কোন সন্দেহ নেই এই মুহূর্তের অন্যতম আকর্ষনীয় টপিক হচ্ছে ‘চুদুর বুদুর’। আলোচনা অনেক আঙ্গিকেই হতে পারে। তবে বাজারে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশী যেটার কাটতি তো হচ্ছে এর ‘শ্লীলতা’ আঙ্গিক নিয়ে। এইট অশ্লীল না শ্লীল? বাংলা অভিধান তন্ন তন্ন হচ্ছে। সুশীল, কুশীল সব সমাজই নেমে পড়েছে গবেষণায়।
বিভিন্ন গালি বিশারদ দের ও সহায়তা নেয়া হচ্ছে। বুদ্ধিজীবী, কলামিস্ট সবাই কম বেশী এ নিয়ে দুকলম লিখছেন। শব্দটির শ্লীলতা খুঁজে বের করা এই মুহূর্তে একটি জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সমস্যাটি নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠেছে ব্লগ পাড়াও। ফেসবুকেও প্রায় প্রতিদিন চলছে স্ট্যাটাস আর পোস্ট।
মাঝে মাঝে কেউ না কেউ এর অর্থ এনে হাজির করছেন। সেদিন একজন জানালেন তাঁর গবেষণার ফলাফল। শব্দটির অর্থ ‘টাল বাহানা’। এখনও ঐক্যমত্য গড়ে ওঠেনি। অনেকটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারে বিতর্কের মত অবস্থা।
ওদিকে হঠাৎ করেই তত্ত্বাবধায়ক আর অন্তর্বর্তী সরকার ছেড়ে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই উক্তি। বিরোধীদলের সমাবেশ, তারেকের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এসব বিষয়ও পিছিয়ে পড়েছে। সংসদ অধিবেশন, বাজেট এসব নিয়েও এখন কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না।
দেশের সব আলোচনার টপিকে যেমন আওয়ামী আর জাতীয়তাবাদী থাকে তেমনি এই আলোচনায়ও দুটি পক্ষ আছে। যদি কোন আলোচনা কিংবা কলামে দেখেন শব্দটাকে ‘অশ্লীল’ বলা হচ্ছে তবে ধরে নেবেন সে নিশ্চিত জাতীয়তাবাদী।
আর ‘শ্লীল’ বললে ধরে নেবেন, হয় সে আওয়ামী, নয় বর্তমানে বাম তবে আওয়ামী হওয়ার শখ মনে আছে। ভালো অফারের অপেক্ষায় আছে। জাতীয় পার্টি কি বলবে তা নির্ভর করছে সিঙ্গাপুরে তাঁদের নেতার কেমন চিকিৎসা হয় তাঁর ওপর। হঠাৎ রাস্তায় যদি বিরোধী নেত্রীর সঙ্গে দেখা হয়ে যায় আর দেশের অবস্থা নিয়ে আলাপ হয় তখন শব্দটি অশ্লীল হয়ে যাবে। দর কষাকষিতে না পোষালে হয়তো ‘আধা’ শ্লীল হবে।
পুরো শ্লীল করার দ্বায়িত্ব হবে তখন আওয়ামী দের। ভালো কোন টোপ দিলে শ্লীল হয়ে যাবে।
সম্প্রতি বেশ আরও কিছু রাজনৈতিক উক্তি বাজারে এসেছে। যদিও র্যাঙ্কিং এ একটু পেছনে তারপরও উক্তি গুলো নিয়ে ছোটখাট আলোচনা চলছেই। কিছুদিন আগে এসেছিল ‘ভাবী প্রধানমন্ত্রী’ উক্তিটি।
তারেক সাহেব সম্পর্কে উক্তি করার আগে এই বিষয়টি মাথায় রাখবার একটি নির্দেশনা এসেছিল বিরোধী দলীয় ‘স্পোকস ম্যান’ এর কাছ থেকে। তাঁদের নেত্রী অবসরে যাচ্ছেন এটা বোঝানোর চেষ্টা না তারেক সাহেবের প্রতি বাধ্যতামূলক সম্মান তৈরির চেষ্টা, ঠিক বোঝা গেল না। আরও একটা বিভ্রান্তি ছিল। আসলে বক্তব্যটা কার জন্য? দেশবাসী? নাকি আওয়ামী দের জন্য? নাকি নিজ দলের ম্যাডাম পন্থীদের জন্য? তারেক গ্রুপে যোগদানের প্রচ্ছন্ন হুমকি?
