শহরের অনেক উঁচুতে, একটা লম্বা স্তম্ভের উপরে, দাঁড়িয়ে ছিল সুখী রাজকুমারের মূর্তি। ওঁর সারা শরীরে জড়ান ছিল খাঁটি সোনার পাতলা পাত, চোখ দুটিতে বসানো ছিল দুটো উজ্জ্বল নীলা, আর একটা বড় লাল চুনি দ্যুতি ছড়াচ্ছিল ওঁর তলোয়ারের বাঁট থেকে।
প্রচণ্ড মুগ্ধ দৃষ্টিতে সবাই তাকাত ওঁর দিকে। শহরের কাউন্সিলরের একজন, যিনি শৈল্পিক রূচির একটা খ্যাতি লাভের আশা করত, মন্তব্যচ্ছলে বলত, “রাজকুমার ওয়েদারককের মতই সুন্দর,” পাছে লোকে তাঁকে অবিবেচক ভাবে, এই ভয়ে আরো যোগ করত, “অবশ্য ওরকম কাজের কিছু নয়। ”
“তুই কেন সুখী রাজকুমারের মতো হতে পারিস না?” কোন ছোট বালক চাঁদ ধরার আবদার নিয়ে কেঁদে উঠলে ওর উদ্বিগ্ন মা জানতে চাইত, “সুখী রাজকুমার তো কোন কিছুর জন্য কাঁদার কথা স্বপ্নেও ভাবে না।
”
অপূর্ব এই মূর্তির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে হতাশাগ্রস্ত এক লোক বিড়বিড় করে বলত, “খুশি হলাম, অন্তত একজন আছে এই পৃথিবীতে যে পুরপুরি সুখী। ”
উজ্জ্বল লাল রঙের আলখাল্লা আর পরিস্কার সাদা পিনাফোর পড়া এতিম শিশুরা গির্জা থেকে বের হবার সময় বলত, “ওঁ দেখতে ঠিক দেবদূতের মতো। ”
“তোরা কী করে জানলি?” গনিতের শিক্ষক বলত, “তোরা তো কখনো দেবদূত দেখিস নি। ”
“এহে! আমরা স্বপ্নে দেখেছি,” শিশুরা উত্তর দিত; শিশুদের স্বপ্নকে সমর্থন দিতে না পেরে ভুরু কুঁচকে অত্যন্ত কড়াভাবে তাকাত গনিতের শিক্ষক।
এক রাতে শহরের উপর দিয়ে উড়ে এল ছোট্ট এক সোয়ালো পাখি।
ছয় সপ্তাহ আগেই ওর বন্ধুরা মিশর চলে গিয়েছে, কিন্তু সবচেয়ে সুন্দর নলখাগড়াটির প্রেমে পড়ে থেকে গিয়েছিল ও। বসন্তের শুরুতেই নলখাগড়াটির সাথে ওর পরিচয়, একটা বড় হলদে পোকা ধরতে নদীর উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল ও, তার সরু কোমর দেখে এতই মুগ্ধ হল, থামল কথা বলার জন্য।
“ভালো কি বাসব তোমায় আমি?” সোয়ালো বলল, মনের কথা অকপটে বলে দিতে পছন্দ করত ও, মৃদু মাথা নুইয়ে সম্মতি জানাল নলখাগড়াটি। উত্তর পেয়ে নলখাগড়াটির চারদিকে উড়ে বেড়াল ও বারে বারে, ডানা ঝাপটিয়ে মৃদু রূপালি তরঙ্গ তুলল জলে। এভাবেই প্রণয়ে মেতে উঠল ও, সারাটা গ্রীষ্ম জুড়ে চলল এমনি করে।
“এ এক উদ্ভট আসক্তি,” অন্য সোয়ালোরা কিচিরমিচির করে বলাবলি করত, “তার কোন টাকা পয়সা নেই, আর কত জনের সাথে সম্পর্ক আছে কে জানে”; নলখাগড়ায় অবশ্য বেশ ভরা ছিল নদীটি। এরপর, শরৎ চলে এলে ওরা সবাই উড়ে চলে গেল।
ওরা চলে যাবার পর বিষণ্ণ বোধ করতে লাগল ও, প্রেমিকার উপর বিরক্ত হতে শুরু করল। “কথা কয় না আমার সাথে,” বলল সোয়ালো, “আমার ভয় হচ্ছে, ও একটা ছলনাময়ী, সব সময় বাতাসের সাথে ফস্টিনস্টি করে বেড়ায়। ” এটা ঠিক, বাতাস বইলে সবচেয়ে বেশি সাবলীল হয়ে সৌজন্য দেখায় নলখাগড়াটি।
“বুঝেছি আমি, ও একটা ঘরকুনো,” বলে চলল ও, “কিন্তু ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসি আমি, আমার বউয়েরও তাই ভালোবাসা উচিৎ। ”
