আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্যাম আর ড্রাগন

একবার তো লিখলাম । স্যাম আর ড্রাগন... অনেকদিন আগের কথা। তখন চারপাশে খালি ড্রাগন আর ড্রাগন। সারা দুনিয়ায় ওদের বসবাস। কিন্তু দিনে দিনে বিভিন্ন কারনে ওদের সংখ্যা কমতেই থাকল।

কিছু বুড়ো হয়ে মরল...। কতগুলোকে মেরে ফেলা হল...। আর তারপরেও যেগুলো বাকি থাকল, প্রানের ভয়ে সেগুলোও লুকিয়ে পড়তে শুরু করল। এমন জায়গায় যেখানে কেউ তাদের খুঁজে পাবে না। সারাক্ষন লুকিয়ে থাকতে হত বলে ওদের আকার দিনে দিনে ছোট হতে শুরু করল।

ছোট হতে হতে একেবারে বাচ্চা ছেলেদের মত ছোট হয়ে গেল। একদম স্যামের মত। স্যাম যে গ্রামে থাকত, সেখানে শীতকালে এতো শীত পরতো যে গ্রামের লোকজন বাক্স-পেটরা গুছিয়ে দক্ষিণে চলে যেত। কারন ওদিকে শীত কম পরত। শীত চলে গেলে লোকজন আবার ফিরত।

এই ব্যাপারটা স্যামের একদম পছন্দ হত না। সেবার শীতে স্যামের পরিবার যখন গোছ-গাছ শুরু করল, তখন ও ওর মাকে বলল, “মা আমি কোথাও যাব না। আমি বাসায়ই থাকব। ” ওর মা বলল, “না বাবা, এখানে অনেক ঠান্ডা পড়ে। এখানে থাকলে ঠান্ডায় সবার মরা লাগবে।

” কিন্তু স্যাম কোন ভাবেই মানতে চাইল না। ও ওর মাকে নানাভাবে মানাতে চাইল, কিন্তু কোন কাজ হল না। কিন্তু স্যামের ধারনা ঠান্ডার ব্যাপারটা মানুষের বিশ্বাস ছাড়া কিছুই না। পুরাই ফটকাবাজি। ড্রাগন-ইউনিকর্ন এইসবের মত মিথ।

সবার এই ভুল ধারনা তাকে ভাঙ্গতেই হবে। সে ঠিক করল সে এবার যেভাবেই হোক শহরেই থাকবে। লোকজনের ভুল ধারনা তাকে ভাঙ্গতেই হবে। তাই সবাই যখন যাওয়ার তোড়জোড় করছিল তখন সে লুকিয়ে পড়ল। এমন লুকানোই লুকালো যে কেউ তাকে খুজেই পাচ্ছিল না।

তাই সবাই তাকে ছেড়েই চলে গেল। কিন্তু যখন শীত পড়তে শুরু করল তখন স্যাম বুঝতে শুরু করল মায়ের কথা না শুনে কত্ত বড় ভুল করেছে। একদিন শীতে ওর অবস্থা খুবই খারাপ। এমন সময় দরজা খোলার শব্দ শুনল। ভাবল ওর মা-বাবা ফিরে এসেছে।

খুশি হয়ে তাড়াতাড়ি বাইরের রুমে আসল। তাড়াতাড়ি আসতে গিয়ে ও প্রায় ড্রাগনটার উপরে পড়েই গিয়েছিল। কোনরকমে সামলে নিল। ও আগে যেহেতু কখনও ড্রাগন দেখেনি, তাই বুঝতেই পারল না যে ও ড্রাগনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। স্যাম ড্রাগনটাকে জিজ্ঞাসা করল, “কে তুমি? আর আমার বাসায় কি করছ?” ড্রাগনটা বলল, “আমার নাম ফ্রেনেস।

আমি ড্রাগন। আর আমি প্রত্যেক শীতে এই শহরের লোকজন যখন দক্ষিন দিকে চলে যায় তখন আমি এই বাসাতেই এসে থাকি। কিন্তু এই শীতে তুমি এখানে আছ কি করতে?” “আমি বিশ্বাসই করিনি যে এত শীত পড়ে। ভাবেছিলাম সব মানুষের কুসংস্কার। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি বিরাট ভুল হয়ে গেছে।

