শরীরের একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে বেঙ্গালুরুর একটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন আছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী মান্না দে। তবে তাঁর শারীরিক অবস্থার সামান্য উন্নতি হয়েছে বলেই জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ প্রসঙ্গে বেঙ্গালুরুর নারায়ণা হেলথ হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘গতকালের তুলনায় মান্না দে’র শারীরিক অবস্থা এখন কিছুটা ভালো। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ার পর তাঁর অবস্থার সামান্য উন্নতি হয়েছে। এই মুহূর্তে তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।
’
ফুসফুস সংক্রমণের কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেওয়ায় গত শনিবার রাতে বেঙ্গালুরুর নারায়ণা হেলথ হাসপাতালে ভর্তি হন মান্না দে। পরদিন সকালে তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই লাইফ সাপোর্ট দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে তাঁকে। এক খবরে এ তথ্য জানিয়েছে ইন্দো-এশিয়ান নিউজ।
এ প্রসঙ্গে রোববার গভীর রাতে মান্না দে’র পারিবারিক এক বন্ধু সংবাদকর্মীদের জানিয়েছেন, মান্না দে’র শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে।
তাঁর শরীরের একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করছে না। এজন্য তাঁকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়েছে।
মান্না দে’র পরিবারের সদস্যদের অনুরোধে তাঁর শরীরের অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন মান্না দে’র চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকেরা। এ প্রসঙ্গে মান্না দে’র প্রতিবেশী ওই বন্ধু জানিয়েছেন, মান্না দে’র অসুস্থতার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর হাসপাতাল প্রাঙ্গণে সংবাদকর্মীদের ভিড় তৈরি হয়। এতে হাসপাতালটির অন্যান্য রোগীদের চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় বিপত্তি ঘটার আশঙ্কায় মান্না দে’র শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু না জানানোর সিদ্ধান্ত নেন তাঁর পরিবারের সদস্যেরা।
দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছেন ৯৪ বছর বয়সী মান্না দে। মাস খানেক আগে তাঁর স্বাস্থ্যের আরও অবনতি ঘটে। নারায়ণা হাসপাতালে এর আগেও তিন সপ্তাহ ভর্তি ছিলেন তিনি। পরে কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলে তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। বাড়িতেই তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
২৪ ঘণ্টা তাঁর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য দুজন সেবিকা ও একজন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়। গত শনিবার রাতে শ্বাসকষ্ট অনুভব করছেন বলে জানিয়েছিলেন মান্না দে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
কয়েক বছর আগে মুম্বাই থেকে বেঙ্গালুরুর কল্যাণনগরে ছোট মেয়ে সুমিতার বাড়িতে ওঠেন মান্না দে। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে গত বছরের জানুয়ারিতে মৃত্যুবরণ করেন মান্না দের স্ত্রী সুলোচনা কুমারণ।
এরপর মান্না দে’র শরীর আরও ভেঙে পড়ে। তাঁর আরেক মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন।
১৯১৯ সালের ১ মে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন প্রবোধ চন্দ দে, যাঁর ডাকনাম মান্না দে। হিন্দি, বাংলা, মারাঠি, গুজরাতিসহ বিভিন্ন ভাষায় অসংখ্য গান গেয়ে অগণিত শ্রোতার হূদয় জয় করেছেন এই গুণী শিল্পী। হিন্দি ও বাংলা চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক গায়ক হিসেবেও দারুণ সুনাম অর্জন করেছেন।
গত শতাব্দীর চল্লিশ থেকে সত্তুরের দশক পর্যন্ত ‘জঞ্জির’, ‘মেরা নাম জোকার’, ‘আনন্দ’, ‘শোলে’সহ অসংখ্য ছবির গানে দাপটের সঙ্গে গান গেয়েছেন তিনি।
ষাট বছরের সংগীত জীবনে মান্না দে সাড়ে তিন হাজারের বেশি গান গেয়েছেন। সংগীত ভুবনে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭১ সালে পদ্মশ্রী, ২০০৫ সালে পদ্মবিভূষণ এবং ২০০৯ সালে দাদা সাহেব ফালকে সম্মাননায় ভূষিত হন তিনি। রবীন্দ্রভারতী ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. লিট সম্মাননাও দেওয়া হয়েছে তাঁকে। এগুলোর পাশাপাশি আরও অনেক পুরস্কার রয়েছে তাঁর ঝুলিতে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।