আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এ কোন খেলা খেললা রে গোলাপী? আত্মহত্যা ছাড়া উপায় নাই(প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য)

আমিও একজন মানুষ, ঠিক আপনার মতই, , , , , ছয় বছর আগে হাসান সাহেব ও কবির সাহেব দু’জনই চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। দাবা খেলার মহা ভক্ত হওয়ায় সকাল-বিকাল দু’বেলাই দাবা নিয়ে মেতে থাকেন দু’জন। সেদিন বিকালে কবির সাহেবের একটি দুর্দান্ত চালের বদলে নিজের সৈন্যটা দুই ঘর এগিয়ে দিতে দিতে হাসান সাহেব প্রশ্ন করলেন, ‘আচ্ছা বলুন তো, এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে আলোচিত খেলার নাম কী?’ ‘হা হা, আমাদের মেয়েরা জয় দিয়ে শুরু করেও সাউথ আফ্রিকার মেয়েদের কাছে ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরেছে, সে খবর আমি রাখি না বলে ভাবছেন বুঝি!’ ‘আর একটু ভেবেচিন্তে বলুন না মশাই। ’ ‘বুঝেছি, আপনি বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার কথা বলছেন!’ ‘ধুর, আপনি তো আমার ভাবনার লাইনেই পা রাখছেন না। আমিই বরং বলে দিই।

বর্তমানে দেশের সবচেয়ে আলোচিত খেলাটির নাম হলো মন্ত্রী-মন্ত্রী খেলা। ’ এতক্ষণে কবির সাহেবের মাথায় ঢুকল ব্যাপারটা। মহাজোট সরকারের মন্ত্রিসভা নিয়ে গত দুই সপ্তাহে যে নাটক অভিনীত হলো, তাতে হাসান সাহেবের কথার সঙ্গে একমত না হয়ে কোনো উপায় নেই। কথা নেই বার্তা নেই, হঠাত্ করে নতুন সাতজনকে মন্ত্রিসভায় যুক্ত করার সিদ্ধান্ত, দেশের বর্ষীয়ান দু’জন রাজনীতিবিদের তরফ থেকে মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, দিনব্যাপী তাদের রাজি করানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর ‘ওঠ ছেরি তোর বিয়ে’ মার্কা ঘোষণা দিয়ে দুই ঘণ্টার নোটিশে দু’জন সাবেক রাষ্ট্রদূতকে মন্ত্রিসভায় যুক্ত করে তড়িঘড়ি শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা... সব মিলিয়ে পুরাই ভজকট অবস্থা। বিশেষ করে বর্ষীয়ান ওই দুই রাজনীতিবিদ মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় এ প্রশ্ন জাগাই স্বাভাবিক যে, গুরুত্বপূর্ণ এই সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সরকার তাদের দু’জনের মতামত নেয়ার প্রয়োজনীয়তাটুকুও অনুভব করেনি কেন? মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব পেলে তারা দু’জনেই হামলে পড়বেন, নিশ্চয়ই সেটাই ধরে নেয়া হয়েছিল! ‘নির্বাচনের আর মাত্র বছরখানেক বাকি।

এখন এই আইওয়াশ মার্কা মন্ত্রী-মন্ত্রী খেলার আসল মানেটা কী, বলতে পারেন?’ নির্বাক কবির সাহেবকে প্রশ্ন করলেন হাসান সাহেব। ‘ঠিকই বলেছেন। যখন সময় ছিল, কিংবা যখন প্রয়োজন ছিল, তখন ব্যর্থ মন্ত্রীগুলোকে বাদ না দিয়ে তাদের আরও বেশি দুর্নীতি করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এখন মেয়াদের শেষ প্রান্তে এসে এই লোকদেখানো রদবদল আইওয়াশ ছাড়া আর কি!’ ‘নতুন মন্ত্রীরা তাদের দায়িত্ব বুঝে নিয়ে কাজ শুরু করতে করতেই তো এক বছর ফুরিয়ে যাবে। এই সময়ে পাবলিককে কী এমন সার্ভিস দেবেন তারা?’ অভিযোগের সুর হাসান সাহেবের কণ্ঠে।

‘আসলে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্যই এই পদক্ষেপ। ক্ষমতার শেষ সময়ে এসেও বিগত সরকারকে দোষারোপ করলে পাবলিক হাসবে। পাবলিকের নজর অন্যদিকে ঘোরাতেই এই খেলা। তা না হলে এই সাত ব্যক্তি বাকি এক বছরে কী এমন হাতিঘোড়া উন্নয়ন করে ফেলবেন দেশের!’ ‘সাতজনের কথা বাদ দেন, গত চার বছরে এই সরকারের অন্য ৪০ মন্ত্রী কিংবা পুরো সরকার কী করেছেন, তাও তো দেশবাসীর অজানা নয়। ’ ‘অনেক কিছুই তো করলেন।

