আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেচে থাকার লড়াই ---- হাসপাতাল সুখে দুখে - ঘটনা: ৩

গতকাল থেকে এই সিরিজের কাহিনি লেখা শুরু করেছি। সারা পেয়েছি বেশ ভালই। ধন্যবাদ সবাইকে যারা কাহিনি পরেছেন এবং উৎসাহ যুগিয়েছেন। মেডিকেলের অভিজ্ঞতার ভালমন্দ সব কাহিনি আমি এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করব। ঘটনা-১ ঘটনা-২ আগের বারগুলোতে দুঃখের কাহিনিই খালি লিখেছি।

এবার একটু ভিন্ন কাহিনি লিখি। ঘটনা-৩: রোগীর নাম: আবুল হোসেন বয়স: ৫ বছর অভিভাবক: পিতা (কৃষক), মাতা( ঝি এর কাজ করেন গ্রামে) ঘটনা: আবুল হোসেন যখন মেডিকেলে আসে তখন মার্চ মাস। হালকা ঠান্ডা। রাতের বেলায় মেডিকেলে আসে। ঠান্ডার মধ্যে মাফলার চাদর জড়ানো তাই বুঝতে পারিনি।

যখনই খুলে ফেলল আমরা তো দেখে পুরো চমকে উঠলাম। কি বিশাল মাথা বাচ্চাটার! যেকোনো বড় মানুষের মাথার থেকেও বিশাল বড়। বাচ্চাটির জ্বর, মাথাব্যথা, এখন কানে শোনেনা, দাড়াতে পারেনা, খিচুনী এমন নানাবিদ সমস্যার কারনে তারা বাচ্চাটিকে এখন ঢাকা আনতে বাধ্য হয়েছে। এতদিন নোয়াখালিতেই চিকিতসা চলছিল। বাচ্চার বাবা কাকুতি মিনতি করে....দেখেন তিনটা মেয়ের পরে এটাই ছেলে আমার।

এটা মারা গেলে আমি শেষ হয়ে যাব! হায়রে ছেলেপ্রিতী। যাক সন্তান হিসেবে একটা মায়া তো থাকবেই বাবার। পরদিন স্যার এসে দেখলেন বাচ্চাটিকে। উনি সন্দেহ করলেন নিউরোগ্লায়োমা মানে ব্রেইন টিউমার। এটা শুনে ছেলের বাবার তো মাথায় হাত! তাহলে এখন উপায়?? বাচ্চাকে কি বাচানো যাবেনা? স্যার আনুষাংগিক চিকিতসা যা শুরু করার শুরু করে দি্যেছেন।

কিন্তু এই ব্রেইন টিউমারের চিকিতসার জন্য সার্জারী করা প্রয়োজন। খুব তারাতারি করতে হবে। হাতে সময় কম। উনারা বেশী দেরী করে ঢাকা এসেছেন। এখন সার্জারীর খরচ অনেক।

আবুল হোসেনের বাবা হিসাব নিকাশ করে দেখে এত খরচ এর যোগান দেয়া তার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব না। হসপিটালের বেড ভাড়াই তিনি দিতে পারছেনা। ওষুধ ও কিনতে পারছেননা। কি করবেন তিনি? আদরের সন্তান কে চোখের সামনে মরে যেতে দেখবেন? হাউমাউ করে কেদে ওঠেন আবুল হোসেনের বাবা। সামনে কোনো উপায়ই খোলা নেই।

সব জমিজমা, জমানো টাকা দিয়েও খরচে কুলাবেনা। এত অস হায় পিতা তিনি!! আমদের স্যার পিতার কান্না দেখছেন। হঠাত স্যার কি যেন ভেবে বিচলিত হয়ে উঠলেন। বললেন শুনেন কান্না কাটি করেন না। কান্নাকাটি করলে কোনো উপায় বের হবেনা।

একটা না একটা উপায় বের হবেই। সময় হাতে কম। তারপরও কিছু সময় দেন। দেখি আমি কিছু করতে পারি কিনা। স্যার সেদিন রাতে অনেক ভাবলেন।