“তুমি কি যাবে আমার সাথে?” শেষপর্যন্ত সোয়ালো বলে বসল ওকে; কিন্তু নলখাগড়াটি মাথা নেড়ে জানিয়ে দিল, ও ওর বাড়িকে অনেক ভালোবাসে।
“আমাকে হেলাফেলা করলে তুমি,” কেঁদে ফেলল সোয়ালো। “পিরামিডের দেশে চলে যাচ্ছি আমি। বিদায়!” এরপর, ও উড়াল দিল।
সারাটা দিন উড়ে বেড়াল ও, আর রাতে এসে পৌঁছুল এ শহরে। “কোথায় থাকব আমি?”, বলল ও; “আশা করছি, শহরে একটা ব্যবস্থা থাকবে। ”
এরপর, লম্বা স্তম্ভের উপর মূর্তিটি দেখল ও।
“ঐখানেই থাকব আমি,” উচ্ছ্বাস নিয়ে বলল সোয়ালো; “ভালো একটা জায়গা ওটা, ঢের ঝরঝরে বাতাস ওখানে। ” তাই সুখী রাজকুমারের ঠিক দুই পায়ের মাঝখানে নেমে এসে বসল ও।
“চমৎকার একটা শোবারঘর পেয়ে গেছি আমি,” চারিদিকে তাকিয়ে নিজেকে মৃদুভাবে বলল সোয়ালো; এরপর, ঘুমোতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিল ও; কিন্তু ডানার নিচে মাথাটা রাখতেই বড় এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল ওর উপর। “কী উদ্ভট ব্যাপার!” আর্তনাদ করে উঠল ও; “এক ফোঁটা মেঘও নেই আকাশে, উজ্জ্বল আর পরিস্কার দেখা যাচ্ছে তাঁরাগুলোকে, বৃষ্টি হবারও কোন সম্ভাবনা নেই। উত্তর ইউরোপের আবহাওয়া সত্যিই বিদঘুটে। নলখাগড়া বৃষ্টি ভালবাসত, কিন্তু ওটা ওর স্বার্থপরতা ছাড়া আর কিছুই না। ”
এরপর, আরেক ফোঁটা গড়িয়ে পড়ল।
“এ মূর্তি রেখে লাভ কী, যদি বৃষ্টি আটকাতে না পারে?” বলল ও; “ভালো একটা চিমনি-নল খুঁজে পেতেই হবে আমাকে,” উড়াল দেবার সিদ্ধান্ত নিল ও।
কিন্তু ডানা মেলে ধরার আগেই তিন নম্বর ফোঁটাটা গড়িয়ে পড়ল, তাকিয়ে দেখল ও – আহা! একি দেখল ও?
সুখী রাজকুমারের দু চোখ ভরা জল, জল গড়িয়ে পড়ছে ওঁর সোনালি গালটা বেয়ে। চাঁদের আলোয় ওঁর মুখটা এত সুন্দর লাগছিল, ছোট্ট সোয়ালোর হৃদয়টা মায়ায় ভরে উঠল।
“কে তুমি?” বলল ও।
“আমি সুখী রাজকুমার।
”
“কাঁদছ কেন তাহলে?” সোয়ালো জানতে চাইল; “পুরপুরি ভিজিয়ে দিয়েছ তুমি আমাকে। ”
“যখন আমি বেঁচে ছিলাম, একটা মানব হৃদয় আমারো ছিল,” উত্তর দিতে লাগল মূর্তিটি, “চোখের জল কাকে বলে জানতাম না আমি, কারন সান-সুসির প্রাসাদে বাস করতাম আমি, দুঃখ প্রবেশ করার অনুমতি ছিল না সেখানে। দিনের বেলায় সাথিদের নিয়ে বাগানে খেলতাম, আর সন্ধ্যায় গ্রেট হলে যেতাম নাচতে। অনেক উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা ছিল বাগানের চারদিক, কখনই জানার আগ্রহ দেখাইনি আমি এর বাইরে কি আছে, আমার চারপাশের সবকিছুই ছিল অনেক সুন্দর। সভাসদরা সুখী রাজকুমার বলে ডাকত আমায়, ভোগ-বিলাসকে যদি সুখ বল,তবে সুখীই ছিলাম আমি।
এভাবেই জীবন কাটালাম আমি, আর মরেও গেলাম এভাবে। আর আমার মৃত্যুর পরে, ওরা আমাকে এখানে এত উঁচুতে এনে বসাল, আমার শহরের সব কদর্যতা, সব দুঃখ-কষ্ট দেখতে পারি আমি, সীসা দিয়ে আমার হৃদয় গড়লেও, না কেঁদে পারি না আমি। ”
