আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার ভ্রমনের ইতিবৃত্ত

নতুন কিছুর প্রতি আমার আকর্ষণ অত্যাধিক। আর যদি তা ভ্রমন বিষয়ক হয় তাহলে কথাই নেই। সেই ছোটবেলা থেকে কোন নতুন জায়গায় যাওয়ার কথা শুনলেই অন্যরকম একটা feelings হত, যেটা আসলে বুঝানো সম্ভব নয়, শুধু অনুভব করা যায়। যখনি কোন মানচিত্রের বই পেয়েছি তখনি তা গোগ্রাসে গিলেছি। বৃত্তির টাকা জমিয়ে এনসাইক্লপিডিয়া কিনেছি।

আম্মু কতো রাগ করেছেন, তবু আগ্রহ বলে কথা। আমার আব্বুর অবশ্য এই ঘোরাঘুরির ব্যাপারে কোন আগ্রহ নেই, তিনি ছুটি পেলে ছুটে যাবেন মাঠে। আগে নানি বাড়ি যাওয়ার জন্য কত অপেক্ষা । কিন্তু গরমের সময় বলেন- এই গরমে কি ঘোরা যায়। আবার শীতে এত শীত।

বর্ষায় তো অসম্ভব। তবু মাঝে মাঝে সুযোগ মিলত। তখন আমি খুব ছোট, যা দেখতাম তাই নিয়েই প্রশ্ন। একবার নানি বাড়ি যাচ্ছি যশোর। সৈয়দপুর রেলওয়ে ষ্টেশন,সীমান্ত এক্সপ্রেস।

নানাকে প্রশ্ন- নানা ট্রেন কি দিয়ে তৈরি? কেমন করে যায়? এই লাইন কোথায় গেছে? নানা জবাব দিতে দিতে ক্লান্ত... একসময় বিরক্ত হয়ে আম্মুকে- এই নেও তোমার ছেলেকে। মাথা খারাপ করে ফেললো। বেশির ভাগ মানুষকে দেখি ট্রেনে, বাসে উঠে দেয় ঘুম। আমিই বেতিক্রম। কোন ঘুম নেই , পথে কোন ষ্টেশন পড়লো, কোন রাস্তা কোনদিকে গেল, কোনটা কোন নদী শুধু দেখতাম।

যখন ছোট তখন বাসের সীটে না বসে দাড়িয়ে থাকতাম আর দেখতাম ড্রাইভারের বাস চালানো। দেখে খুব হিংসা লাগতো। মনে হত ড্রাইভার কত সৌভাগ্যবান, কত জায়গা দেখে। আম্মুকে বলতাম আম্মু আমি বড় হলে ড্রাইভার হবো। AFMC এর ভর্তি পরীক্ষা শেষ।

Final medical এ ধরা পড়লো DNS. মেরিট লিস্টের রেজাল্ট ও দেয়া হচ্ছে না। সাজ্জাদ স্যারের এক কথা আগে একদম সুস্থ গুলাকে নেই। আরে বাবা তাই বলে আমার রেজাল্ট বলবে না? আল্লাহর রহমত যখন স্যার রেজাল্ট ঘোষণা করছিলেন আমি দেখতে পেলাম (স্যারের পিছন থেকে)আমার রোল আছে। সাহস পেলাম অপারেশন করার। কিন্তু সমস্যা ভর্তি হতে হবে ২ দিন পরে।

সার্টিফিকেট খুলনা মেডিকেলে জমা। তাই কাটা নাক নিয়েই দৌড় খুলনা। ভর্তি cancel করে ট্রেনের টিকিট কাটা হল। কিন্তু এখনও হাতে ৩ ঘণ্টা সময়। আমি খুজতেছি খুলনাতে দেখার কি আছে।

আব্বুকে বললাম চল রূপসা ব্রিজ, নদী দেখে আসি। আব্বু অবাক?? ছেলে বলে কি? নাক দিয়ে অনবরত ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত পড়ছে তবুও ঘোরার নেশা গেল না। নদী আমাকে চিরদিনই খুব রহস্যময় মনে হয়। কোথা থেকে শুরু হয়ে পথ ঘাট পেরিয়ে ছুটে চলেছে। মাঝে মাঝে মনে হয় নদীর পাড় ধরে হাটি যতক্ষণ না শুরু পাই।

অবশেষে ল্যাপটপ কিনার পর পেলাম Google earth. আমার সবচেয়ে প্রিয় সফটওয়্যার। যখনি সুযোগ পাই হারিয়ে যাই পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে। কখনও রাশিয়ার ট্রান্স সাইবেরিয়ান রেলওয়ে ধরে , কখনও আলাস্কার গহীনে, বিভিন্ন শহরের রাস্তায় রাস্তায়। অনেককিছু শিখেছি,জেনেছি শুধু আগ্রহের কারণে। আমার তো মনে হয় আমাকে বাংলাদেশ কেন, ইন্ডিয়ার যেকোনো শহরে ছেড়ে দিলেও কোন সমস্যা হবে না (যদি আল্লাহ সাহায্য করেন)।

কিন্তু আব্বুর খুব ভয়। বাবা পানির কাছে যেও না, রাস্তায় খুব কম যাবা, দরকার না হলে বাইরে যেও না। বুঝি বাপ মায়ের এমন চিন্তা হয়। কিন্তু সেদিন যাচ্ছিলাম দাদিবাড়ি( সাথিয়া,পাবনা)। আব্বু- বাবা একলা যাইতে পারবা? আমি- পারব না কেন? আমি কি ছোট? ট্রেন থেকে উল্লাপাড়া নেমে ফোন দিলাম আমি পৌঁছে গেছি।

সাথিয়ার বাসের জন্য অপেক্ষা করতেছি। আব্বু- দেখিও আবার ঠিক বাসে চড়িও। উলটা বাসে চড়ে আবার বগুড়া চলে যেও না। আমি শুধু হাসলাম আর বললাম – আব্বু আমি চিনি। শুধু বললাম না তোমার এই ছেলে তোমাকে না বলে কত জায়গা যে ঘুরলো।

আম্মুর সাথে এই কথা নিয়ে বিশাল হাসাহাসি। শেষে তিনি বলে ফেললেন- এরপর কোন জায়গায় গেলে শুধু আমাকে না তোর আব্বুকেও বলে যাস। আমার শুধু ভয় হয়। যাই হোক এত পুত্রপ্রেমী বাবা মাকে নিয়ে আমি গর্বিত। কিন্তু কি করবো ঘুরতে তো হবে।

আমার নেশা তো এটাই। আম্মুকে শুধু বলি- আল্লাহ আমাকে সামর্থ্য দিক, তোমাকে আর আব্বুকে দেখাবো আল্লাহর সৃষ্টি কি? কি এর আকর্ষণ? বি.দ্র- কেউ কি কোথাও যেতে চান? আমি রাজি... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.