আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অলৌকিকতা ও ইশ্বরের অস্তিত্ব

মানুষ হবার প্রচেষ্টায় অলৌকিকতা ও ইশ্বরের অস্তিত্ব লেখক: অকথ্যকথক অলৌকিক ঘটনা কি ইশ্বরের অস্তিত প্রমাণ করে? কেউ হৃদস্পন্দন বন্ধ মৃত দেহে প্রাণ সঞ্চার করে যদি বলে “এই ঘটনার ফলে তিন সাত অপেক্ষা বড় হবে”, তবে আপনি কি উত্তর করবেন? মানুষের স্বভাবগত কারণে সে অলৌকিকতার রহস্যের অনুসন্ধান করে এবং বহুযুগের রহস্য তারপর মানুষের দাসত্ব করে, যেমন আগুন। আর যারা অলৌকিকতার কাছে আত্ত্বসর্মপণ করে তারা, রহস্য সন্ধানী মানুষেরা যখন প্রকৃতির অলৌকিকতাকে দাসত্বে আবধ্য করে তখন তাদের করুণার পাত্রে পরিণত হয়। পিছিয়ে পড়ার দলেরা কখনও বিলুপ্ত হয়, কখনও দুর্গম অঞ্চলে সরে যায়, কখনও তার অলৌকিকতার সাথে নিজেও দাসত্বে অংশ নেয়। মৃতদেহে প্রাণের সঞ্চার হাজার বছর ধরে মানুষ শ্রেষ্ঠতম অলৌকিকতা হিসাবে গণ্য করেছে। কিন্তু আজকের মানুষ বিজ্ঞানের অনুসন্ধানের ফলে জানে নির্দিষ্ট কিছু বিষ নির্দিষ্ট মাত্রায় প্রয়োগ করতে পারলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এমন এক শীতনিদ্রা(hibernate) সৃষ্টি করা যায় যেখানে মানুষের হৃদপিন্ড পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়, ফলে সবাই তাকে মৃত বলে ভ্রম করবে।

ক্রিতদাসের ব্যবসায়িরা একদা বহুযুগ ধরে এই গুপ্তবিদ্যা মানুষ চুরির কাজে ব্যবহার করত। জাপানের সবচেয়ে দামি খাবার ফুগোমাছ খেয়ে কেউ মারা গেলে লাশ না পঁচা পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়, যাতে কারো জীবন্ত কবর বা দাহ না হয়। অনেকেই ভাগ্যবান পুণরায় বেঁচে যান। পাঠক জিজ্ঞাসা করতেই পারেন এই বিষ কার কোন মঙ্গলে আসবে? উত্তর হচ্ছে, আজ যারা মঙ্গল গ্রহে ভ্রমণের স্বপ্ন দেখছেন এই বিশ তাদেরই মঙ্গলে আসবে। মঙ্গল যেতে চার মাস সময় লাগে, এবার ভেবে দেখুন চার মাসে আপনি কি পরিমান খাবার খাবেন, কি পরিমান পানি পান করবেন, কি পরিমান পানি ব্যবহার করবেন।

আর আপনি যদি চার মাসের একটা সফল ঘুম দিতে পারেন তাহলে যাত্রা পথে কি পরিমান খরচ বাচে? আসলে খরচটা এতোই বেশী হবে যে চারজন নভোচারীকে চার মাসের খাবার দিয়ে পাঠানো আসলে অসম্ভব পর্যায়ে পরে। তবে আপনি যদি ভাল্লুক হতেন তাহলে এতো ঝামেলা লাগত না, কারণ ভাল্লুক(মেরুভাল্লুক) প্রাকৃতিক নিয়মে প্রতিবছর একটানা ছয়মাসের একটা ঘুম(শীতনিদ্রা/Hibernate) দিয়ে থাকে। ধান ভাংতে শিবের গীত একটু বেশী করে হয়ে গেল। যাক, এতোক্ষণ ধরে যা বলতে চাচ্ছি তা হচ্ছে কেহ যদি অশ্বডিম্বের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে চান তবে তাকে অশ্বডিম্ব উপস্থিত করেই অশ্বডিম্বের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে হবে। হাঁসের পেটে হাঁসের ডিম থাকে বলে ঘোড়ার পেটে ঘোড়ার ডিম থাকবে এই যুক্তি কী যুক্তি? তাই বলি কি ইবনে সিনা/ত্র্যারিষ্টোল-এর মতো যুক্তি দিয়ে ইশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে চাইলে যুক্তির সংকট সৃষ্টি হবেই।

কিন্তু গাযযালী/প্লেটো-র মতো ইশ্বরকে বিশ্বাস করে নিলে আস্তিক নাস্তিকের দ্বন্দ দূর হয়। কারণ যুক্তি কখনই বিশ্বাসের সাথে দ্বন্দে লিপ্ত হতে পারে না এবং যুক্তি কখনই মানুষের বিশ্বাস করার স্বাধীনতাকে অস্বীকার করতে পারে না, তা সেই যুক্তি বিশ্বাসকে যতই ভ্রান্ত প্রমাণ করুক না কেনো। লক্ষ্য করুন পৃথিবীর প্রায় সমস্ত ধর্মগ্রন্থ কি বলে না এই ধর্ম বিশ্বাসীদের জন্য। তবু যারা ইশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য দ্বন্দে লিপ্ত হতে চান তারা কি নিশ্চিত তার ইশ্বরের নির্দেশ লংঘণ করছেন না? আর ইশ্বরের নির্দেশের লংঘণ তো বিদ্রোহের সামিল। কারণ অধিকাংশ ধর্মমতে ইশ্বর নিজেই অবিশ্বাসীদের তার মহিমা উপলব্ধি করার ক্ষমতা দান করেন না।

