আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সচেতন এবং অবচেতন মনের পার্থক্য এবং জীবনে এদের ইতিবাচক প্রয়োগের উপায়

কখগ নিজেকে বদলে ফেলতে চাইলে সাব-কনশাস আর কনশাস মাইন্ডের পার্থক্য জানাটা খুব জরুরী । কারণ আমাদের চরিত্রের অভ্যাসগুলো আমাদের সাব-কনশাস মাইন্ড দ্বারা পরিচালিত । অথচ আমাদের মনের সচেতন এবং অবচেতন অংশের ব্যপারে জানলেও এদের ফাংকশন অথবা কার্যপ্রণালীর ব্যপারে আমরা আসলে খুব একটা জানিনা বললেই চলে । বিশেষ করে সচেতন এবং অবচেতন মনের গুরুত্বপুর্ণ পার্থক্যগুলো জানতে আপনাকে সাইকোলজির টিচার হতে হবে না বলেই আমার বিশ্বাস । বরং আমাদের মন কিভাবে কাজ করে এ ব্যপারে সচেতনতা আমার জীবনে খুব বড় একটা আশীর্বাদ হয়ে এসেছে, আমার প্রতিটা কাজ কিভাবে আমার অবচেতনে বড় বড় ভূমিকা রেখে চলছে সে ব্যপারে জানার পরই আমার লাইফস্টাইলে সবথেকে বড় পরিবর্তনগুলো আনতে সক্ষম হই আমি ।

তার আগে বলে নেই যে, মডার্ন সাইকোলজিতে সেই ফ্রয়েড থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত এতটাই পরিবর্তন এসেছে যে এসব ব্যপারে এখন পর্যন্ত প্রমাণিত সত্য বলে কিছু নেই । বরং ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টরা নিজস্ব থিউরী কে সত্য বলে ধরে নিয়ে তবেই চিকিতসা করেন । আরো একটা ব্যপারে সাইকোলজির ওপর আমি পুরোপুরি নির্ভরশীল না কারণ মডার্ন সাইকোলজিতে মানবজাতির আধ্যাতিক চরিত্রকে অনেকটাই উপেক্ষা করা হয়েছে । তবে এরই মাঝে কিছু এক্সেপশনাল ব্যক্তিত্ব এই দুই এর মিলের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে গেছেন যেখানে ধর্ম তথা মানুষের আধ্যাতিকতা অথবা সত্যের প্রতি মানুষের খোঁজকে তার অন্যতম গন্তব্য বলে স্বীকার করা হয়েছে , আর আমার মূল ইন্সপাইরেশন সত্যি কথা বলতে এসব ব্যক্তির রেখে যাওয়া কাজ । যাই হোক, পরবর্তীতে সূযোগ পেলে এ ব্যপারে আমার ধারণা তত্ব উপাত্ত্ব যোগে লেখবার ইচ্ছা রইলো ।

অবচেতনের সবথেকে বড় চাবি হলো পুনরাবৃত্তি । মনে রাখবেন যে, অবচেতন মনের কাছে সত্য মিথ্যা বলে কিছু নেই, সে বরং সবকিছুকে সত্য বলে ধরে মেমোরী তে জমা রেখে দেয় । এজন্যই কোন একটা অভ্যাস বা চর্চা পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে একসময় আমাদের চরিত্রের একটা অংশে পরিণত হয় । এমনকি আপনার মনের সচেতন অংশ যখন বলছে যে সিগারেট আপনার জন্য খারাপ, আপনার অবচেতন মন অভ্যাসটাকেই তার জন্য সত্য বলে ধরে নিয়েছে । যেদিন আপনার অবচেতন মনকে আপনি বোঝাতে পারবেন যে সিগারেট সত্যিই আপনার জন্য খারাপ সেদিন থেকে সিগারেট ছাড়বার অ্যাকটিভ ক্ষমতা আপনার সাব-কনশাস মাইন্ড গ্রহণ করে নেবে ।

