বর্তমানে বিদ্যুত্ বিল পরিশোধে সরকারের করা নতুন স্লাবে গ্রাহকের খরচ ও ভোগান্তি উভয়ই কমবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, নিম্ন, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের কথা বিচার বিবেচনা করেই ৩টি স্লাব ভেঙে ৬টি স্লাব করা হয়েছে। আগের সিদ্ধান্তের শেষ ধাপে ছিল ৪০০ ইউনিট। ৪০০ ইউনিটের ওপরে ব্যবহার করা প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য ছিল ৭টাকা ৪৯ পয়সা। এই ৪০০ ইউনিটের ওপরে বিদ্যুত্ ব্যবহার করলে তাকে ৭ টাকা ৮৯ পয়সা করে বিল দিতে হতো।
কিন্তু ৪০০ ইউনিটের নিচে থাকলে তাকে ৪ টাকা ২৯ পয়সা করে বিল দিতে হয়। আর ১০০ ইউনিটের জন্য ৩ টাকা ৫ পয়সা করে বিল দিতে হয়। এতে দেখা যায়, কেউ ৪০১ ইউনিট বিদ্যুত্ ব্যবহার করলে তাকে পুরো ৪০১ ইউনিটই ৭ টাকা ৮৯ পয়সা দরে মূল্য দিতে হয়েছে। তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির আগে বিদ্যুত্ বিল দেওয়ার ক্ষেত্রে কেউ ৪০১ ইউনিট ব্যবহার করলে তাদের বিল প্রস্তুত করা হত শূন্য থেকে ১০০ ইউনিট পর্যন্ত ৩ টাকা ৫ পয়সা, পরবর্তী ৩০০ ইউনিট ৪ টাকা ২৯ পয়সা এবং পরের এক ইউনিট ৭ টাকা ৮৯ পয়সা দরে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মিটার চার্জ ১০ টাকা, সার্ভিস চার্জ ৩০ টাকা এবং ৫ শতাংশ মূল্যসংযোজন কর (মূসক)।
বিদ্যুতের ব্যবহার বিবেচনায় এবার যে ৬টি ধাপ করা হয়েছে, তা হচ্ছে শূন্য থেকে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত প্রথম ধাপ। এই ধাপের গ্রাহকরা নিম্ন আয়ের এবং প্রায় সবাই গ্রামবাসী। গত জানুয়ারিতে এই ধাপে সর্বোচ্চ ব্যবহারের পরিমাণ ধরা ছিল ১০০ ইউনিট। এবার তা ৭৫ ইউনিট করে প্রতি ইউনিটের মূল্য ধরা হয়েছে পল্লী বিদ্যুতের (আরইবি) ক্ষেত্রে গড়ে ৩ টাকা ৬৬ পয়সা। অন্য সংস্থার গ্রাহকের ক্ষেত্রে ৩ টাকা ৩৩ পয়সা।
৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপ। এ ক্ষেত্রে আরইবির গ্রাহকদের প্রতি ইউনিটের গড় মূল্য ধরা হয়েছে ৪ টাকা ৩৭ পয়সা। অন্য সংস্থার গ্রাহকের ক্ষেত্রে মূল্য হয়েছে ৪ টাকা ৭৩ পয়সা
২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত তৃতীয় ধাপ। এ ক্ষেত্রে আরইবির গ্রাহকদের প্রতি ইউনিটের মূল্য হয়েছে গড়ে ৪ টাকা ৫১ পয়সা। অন্য সংস্থার গ্রাহকদের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটের মূল্য পড়েছে গড়ে ৪ টাকা ৮৩ পয়সা।
৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত চতুর্থ ধাপ। আরইবির ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটের গড় মূল্য হয়েছে ৭ টাকা ১০ পয়সা। অন্য সংস্থার গ্রাহকদের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট হয়েছে ৪ টাকা ৯৩ পয়সা। ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিট পর্যন্ত পঞ্চম ধাপ। আরইবির ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটের গড় মূল্য হয়েছে ৭ টাকা ৪০ পয়সা।
অন্য সংস্থার গ্রাহকদের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট হয়েছে ৭ টাকা ৯৮ পয়সা। আর ৬০০ থেকে এর বেশি ব্যবহারকারীরা পড়েছেন ষষ্ঠ ধাপে। এ ধাপে সব সংস্থার গ্রাহকদের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটের মূল্য ধরা হয়েছে ৯ টাকা ৩৮ পয়সা।
বর্তমানে ৬টি স্লাবে বিদ্যুত্ বিল দেওয়ার ক্ষেত্রে কেউ ৬০১ ইউনিট ব্যবহার করলে তার বিল প্রস্তুত করা হবে শূন্য থেকে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত ৩ টাকা ৩৩ পয়সা, পরবর্তী ৭৬-২০০ ইউনিট ৪ টাকা ৭৩ পয়সা, পরবর্তী ২০১-৩০০ ইউনিট পর্যন্ত ৪ টাকা ৮৩ পয়সা, পরবর্তী ৩০১-৪০০ ইউনিট পর্যন্ত ৪ টাকা ৯৩ পয়সা, পরবর্তী ৪০১-৬০০ ইউনিট পর্যন্ত ৭ টাকা ৯৮ পয়সা এবং পরের এক ইউনিট ৯ টাকা ৩৮ পয়সা দরে। এর সঙ্গে যুক্ত হবে মিটার চার্জ ১০ টাকা, সার্ভিস চার্জ ৩০ টাকা এবং ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক)।
