পরিবর্তনের অপেক্ষায় একসময় মুসলমানদের জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা কোনো অংশে কম ছিল না। সে সময় সমগ্র বিশ্বের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ছিল মুসলমানদের হাতে। জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য ও সভ্যতায় মুসলিম জাতি ছিল উন্নত ও শ্রেষ্ঠ। অতীব দুঃখের বিষয়, মুসলমানদের গৌরবোজ্জ্বল অতীত সম্পর্কে আজ মুসলমানদের অনেকেই ওয়াকিবহাল নয়। ইউরোপের পন্ডিতরা বিশ্বখ্যাত মুসলিম বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের নাম বিকৃত করে উপস্থাপন করেছেন।
সেই ঐতিহ্যের মাঝে বিজ্ঞানী আল-ফারাবীর নাম উল্লেখযোগ্য। আল ফারাবী দর্শন ছাড়াও যুক্তিবিদ্যা ও সঙ্গীত-এর ন্যায় জ্ঞানের বিস্তর শাখায় অবদান রাখেন।
বিজ্ঞানীর জীবনে অবিস্মরণীয় ঘটনা
তিনি একজন খ্যাতনামা দার্শনিক ও বহুভাষাবিদ পন্ডিত। তোমরা জেনে অবাক হবে, তিনি প্রায় সত্তরটি ভাষা জানতেন। আর যে কারণে আরবরা তাকে বলতো, ‘হাকিম সিনা’ অর্থাৎ দ্বিতীয় আচার্য।
বিজ্ঞানীর সংক্ষিপ্ত প্রোফাইল
এসো এবার এই বিজ্ঞানীর সংক্ষিপ্ত প্রোফাইল জেনে নিইঃ
নাম- আবু নসর আল ফারাবী।
জন্ম- আনুমানিক ৮৭০ খ্রিস্টাব্দে এবং মৃত্যু- ৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে।
বাসস্থান- তুর্কিস্তানের অন্তর্গত ফারাব নামক শহরের নিকটে আল ওয়াসিজ গ্রামে।
শিক্ষা জীবন- শিক্ষাজীবন শুরু করেন ফারাবায়। কয়েক বছর পর আরো শিক্ষার উদ্দেশ্যে চলে যান বোখারার।
আল ফারাবী উচ্চ শিক্ষার জন্যে গমন করেন বাগদাদে। তিনি সেখানে প্রায় ৪০ বছর ধরে অধ্যায়ন ও গবেষণা চালিয়ে যেতে থাকেন। কয়েকটি ভাষার উপর তিনি পূর্ণ দখল অর্জন করেন। তিনি জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় ছিলেন পারদর্শী। তবে দার্শনিক বিজ্ঞানী হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছাড়িয়ে পড়ে চারিদিকে।
জ্ঞানের সন্ধানে তিনি ছুটি গিয়েছেন দামেস্কে, দেশ-বিদেশের আরো অনেক স্থানে পদার্থবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, দর্শন, যুক্তিশাস্ত্র, গণিতশাস্ত্র, চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রভৃতিতে তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। মূলত দর্শন ও বিজ্ঞানে তাঁর অবদান সর্বাধিক। পদার্থ বিজ্ঞানে তিনি শূন্যতার অবস্থান প্রমাণ করেছিলেন। তিনি বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক হিসেবে আরোহন করেছিলেন জ্ঞানের শীর্ষে।
রাজা সাইফ আদ দৌলা বিজ্ঞানী আল ফারাবীর সাক্ষাৎ পাননি।
একবার ফারাবী শাহী দরবারে উপস্থিত হন। ফারাবীকে নিকটে পেয়ে রাজা খুব খুশি হন। সেই সঙ্গে ফারাবীর সাথে জ্ঞান-বিজ্ঞানের দীর্ঘ আলোচনায় মেতে ওঠেন। দার্শনিক ফারাবীর প্রজ্ঞায় রাজা মুগ্ধ হন। সম্মান দেখান তাঁর প্রতি।
বিজ্ঞানী আল ফারাবী রাজার সঙ্গী হিসেবে এখানে বেশ কিছুদিন অবস্থান করেন। তিনি সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, যুক্তিশাস্ত্র প্রভৃতি বিষয়ে বহু রচনা লিখেছেন। তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় শতাধিক বলে অনেকে উল্লেখ করেছেন।
তবে এ সকল অমূল্য অধিকাংশ গ্রন্থের সন্ধান মেলেনি। আল ফারাবীর লেখা ‘আলা আহলে আল মদীনা আল ফাদিলা (দর্শন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্পর্কিত) গ্রন্থটি সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য।
সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কেও তাঁর লেখা কয়েকটি গ্রন্থ তাঁকে বিখ্যাত করেছে।
অন্যতম অবদানসমূহ :
১. পদার্থবিজ্ঞানে তিনি শূন্যতার অবস্থান প্রমাণ করেছিলেন
২. আলা আহলে আল মদীনা আল ফাদিলা (দর্শন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান) গ্রন্থ।
মুসলিম বিজ্ঞানীদের ইতিহাসে আল ফারাবীর নাম আজো স্মরণীয়। মুসলিম জাতির কল্যাণে তিনি যে মৌলিক আবিষ্কার রেখে গেছেন তা আমাদের জন্য দিক নির্দেশনা বটে!
- সাদ আব্দুল ওয়ালী, প্রকাশিতব্য ছোটদের বিজ্ঞান মনীষা থেকে নেওয়া।
মন্তব্যগুলো (0) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।