আবার ধরুন আপনি পুরোনো কোন স্মৃতি মনে করছেন । আপনার সচেতন মন যদিও এই স্মৃতির সাথে বাস্তবের টাইমলাইনের পার্থক্যটা জানে, অবচেতন মন এই পার্থক্যটা জানে না । তার কাছে স্মৃতি বা ফ্যান্টাসি বা ভবিষ্যত বলে কিছু নেই, আপনি কোন স্মৃতি বা কল্পনা জাগ্রত করলেন মানে অবচেতন মনের কাছে সেটা সেই মুহুর্তে হচ্ছে । তার কাছে এটাই এই মুহুর্তের সত্য, কনশাস মাইন্ড যতই সেটাকে মিথ্যা বা ফ্যান্টাসি বলুক না কেন। এজন্যই আপনার মনে বিশেষ ছাপ ফেলে যাওয়া কোন স্মৃতি আপনার হার্টবিট এবং শরীরে রিঅ্যাকশন সৃষ্টি করে কারণ আমাদের দেহের ৯৮% কার্যকলাপ অবচেতন দ্বারা পরিচালিত ।

নিজেকে যখন আপনি একটি সিরিয়াস প্রশ্ন করেন – “আমি কিভাবে গাড়ি চালাই ?” তখন আপনার সাব-কনশাস মাইন্ড স্মৃতি থেকে উত্তর খুঁজতে শুরু করে আর কনশাস মাইন্ড উত্তর দেবার ডিসিশন নেয় । নিজেকে যদি একটি নেগেটিভ প্রশ্ন করেন – “এত বড় ভুল আমি কিভাবে করলাম ?” কনশাস মাইন্ড যদি এটার উত্তর এই মুহুর্তে নাও দেয় আপনার অবচেতনে শুরু হয়ে যাবে উত্তরটি খোঁজার কাজ । নিজেকে আরেকটু কম সিরিয়াস একটা প্রশ্ন করুন – “আমি এই বোকামীটা কিভাবে করলাম ?” আপনার সচেতন মন খুব সম্ভব এটাকে সুন্দর মত এড়িয়ে যাবে অথচ অবেচেতন মন ঠিকই উত্তর খুঁজতে শুরু করবে । আবার হয়তবা আপনার সাথে এমনও হয়েছে যে, আপনি আপনার স্বাভাবিক নিয়ম মত কিছু করছেন, এরই মাঝে আপাত কোন কারণ ছাড়াই কোন একটা বাজে ঘটনা আপনার মনে পড়ে গেলো ! এর দুটো কারণ থাকতে পারে- হয় আপনার বর্তমান পরিবেশের কোন একটা জিনিস আপনার অবচেতন মনকে পুরোনো সেই স্মৃতির কথা মনে করিয়ে দিয়েছে এবং আপনার মেমোরী থেকে এই পার্টিকুলার ঘটনাটি রিপ্লে করছে অথবা আপনি অতীতে কোন একটা সময় নিজেকে এমন একটা প্রশ্ন করেছিলেন যার উত্তরটি অবচেতন হটাত করেই খুঁজে পেয়েছে । আপনার সচেতন মন প্রশ্নটি ভুলে গেলেও অবচেতন মন ঠিকই উত্তরটা বের করবার জন্য কাজ করে গেছে ।

নিয়মিত নিজেকে একট প্রশ্ন করে আপনি পেতে পারেন খুব ভালো ফলাফল - “ আমার ভেতরের নেতিবাচক/হতাশা/নেগেটিভ দিকগুলো কিভাবে আমি পুরোপুরি পরিস্কার করে ফেলতে পারি এবং সেই শুন্যস্থান কিভাবে পজিটিভ এনার্জি দিয়ে পূরণ করতে পারি ?” সুন্দর প্রশ্ন, আপনার অবচেতন প্রশ্নের উত্তর খোঁজার কাজে লেগে গেছে । এই প্রশ্নের একটা উত্তর নিকট ভবিষ্যতে আশা করতে পারেন । আরেকটা প্রশ্ন, যেটা করে আমি সবচাইতে ভালো ফলাফল পেয়েছি এবং এখনো নিয়মিত ব্যবহার করি সেটা হলো - “এমন কোন কাজ বা অ্যাকশন আমি নিতে পারি, যার ফলে আমি আমার নিজস্ব টারগেট বা গোল বসিয়ে নিন ’’ এর কাছাকাছি পৌছাতে পারবো ?” এদুটো প্রশ্ন প্রায়ই নিজেকে করতে পারেন আর এঁর বদলে আপনার সচেতন এবং অবচেতন মনের মাঝের দুরত্ব কিছুটা হলেও কমে আসবে , লাভবান হবে উভয়েই । চলুন এবার জেনে নেই তাদের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য । ১।