অর্থাত্ যিনি ২০০ ইউনিট বিদ্যুত্ ব্যবহার করবেন, তিনি ৭৫ ইউনিটের মূল্য দেবেন প্রথম ধাপের মূল্য ৩ টাকা ৩৩ পয়সা করে এবং অবশিষ্ট ১২৫ ইউনিটের মূল্য দেবেন দ্বিতীয় ধাপের মূল্য ৪ টাকা ৭৩ পয়সা করে।
এমনিভাবে ৩০০ ইউনিট ব্যবহারকারী প্রথম ৭৫ ইউনিটের মূল্য দেবেন ওই ধাপের মূল্যের হিসাবে। ১২৫ ইউনিটের মূল্য দেবেন দ্বিতীয় ধাপের হিসাবে এবং অবশিষ্ট ১০০ ইউনিটের মূল্য দেবেন তৃতীয় ধাপের হিসাব অনুযায়ী।
বিইআরসির হিসাব অনুযায়ী দেখা যায়, বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর ফলে প্রথম ধাপের (৭৫ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারী) গ্রাহকদের বিল বাড়বে আগের তুলনায় ২১ টাকা। দ্বিতীয় ধাপের গ্রাহকদের মধ্যে যারা ১৫০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহার করবেন, তাদের বাড়বে ৮৫ টাকা।
তৃতীয় ধাপে যারা ২৫০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহার করবেন, তাদের বিল বাড়বে আগের তুলনায় ১৩৪ টাকা। ৩৫০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারীর বাড়বে ৬৯ টাকা। তবে এ ক্ষেত্রে শহরের থেকে গ্রামীণ সাধারণ গ্রাহকদের বাড়বে ১০৫ টাকা। এর আগে ৪০০ ইউনিটের বেশি ব্যবহার করলেই যেভাবে বিলের বোঝা হতো, এখন আর তা হবে না। মূল্য বাড়ার পরও এখন অনেক কম পড়বে।
যারা ৪৫০ ইউনিট ব্যবহার করবেন, তাদের বিল আগের তুলনায় ১ হাজার ৩৩৫ টাকা কম হবে। ৫৫০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের বিল কম হবে আগের তুলনায় ১ হাজার ৩২৬ টাকা।
পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিদ্যুত্ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বিডি রহমতুল্লাহ বলেন, সরকার আলোচনা ছাড়াই বিদ্যুতের ৩টি স্লাব করে এ খাতে ডাকাতি ও লুটপাট করেছে। যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ৪০১ ইউনিট বিদ্যুত্ ব্যবহার করেছে, তাকে মাত্র ১ ইউনিট বেশি ব্যবহার করে পুরো শেষ ধাপের ৭ টাকা ৮৯ পয়সা করে ইউনিট প্রতি বিদ্যুত্ বিল দিতে হয়েছে, এটা ডাকাতি ছাড়া আর কিছুই না। আর পৃথিবীর কোনও দেশেই এ রকম নির্দিষ্ট স্লাব ব্যবস্থা নেই।
তবে বিদ্যুতের মূল্য না বাড়িয়ে স্লাব সংখ্যা আরও বাড়ানো হলে জনগণ বেশি সুবিধা পাবেন।
বিদ্যুত্ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, বিইআরসি কাউকে কিছু না বলে ৩টি স্লাব নির্দিষ্ট করায় অস্বাভাবিকহারে বিদ্যুত্ বিল এসে গ্রাহকদের ভোগান্তিতে ফেলেছে। সাধারণ গ্রাহকরাই এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বর্তমানে যে ৬টি স্লাব করা হয়েছে, তাতে গ্রাহকগণ সুবিধা পাবেন। তবে সাধারণ গ্রাহকদের সুবিধা দিতে প্রথম দিকের স্লাবের ইউনিট সংখ্যা আরও বাড়ানো উচিত।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদও প্রথম দিকের স্লাবের ইউনিট সংখ্যা আরও বাড়ানোর পক্ষে মত প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসির) চেয়ারম্যান সৈয়দ ইউসুফ হোসেন বলেন, এখন স্লাব সংখ্যা বাড়ানোর ফলে অস্বাভাবিক বিদ্যুত্ বিলের ভোগান্তি কমে যাবে। এমন পদ্ধতিতে স্লাবগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর ফলেও বিল সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।
বিশেষ করে বিদ্যুত্ বিল নিয়ে নিম্ন, নিম্ন-মধ্য ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর গ্রাহকরা যাতে বাড়তি চাপে না পড়েন। সেদিকে দৃষ্টি রেখেই আমরা ৬টি স্লাব করেছি।
গত ৫ মাসে বিল বাবদ অতিরিক্ত ৪০০ কোটি টাকা আদায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এনার্জি সাপোর্ট নামে আমরা একটি ফান্ড গঠন করতে যাচ্ছি, এ টাকা সে ফান্ডে দেওয়া হবে। দুর্যোগকালীন এ ফান্ড থেকে খরচ করা হবে
http://amader-shomoy.org/?p=8381 ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।