উফ! যদি ওদের কথা শুনতাম!” বলল স্যাম। স্যামের কথা শুনে ফ্রেনেসের খুব খারাপ লাগল। ঠান্ডা থেকে বাচানোর জন্য সে স্যামের উপর নিজের গরম নিঃশ্বাস ফেলল। স্যামেরও অনেক আরাম লাগল। দুজনের বন্ধুত্বও হয়ে গেল।

এভাবে পুরো শীত তারা একসাথে অনেক মজা করে কাটালো। আনন্দের দিন শেষ হয়ে গেল। শীত শেষে বসন্ত আসল। এবার ফ্রেনেসকে যেতে হবে। দুঃখী দুঃখী ভাব করে সে স্যামকে বলল, “ড্রাগনের সাথে মানুষের বন্ধুত্বটা কেউ ভালো চোখে দেখবে না।

আমার চলে যাওয়াই উচিত। ” স্যামও চাচ্ছিল না ফ্রেনেস যাক, তাই সে একটা বুদ্ধি বের করল। বলল, “এক কাজ করি তোমার জন্য বেসমেন্টে একটা ঘর বানাই, তাহলে কেউ বুঝা ত দূরের কথা, তোমার কথা জানবেও না। ” দুজনে মিলে ফ্রেনেসের জন্য লোহার একটা ঘর তৈরি করল। তারপর স্যামের মা-বাবা ফিরে এসে তো ওকে দেখে অবাক।

সবাই ভেবেছিল ঠান্ডায় স্যাম এতদিনে মরে ভূত হয়ে গেছে। তারা সবকিছু জানতে চাইল। তখন স্যাম ফ্রেনেসের সব কথা খুলে বলল। এমন কি ফ্রেনেসের সাথে দেখাও করিয়ে দিল। পরের শীতে স্যামের পরিবারের কেউই আর বাড়ি ছেড়ে যেতে চাচ্ছিল না।

তাই তারা ফ্রেনেসের কাছে আবার গেল। কিন্তু ফ্রেনেস তার ছোট্ট বাড়ি ছেড়ে কোথাও যেতে চাইল না। তবে একটা বুদ্ধি বের করল। বলল, “তোমরা এক কাজ করো, আমার বাসা আর তোমাদের বাড়ির মধ্যে একটা পাইপ লাগিয়ে দাও। তাহলে আমি আমার বাসা থেকেই তোমাদের সবাইকে গরম রাখতে পারব।

” যে কথা সেই কাজ। সেই শীতে স্যামেরা সবাই মিলে মহা আনন্দে নিজের বাড়িতে শীত কাটাল। শহরের বাকি লোকজন যখন বসন্তে ফিরে আসল তখন তারা স্যামদের কাছে জানতে চাইল রহস্য। কিভাবে তারা এই কঠিন শীতে থাকতে পারল, সবার কাছে এ এক বিরাট উৎসাহের ব্যাপার। শেষ পর্যন্ত স্যামেরা সবাইকে সবকিছু বলল।

ফ্রেনেসের সাথে দেখাও করিয়ে দিল। তখন সবাই তাদের প্রত্যেকের বাড়ির জন্য একটা করে ড্রাগন চাইল। তো তখন ফ্রেনেস ওর এলাকায় গিয়ে বাকি ড্রাগনদের ডেকে আনল। আর একেক ড্রাগন একেক বাড়ির বেসমেন্টে গিয়ে বাসা বাধল। তারপর থেকে সেই শহরের লোকজনকে আর শীত আসলে বাড়ি ঘর ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে হয় না।

তারপর আস্তে আস্তে ড্রাগনের সংখ্যা আবার বাড়তে থাকল। আশেপাশের গ্রামের বাড়িগুলোতেও ড্রাগন খুব আদরে থাকতে শুরু করল। ইদানীং শহরের লোকজন বলে, ড্রাগনরা আসলে মিথ। তারা ড্রাগনদের ওই বাড়িগুলোকে বলে ‘ফার্নেস’। কিন্তু এখন আমরা আসল ঘটনা ঠিকই জানি, তাই না? মূলঃ এরিক বি থমাস্মা রূপান্তরঃ মিথ দ্য আর্নেস্তা ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.