“কি! নির্ভেজাল স্বর্ণের নয় ও?” নিজেকে বলল সোয়ালো। এতটা বিনয়ী হয়ে পড়েছিল ও, উচ্চ শব্দে কোন ব্যক্তিগত কথাও বলতে পারছিল না।
“ঐ দূরে,” অনুচ্চ সুরেলা কণ্ঠ নিয়ে মূর্তিটি বলে চলল, “ঐ দূরে ছোট্ট একটা রাস্তার পাশে এক দরিদ্রাশ্রম।
জানালাগুলোর একটা খোলা, তা দিয়েই এক মহিলাকে দেখছি আমি টেবিলে বসে আছে। মুখটা তার মলিন আর ক্লান্ত, একটা মোটা কাপড় হাতে ধরে সুই সুতো দিয়ে কাজ করছে, একজন দর্জি সে। প্যাশন-লতা নকশী করছে, রানীর সবচেয়ে রূপবতী অবিবাহিত সখীটির জন্য সাটিন গাউনে ফুল তুলছে, এটা পড়ে পরের কোর্ট-বল পার্টিতে যাবে রানীর সখী। রুমের এক কোণে বিছানায় অসুস্থ হয়ে শুয়ে আছে তার ছোট্ট ছেলেটা। জ্বর হয়েছে ওর, কমলালেবু খেতে চাইছে।
নদীর জল ছাড়া আর কিছুই দেবার নেই ওর মায়ের, তাই কাঁদছে ও। সোয়ালো, সোয়ালো, ছোট্ট সোয়ালো, আমার তলোয়ারের বাট থেকে চুনিটা খুলে নিয়ে তুমি কি তার জন্য নিয়ে যাবে না? এই স্তম্ভের ভিত্তির সাথে পা দুটো বাঁধা আমার, কোথাও যেতে পারি না আমি। ”
“মিশরে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি আমি,” সোয়ালো বলল। “নীলনদের উপর দিয়ে ইতস্তত উড়াউড়ি করছে আমার বন্ধুরা, কথা বলছে বড় বড় পদ্মফুলের সাথে। মহান রাজার সমাধিতে শিঘ্রই ঘুমোতে যাবে ওরা।
রাজা স্বয়ং শুয়ে আছে তাঁর চিত্রাঙ্কিত কফিনে। হলদে লিনেনে মুড়িয়ে সুগন্ধি দিয়ে মমি করে রাখা হয়েছে তাঁকে। বিবর্ণ সবুজ পাথরের একটা হার তাঁর গলায়, হাত দুটো বিবর্ণ পাতার মত। ”
“সোয়ালো, সোয়ালো, ছোট্ট সোয়ালো,” রাজকুমার বলল, “একটা রাত কি থাকবে না আমার সাথে, আমার বার্তাবাহক হয়ে? ছেলেটা খুব পিপাসার্ত, আর মন খারাপ করে বসে আছে ওর মা। ”
“মনে হয় না ছেলেপেলেদেরকে পছন্দ করি আমি,” উত্তর দিল সোয়ালো।
“গত গ্রীষ্মে, নদীতে ছিলাম যখন আমি, মিলারের দুই দুষ্ট বালক সারাক্ষণই আমার দিকে পাথর ছুঁড়েছে। অবশ্য ওরা কখনই আমাকে আঘাত করতে পারে নি; আমরা সোয়ালোরাও এজন্য বেশ দূরে উড়ে গিয়েছি, আর তাছাড়া, ক্ষিপ্রগতির জন্য বিখ্যাত এমন পরিবারে আমার জন্ম; যাই হোক, ওটা ছিল একটা অশ্রদ্ধার নমুনা। ”
কিন্তু সুখী রাজকুমার এত বিষণ্ণতা নিয়ে তাকাল যে ছোট্ট সোয়ালো অনুতপ্ত হয়ে গেল। “খুব ঠাণ্ডা এখানে,” বলল ও, “তবুও একটা রাত আমি থাকব তোমার সাথে, তোমার বার্তাবাহক হয়ে। ”
“ছোট্ট সোয়ালো, তোমাকে ধন্যবাদ,” বলল রাজকুমার।
এরপর, রাজকুমারের তলোয়ার থেকে সেই বড় চুনিটি তুলে ফেলে, ঠোঁটে নিয়ে শহরের ছাদের উপর দিয়ে উড়ে চলল সোয়ালো।
গীর্জার মিনার পিছনে ফেলে এল ও, যেখানে সাদা মার্বেলে দেবদূতদের ভাস্কর্য বসান হয়েছিল। প্রাসাদ পিছনে ফেলে আসার সময় নাচের শব্দ শুনল ও। এক রূপবতী মেয়ে ওঁর প্রিয়তমকে সাথে নিয়ে ব্যালকনিতে বেরিয়ে এল। “কত অপূর্ব এই তাঁরাগুলো,” ওঁর প্রিয়তম বলল ওঁকে, “আর ভালোবাসার ক্ষমতা কত বিস্ময়কর!”
