আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিরক্ষর চিকিৎসক অদ্ভুত ব্যবস্থাপত্র!

আমি অনেক কিছু সাহস করে বলতে চেয়ে ও বলতে পারি না যখন দেখি আমার পাশের মানুষ গুলো পিছু হটে যায়... যখন দেখি সবাই নিজেকে নিয়ে অনেক বেশি ভাবে,তাই আমি ও কিছু বলতে চাই আমার প্রিয় ব্লগে... সজোরে আওয়াজ তুলতে চাই আমার ভালো লাগা লেখনি দিয়ে। রাজিব সামির............... নাম তাঁর রেজাউল করিম। বয়স ৪৫ থেকে ৫০ বছর। তিনি নিরক্ষর। তবু তিনি ‘চিকিৎসক’! নিজের প্যাডে রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দেন।

কিন্তু এতে কী লেখেন, কোন ভাষায় লেখেন, কেউ বোঝে না। এমনকি তিনি নিজেও না। স্থানীয় লোকজন আগে তাঁর এই ‘চিকিৎসা’য় বিশ্বাস করলেও এখন করে না। তবে দূর-দূরান্তের মানুষ এখনো তাঁর কাছে চিকিৎসা নিতে আসে। কথিত এই কবিরাজের বাড়ি নওগাঁর মান্দা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের কেশবপুর (ঝাঝর) গ্রামে।

১০-১২ বছর ধরে তিনি এই অদ্ভুত চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কেশবপুর গ্রামে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের পাশেই ‘কবিরাজ’ রেজাউলের পাকা বাড়ি। সেখানেই তাঁর ‘চিকিৎসালয়’। বাড়ির দেয়ালে লেখা, ‘আল্লাহ সর্বশক্তিমান। এখানে গণনা করা হয় না।

এখানে টাকা দিয়ে সিরিয়াল দেওয়া হয় না। ’ ঘরের বাইরে লোকজন চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করছে। রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রেজাউল চিকিৎসার শুরুতেই রোগীর হাতে একটি হাড় ধরিয়ে দেন। এই হাড় ধরা অবস্থায় তিনি রোগীর সমস্যা বুঝে ফেলেন। মুখে কিছু বলতে হয় না।

এরপর তিনি ব্যবস্থাপত্র লিখে পাশে আরেকজনের কাছে দেন। এই ব্যক্তি ওষুধ দেন। ওষুধ বলতে আয়ুর্বেদিক তরল ওষুধ। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে রেজাউল করিম এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি নিরক্ষর। তবে ২০০৯ সালে “এলএমএএফপি খুলনা ট্রেনিং সেন্টার” থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছি।

’ তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের একটি সনদপত্রও দেখান। লেখাপড়া না করে কীভাবে প্রশিক্ষণ নিলেন, জানতে চাইলে রেজাউল বলেন, ‘মৌখিক প্রশিক্ষণ নিয়েছি। ’ রেজাউল করিম জানান, তিনি ওষুধ তৈরি করতে পারেন। কিন্তু অনুমতিপত্র (লাইসেন্স) না থাকায় বাজারের তৈরি ওষুধ ব্যবহার করেন। তাঁর দাবি, ওষুধ বিক্রি করে যে লাভ হয়, তা তিনি নেন না।

সেই টাকা দিয়ে একটি মক্তব চালান। আর সংসার চালান পৈতৃক জমিজমার আয় দিয়ে। ব্যবস্থাপত্র কোন ভাষায় লেখেন, জানতে চাইলে কবিরাজ রেজাউল বলেন, ‘তা আমি নিজেও জানি না। ’ তাহলে কী লিখছেন আর তা কেই বা বুঝবেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘সঙ্গে আরও একজন আছেন, তিনিই লেখেন, তিনিই বোঝেন। ’ তিনি কে জানতে চাইলে রেজাউল অলৌকিক শক্তির প্রতি ইঙ্গিত করেন।

চিকিৎসালয়ের বাইরে কয়েকজন রোগীর হাতে রেজাউলের দেওয়া ব্যবস্থাপত্র দেখা যায়। তাদের অধিকাংশের হাতেই ‘পাগলের তেল’ নামের ওষুধের বোতল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহীর চারঘাট থেকে আসা কয়েকজন রোগী বলেন, এর আগেও তাঁরা ওষুধ নিয়েছেন। কোনো উপকার পাননি। কবিরাজ আবার আসতে বলেছেন, তাই শেষবারের মতো এসেছেন।

পাশের শ্রীরামপুর গ্রামের ভটভটিচালক শফিউল ইসলাম বলেন, স্থানীয় লোকজন কেউ ‘কবিরাজের কেরামতি’ বিশ্বাস করে না। দূরের লোকজন কী শুনে আসে, তা কেবল তারাই জানে। শফিউল বলেন, ‘আমার আট বছরের ছেলের একটা সমস্যা হয়েছিল। আমার স্ত্রী নিয়ে গিয়েছিল। কোনো কাজ হয়নি।

’ নওগাঁর সাবাইহাট বাজারে কথা হয় মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি জানান, তাঁর বোন (৩৫) একটা সমস্যা নিয়ে গিয়েছিলেন। সে নাকি উপকার পেয়েছে। এখন সপ্তাহে এই চিকিৎসকের সঙ্গে একবার দেখা করতে হয়। তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নাজমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি শুনেছি, কবিরাজ সাধনা করে হাওয়ার ওপরে চিকিৎসা দেন।

মানুষ আসে। চিকিৎসাও নেয়। ’ নওগাঁর সিভিল সার্জন সোলায়মান আল ফারুক বলেন, এই কবিরাজের কথা তিনি শোনেননি। সব শুনে তিনি বলেন, চিকিৎসার নামে কেউ এভাবে প্রতারণা করতে পারে না। তিনি বিষয়টি তদন্তের জন্য মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেবেন।

সূত্র : প্রথম আলো ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।