আসুন ভালো থাকি ১. বাংলাদেশ আর যাই হোক এখন ‘বহুমাত্রিক প্রতিভাধর কথাজীবীদের ’ কোনও অভাব নেই। কথাজীবী মানে যারা বিভিন্ন চ্যানেলে নিয়মিত কথা বিক্রি করছেন তারা, আর তারা নিশ্চয় বহুমাত্রিক প্রতিভাধর, কেন? যাকে দেখি বাংলাদেশ-রাশিয়া সামরিক চুক্তির বিশ্লেষণ করতে, তিনিই আবার কথা বলছেন অভিষেক-ঐশ্বরিয়ার প্রেম-বিয়ে, মহসেন, সিরিয়ার সমস্যা, আশরাফুলের কেলেংকারি এবং কিছুদিন ধরে বাজেট নিয়ে। একটা মানুষ এত বিষয়ে কিভাবে দক্ষ হয়? এটা তো রাস্তার পাশে বিক্রি হওয়া সর্বরোগের মহৌষধের মতো! দাম্পত্য জীবন সুখী করা থেকে শুরু করে ক্যানসারও নিরাময় করে ফেলার ক্ষমতা আছে যার! কয়েকজনকে দেখি প্রায় প্রতিদিনই আসেন, রাত ১২ -২ টা পর্যন্ত চ্যানেলে চ্যানেলে বক্তব্য দিয়ে, ওনারা ঘুমান কখন? ঘুম থেকে উঠেন কখন? আর গবেষণা বা পড়াশুনাটাই বা করেন কখন?
২. নেপালের এক ভদ্রলোক এসেছিলেন কিছুদিন আগে। তাকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিলাম। রাস্তায় সিএনজিতে বাজাজ লেখা দেখে বললেন, এটা কি ভারত থেকে আনা? বললাম, হ্যা।
শপিংয়ে গেলাম, দোকানে ভরতীয় পণ্যের পসরা দেখে তিনি হাসতে হাসতে বললেন, দাদা আমি তো ভাবছিলাম ভারতের কোনও প্রদেশে চলে এসেছি! কথাটা শুনে একটা সৌজন্যের হাসি হেসেছি, কিন্তু কষ্টটাও চাপা রাখতে পারিনি। তিনি বয়স্ক মানুষ, বুঝলেন। বললেন, দাদা মন খারাপ করার কিছু নেই। এখনও সময় আছে, নইলে নেপাল হয়ে যাবেন। আমরা নেপালিরা নামেই স্বাধীন, আসলে আমরা ভারতের একটা প্রদেশেরই মতো।
জানেনতো নিশ্চয়ই, নেপালে ভারতের কোনও নাগরিক ঢুকতে চাইলে পাসপোর্ট পর্যন্ত লাগে না!! ভিসা তো দূরের কথা!!
৩. ওনি নেপালের একজন সাধারণ মানুষ, বাংলাদেশের একটা দোকানে ভারতীয় পণ্যের আধিক্য দেখে সেটাকে ভারতের কোনও স্থান ভেবেছেন। কিন্তু ভারত সরকার কিভাবে বাংলাদেশকে তার একটা প্রদেশ ভাবে? সরাসরি এখনও হয়ত তেমন কিছু বলেনি, কিন্তু কার্যক্রম তো সেই কথাই বলে! নারায়ণগঞ্জে বন্দর বানানোর টেন্ডার দেয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ জানে না!! ভারত-মায়ানমার সম্প্রতি বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে তাদের দুই দেশের মধ্যে গ্যাস আনা-নেওয়ার জন্য গ্যাস পাইপ লাইন স্থাপনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সিদ্ধান্তটা কারা নিল? ভারত আর মায়ানমারের প্রতিনিধিরা, যে দেশের ভিতর দিয়ে পাইপ লাইন নেওয়া হবে সেই দেশের প্রতিনিধিত্ব কই? বাংলাদেশ কই সেখানে? নাকি ভারত ধরেই নিয়েছে যে, তার নেওয়া সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ মেনে নিতে বাধ্য? যেখানে পশ্চিম বঙ্গের অনুমতি ছাড়া ভারত বাংলাদেশকে পানি দিতে পারে না, সেখানে বাংলাদেশের অনুমতি ছাড়া ভারত কিভাবে সেই স্বাধীন দেশের ভূমি ব্যবহারের পরিকল্পনা করতে পারে? নাকি অন্য কিছু? পরিস্থিতিটাকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আমার এক বন্ধু বললেন, কাপড়-চোপড় যখন খুলেই রেখেছ, ধর্ষণের আবার অনুমতি লাগে নাকি?
ভাবতে খুব অবাক লাগে, দেশে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী বলে দাবিদার প্রবল বাগাড়ম্বরপূর্ণ একটা গোষ্ঠী বা দল আছে। আশ্চর্য জনক ভাবে এসব বিষয়ে তাদের কোনও বক্তব্য নেই!!! তারা অবশ্য মনে করেন, একটা বিশেষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়ে গেলে বাংলাদেশে আর কোনও সমস্যাই থাকবে না। সুতরাং তাদের সমস্ত মনযোগ এখন সেই দিকেই!!
৪. অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গনে প্রতিভার দারুণ উপস্থিতি।
কিন্তু কিছু কিছু চ্যানেল দেখলে এর বরং উল্টোটাই মনে হয়। একটা প্রতিষ্ঠিত চ্যানেলে অপরাধ বিষযক একটা অনুষ্ঠান দেখছিলাম, ভালই। কিন্তু পুরো ফরমেট টা ভারতের একটা চ্যানেল থেকে চুরি করা, এমনকি সামরিক কায়দায় স্যালুট দিয়ে উপস্থাপকের বিদায় নেওয়ার পদ্ধতিটাও! কেন? একটু চিন্তা করলে কি নতুন একটা ফরমেট দাঁড় করানো যেত না? নকল করার প্রবণতাটা এখন বেশ নগ্নই হয়ে গেছে। এভাবে নকল করে, অন্যের টা ধার করে এনে আমরা কি নিজেদেরই ছোট করে ফেলছি না? বেশ কিছু চ্যানেল এখন ভারতের চ্যানেলের স্টাইলে নাটক প্রচার করা শুরু করেছে। যার মূল উপজীব্য বড়লোকের পরিবারে মহিলাদের দ্বন্দ্ব আর কাইজ্যা! একটা চ্যানেল বেশ ভাল একটা কাজ করছে, তারা সরাসরি ভারতের কিছু পাত্রপাত্রী দিয়েই নাটক তৈরি করে ফেলেছে!! হায় রে! আর বৃহশ্পতিবারের প্রথম আলোর আনন্দ’র শেষ পাতাটা ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।