আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পিএসসির আঙুল বিজি প্রেসের দিকে, বিজি প্রেসের ‘না’

দীর্ঘদিন পর আবারও বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠল। অতীতের মতো এবারও সন্দেহের তির সরকারি ছাপাখানা বিজি প্রেসের দিকে। তবে বিজি প্রেস বলছে, তাদের এখান থেকে প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পদ্ধতিগত ত্রুটি থাকার কারণেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। ২০১০ সালে মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার পর বিজি প্রেসের গোপনীয় শাখার শৃঙ্খলা ও ত্রুটি দূর করতে ১৩টি সুপারিশ করে সেই সময়ের তদন্ত কমিটি।

কিন্তু সেগুলোর অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়নি। পাশাপাশি প্রশ্ন ফাঁসের মূল হোতারা বারবার ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়াও এটা বন্ধ না হওয়ার বড় কারণ। সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) দাবি, বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও মডারেশন এখন এমন প্রক্রিয়ায় করা হয়, যাতে প্রশ্নপত্র তৈরির সময় ফাঁসের কোনো সুযোগ নেই। প্রশ্নপত্র চূড়ান্ত করার পর সেটি মুদ্রণ ও প্রকাশনার দায়িত্ব থাকে বিজি প্রেসের। কাজেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে সেখান থেকেই হতে পারে।

তবে এ ঘটনায় পিএসসির কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধেও এবার কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে পিএসসি। বিজি প্রেসের উপপরিচালক আবদুল বারী প্রথম আলোকে বলেন, বিজি প্রেসের গোপনীয় শাখায় কড়া নিরাপত্তা রয়েছে। এখান থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো সুযোগ নেই। পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) আ ই ম নেছারউদ্দিন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে প্রশ্নপত্রে ৩৩তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা হওয়ার কথা, সেই প্রশ্নপত্রই ফাঁস হয়েছে কি না, আমরা নিশ্চিত নই। পরীক্ষার্থীদের আহ্বান করছি, আপনাদের কাছে যে প্রশ্নপত্র আছে, তা পিএসসিকে দিন।

কারা প্রশ্নপত্র আপনাদের কাছে বিক্রি করেছে, তাদের নামও দিন। ’ যে প্রক্রিয়ায় প্রশ্নপত্র তৈরি হয়: পিএসসির কয়েকজন সদস্য ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুন মাসে ৩৩তম বিসিএসের প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এরপর জুলাই মাসে লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরির কাজ শুরু হয়। নয়টি আবশ্যিক বিষয়ের প্রশ্নপত্রসহ মোট ৪৬টি বিষয়ের প্রশ্নপত্র তৈরি করেছে পিএসসি। একেকটি বিষয়ের জন্য আটজন প্রশ্নকারক আটটি প্রশ্ন তৈরি করেছেন।

এরপর সেই প্রশ্নপত্র তারা খামে ঢুকিয়ে সিলগালা করে চারপাশে তাঁদের স্বাক্ষর করে গেছেন। এরপর চারজন নিরীক্ষক এসে সেই খাম খুলেছেন। একেকজন নিরীক্ষককে দুটি করে প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়েছে। তাঁরা সেই দুটি প্রশ্নপত্র সমন্বয় করে একটি প্রশ্নপত্র তৈরি করেছেন। নিরীক্ষকেরাও একইভাবে খাম সিলগালা করে স্বাক্ষর করেছেন।

পিএসসির কর্মকর্তারা বলছেন, এভাবে একেকটি বিষয়ের জন্য চার সেট প্রশ্নপত্র চূড়ান্ত করে হাতে লেখা সেই প্রশ্নপত্র মুদ্রণ ও ছাপার জন্য পাঠানো হয়েছে বিজি প্রেসে। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিজি প্রেসে প্রশ্নপত্র মুদ্রণ ও ছাপা শেষে আবার সিলগালা করে পাঠানো হয়েছে পিএসসিতে। এখনো সিলগালা অবস্থায়ই এই প্রশ্নপত্র পিএসসিতে আছে। গতকাল পর্যন্ত সেই প্রশ্নপত্র খোলা হয়নি বলে দাবি করেছেন তাঁরা। পিএসসির আরেকজন সদস্য বলেন, পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণেই বারবার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনা ঘটে।