“স্টেট-বল পার্টিতে যে পোশাকটা পড়ে যাবো, ঠিক সময়েই তৈরী হয়ে যাবে মনে হয়,” মেয়েটি উত্তর দিল, “ওটার উপর প্যাশন-ফুল নকশী করার ফরমাশ দিয়েছি আমি, কিন্তু দর্জি মহিলাটা খুবই অলস।
”
নদী পেরুনোর সময় দেখল ও জাহাজের মাস্তুলে লণ্ঠন ঝুলছে। ইহুদি পল্লী পিছনে ফেলে আসার সময় দেখল ও, বুড়ো ইহুদিরা একে অপরের সাথে পণ্যের দামাদামি করছে, তামার দাঁড়িপাল্লায় টাকা মেপে দিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত, দরিদ্রাশ্রমে এসে পৌঁছুল ও, ভিতরের দিকে তাকাল। বিছানায় শুয়ে ছেলেটি জ্বরে কাঁপছে, খুব ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে ওর মা। লাফ দিয়ে ভিতরে ঢুকল সোয়ালো, টেবিলের উপর মহিলার সেলাইয়ের অঙ্গুলিত্রাণের পাশে বড় চুনিটি রাখল।
এরপর, বিছানার দিকে আলতো করে উড়ে গেল ও, ডানা দিয়ে ছেলেটির কপালে বাতাস করল। “কত ঠাণ্ডা লাগছে আমার,” ছেলেটি বলল, “ভালো হয়েই যাচ্ছি আমি”; এরপর মধুর সুখনিদ্রায় ডুবে গেল ও।
এরপর, সুখী রাজকুমারের কাছে উড়ে ফিরে এল সোয়ালো, ও যা যা করেছে সব বলল ওঁকে। “এটা অস্বাভাবিক,” মন্তব্যচ্ছলে বলল ও, “বেশ ঠাণ্ডা এখন, তবুও বেশ উষ্ণতা অনুভব করছি আমি। ”
“এর কারণ তুমি একটা ভালো কাজ করেছ,” রাজকুমার বলল।
ছোট্ট সোয়ালো চিন্তা করতে শুরু করল, আর এরপর ঘুমিয়ে পড়ল ও। চিন্তা করতে গেলেই সবসময় ঘুম পেয়ে বসে ওর।
দিনের আলো ফুঁটতে শুরু করলে নদীর দিকে উড়ে গেল ও, গোছল সারল। “কী অসামান্য বিস্ময়কর ঘটনা,” পাখিবিদ্যার অধ্যাপক বলল, সেতুর উপর দিয়ে যাচ্ছিল সে, “শীতে সোয়ালো!” এরপর, স্থানীয় পত্রিকায় এ সম্পর্কে একটা দীর্ঘ চিঠি লিখল সে। সবাই এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলল, এটা এত বেশি শব্দ দিয়ে লেখা যে তারা বুঝতে পারে নি।
“আজ রাতে মিশরে চলে যাবো আমি,” বলল সোয়ালো, প্রশান্তিতে আত্নাটা ভরে উঠেছে ওর। সব সরকারি স্মৃতিসৌধে ঘুরে বেড়াল ও, এরপর, গীর্জার উঁচু ভবনটার উপরে দীর্ঘ সময় বসে থাকল। যেখানেই গেছে ও, চড়ুইয়েরা ক্রমাগত কিচিরমিচির করেছে, একে অন্যকে বলেছে, “কী সম্মানিত ভিনদেশি!” এসব, নিজে নিজে অনেক উপভোগ করেছে ও।
চাঁদ উঠলে, সুখী রাজকুমারের কাছে উড়ে ফিরে এল ও। “মিশরে কোন খবর পৌঁছে দিতে হবে তোমার?” উত্তেজিত কণ্ঠে বলল ও, “এখুনি রওনা দিচ্ছি আমি।
”
“সোয়ালো, সোয়ালো, ছোট্ট সোয়ালো,” রাজকুমার বলল, “আর একটা রাত কি থাকবে না তুমি আমার সাথে?”