শত শত কোটি টাকা খরচ করে বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন, বাকশালী স্টাইলে সংসদ পরিচালনা, সংবিধান পরিবর্তন, বিতর্কিত ইভিএমের প্রচলন, নিজদলীয় নেতাদের মালিকানায় নতুন ডজনখানেক টিভি চ্যানেল আর ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদান, ছাত্রলীগের বেপরোয়া টেন্ডারবাজি, ডিসিসি দুই ভাগ করা, শেয়ারবাজার জালিয়াতি, পদ্মা সেতু দুর্নীতি, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া, কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের নামে হরিলুট, রেলমন্ত্রীর অর্থ কেলেঙ্কারি, একের পর এক আলোচিত গুম-খুনের ঘটনা, ডেসটিনির অর্থ পাচার, হলমার্ক গ্রুপের অর্থ কেলেঙ্কারি, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়সহ ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিজেদের দলীয় নেতাদের ঢুকিয়ে কোটি কোটি টাকা লুটপাট, চার বছরের কর্মকাণ্ডের এই তালিকাকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখা সম্ভব নয়। বাকি এক বছরে দেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। ’ ‘দারুণ বলেছেন। কিন্তু নিজেদের প্রকৃত দায়িত্ব তারা কতটুকু পালন করতে পেরেছেন?’ ‘দায়িত্ব! মানুষের সবচেয়ে বড় চাহিদা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে তারা পুরোপুরি ব্যর্থ। নির্বাচনের আগে চালের দাম নিয়ে সোনার হরিণ মার্কা আশ্বাস দিলেও ক্ষমতায় আসার পর তারা পুরো উল্টো ডিগবাজি দিয়েছেন।

এই সরকারের আমলে দ্রব্যমূল্য কমবে, আমজনতা এখন এই আশা করে না। মজুতদার, সিন্ডিকেট আর কালোবাজারিদের কাছে এই সরকার কতখানি অসহায়, তা শুধু দ্রব্যমূল্যের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। প্রতি পরিবারের একজনকে চাকরি দেয়ার নির্বাচনী ওয়াদা শতাব্দীর সেরা কৌতুকে পরিণত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হলেও বিগত যে কোনো সময়ের চেয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভাঙা রেকর্ড বাজিয়েই গেছেন। বিদ্যুত্ নিয়ে বড় বড় কথা বলা হলেও বাস্তবে অশ্বডিম্ব।

রাজধানীতে বিদ্যুত্ সঙ্কটের প্রকৃত চিত্রটা বোঝা না গেলেও ঢাকার বাইরে এখনও দিনের মধ্যে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুত্ থাকে না। সরকারের প্রতিটি সেক্টরেই দুর্নীতিবাজরা এমনভাবে পাকাপোক্ত আসন গেড়ে বসেছে যে, স্বয়ং অর্থমন্ত্রীও চার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতিকে বেশি টাকা নয় বলে বক্তব্য দিয়ে পরে আবার মহান সংসদে নির্লজ্জের মতো ক্ষমা চাইতে পারেন। দেশকে ডিজিটাল বানাতে গিয়ে সরকারের নিজেরই আসলে টালমাটাল অবস্থা,’ একটানা কথা বলে অসহায়ের মতো হাসান সাহেবের দিকে তাকালেন কবির সাহেব। হাসান সাহেবের মুখও অন্ধকার। দাবার মন্ত্রীটা হাতে নিয়ে হতাশার সুরে তিনি বললেন, ‘এই দাবার মন্ত্রীর যতখানি ক্ষমতা, বাস্তবে এদেশের মন্ত্রীগুলোর মনে হয় সেই ক্ষমতাও নেই।

আর যাদের হাতে সত্যিকারের ক্ষমতা আছে, তাদের বুকের মাঝের মানবিক মূল্যবোধ আর বিবেকের মৃত্যু হয়েছে বলেই অভাগা দেশটির আজ এই দশা। নতুন সাতজনকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত না করে মহাজোটের সব সংসদ সদস্যকে মন্ত্রী করে দিলেই বা দেশের কী এমন উন্নয়ন হবে আগামী এক বছরে?’ এ প্রশ্নের কী জবাব দেবেন বৃদ্ধ কবির সাহেব! তিনি শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলেন আরেক বৃদ্ধ হাসান সাহেবের কষ্টে নীল হয়ে ওঠা মুখটার দিকে। বিঃদ্রঃ এখানে প্রাপ্তবয়স্ক বলতে যাদের ভোটাধিকার আছে তাদের বুঝানো হয়েছে। সুত্রঃ দৈনিক আমার দেশ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.