দেশের সর্ব দক্ষিন জেলা কক্সবাজারে সর্ববৃহৎ শুটকী উৎপাদন কেন্দ্র কক্সবাজারের নাজিরার টেক। এখানে প্রতি বছর উৎপাদন হয় প্রায় আড়াই থেকে ৩ লক্ষ টন শুটকী। আর এ শুটকী বিক্রি করে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৭’শ কোটি টাকা উপার্জন করে থাকে এবং প্রায় ৪০ হাজার মানুষের জীবন জিবীকা এ শুটকী মহাল কে কেন্দ্র করে নির্বাহ করছে। তার মধ্যে প্রায় ৮’শ ব্যবসায়ীসহ ২০ থেকে ২৪ হাজার শ্রমিক এ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। আবার ভর মৌসুমে শুটকীর কাজে শ্রমিক সংখ্যা আরো বেশি নিয়োজিত থাকে।
প্রতি বছরের ভাদ্র তথা আগষ্ট থেকে এ মৌসুম শুরু হয়। তবে এর অধিকাংশই শ্রমিক নাজিরার টেকের বাহিরের বলে জানিয়েছেন শুটকী সমবায় সমিতির সহ সভাপতি আবুল বশর। ১৭ সেপ্টেম্বর সোমবার সকাল ১০ টায় একদল সংবাদ কর্মী নাজিরার টেক শুটকী মহালে সরেজমিনে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষ গরীব ও নিম্মবিত্ত পরিবারের, নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। শুটকী ব্যবসা করে তারা কোন রকমে দিনাতিপাত করছে। কর্মরত এক শ্রমিক জাহেদা বেগম বলেন “শুটকী ব্যবসা আছে বলেই কোন রকমে বেঁচে আছি।
না হয় না খেয়ে মরতে হত”। শ্রমিকের মজুরী ক্ষেত্রে রয়েছে বিভাজন। পুরুষ শ্রমিকরা পারিশ্রমিক হিসেবে পায় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা এবং মহিলা শ্রমিকরা ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। মজুরী ক্ষেত্রে মহিলাদের কম কেন এ প্রশ্নে এক নারী শ্রমিক বলেন “যা পাই তা নিয়ে আমরা খুশি”। ব্যবসায়ী শাহাব উদ্দীন ইসলাম জানিয়েছেন জেলেরা মাছ ধরে ট্রলার নিয়ে ফেরার পর মাছের ধরন অনুযায়ী নিলামে কাঁচা মাছ ক্রয় করেন তারা।
তারপর এ মাছ শুটকী মহালে শুকাতে সময় লাগে দুই থেকে তিন দিন। শুটকী মহলে উৎপাদিত মাছের মধ্যে রয়েছে ছুরি, হাঙ্গর, লইট্যা, মায়া, ফাইস্যা, পোপা, চিংড়ি উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন প্রকারের শুটকী মাছের ধরন অনুযায়ী দাম নির্ধারন করা হয়। ছোট ছুরি শুটকীর দাম ২’শ থেকে ২৫০ টাকা, বড় ৪’ শ থেকে ৫’শ টাকা, পোপা ২৫০ থেকে ৩’শ টাকা, লইট্যা ২’শ থেকে ৩’শ টাকা প্রায় দরে পাইকারী ব্যববসীদের বিক্রি করে। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, কক্সবাজার নাজিরার টেক প্রায় ৩০ বছর ধরে শুঁটকি মহাল কার্যক্রম চলে আসছে।
বর্তমানে প্রায় ১ শত ২৫ একর জমির উপর বিশেষ ধরণের ভাগাড় বানিয়ে শুঁটকি উৎপাদনের কাজ চলছে। এই শুঁটকি উৎপাদনের সাথে জড়িত রয়েছে শিশুসহ নারী ও পুরুষ শ্রমিক। এতে বছরে লেনদেন হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৭’শ কোটি টাকা। সরকারের কাছ থেকে পৃষ্টপোষকতা পেলে এই উৎপাদন আরো প্রসার লাভ করবে এমনটি জানিয়েছেন শুটকী কাজে নিয়োজিত সংশ্লিষ্টরা। নাজিরার টেক মৎস্য ব্যবসায়ি বহুমুখী সমবায় সমিতির সদস্য হেলাল উদ্দিন জানান, বিগত ৩০ বছর ধরে এই শুঁটকি ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত আছি।
এ মহালে সব ধরণের মাছের শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। তবে ব্যাপক চাহিদা থাকায় লইট্যা, ছুরি, লাক্ষা, রূপচাঁদা, টেকচাঁদা. চিংড়ি, ফাইস্যা, পোয়া, চাপিলা, সুরমার উৎপাদন বেশি হয়ে থাকে। এই ছাড়াও আরো নানা প্রজাতের ১৫/২০ ধরনের শুঁটকি উৎপাদন হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এসব শুটকী দেশের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হবে। আর এতে সরকার পাবে মোটা অংকের রাজস্ব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।