“মিশরে যাওয়ার অপেক্ষায় আছি আমি,” উত্তর দিল সোয়ালো, “আমার বন্ধুরা আজকে দ্বিতীয় জলপ্রপাত পর্যন্ত উড়ে যাবে। নলখাগড়ার মাঝে জলহস্তীরা শুয়ে আছে সেখানে, আর একটা বড় গ্রানাইটের সিংহাসনে বসে আছে ঈশ্বর মেমনন। সারাটি রাত তাঁরাদের দিকে চেয়ে রয়, মর্নিং স্টার উজ্জ্বল হয়ে উঠলে আনন্দে একবার কেঁদে উঠে সে, এরপর আবার চুপ হয়ে যায়। দুপুরে হলদে সিংহরা জল খেতে নেমে আসে জলের কিনারে। সবুজ পাথরের মতো ওদের চোখ দুটো, আর জলপ্রপাতের গর্জনকেও ছাপিয়ে যায় ওদের গর্জন।
”
“সোয়ালো, সোয়ালো, ছোট্ট সোয়ালো,” বলল রাজকুমার, “দূরে ঐ শহরে একটা চিলেকোঠায় এক যুবককে দেখছি আমি। কাগজে ঠাঁসা একটা টেবিলের দিকে ঝুঁকে আছে সে, পাশেই একটা ফুলদানিতে এক গোছা বিবর্ণ সুগন্ধি বুনো ফুল। চুলগুলো ওঁর বাদামি আর পরিপাটি করে আঁচড়ান, ডালিমের মতো লাল ওঁর ঠোঁট দুটো, বড় বড় স্বপ্নালু দুটো চোখ। থিয়েটারের পরিচালকের জন্য একটা নাটক লিখে শেষ করার চেষ্টা করছে, কিন্তু এতই শীতার্ত ওঁ কিছুই লিখতে পারছে না। কোন আগুন নেই চিলেকোঠায়, আর ক্ষুধা নিস্তেজ করে ফেলেছে ওঁকে।
”
“তোমার জন্য আরো এক রাত্রি অপেক্ষা করব আমি,” বলল সোয়ালো, আসলেই অনেক বড় একটা হৃদয় আছে ওর। “আরেকটা চুনি কি ওঁর জন্য নেব আমি?”
“হায়! আর কোন চুনি নেই এখন আমার কাছে,” বলল রাজকুমার, “চোখ দুটো ছাড়া দেওয়ার মতো আর কিছুই নেই আমার। দুর্লভ নীলা দিয়ে ওগুলো তৈরী, হাজার বছর আগে ওগুলো ভারতবর্ষ থেকে আনা হয়েছিল। ওর একটা তুলে নিয়ে ওঁর জন্য নিয়ে যাও তুমি। মণিকারের কাছে এটা বিক্রি করবে ওঁ, এরপর খাবার আর জ্বালানিকাঠ কিনে নাটকটা শেষ করতে পারবে ওঁ।
”
“প্রিয় রাজকুমার,” বলল সোয়ালো, “এ কাজ করতে পারব না আমি”; কাঁদতে শুরু করল ও।
“সোয়ালো, সোয়ালো, ছোট্ট সোয়ালো,” বলল রাজকুমার, “আমি যা আদেশ দেই তাই করো। ”
কথামতো রাজকুমারের একটা চোখ তুলে নিয়ে সোয়ালো উড়ে চলল ছাত্রটির চিলেকোঠার দিকে। ছাঁদে একটা গর্ত ছিল বলে, ভিতরে ঢুকে পড়া খুব সহজ ছিল। ঐ গর্ত দিয়ে তীরবেগে রুমে চলে এল ও।
যুবকটি ওঁর হাত দুটো দিয়ে মাথাটা ঢেকে রেখেছিল, তাই পাখিটির পাখা ঝাপটানোর শব্দ শুনতে পেল না, যখন চোখ মেলল, বিবর্ণ বুনো ফুলের পাশেই পড়ে থাকা সুন্দর নীলাটা খুঁজে পেল।
“সঠিক মূল্যায়ন পেতে শুরু করেছি আমি,” খুশিতে কেঁদে ফেলল ওঁ, “কোন মহান ভক্তের কাছে থেকে এটা এসেছে। আমার নাটকটা শেষ করতে পারব এখন আমি,” বেশ সুখী দেখাচ্ছিল ওঁকে।
পরের দিন হার্বারের দিকে উড়ে গেল সোয়ালো। একটা বড় জাহাজের মস্তুলে বসল ও, নাবিকদের বুক ফুলিয়ে কাছি টানতে দেখল।
“হেইয়ো!” ওরা সবাই এক সাথে বুক ফুলিয়ে ডাকছে। “মিশর যাচ্ছি আমি!” চিৎকার করে বলল সোয়ালো, তবুও কেউ কিছু মনে করল না, আর চাঁদ উঠলে উড়ে ফিরে এল ও সুখী রাজকুমারের কাছে।
“বিদায় জানাতে এসেছি আমি তোমাকে,” কেঁদে ফেলল ও।
“সোয়ালো, সোয়ালো, ছোট্ট সোয়ালো,” বলল রাজকুমার, “আর একটা রাত কি তুমি থাকবে না আমার সাথে?”