প্রশ্নপত্র যাতে ফাঁস না হয়, সে জন্য একেকটি বিষয়ের চার সেট করে প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো, সবগুলো প্রশ্নপত্র মুদ্রণ ও ছাপার জন্য একটিমাত্র জায়গা বিজি প্রেসেই গেছে। এতে চার সেট প্রশ্ন করার উদ্দেশ্যই মাটি হয়ে যায়। কারণ এক সেট প্রশ্নপত্র যেখান থেকে ফাঁস হতে পারে, সেখান থেকে চার সেট প্রশ্নপত্রও ফাঁস হতে পারে। পিএসসি কেন তা হলে বিজি প্রেসের পাশাপাশি অন্য কোথাও প্রশ্নপত্র ছাপাতে পাঠাচ্ছে না জানতে চাইলে পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নেছারউদ্দিন বলেন, ‘আইন অনুযায়ী সরকারি সব পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিজি প্রেসেই পাঠাতে হয়।

আর এ কারণেই আমাদের অন্য কোনো বিকল্প নেই। তবে এই সমস্যা কীভাবে দূর করা যায়, সেটি নিয়ে আমরা ভাবছি। ’ মূল অভিযুক্তরা ধরাছোঁয়ার বাইরে: বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে পিএসসি ও বিজি প্রেসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ক্ষমতাসীন দলের কিছু লোক জড়িত থাকেন। তবে কখনোই মূল হোতাদের চিহ্নিত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মাধ্যমিকের শিক্ষক নিয়োগ, খাদ্য অধিদপ্তরের সহকারী খাদ্য উপপরিদর্শক, ঢাকা ওয়াসার সহকারী প্রকৌশলী, খাদ্য বিভাগের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক, সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, অগ্রণী ব্যাংকসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও মূল হোতারা সব সময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকেছেন।

দেশে প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রথম আলোচিত ঘটনা ঘটে ১৯৭৯ সালের এসএসসি পরীক্ষায়। সেবার প্রশ্নপত্রের সিলমোহর করা প্যাকেট কেটে প্রশ্ন ফাঁস করা হয়। ওই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও রাজনৈতিক কারণে শেষ পর্যন্ত দায়ী ব্যক্তিদের কিছু হয়নি। এরপর এসএসসি পরীক্ষাতেই প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটে ১৯৯১ ও ১৯৯৭ সালে। কিন্তু তখনো কারোরই কোনো শাস্তি হয়নি।

১৯৯৯ সালের এসএসসি পরীক্ষার আগে ভোলার একটি কেন্দ্র থেকে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পরীক্ষা বাতিল করে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। কিন্তু কারও শাস্তি হয়নি। দেশের নিয়োগ পরীক্ষার বিভিন্ন প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা শুরু হয় ২০০৩ সাল থেকে। ওই বছর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা, ডিগ্রি পরীক্ষা, সমবায় অধিদপ্তরের পরিদর্শক নিয়োগ পরীক্ষা, সাব-রেজিস্ট্রার পদে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা এবং পুলিশের এসআই নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটে।

২০০৩ সালের পর নিয়মিতই বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে থাকে। ২০০৪ সালে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র, ২০০৫ সালে ২৫তম বিসিএসের লিখিত এবং ২৭তম বিসিএসের প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষার প্রশ্নপত্রসহ একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে থাকে। ২০১০ সালের জুলাইয়ে মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার পর সারা দেশে আলোচনার ঝড় ওঠে। বিজি প্রেসের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণের সঙ্গে জড়িত থাকার শাস্তি ন্যূনতম তিন বছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ড। কিন্তু বিসিএসসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় অন্তত ৭০ বার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটলেও শাস্তির নজির নেই।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.