আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টাইম সাময়িকীর প্রতিবেদন : অনিশ্চয়তায় রানা প্লাজার বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের জীবন

Never argue with idiots. They bring you down to their level and then beat you with experience রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় বেঁচে থাকা শ্রমিকদের সাহায্য দেবে সরকার। এমন খবর শুনেই বৃষ্টি উপো করে গত ৭ জুন কয়েক হাজার পোশাককর্মী ছুটে এসেছিলেন সাভারের একটি সামরিক স্কুলে। তারা সবাই গত ২৪ এপ্রিল ধসেপড়া রানা প্লাজার শ্রমিক। তবে টাকা-পয়সা বা তিপূরণ পাওয়ার চেয়েও এই শ্রমিকদের কাছে এখন বড় প্রশ্নÑ কী করবেন তারা? দেশের পোশাক খাতের ভয়াবহতম দুর্ঘটনার পর ছয় সপ্তাহ কেটে গেছে, কিন্তু এখনও কাটেনি তথ্যের অপূর্ণতা। রানা প্লাজা ধসে নিহতের সংখ্যা সরকারি হিসাবে ১১২৯ জন, যাদের মধ্যে ৩০১ জনের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।

অথচ শ্রমিক সংগঠনগুলোর মতে, মৃতের সংখ্যা আরও বেশি। ১৯৯০ সালের পর থেকে পোশাকখাত সমৃদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তার অভাবে বিভিন্ন সময়ে এ খাতের হাজার হাজার শ্রমিকের প্রাণহানি হয়েছে। বিভিন্ন সরকার এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করলেও কেউই সফল হয়নি। তবে রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে বিভিন্ন দেশের বড় বড় আন্তর্জাতিক ক্রেতারা। তারা ইতোমধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য সরকারসহ নানা প্রতিষ্ঠান তিগ্রস্ত শ্রমিকদের ইতোমধ্যে কিছু তিপূরণ দিয়েছে।

কিন্তু পঙ্গু হয়ে যাওয়া শ্রমিক ও তাদের তিগ্রস্ত ভবিষ্যতের জন্য দীর্ঘমেয়াদে সাহায্য দেওয়া হবে কি না, তা এখনও অজানা। শুধু তাই নয়, দেশের সাড়ে পাঁচ হাজার নিবন্ধিত পোশাক কারখানা ও সেসবের শ্রমিকদের ভাগ্যে কি আছে- তাও অনিশ্চিত। সরকার তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে কিনা, শ্রম আইনের সংশোধন ও শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করবে কিনা, সেটিও পরিষ্কার নয়। দুর্ঘটনার পর রানা প্লাজার মালিকসহ ওই ভবনে অবস্থিত কারখানাগুলোর মালিকদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে পোশাককলগুলো।

এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর অনিরাপদ পোশাক কারখানাগুলো শনাক্ত করে সেগুলো পরিদর্শন শুরু করেছে সরকার, এরই মধ্যে কিছু কারখানা বন্ধও করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এখানেও প্রশ্ন রয়েছে। কি হবে বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানার শ্রমিকদের? সেসবে কর্মরত হাজার হাজার শ্রমিকের পরিবার তো তাদের আয়ের উপরই নির্ভর করে। অবশ্য বাংলাদেশের পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) মতে, বর্তমানে দেশে ৩০ ভাগ শ্রমিক ঘাটতি রয়েছে, আর শ্রমিক সংখ্যার চেয়েও কাজের সংখ্যা বেশি রয়েছে। বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম তাই নিশ্চয়তা দিয়ে জানান, কেউ চাকরি না পেলে তাকে চাকরি দেওয়া সম্ভব।

তবে সুযোগ পেলেও রানা প্লাজায় বেঁচে যাওয়া শারিরীক কারণে অনেক শ্রমিকের আর সেলাই মেশিনের পাশে ফিরে যাওয়ার উপায় নেই। সেরকম ইচ্ছাও নেই অনেকের। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২৫ বছর বয়সী রোজিনা জানান, তিনি তিনদিন একটি বিমের নিচে আটকে ছিলেন। উদ্ধারকারীরা তার হাতে একটি ছোট করাত দিলে তিনি তা নিয়ে নিজের হাত কাটার চেষ্টা করেন। কিন্তু মাংস পেরিয়ে হাড় পর্যন্ত গিয়েই তিনি জ্ঞান হারান।

উদ্ধারকর্মীরা পরে হাত কেটে তাকে উদ্ধার করলেও রোজিনার বোনের কোনো খোঁজ এখনও মেলেনি। পঙ্গু রোজিনা জানান, তিনি আর ফিরে যাচ্ছেন না কোনো গার্মেন্ট কারখানায়। তার স্বামী একটি পাট কারখানায় কাজ করেন, সেখানেও তাকে যেতে দেবেন না। পোশাকশিল্পের এই ধরণের বলিদের সাহায্যে ইতিমধ্যেই মানবাধিকার সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পোশাকসংশ্লিষ্ট সংগঠন এগিয়ে এসেছে। এর মধ্যে অগ্রণী ভুমিকায় আছে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান প্রিমার্ক।

তারা ঘোষণা দিয়েছে পঙ্গু হয়ে যাওয়া শ্রমিকদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সাহায্য দেবে তারা। তাদের কথা কাজে পরিণত হওয়ার অপোয়ই আছেন রোজিনারা। এছাড়া বাংলাদেশের সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারী তাকে অন্য কোথাও কাজ জুটিয়ে দেবে, এমনটাও আশা করেন তিনি। তবে তার আশাগুলো কবে বাস্তবায়িত হয় সেটাই দেখার অপেক্ষা। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.