“শীতকাল এখন,” উত্তর দিল সোয়ালো, “শিঘ্রই কনকনে ঠাণ্ডা তুষার পড়তে শুরু করবে এখানে। মিশরে সবুজ পাম গাছের মাথায় উষ্ণতা ছড়াচ্ছে সূর্য, আর কাদা মাটিতে শুয়ে কুমিরেরা অলসভাবে তাকিয়ে আছে সেদিকে।
বালবেক মন্দিরে বাসা বাঁধছে আমার সাথীরা, গোলাপী আর সাদা ঘুঘুরা দেখছে ওদের, মধুর স্বরে কথা বলছে একে অপরের সাথে। প্রিয় রাজকুমার, তোমাকে ছেড়ে যেতেই হবে আমার, কিন্তু কখনো ভুলে যাবো না তোমায় আমি, যেখান থেকে রত্ন দুটো দিয়ে দিলে তুমি, এর পরিবর্তে পরের বসন্তেই দুটো সুন্দর রত্ন ফিরিয়ে দেবো তোমায়। লাল গোলাপের চেয়েও বেশি লাল হবে চুনিটা, আর মহাসাগরের চেয়েও বেশি নীল সেই নীলা। ”
“স্কয়ারের নিচে,” সুখী রাজকুমার বলল, “এক ছোট্ট দেয়াশলাই-বালিকা দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। নর্দমায় পড়ে ওর সবগুলো দেয়াশলাই নষ্ট হয়ে গেছে।
যদি কিছু টাকা না নিয়ে বাড়ি ফেরে ও, ওর বাবা মারবে ওকে, আর তাই কাঁদছে ও। ওর কোন জুতো নেই, নেই কোন মোজা, ওর ছোট্ট মাথাটা ঢাকার কোন কাপড় নেই। আমার অন্য চোখটা তুলে নিয়ে দিয়ে এসো ওকে, তাহলে ওর বাবা আর মারবে না ওকে। ”
“তোমার সাথে আরেক রাত থাকব আমি,” বলল সোয়ালো, “কিন্তু তোমার চোখ তুলে নিতে পারব না আমি। তাইলে পুরপুরি অন্ধ হয়ে যাবে তুমি।
”
“সোয়ালো, সোয়ালো, ছোট্ট সোয়ালো,” বলল রাজকুমার, “আমি যা আদেশ দেই তাই করো। ”
কথামতো রাজকুমারের অন্য চোখটি তুলে নিয়ে তীরবেগে ছুটে চলল ও। দেয়াশলাই-বালিকার উপর এসে ঝাপিয়ে পড়ল, রত্নটি ওর হাতের তালুতে দিয়ে দ্রুত নীরবে চলে গেল। “কী সুন্দর কাঁচের টুকরো,” আনন্দে কেঁদে ফেলল ছোট্ট বালিকা, এরপর বাড়ির দিকে দৌড়ে গেল হাসতে হাসতে।
এরপর, রাজকুমারের কাছে ফিরে এল সোয়ালো।
“তুমি এখন অন্ধ,” বলল ও, “তাই সব সময় তোমার সাথে থাকব আমি। ”
“না, ছোট্ট সোয়ালো,” বলল দরিদ্র রাজকুমার, “মিশরেই চলে যাও তুমি। ”
“সব সময় তোমার সাথে থাকব আমি,” এ কথা বলেই রাজকুমারের পায়ের উপর ঘুমিয়ে পড়ল সোয়ালো।
পরের সারাটা দিন রাজকুমারের কাঁধের উপর বসে থাকল ও, আজব আজব দেশে কী কী দেখেছে সেই সব গল্প বলল রাজকুমারকে। লাল ইবিস পাখিদের কথা বলল ওঁকে, যারা নীলনদের তীরে দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে ঠোঁট দিয়ে গোল্ড-ফিস ধরে; স্ফিংস, পৃথিবীর সমান যার বয়স, মরুভূমিতে বাস করে, আর সবকিছু জানে; ব্যবসায়ীরা, যারা তাঁদের উটের পাশ দিয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে যায়, আর অ্যাম্বার পাথরের তসবিহ বহন করে হাতে করে; চাঁদের পাহাড়ের রাজা,দেখতে আবলুস কাঠের মতো কালো, একটা বড় স্ফটিকের পূজো করে; বড় বড় সবুজ সাপ যা পাম গাছে ঘুমিয়ে থাকে, আর এদেরকে মধু-পিঠা খাওয়ায় কুড়ি জন পুরোহিত; আর পিগমিরা যারা বড় একটা হ্রদ পাড়ি দেয় বড় সমতল পাতায় চড়ে, আর সব সময় প্রজাপতিদের সাথে যুদ্ধ করে বেড়ায়।
