আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গাড়ি নিয়ে গোলকধাঁধা (ভিডিও)

‘টাঙ্গাইলে আমার গাড়িটি নিজের সামনে দাঁড়ানো, অথচ ঢাকার গোয়েন্দা অফিস থেকে ফোন করে জানাল গাড়িটি তাদের হেফাজতে আছে। ’ আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে বিস্ময়ভরা দৃষ্টি নিয়ে ঢাকায় মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্যকেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে এ কথা বললেন ইমদাদুল হক (৩০)।
তখন ইমদাদুলের সামনেই তাঁর গাড়ির মতো দু-দুটো গাড়ি। তাঁর গাড়ির নম্বর (ঢাকা মেট্রো গ-১৭-৩৫৭৪)। তাঁর গাড়ির মতো যে দুটি গাড়ি দাঁড়ানো, দুটি গাড়িরই নম্বর, রং—সবই এক।


টাঙ্গাইলের গোপালপুরের পঞ্চাশোর্ধ এই ব্যবসায়ীর টয়োটা প্রিমিও মডেলের গাড়ির নম্বরপ্লেট নকল করে একই আদলের অন্য একটি গাড়িতে বসিয়ে নানা ধরনের অপকর্ম করে আসছিলেন ইসমাইল হোসেন। কেবল একটি নয়, ১৫টি গাড়িসহ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে গ্রেপ্তার করে আনা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী এই যুবককে। একই অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক মো. হানিফ মৃধা (৩২) ও ইমরানও (৪১) এ সময় ইসমাইলের সঙ্গে ছিলেন।

পুলিশের ভাষ্য
ইসমাইল একজন গাড়িচোর। দীর্ঘদিন ধরে ২০-২৫ জন যুবককে সঙ্গে নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে গাড়ি ছিনতাই করতেন ইসমাইল।

এ কথা জানিয়ে আজ দুপুরে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডিএমপির তথ্যকেন্দ্রে সাংবাদিকদের বলেন, ছিনতাই করা গাড়ির সব তথ্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) অসাধু কর্মচারী ও দালালের সাহায্যে বের করতেন তিনি। একইভাবে ছিনতাই করা গাড়িগুলোর মতো হুবহু একই রঙের আরেকটি গাড়ির তথ্য বিআরটিএ থেকে জোগাড় করতেন ইসমাইল। এরপর কুড়িল বিশ্বরোডে নিজের রয়েল অটো কেয়ার অ্যান্ড সার্ভিসিং সেন্টার নামের গ্যারেজে ইঞ্জিন নম্বর, চেসিস নম্বর ছিনতাই করা গাড়িতে বসাতেন ইসমাইল। এরপর বিক্রি করতেন গাড়িটি।
মনিরুল ইসলাম বলেন, তবে টাঙ্গাইলের ইমদাদের গাড়ির পরিচয় দিয়ে ইসমাইল আর বিক্রির কাজ সারতে পারেননি ছিনতাই করা গাড়ির।

এর আগেই ৪ জুন কাফরুল থানায় একটি গাড়ি ছিনতাই মামলায় ইসমাইলকে তাঁর গ্যারেজ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই মামলায় রিমান্ডে নেওয়ার পরই ইসমাইলের কাছ থেকে এসব তথ্য বের হয়ে আসে।
৫ থেকে ৮ জুন পর্যন্ত রামপুরা, বনশ্রী, উত্তরা ও খিলক্ষেত এলাকায় অভিযান চালায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এসব অভিযানে উদ্ধার হয় ইসমাইলের কাছে ছিনতাই হওয়া ১৫টি বিভিন্ন মডেলের গাড়ি। যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম আরও জানান, এর সঙ্গে বিআরটিএর জড়িত কর্মচারীদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।



গাড়ির মালিকদের দাবি, এতে জড়িত বিআরটিএ
প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর আগে ২০০৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিজয়নগর থেকে পৌনে ১০ লাখ টাকায় টয়োটা প্রিমিও গাড়িটি কিনেছিলেন ইমদাদ। কিন্তু গত শুক্রবার বেলা তিনটায় ঢাকার গোয়েন্দা অফিস থেকে ফোনে ইমদাদকে জানানো হয়, তাঁর গাড়িটি ঢাকায় আটক করেছে পুলিশ। তখন নিজেকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না ইমদাদ। কারণ, টাঙ্গাইলের গোপালপুরের বাড়িতে তাঁর সামনেই দাঁড়িয়ে আছে নিজের গাড়িটি। এ কথা জানানোর পর তাঁকে ঢাকায় আসতে বলে পুলিশ।


ছিনতাই হওয়া গাড়িটি দেখিয়ে প্রথম আলো ডটকমকে ইমদাদ বলেন, ‘আমার গাড়ির সবকিছু সাজানো হয়েছে এই গাড়িতে। এমনকি এর কাগজপত্রেও আমার ছবি বসানো। এটি কী করে সম্ভব! বিআরটিএ জড়িত না থাকলে এ কাজ হয় না। ’ ইমদাদ আরও জানান, এ বছরের ১৫ জানুয়ারি মিরপুরে বিআরটিএর (উত্তর) কার্যালয় থেকে পরিদর্শক হারুন উর রশিদের স্বাক্ষর করা তাঁর গাড়ির নতুন ফিটনেস সনদ তুলেছেন তিনি।

বিআরটিএর বক্তব্য
বিআরটিএর উপপরিচালক (প্রকৌশল) শীতাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, তাঁরা যেকোনো গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বরসহ যাবতীয় তথ্য পুলিশ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দেন।

এ ছাড়া ব্যাংকেও একটা সংক্ষিপ্ত তথ্যের তালিকা দেওয়া হয়। সেখান থেকে হয়তো তারা (জালিয়াতচক্র) তথ্য বের করতে পারে।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.