সচেতন মন অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের মাঝে পার্থক্য বুঝতে পারে । টাইমলাইনের বিভিন্ন সময়ের ঘটনাগুলোকে আলাদা করতে পারে । বর্তমানের ঘটনাকেই শুধুমাত্র বর্তমান বলে ধরে নিতে পারে সে । আপনি যখন ভবিষ্যত নিয়ে ভাবছেন তখন তাকে ফ্যান্টাসি বলে ধরে নিচ্ছে সচেতন মন । অবচেতন মনের কাছে অতীত, বর্তমান অথবা ভবিষ্যত বলে কিছু নেই ।

আপনার টাইমলাইনকে আলাদা করতে পারে না । বর্তমানে ঘটনার সাথে সাথে আপনি যে ঘটনা মনে করছেন সেটাও তার কাছে এই মুহুর্তে বাস্তব অথবা বর্তমান । ভবিষ্যত নিয়ে আপনার চিন্তা অবচেতন মনের কাছে বাস্তব । ২। সচেতন মন বুঝতে পারে যে কিছু ব্যপার আছে সত্য আর কিছু ব্যপার আছে মিথ্যা ।

আপনার কনশাস মাইন্ড জানে ভূত বলে কিছু নেই । অবচেতন মনের কাছে সত্য মিথ্যা বলে কিছু নেই, তাই তার শোনা প্রতিটা জিনিস তার কাছে সত্য । ভূতের অস্তিত্ব স্বীকার করে । ৩। নেগেটিভ এবং পজিটিভ ইনফ্লুয়েন্স অথবা ভাষার পার্থক্য বুঝতে পারে সচেতন মন ।

নেগেটিভ এবং পজিটিভ ইনফ্লুয়েন্সের পার্থক্য বোঝবার ক্ষমতা সাব-কনশাস মাইন্ডের নেই। ৪। প্রশ্ন করা হলে সে ঠিক করে নিতে পারে কোনটার উত্তর দেবে আর কোনটার উত্তর দেবে না । প্রশ্ন করা হলে সেটার উত্তর তাকে অবশ্যই দিতে হবে এবং উত্তর খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত সে ব্যস্ত থাকবে । উত্তর খুঁজে পাওয়ার সাথে সাথে তা সচেতন মনের সামনে নিয়ে আসবে অবচেতন মন ।

উদাহরণঃ হয়তবা আপনি নতুন কিছু জানলেন এবং সাথে সাথে পুরোনো কোন ভুলে যাওয়া স্মৃতি আপনার মনে ভেসে উঠলো কারণ মাত্র শেখা জ্ঞানের আলোকে আপনি ওই স্মৃতিটাকে এখন অন্যভাবে বুঝতে পারছেন । ৫। বাস্তবতা এবং স্বপ্নের মাঝে পার্থক্য জানে । বাস্তবতা এবং স্বপ্নের মাঝে কোন পার্থক্য সে জানে না । স্বপ্ন এজন্য তার কাছে বাস্তব একটা ব্যপার ।

৬। সচেতন মনকে নতুন করে প্রোগ্রাম করা যায় নতুন তথ্য এবং জ্ঞ্যান দ্বারা । যে কোন সময় নতুন কিছু শিখবার ক্ষমতা রাখে সে । নতুন করে প্রোগ্রাম করা খুব কঠিন, সচেতনতার থেকেও বেশি এফোর্ট দরকার অবচেতনকে রিপ্রোগ্রাম করবার জন্য । রিপিটেশন এবং সেলফ-হিপনোসিস এর মাধ্যমে অবচেতনে পরিবর্তন আনা সম্ভব ।