অনেক ছাত্রছাত্রীর সাথে কথা বললেন, পরে নিজে একটা প্লান দাড়া করালেন। সময় কম...এর মধ্যেই কিছু একটা করতে হবে। স্যার নিজের এবং কলিগদের পাওয়া ওষুধ দিয়ে চিকিতসা চালাতে থাকবেন। নিজে উদ্যোগী হয়ে হসপিটাল ডিরেকটরের কাছে থেকে বেড ফ্রি করে নিয়ে আসলেন। মানে হসপিটাল এ থাকার খরচ ও মাফ হয়ে গেল।

এখন সার্জারীর খরচ। নিজেই উদ্যোগী হয়ে তিনি নিউরোগ্লঅমার উপর একটি সেমিনার করবেন। একটা ওষুধ কোম্পানীকে বলা হল। ওষধ কোম্পানিটিও বাচ্চাটার পাশে দাড়াতে সানন্দে রাজি। তারা সেমিনারে বাচ্চাটার জন্য কিছু টাকা দিবে।

সেমিনারের আগে দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের কাছে থেকে ফান্ড কালেক্ট করা হবে। যে যত পারে। সেমিনারে যারা উপস্থিত হবে তারাই ফান্ড দেবে। নিউরোগ্লায়োমার ব্যাপারে তারা জানবে এবং বাচ্চাটার জন্য কিছু সাহায্য দিয়ে যাবে। সেমিনারের আগে দিয়ে অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের সবার কাছে থেকে সাহায্য প্রার্থনা করা হল।

একদিনের মধ্যে যে যত পারে সাধ্যমত দিল। তাদের সবাইকে সেমিনারে আমন্ত্রন জানানো হল। সেমিনারের দিন....আমরা উতকন্ঠার মধ্যে আছি। আবুল হোসেনের জন্য প্রয়োজনীয় ফান্ড পাওয়া যাবে তো!!! সেমিনার শুরু হল। সবাই আবুল হোসেনের কথা জানল।

নিউরোগ্লায়োমার ব্যপারে জানল। এর চিকিতসার খরচের ব্যপারে জানল। তারপর ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের উদোগে একদিনের মধ্যে সংগ্রহ করা ফান্ড স্যারের হাতে তুলে দিল। ৬৬ হাজার টাকা ওখানে। অন্যান্য ডিপার্টমেন্ট থেকে উঠেছে প্রায় ২৫ হাজারের মত।

স্যার নিজের ডিপার্টমেন্ট থেকে দিলেন ১০ হাজারের মত। প্রায় লাখখানেক টাকা সংগ্রহ হল। এর সাথে ওষুধ কোম্পানী থেকে হাজার ২৫ টাকা পাওয়া গেল। এখন আবুল হোসেনের চিকিতসার সব বাধা দুর হয়েছে। বাবার মুখে হাসি দেখা গেল ।

সন্তানের চিকিতসা তারা করাবেন। কিন্তু গ্রামে মেয়ে তিনটাকে একা ফেলে রেখে এসেছেন। তিনি ওটার একটা বন্দবস্ত করে আসতে চান। আবুলের বাবা সেদিনই আবলকে সহ গ্রামে চলে গেলেন। পরদিন আমরা দুঃসংবাদ পেলাম।

আবুল আর নেই। যার জন্য এত উদ্যোগ সে সেই বিনা চিকিতসাতেই চলে গেল। স্যার হতাশ হলেন। কিন্তু ভেংগে পরলেন না। ঐ ফান্ড পরে আরেকটি গরীব শিশুর জন্য ব্যয় করলেন।

সে ঘটনা আবার পরে বলব। কিন্তু কোনো না কোনো উছিলায় শত ডাক্তার কে তো তিনি এক কাতারে আনতে পেরেছিলেন যেখানে সবার মনোভাব ছিল আবুলকে বাচাতেই হবে। আবুল বাচেনি কিন্তু তার উছিলায় তোলা ফান্ড দিয়ে আরেক শিশু বেচে বাড়ি ফিরে গেছে..। কোনো না কোনো মায়ের কোল পরিপুর্ন আছে। আবুলের আত্মার শান্তি কামনা করি।

আমরা শুনেছিলাম বাংগালী একা একশ হতে পারে কিন্তু একশ বাংগালী এক হতে পারেনা। কথাটা ভুল। আবুলের জন্যই আমরা জেনেছি আমরা একশ বাংগালী দরকার হলে আবার এক হতে পারি। শুধু দরকার একটা বাহানার। আবুল...... যেখানেই থাকো বাবা ভালো থেকো।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.