সংসদে দাঁড়িয়ে বিরোধী দলের একজন নারী সাংসদ ফেনীর কথ্যভাষায় সরকারকে হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে চুদুরবুদুর চইলত ন!’ এ নিয়ে এখন চলছে বিস্তর আলোচনা। দাবী উঠেছে সংসদে সংসদীয় ভাষা ব্যবহৃত হচ্ছেনা।
এ শব্দটি শ্লীল না অশ্লীল, তা নিয়ে দীর্ঘ বাদানুবাদ। তবু ফয়সালা হয়নি। শেষ পর্যন্ত স্পিকার শিরীন শারমিন নির্দেশ দিয়েছেন, চুদুরবুদুরের ঠিকুজি-কুলজি পরীক্ষা করে দেখা হবে।
শব্দটি অশ্লীল হলে কার্যবিবরণী থেকে বাদ যাবে, না হলে নয়।
বাংলাদেশে তো বটেই, পশ্চিম বাংলাতেও লঘু আড্ডায় চুদুরবুদুর আদৌ অপরিচিত শব্দ নয়। কলকাতার ভাষাবিদ পবিত্র সরকার বা ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক নির্মল দাস—দু’জনেরই অভিমত চুদুরবুদুর গ্রাম্য শব্দ, অশ্লীল কিছুতেই নয়। এর অর্থ বাড়াবাড়ি করা বা গড়িমসি করা। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় শব্দটি “চদরবদর” হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
অভিধান বলছে, বাংলাদেশের একটা গ্রাম্য খেলারও নাম চুদুরবুদুর।
তাহলে এবার পড়ুন “চুদুর বুদর” শব্দের ইতিবৃত্ত।
ফেনী জেলার পাশে ফেনী নদীর ওপারে ত্রিপুরার সাব্রুম জেলা। যথেষ্টই মিল দু’পারের ভাষায়। চুদুরবুদুর সেখানেও খুবই চালু, জানিয়েছেন ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যায়ের বাংলা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্মল দাস।
তিনি বলেন, ‘শব্দটিকে কিছুতেই অশ্লীল বলা যাবে না। তবে ঠিক, ভদ্রসমাজে তেমন ব্যবহার হয় না। উল্টোপাল্টা কাজ করা, নড়বড়ে থাকা, ইত্যাদি অর্থ ধরে এ শব্দের ব্যবহার। ’ অধ্যাপক পবিত্র সরকারও জানিয়েছেন, চুদুরবুদুর গ্রাম্য শব্দ, অশ্লীল নয়।
ঢাকার বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধানে দিব্যি জায়গা করে নিয়েছে চুদুরবুদুর।
ওই অভিধানের প্রধান সম্পাদক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্। ওই অভিধানে চুদুবুদুরের তিনটি অর্থ দেয়া হয়েছে। এক, বাড়াবাড়ি করা। সিলেট, পাবনা অঞ্চলে এ অর্থে শব্দটির ব্যবহার দেখা যায়। দুই, গড়িমসি।
এ অর্থে ব্যবহার বেশি ময়মনসিংহ ও ঢাকায়। তাছাড়া এক ধরনের খেলাও রয়েছে, যার নাম চুদুরবুদুর।
চুদুরবুদুর এলো কোথা থেকে? পবিত্রবাবু বলেন, ‘এটা নিশ্চিতভাবেই অনার্য শব্দ। বাংলায় অনার্য শব্দের উত্স তিনটি। টিবেটো-বার্মান, অস্ট্রিক এবং দ্রাবিড়।
এরই কোনোটি থেকে এ ধ্বন্যাত্মক শব্দটি এসে থাকবে। ’ সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।