আর মূর্খরা, তা সে যত বড়ই বিশ্বাসী হোক না কেনো ইশ্বরের ইচ্ছা না বুঝে শয়তানের প্ররোচনায় অহেতুক দ্বন্দে লিপ্ত হয়। যুক্তি তো শয়তানের দ্বন্দ সৃষ্টি করার হাতিয়ার। অনেক ধর্মমতে শয়তানই যুক্তির প্রথম প্রয়োগকারি আর সে তা ব্যবহার করে সৃষ্টিকর্তার সাথে বিদ্রোহ করার কাজে, যখন তাকে বলা হয় মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করতে। ফলে যারা বিশ্বাসী বলে দাবি করা সত্বেও বিশ্বাসের ভিত্তি না করে অবিশ্বাসীদের ন্যায় যুক্তি প্রমাণের দ্বন্দ সৃষ্টি করে, তারা কি নিশ্চিত তারা শয়তান দ্বারা প্ররোচিত নন? ভূতের অস্তিত্বের অলৌকিকতা কি, ভগবানের অস্তিত্ব সিদ্ধ করে??? ব্রাহ্ম্যদৈত্য/দেও, আজর, কন্দকাটা, মামদোভূত, গেছোভূত, কানাওয়ালা, নিশি/নিশিডাক, আলেয়া, পেত্নি, শাকচুন্নি, ইত্যাদি প্রায় আর্ধশত ভূতের প্রজাতির নাম আমার শৈশবে জানতাম। এদের কেউ মাটির ভূত, কেউ পানির ভূত, কেউ আগুনের ভূত, কেউ গাছের ভূত, কেউ আকাশের বাতাসের ভূত তবে শেষের দিকে যারা আছেন তারা ভূত হলেও স্ত্রীজাতিয় ভূত।

যৌবনে তিনাদের সন্ধানে শশ্মান/গোরস্তান-এ নিশিরাতে একাকি গেছি। বলিতে লজ্জা নাই যার চেহারা পৃথিবী কোন নারীর পছন্দ হয় নাই, তার চেহারা ভূতেদের পছন্দ না হওয়ার জন্য অন্য কোন বিশেষ কারণের প্রয়োজন আছে কিনা আমার জানা নেই। তাই, অভাগা যেদিকে তাকায় সাগর সেদিকে শুকায়। আমি তিনাদের দেখা পাওয়া ভাগ্যবানদের একজন হতে পারি নাই। তবে হ্যাঁ, ভূতের দেখা না পেলেও ভূতের ভয় আমি ঠিকই পেয়েছিলাম।

এই ঘটনা ছিলো এক অদ্ভূত অনুভূতি আমার দেহে তখন যেন আদিম বন্য প্রাণির মত এক তীব্র সতর্কতা ও হিংস্র ক্ষিপ্রতা কাজ করছিলো। নিজের ঈন্দ্রিয়গুলো অন্ধকারে এত তীব্র কাজ করতে পারে যা ভাবা যায় না। বিশেষ করে কান সবচেয়ে বেশি কাজ করে, সবচেয়ে বেশি বিভ্রান্তি তৈরি করে এবং এই ঈন্দ্রিয়টি সবচেয়ে বেশি উপকারে আসে। বিপদে ক্ষিপ্রতা বৃদ্ধির জন্য শরীর যে হরমন নিঃষরণ করে, নিশ্চয় তা খুব বেশি হচ্ছিলো। যাহোক, ভূতের অস্তিত্ব নিশ্চিত করতে না পারলেও ভূতের ভয় বিদ্যমান তা আমি নিশ্চিত।

কারো যদি তার পরও চক্ষু কর্ণের বিবাদ ভঞ্জনের ইচ্ছা থাকে, তাকে আমন্ত্রন আমার নানা বাড়ি সীমান্ত অঞ্চলে সেখানে আজও বিজলি বাতি পৌঁছায় নাই। একবার বাঁশবনে রাতের আঁধারে ছেড়ে দিতে পারলে...। অভিজ্ঞতা আমাকে শেখালো “ভূতের ভয়, ভূত আস্তিত্ব আশ্রিত নয়”, বরং ভূতের অস্তিত্ব এবং ভূতের বিশ্বাস, ভূতের ভয় টিকে থাকার উপর নির্ভরশীল। আজ যে আপনি আমাকে ভিতু বলে টিটকারি করবেন তার কারণ কিন্তু বিজলি বাতি। অনেকেই বলে থাকে বিজলি বাতি ভূত তাড়িয়েছে, এই কথাটাই আমি একটু গুছিয়ে বলতে চাই।

বিজলি বাতি ভূত তাড়ায় নাই, কারণ ভূতের অস্তিত্ব নাই, বিজলি বাতি ভূতের ভয় তাড়িয়েছে। যেহেতু, বিজলি বাতি ভূতের ভয় তাড়িয়েছে সেহেতু, আপনি ভূত বিশ্বাসের সংস্কৃতি এমন ভাবে ভুলে বসেছেন ভূতের অস্তিত্ব আজ আপনার কাছে আর কোন বিবেচ্য বিষয় নয়। ভূতের অস্তিত্ব যেমন ভূতের ভয় নির্ভর তেমনই, ভগবানের অস্তিত্ব কি মৃত্যু ভয় নির্ভর? মানুষ ক্লোনিং সম্ভব করেছে, ২০১০ সালে কৃত্রিম DNA তৈরী করে তাকে জীবন্ত করেছে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে বার্ধক্যজনিত ও রোগজনিত মৃত্যু বন্ধ করে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। যদি অবিশ্বাস্য সেই দিন যদি এসেই পরে আপনি ধীরে ধীরে ভূতকে ভুলে যাওয়ার মত, ভগবানকে ভুলে যাবেন না তো??????? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।