আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সব্যসাচী সাংবাদিক

ইদানীং বাজে রকমের একটা অভ্যাস হয়ে গেছে আমজাদ সাহেবের। বিকেল হলেই ধানমন্ডি লেকের পাড় ধরে হাঁটতে অনেক ভালো লাগে তার। অবশ্য আমজাদ সাহেবের কাছে ব্যাপারটা মোটেও বদভ্যাস বলে মনে হয়না। আমজাদ সাহেবের বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। পেশায় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক।

রোজকার মত আজকেও তিনি বিকেলে হাঁটতে বের হয়েছেন। সবুজ গাছ, লেকের সবুজ পানি, মোটামুটি নিরব একটা পরিবেশ। আশেপাশে তাকালে উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের চুম্বন দৃশ্য ছাড়া আর তেমন খারাপ কিছু চোখে পড়েনা। নিরবতা ভঙ্গ করে হঠাৎ ঝুপ করে একটা শব্দ হল। পাশ দিয়েই হেঁটে যাচ্ছিলেন চুলছেঁড়া চৌধুরী-বাংলাদেশের কালজয়ী একজন সাংবাদিক।

গতবার পুলিৎজার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। উনি লেকে এসেছিলেন "ধানমন্ডি লেক ও বাংলাদেশের অর্থনীতি" নামক একটি প্রতিবেদনের জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে। শব্দের উৎস অনুসরণ করতেই তিনি দেখতে পেলেন একজন বুড়ো মত লোক লেকের পানিতে হাবু-ডুবু খাচ্ছে। চুলছেঁড়া চৌধুরীর মনটা সকাল থেকেই সামান্য খারাপ ছিল। এই দৃশ্য দেখার সাথে-সাথেই তার মনটা অন্যরকমের ভালো হয়ে গেল।

এতদিন পর এমন নান্দনিক একটা সুযোগ তার হাতে আসবে তিনি ভাবতেও পারেননি। তিনি কোনভাবেই সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইলেন-না। সাথে-সাথেই তিনি তার মাইক্রোফোনটা লম্বা একটা লাঠির মাথায় বাঁধলেন এবং আমজাদ সাহেবের দিকে এগিয়ে দিয়ে নানা ধরনের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ শুরু করলেন। -আপনি তো পানিতে ডুবে যাচ্ছেন, আপনার অনুভূতি কেমন ঠিক এই মুহূর্তে? -ভাই আমাকে বাঁচান। আমি সাঁতার জানিনা।

আমি শ্বাস নিতে পারছিনা। এই কথা বলেই ভুস করে পানিতে ডুবে গেলেন আমজাদ সাহেব। স্থানীয় কয়েকজন টোকাইয়ের সহযোগিতায় পানি থেকে আমজাদ সাহেবকে তুলে সোহ্‌রাওয়ার্দি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ততোক্ষণে আমজাদ সাহেবের প্রাণপাখি আকাশে উড়াল দিয়েছে। কর্তব্যরত ডাক্তার আমজাদ সাহেবকে মৃত ঘোষণা করলে চুলছেঁড়া চৌধুরী আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান।

একদিনে এতগুলো সু-সংবাদ তার জন্য অপেক্ষা করবে তিনি কোনদিন ভাবেননি। পরদিন সকালে বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত পত্রিকায় একজন প্রতিবেদকেরই তিনটি প্রতিবেদন ছাপা হল। প্রতিবেদন তিনটির শিরোনাম ছিল এরকম- >ধানমন্ডি লেক ও বাংলাদেশের অর্থনীতি (গবেষণামূলক)। >পানিতে ডুবে মরার সময় খুব শ্বাসকষ্ট হয়(অনুসন্ধান মুলক)। >ডাক্তারদের অবহেলায় প্রাণহীন স্কুল শিক্ষক(পুলিৎজার পুরষ্কার পাওয়ার যোগ্য)।

সাংবাদিকরা সব পারে। ওরা ইচ্ছা করলে আপনাকে হিরো বানাতে পারে আবার ইচ্ছা করলেই আপনাকে মাটির সাথে মিশিয়ে ফেলতেও পারে। তাই সাংবাদিক থেকে সাবধান। এরা যে সবসময় ভাল কাজ করে তা কিন্তু নয়। এদের দ্বারা এমন অনেক কিছুই হয় যা আমাদের কল্পনার বাইরে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.