“প্রিয় ছোট্ট সোয়ালো,” বলল রাজকুমার, “বিস্ময়কর সব ব্যপার বলছ তুমি আমায়, কিন্তু নর-নারীর দুঃখ-কষ্ট যেকোন কিছুর চেয়ে অধিক বিস্ময়কর। যন্ত্রণার মতো এত বড় রহস্য আর কোথাও নেই। ছোট্ট সোয়ালো, আমার শহরের উপরে উড়ে বেড়াও, আর আমাকে বলো কোথায় কী দেখলে তুমি। ”
কথামতো সোয়ালো মহানগরের উপর দিয়ে উড়ে বেড়াল, দেখল ধনীরা তাঁদের সুন্দর বাড়িগুলোতে বসে উৎসব করছে, আর তখন ভিখারিরা দরজার প্রান্তে বসে আছে। কানাগলির দিকে উড়ে গেল ও, দেখল ক্ষুধার্ত শিশুদের মলিন মুখগুলো নিরুৎসাহে কালো রাস্তার দিকে চেয়ে আছে।
একটা সেতুর ধনুক আকৃতির খিলানের নিচে দুই ছোট্ট বালক একে অপরের বাহুর উপরে শুয়ে নিজেদেরকে গরম রাখার চেষ্টা করছিল। “আমরা কতটা ক্ষুধার্ত!” বলছিল ওরা। “তোরা এখানে শুতে পারবি না,” প্রহরী চিৎকার করে বলল, আর ওরা ইতস্তত ঘুরাঘুরি করে বৃষ্টিতে ভিজল।
এরপর, সোয়ালো ফিরে এল উড়ে, রাজকুমারকে বলল কী দেখেছে ও।
“খাঁটি সোনা দিয়ে মুড়ান হয়েছে আমাকে,” বলল রাজকুমার, “পাতের পর পাত এগুলো খুলে নিয়ে, আমার গরীবদের দিয়ে দিবে তুমি; জীবিতরা সব সময় ভাবে, স্বর্ণ তাঁদেরকে সুখী করতে পারে।
”
খাঁটি সোনার পাতের পর পাত খুলে নিল সোয়ালো যতক্ষণ পর্যন্ত না সুখী রাজকুমারকে পুরপুরি অনুজ্জ্বল আর ধূসর দেখাল। খাঁটি সোনার পাতের পর পাত গরীবদের কাছে নিয়ে এল ও, শিশুদের মুখগুলো উজ্জ্বল হয়ে উঠল, ওরা হেসে উঠল, হৈ-হুল্লোড় করে খেলাধুলা করল রাস্তায়। “রুটি আছে এখন আমাদের!” ওরা চিৎকার করে বলল।
অবশেষে তুষার পড়া শুরু করল, তুষারের পর এল শৈত্যপ্রবাহ। রাস্তাগুলো এত উজ্জ্বল আর চকমক করছিল, দেখে মনে হচ্ছিল যেন এগুলো রূপোর তৈরী; বাড়িগুলোর ছাঁদের প্রান্তভাগের নিচে সূচ্যগ্র বরফখণ্ড ঝুলছিল স্ফটিকের ছুরির মতো, ফার-কোট গায়ে চাপাল প্রত্যেকেই, আর মাথায় উজ্জ্বল লাল রঙের টুপি চাপিয়ে বরফের উপর স্কেটিং করতে বেরুল ছোট্ট বালকেরা।
বেচারা ছোট্ট সোয়ালো ঠাণ্ডায় মরে যাচ্ছিল, তবুও রাজকুমারকে ছেড়ে গেল না, ওঁকে অনেক ভালোবাসে ও। রুটি দোকানি অন্য দিকে চেয়ে থাকলে দরজার বাইরে থেকে এক টুকরা শুকনো রুটি কুড়িয়ে নিত ও, আর ডানা ঝাপটিয়ে নিজেকে গরম রাখার চেষ্টা করত।
কিন্তু অবশেষে বুঝতে পারল, মারা যাচ্ছে ও। রাজকুমারের কাঁধে আর একবার উঠে বসার শক্তিটুকুই শুধু ছিল ওর। “বিদায়, প্রিয় রাজকুমার!” বিড়বিড় করে বলল ও, “তোমার হাতে চুমু খেতে দেবে আমায়?”
