আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেচে থাকার লড়াই ---- হাসপাতাল সুখে দুখে - ঘটনা: ২

আমি আজকে দুপুরেই প্রথম ঘটনা লিখেছিলাম। ঘটনা-১: ব্লগে তেমন বসা হয়না। আজ বসলাম তাই আরেকটি ঘটনা লিখে ফেললাম। বলে রাখি এই সব ঘটনাই আমার নিজে চোখে দেখা সত্য ঘটনা। ঘটনা-২ রোগীর নাম: সপ্না বয়স-১৩ বছর অভিভাবক- পিতা-মাতা ঘটনা: স্বপ্না মেডিক্যালে ইমার্জেন্সিতে এসেছিল পেটে ব্যাথা নিয়ে।

রাত১০টা হবে। মাত্র ক্লাস নাইনে পড়ে। মিষ্টি চেহারা। লম্বা চুল। ঢোলা একটা বোরখা পরা।

সরল আর নিষ্পাপ চাহুনী । চরম পেটে ব্যাথায় কাতর সে। ইমারজেন্সি থেকে তারাতারি মেডিসিনে পাঠানো হল। মেডিসিনে ভর্তি করতে গিয়ে দেখা গেল সে প্রেগন্যান্ট। আট মাস হয়েছে।

বাবার মাথায় তো আকাশ ভেংগে পড়ল। কিভাবে সম্ভব!! মা হয়ত ঘটনা জানতেন তাই তেমন বিচলিত হলেন না। তারাতারি স্বপ্নাকে গাইনিতে নিয়ে আসা হল। তখন রাত ১২টা। রাত ১২:৩০।

লেবার টেবিলে স্বপ্না ব্যথায় চিতকার করছে। এইটুকু মেয়ে আরেকটি জীবন দান করতে যাচ্ছে। নিজের মধ্যে ধারন করেছে আরেকটি জীবন। তাকে দির্ঘ্য আট মাস বাচিয়েছে। খাইয়েছে।

গান শুনিয়েছে। কতখানি সাহসিকতার সাথে সে দিন পার করেছে। সারা জীবন করতে হবে। কিন্তু সাথের জন?? সে তো পলাতক। স্বপ্নাও জেদি।

কোনো রকমেই মুখ থেকে বের করলনা কোন সেই কাপুরুষ?? স্বপ্না চিতকার করে যাচ্ছে লেবার পেইন এ। এর মধ্যে বাচ্চার চুল দেখা গেল...আরেকটু ধৈর্য ধর স্বপ্না আরেকটু ধৈর্য্য....। সময় যাচ্ছে স্বপ্নার চিতকার বাড়ছে। অবশেষে সমস্ত কষ্টের অবসান ঘটিয়ে রাত ৩টার দিকে একটি ফুটফুটে পুত্রসন্তান জন্ম দিল স্বপ্না। দেবতার শিশু যেন আমার হাতে।

জন্মেই এমন চিতকার করে কান্না। " এসেছে নতুন অতিথী...তাকে দিতে হবে স্থান"...চিতকারে আমরা অস্থির। উফ এত সজোরে নিজের অস্তিত্ব জানান দিল!! কিন্তু এ অতিথী যে বড় অপ্রত্যাশিত। লেবার টেবিলে তখনও শুয়ে আছে স্বপ্না। তার পাশে দেয়া হল তার শিশুটিকে।

মাতৃত্বের আনণ্দে তার মুখ উজ্ঝল। কিন্তু সমাজ, বাস্তবতা যে বড় কঠিন!! এ আনন্দ বেশিক্ষনের না। স্বপ্নার মা তাড়া দিলেন তারাতারি ওঠ আমরা এখনি বাড়ি যাব। কিন্তু এ অব্থায় কেমনে স্বপ্না বাড়ি যাবে? আর বাচ্চা? তাকে কি করা হবে? না না বাচ্চা আমরা নিবনা। একে মেরে ফেলেন।

কাউকে কিডনী দিয়ে দেন। চোখ আরেকজনকে দিয়ে দেন। একে কে নেবে? বলে ঝর ঝর করে কেদে ফেলে স্বপ্নার বাবা। কি করা যায় সেই পরিস্থিতিতে!! স্বপ্না তখনও লেবার টেবিলে। কঠিন মুখে চেয়ে আছে।

কিছু হয়ত ভাবছে। জানিনা কি ভাবছে। রুম ফাকা পেয়ে একজন সিস্টারকে ডাকল। সিস্টারের হাত ধরে বলল- জানিনা আপনার নাম কি? আপনি কেমন মানুষ। আপনি জানেন আমি বাচ্চা বাসায় নিতে পারবনা।

আপনি কি নিতে পারবেন? না নিতে পারলে কিছু করার নেই। কিন্তু কোনো না কোনো ভাবে একে বাচিয়ে রাখবেন সেটা যেখানে রেখেই হোক। পারবেন? জানিনা সিস্টার কিভাবে যেন রাজি হয়ে গেলেন। মানুষ তো! নারী তো! আরেকজন নারীর জন্য কিছু তো করতে হবেই। স্বপ্নার কোলে তখনও বাচ্চা।

স্বপ্না জানে বাইরে কি রণক্ষেত্র অপেক্ষা করছে। হয়ত তার শিশুকে বুঝাচ্ছে...মা একটু ঠিক হয়ে নিয়েই তোমাকে আবার নিয়ে যাবে..। খুজে বের করবে তোমাকে। কিন্তু শিশুটি বড় অভিমানী। কিছুতেই মানবেনা।

চিতকার করে কেদেই যাচ্ছে। কেদেই যাচ্ছে। এই তারাতাড়ি চল..ভোর হয়ে যাচ্ছে। স্বপ্নার মা ডাকল। স্বপ্নার সময় শেষ।

মা হবার আনন্দ এখানেই সমাপ্ত করতে হবে। স্বপ্না একবার আমাদের দিকে তাকাল। নিষ্পাপ চেহারা স্বপ্নার । কি যে বলতে চাইল বুঝলাম না। অবশেষে জিজ্ঞেস করল বাচ্চাকে কি এখন খাওয়াতে হবে? আহা।

হাজার হোক ও তো মা। বাচ্ছাকে একবার খাওয়াবেনা? না খাইয়ে চলে যাবে? স্বপ্না জানেনা কেমনে বাচ্চাকে খাওয়াতে হয়। সিস্টার দেখিয়ে দিল। আমি অবাক হয়ে দেখছি...মাতৃত্বের কি আসুরীয় শক্তি!!!! ভোর ৬ টায় চলে গেল স্বপ্না। তার বাচ্চাটাকে নিল আমাদের এক আয়া।

জানিনা ঐ বাচ্ছাটা তিনি রেখেছেন নাকি কি করেছেন। অনেকবার ভাবি জিজ্ঙেস করব। পরে ভাবি থাক...আমি নিজেও তো ঐ বাচ্চার দ্বায়িত্ব নেয়ার মত সাহস রাখিনা। উনি রেখেছেন জানিনা সমাজ সংসারের কাছে মেয়েটা কতখানি দুষ্চরিত্র প্রমানিত হবে। কিন্ত "মা"? তার চরিত্রই কি আর দুষ্চরিত্রই কি!! সে তো মা।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.