অনুভব’ ছবিতে অভিনেতা ও টিভি ব্যক্তিত্ব শেখর সুমনের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন রিচা শর্মা। ১৯৮৭ সালে সঞ্জয় দত্তের সঙ্গে বিয়ে হয় রিচা শর্মার।

সে বছরই জন্ম হয় ত্রিশালার। ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯৬ সালে নিউইয়র্কে মৃত্যুবরণ করেন রিচা শর্মা। মায়ের মৃত্যুর পর নানা-নানির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস শুরু করে ৯ বছর বয়সী ত্রিশালা। মেয়ের দায়িত্ব বুঝে পাওয়ার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সঞ্জয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রেই স্থায়ী হয় ত্রিশালার ঠিকানা।

তবে মাঝেমধ্যে ভারতে বাবার সঙ্গে দেখা করতে আসত সে। ১৯৯৮ সালে মডেল রিয়া পিল্লাইকে বিয়ে করেন সঞ্জয়। কিন্তু ২০০৫ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। রিয়া পিল্লাই এখন প্রখ্যাত বাঙালি কবি-নাট্যকার মাইকেল মধুসূদন দত্তের বংশধর ও ভারতীয় টেনিস খেলোয়াড় লিয়েন্ডার পেজের স্ত্রী। রিয়ার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর সঞ্জয় তৃতীয়বারের মতো ছাঁদনাতলায় যান ২০০৮ সালে।

দুই বছর চুটিয়ে প্রেম করার পর গোয়ায় ঘরোয়া এক অনুষ্ঠানে সঞ্জয়কে বিয়ে করেন দিলনেওয়াজ শেখ ওরফে মান্যতা দত্ত। ২০১০ সালে বর্তমান স্ত্রী মান্যতার কাছ থেকে যমজ সন্তান উপহার পান সঞ্জয়।

একটা সময়ে বলিউডে অভিনয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ত্রিশালা দত্ত। এ প্রসঙ্গে ত্রিশালা তাঁর ব্লগে লিখেছেন, ‘বলিউডে কাজ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ও বোকামি।

বয়স কম থাকায় সে সিদ্ধান্তটা আমার মস্তিষ্কপ্রসূত ছিল না। আসলে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম, আমি কে এবং ভবিষ্যতে আমি কোথায় নিজেকে নিয়ে যেতে চাই। তবে এখন আমি অনেক খুশি এই কারণে যে, আমি বলিউডে পা রাখিনি। ভবিষ্যতে কখনোই ওই জগতে পা না মাড়ানোর পাকাপাকি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি আমি। ’।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.