“খুশি হলাম, শেষ পর্যন্ত মিশর চলে যাচ্ছ তুমি, ছোট্ট সোয়ালো,” বলল রাজকুমার, “অনেক বেশি দিন কাটিয়ে ফেলেছ এখানে; আমার ঠোঁটেই চুমু খাবে তুমি¸ কারণ আমি তোমায় ভালোবাসি।
”
“যেখানে যাচ্ছি আমি, সে মিশর নয়,” বলল সোয়ালো, “মরণের বাড়ি যাচ্ছি আমি। মরণ ঘুমের ভাই, তাই না?”
এরপর, সুখী রাজকুমারের ঠোঁটে চুমু খেয়ে ওঁর পায়ের কাছে মরে পড়ে রইল ও।
ঠিক ঐ সময়ে একটা অস্বাভাবিক আকস্মিক শব্দ হল মূর্তিটার ভিতরে, যেন কোন কিছু ভেঙে গেল। আসল ব্যপারটা হল, সীসার হৃদয়টা মট করে ভেঙে দুই টুকরো হয়ে গিয়েছিল। মারাত্নক তীব্র শৈত্যপ্রবাহেই এমনটা হয়েছিল হয়ত।
পরের দিন খুব সকালে শহরের মেয়র তাঁর কাউন্সিলরদের সাথে নিয়ে স্কয়ারের নিচ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। স্তম্ভের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মূর্তিটার দিকে তাকাল সে। “হায়! সুখী রাজকুমারকে কত জীর্ণ দেখাচ্ছে!” বলল সে।
“সত্যিই কত জীর্ণ দেখাচ্ছে!” আর্তনাদ করে উঠল শহরের কাউন্সিলররা, যারা সর্বদাই মেয়য়ের সাথে সর্ব ক্ষেত্রে একমত হন; দেখার জন্য এগিয়ে এল তাঁরা।
“তলোয়ার থেকে চুনিটা পড়ে গেছে ওঁর, চোখ দুটোও গেছে, সোনালি দেখাচ্ছে না আর ওঁকে,” বলল মেয়র, “সত্য বলতে, একজন ভিখারি থেকে সামান্য ভালো ওঁর অবস্থা!”
“একজন ভিখারি থেকে সামান্য ভালো ওঁর অবস্থা!” বলল শহরের কাউন্সিলররা।
“আর এখানে একটা মরা পাখি পড়ে আছে ওঁর পায়ের কাছে!” বলে চলল মেয়র, “পাখিদের এখানে মরার অনুমতি নেই এই মর্মে অবশ্যই একটা প্রজ্ঞাপন জারি করব আমরা। ” সেই প্রস্তাব অনুযায়ী শহরের প্রধান কেরানী একটা বিবৃতি প্রস্তুত করল।
সুখী রাজকুমারের মূর্তি তাঁরা তাই টেনে নামাল। “সুন্দর নয় দেখতে ওঁ আর, ব্যবহার যোগ্যও নয়,” বলল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পকলার অধ্যাপক।
এরপর, মূর্তিটাকে একটা ফার্নেসে গলিয়ে ফেলল তাঁরা, আর ধাতু দিয়ে কি করা হবে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার জন্য কর্পোরেশনের সভা ডাকল মেয়র।
“আমরা অবশ্যই আরেকটি মূর্তি গড়ব,” বলল সে, “আর এটা হবে আমার নিজের মূর্তি। ”
“আমার নিজের,” শহরের প্রত্যেক কাউন্সিলরই এ কথা বলল, তাঁরা ঝগড়া শুরু করে দিল। শেষ যখন তাঁদেরকে শুনতে পেলাম আমি, তখনো ঝগড়া করছিল তাঁরা।
“কী আজব জিনিস এটা!” ঢালাইখানায় শ্রমিকদের সর্দার বলল। “ভাঙা সীসার এই হৃদপিণ্ডটা ফার্নেসে গলবে না।
ছুঁড়ে ফেলেই দিতে হবে একে । ” আবর্জনার স্তুপের উপর তাই একে ছুঁড়ে ফেলে দিল তাঁরা, মরা সোয়ালোও পড়েছিল যেখানে।
“এই শহরের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস দুটো নিয়ে এসো আমার জন্য,” বলল ঈশ্বর তাঁর দেবদূতদের একজনকে; সীসার হৃদপিণ্ড আর মরা পাখিটাকে ঈশ্বরের জন্য নিয়ে এল সেই দেবদূত।
“ঠিক জিনিসটিই এনেছ তুমি,” বলল ঈশ্বর, “এই ছোট্ট পাখিটি সারাক্ষণ গান গাইবে আমার স্বর্গের বাগানে, আর আমার স্বর্ণের শহরে সুখী রাজকুমার বন্দনা গাইবে আমার। ”
মূল গল্পটি এখান থেকে পড়ুন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।