আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দস্যি স্কুল জীবন

ভালোবাসায় ঈশ্বর .. ভালোবাসায় তুমি .. ভালোবাসায় আমি .. ভালোবাসায় অন্য সবাই... শুধু জেনো ..ভালোবাসায় ভালোবাসা স্কুল জিবনে দস্যি মেয়ে হিসেবে আমার খুব নাম ডাক ছিলো । পুতুল খেলায় খুব পারদর্শী ছিলাম বলে কেঊ কেঊ আমার নাম দিয়েছিলেন পুতুল কইণ্ণা । টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে জমজমাট ভাবে পুতুল এর বিয়ে দিতাম । চকলেট , বিস্কুট , কেক আর ফাণ্টা/ মিরিন্ডা কিনে বন্ধুদের খাওয়াতাম । আমি হতাম ছেলে পুতুলের মা ।

এর কারণ ছিল একটাই । সই সূবর্ণার মেয়ে পুতুলটা কেও আমার বাসায় নিয়ে আসা । আমার পুতুলের সংখ্যাটাও বেড়ে যেতো এভাবেই । পাড়ার সব দর্জি দোকান গুলোতেও আমার ছিল ভীষণ আনাগোনা । দর্জি দোকান গুলোকে বলে দিতাম , আমার পুতুলের শাড়ি কাপড় যেন আলাদা করে রাখে ।

যদি ভুলবশত কোন দর্জি আমার পুতুলের জন্য টুকরো কাপড় আলাদা করে না রাখতেন তাহলে তার অর্ডারের ব্লাঊজ পিস / কামিজের কাপড় নিয়ে দৌড় দিতাম । অবশেষে আমাকে পটিয়ে পাটিয়ে অনেক টুকরো কাপড়ের বিনিময়ে দরজী তার অর্ডারের কাপড় গুলো আদায় করতেন । স্কুল থেকে ফিরেই আর পাওয়া যেতো না আমাকে, পড়িমরি করে ছুটতাম খেলার মাঠে। বুনো ফুল, ঘাস মারিএ, লজ্জাবতির ঘুম ভাঙিয়ে শুধু ছোটাছুটি ...। দুপুরে না ঘুমালে মা খুব মারতেন ।

মা যখন প্রচণ্ড মারতো , মুখপোড়া বোনটা তখন শুধু হাসত। মার নাহয় খেলামই, তাই বোলে অমন কোরে হাঁসতে হয় ? রাগে আমার পিত্তি জ্বলে যেতো ! আমার অশান্তিতে অনেকে তাদের পেয়ারা গাছের নিচে কাঁটা গাছ ঘেরাও দিতেন । কচি / পাকা কোন পেয়ারা আমার হাত থেকে রেহাই পেতোনা। কাঁটা সরিয়ে পেয়ারা গাছে উঠতে গিয়ে কতো যে হাত পা কেটে রক্তাক্ত হয়েছে তাঁর কোনো হিসেব নেই । হায়রে কৈশোর কাল !! আমার প্রিয় সেই স্কুল জীবন !! আহা ! এখনো ভুলতে পারিনা . পাশের বাসায় এক মাসীর বাসায় শেফালী ফুল ফুটত ।

উনি সকাল ৮ টায় উঠে সেই ফূল গুলোকে তূলে এনে পূজো দিতেন । মাঝে মাঝে মাসী ঘূম থেকে ওঠার আগেই সাত সকালে গিয়ে ফুল গুলো আমি ছিঁড়ে এনে মালা গাঁথতাম । মাসী যখন ঘুম থেকে উঠে গাছে একটি ফুল ও পূজোর জন্য পেতেন না , চিৎকার করে পাড়া জানান দিতেন , আমি তখন জাণালার ফাঁক দিয়ে তা দেখতাম আর খিলখিল কোরে হাসতাম । তখন আমি ক্লাস টু তে পড়ি,পড়াশুনায় মন বসানোর জন্য মা আমার জন্য একজন পিটুনিশীল মাস্টার রাখলেন বাসায় । যেদিন পড়া তৈরি করে না রাখতাম তিনি আমাকে (বিপুল) মাষ্টার সেদিন আমাকে খুব পেটাতেন ।

কান ধরে উঠবস করাতেন । আমি বাথরুমে যাবার নাম করে এক দৌড়ে নীচতলায় গিয়ে সার এর সাইকেলের হাওয়া ছেড়ে দিয়ে আসতাম । SIR সাইকেল টা কে হাঁটিয়ে বাসায় ফিরতেন আর আমি হেসে গড়াগড়ি খেতাম । একদিন তিনি ঠিক ধরে ফেললেন , সাইকেলের হাওয়া ছেড়ে দেবার কাজটি আমি ছাড়া আর কেঊ করেনা । সেদিন খুব মারলেন ।

আমিও কি কম ? চুপিচুপি আব্বার জুতা মোছার ব্রাশ এনে দিলাম SIR এর কপালে এক বারি । কপাল ফুলে আলু । তিনি সেদিন আলু কপাল নিয়ে বাসায় ফিরলেন আর যাবার সময় মা কে বললেন আপনার এই দস্যি মেয়েকে মানুষ বানাবার সাধ্য আমার নাই । এর কিছুদিন পরেই তিনি রোড এক্সিডেন্ট এ মারা যান । স্যার বেঁচে থাকলে আমি স্যার এর কাছে ক্ষমা চাইতাম ।

স্যার আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন ! আপনার এই দস্যি ছাত্রীটি আপনার কাছে ক্ষমা চাইছে । আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন ?? ঐ আকাশ পর্যন্ত কি আমার আওয়াজ পোঁছায় ?? শুনতে পাচ্ছেন কি ?? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।