৭। বাছাইকৃত মেমোরী অথবা স্মৃতি ভুলে যাওয়ার ক্ষমতা আছে সচেতন মনের । উদাহরণঃ আপনার মনে নেগেটিভ রিঅ্যাকশন সৃষ্টিকারী একটা স্মৃতি আপনি সচেতন ভাবে ভুলে যাবার ডিসিশন নিলেন । ভুলে যাবার ক্ষমতা নেই অবচেতন মনের । নেগেটিভ, পজিটিভ সব ধরণের স্মৃতি সে জমা করে রাখে ।

এজন্য সচেতন ভাবে কিছু ভুলে গেলেও নেগেটিভ এনার্জি হিসাবে আপনার মেমোরী তে অবস্থান করে সে এবং ফলাফল হিসাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে আপনার সেলফ-ইমেজ অথবা সেলফ-এস্টিম । ৮। সচেতন মনের ধারনা সে আপনার সার্বিক পরিচালনার ক্ষমতা তার হাতে , যদিও সেটা ভুল । তবে, সচেতনতার সাথে পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে সে আপনার সাব-কনশাস মাইন্ডকে ইনফ্লুয়েন্স করবার ক্ষমতা রাখে । যদিও আপনার সার্বিক পরিচালনার ক্ষমতা অবচেতন মনের অধীনে, এ ব্যপারে অবচেতন মন ঠিক সচেতন মনের মতই অজ্ঞ ।

৯। মানুষ তথা নিজের অস্তিত্ববাদকে অবলোকন করবার ক্ষমতা রাখে । উদাহরণঃ দার্শনিক ডেকারটেস এর বিখ্যাত উক্তি – “I think, therefore I am.’’ অবচেতনের নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কেই তার কোন ধারণা নেই । ১০। সচেতন ভাবে আপনি মনে করেন যে আপনি জানেন আপনি কতটুকু পাবার উপযুক্ত বা যোগ্য ।

অবচেতন ভাবে আপনি যেটাকে আপনার জন্য উপযুক্ত অনুভব করেন আপনি শুধু সেটুকু পাবারই যোগ্য । ( আপনার অবচেতনে যদি আপনি মনে করেন যে আপনি জীবনে ভাল কিছু পাবার উপযুক্ত নন, তবে আপনার দ্বারা নিয়মিত আপনার চারপাশের পরিবেশ সেলফ-স্যাবোটাজের মাধ্যমে নস্ট করবার আশংকা থাকবে । ১১। সচেতন মন শুধুমাত্র সেসবের প্রতি আগ্রহী যাকে সে সচেতনভাবে দেখবার বা শুনবার বা ধরবার অথবা ঘ্রাণ নেবার ক্ষমতা রাখে । গভীর কোন অর্থের প্রতি আর তেমন আগ্রহ নেই বললেই চলে ।

এসকল কিছু দেখবার, ধরবার, শুনবার বা ঘ্রাণ নেবার ক্ষমতা থেকে তৈরি আবেগের প্রতি অবচেতন মন অধিক আগ্রহী এবং সে প্রতিনিয়ত সবকিছুর মাঝে গভীর কোন অর্থ খোঁজার চেষ্টা করে থাকে । এজন্য আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই কিছু কিছু প্রতীকের সাথে গভীর কোন অর্থ অথবা আবেগ জড়িত থাকতে পারে । ১২। এককথায় সচেতন মনকে বলা যায় পুতুল । আর অবচেতন মন হলো পুতুল নিয়ন্ত্রনকারী ।

ফ্যান্টাসি বা স্বপ্ন আমাদের অবচেতনের কাছে সত্য হবার সবচাইতে বড় সুবিধা হলো আপনি একটি স্বপ্ন যত গভীর ভাবে এবং আনুপুংখিক ভাবে দেখতে পাবেন সেটা আপনার অবচেতনের কাছে ততটাই সত্য হয়ে উঠবে , ফলাফল হিসাবে সে আপনাকে এমনভাবে গাইড করতে থাকবে যেন আপনার সচেতন মন ধীরে ধীরে সেই টারগেটের আরো কাছে আপনাকে পৌছে দেবার যোগ্য হয়ে ওঠে । আর কিভাবে এটা নিজের ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন দোষগুণ থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় সে ব্যপারে ভবিষ্যতে আরো লিখবার ইচ্ছা নিয়ে আজ এ পর্যন্তই ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.