কিছুদিন ব্যঙ্গ বিদ্রুপ হয়ে আবার থেমে গেল। আসলে বিএনপিকে কতটা গুরুত্ত্ব দিতে হবে সে ব্যাপারে সবাই বেশ কনফিউজড।
ইলেকশানে তাঁরা যাবে কি না? না গেলে খুব ভালো আন্দোলন করতে পারবে কি না? সিটি কর্পোরেশান নির্বাচন তো করছে, তাহলে জাতীয় নির্বাচন বয়কটের জন্য খুব ভালো কারণ দেখানো জোগাড় করতে পারবে কি না? একমাত্র ভরসা সিটি কর্পোরেশান নির্বাচন। ভয়ানক কারচুপি হলে বিএনপি হালে বেশ কিছুটা পানি পেয়ে যাবে। আর জিতলে হয়তো কিছুটা উৎসাহ পাবে তবে আন্দোলনের রসদ পাবে না।
‘সুবহানাল্লাহ’ উক্তিটি যতটা মাঠ গরম করবে ভাবা হয়েছিল ততোটা করেনি। খুব দ্রুত মন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়া এর একটা কারণ হতে পারে।
হেফাজতের ভঙ্গুর অবস্থায়ও হতে পারে। হতে পারে এই মুহূর্তে বিরোধী দল নতুন কোন ইস্যু চাইছে না। অনেক ইস্যু নিয়ে এক সঙ্গে আন্দোলন করা মুশকিল। তবে কথাটা অনেকেই ভুলবে না। বিএনপি ক্ষমতায় এলে হয়তো মন্ত্রী সাহেবকে এ নিয়ে বেশ ঝামেলায় ফেলার চেষ্টা হতে পারে।
সর্বশেষ যে উক্তিটির আমদানী হয়েছে তা এসেছে আরেক কর্তব্য পরায়ণ মন্ত্রীর কাছ থেকে। যিনি অনেককেই ছোট ভাই ভেবে চড় থাপর মারেন। ‘বিলবোর্ড’ উক্তিটি যদিও একেবারে ফেলা দেয়ার মত না তারপরও উক্তিটি নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক কথাবার্তাই বেশী হচ্ছে। সেই সমাবেশে মন্ত্রী সাহেব আরও অনেক কারণ দেখিয়েছিলেন দুর্ঘটনার। কোন বিচিত্র কারণে তাঁর কোনটাই শিরোনাম হয় নি।
প্রায় সবাই ‘বিলবোর্ড’ উক্তিটিকেই শিরোনাম করেছে।
আসলে একঘেয়ে কিছু শিরোনাম দেখতে দেখতে আমরা পাঠকরাও বেশ বিরক্ত। সেই কবে থেকে শিরোনাম বলতে কেবল ‘অমুক দিন এতো ঘন্টার হরতাল’ হয়তো ‘দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে’ এসবই চলছে। সাথে থাকে কিছু ধর্ষণ আর খুন। দুই নেত্রীর বক্তব্য, একজন বলেন দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে অন্যজন বলেন দেশ ডুবছে।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার একই জাতের শিরোনাম নব্বই এর পর থেকেই চলছে। বিরক্ত পাঠক তাই উন্মুখ হয়ে থাকে এমন সব চটুল কিংবা নতুন শিরোনামের জন্য।
একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। যারা এসব বলছেন তাঁরা কি স্বেচ্ছায় কাজটা করছেন? হয়তোবা কখনও। তবে অনেক ক্ষেত্রেই তা বলে ফেলছেন নিজের অজান্তেই।
অনেকটা মনের কথা মুখে চলে আসার মত। যেহেতু কি বলবেন তা আগে থেকে লিখে আনেন না, যেহেতু কি বলা হচ্ছে তা কেউ শোনেও না, তাই সবার ভেতরেই একটা মানসিকতা কাজ করে, ‘স্টেজে মেরে দিব’। কথা বলতে উঠে যা মনে আসে তাই বেড়িয়ে পড়ে। কাজটা ভালো হচ্ছে না খারাপ তা নিয়ে বিতর্ক করা যেতে পারে। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছে আমাদের কি প্রত্যাশা তা নিয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা, টক শো হতে পারে।
তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, পরিণাম কিছুই আসবে না। সেই চিরাচরিত বিভক্তি থেকেই যাবে, আওয়ামী আর জাতিয়তাবাদী।
আমার কেন যেন মনে হচ্ছে এই ট্রেন্ডটা খারাপ না। নেতাদের ভন্ডামি ধাঁচের বক্তব্য তো অনেক শুনলাম। এবার তাঁদের মনের কথা শুনি।
তাঁদের নিজেদের ভাষা শুনি। তাঁদের মনের আসল চেহারাটা দেখি। যদিও দেশ কিংবা জাতির এমন কোন উপকার হবে না। বড়জোর অনেক দিন পরে কিছু সত্য কথা শুনতে পাবে। তারপরও আমি এসব উক্তি শুনতে চাই।
চাই রাজনীতিবিদদের চুদুর বুদুর (যদি এর মানে সত্যিই টালবাহানা হয়) মার্কা কথা আর শুনতে ইচ্ছে করছে না। আমারও বলতে ইচ্ছে করছে ‘আপনাগো চুদুর বুদুর চইলত ন’।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।