আমি একজন মানুষ । পুরো পৃথিবীটাই আমার দেশ। বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক !
রঞ্জিত রাস্তায় হাঁটে,কিন্তু গন্তব্যে যাওয়ার জন্য নয় বরং গন্তব্য হারাবার জন্য। ধরা যাক, রঞ্জিত যখন পান্থপথে যেতে চায় তখন সে হেঁটে চলে যায় গুলিস্তানের দিকে। রঞ্জিত এটাই চায়।
তার গন্তব্য যেন সর্বদা অধরাই থাকে। অবশ্য সব সময় এটা করা যায় না। রঞ্জিত প্রায় বেকার কিংবা বলা যায় রঞ্জিত বেকার থাকতে চায় কেননা বেকারত্বের সুখ অনেক । যখনই মানুষ ব্যস্ত হয়ে পড়ে তখনই মানুষের সুখ হারিয়ে যায়। রঞ্জিতের কোন একাডেমিক সার্টিফিকেট নেই।
তারপরেও রঞ্জিত দুটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল আর একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়িয়েছে পাঁচ বছর। কেননা ইন্টারভিউ বোর্ডের কেউ রঞ্জিতের সার্টিফিকেট দেখতে চায়নি। যদি দেখত চেত তাহলে রঞ্জিতের চাকরিগুলো হত না তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। কেন চায়নি তা অবশ্য তেমন রহস্যের ব্যাপার না। রঞ্জিত জানে না এমন বিষয় এখনো পৃথিবীতে জন্মায়নি।
রঞ্জিত প্রচুর পড়ে। রঞ্জিতের বাবার প্রচুর সম্পত্তি,যার কারণে রঞ্জিতের বাবা তাকে স্কুলের বড় ক্লাসে আর যেতে দেয়নি। বাসাতেই মাস্টার ছিল,ও সেভাবেই পড়েছে। কিন্তু রঞ্জিতের ব্যাপারটা যখনই ফাঁস হত তখনই ওর চাকরিগুলো চলে যেত। পরে ও সিদ্ধান্ত নিল যে আর চাকরি করবে না।
খালি হাওয়া খাবে আর পড়বে। মাঝে মাঝে রাস্তায় হাঁটবে আর অভিজ্ঞতাগুলো একটা সাপ্তাহিক পত্রিকায় লিখবে। খুব সামান্য কিছু লিখতে ওর এক ঘন্টাই যথেষ্ট কিন্তু ও সপ্তাহের সাতদিনই হাঁটে।
রঞ্জিত এখন ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলের পাশে দাঁড়িয়ে সিনেমার পোস্টার দেখছে। নায়িকা কোকিলা তার মোটা মোটা রান বের করে পোজ দিয়েছে পাশে নায়ক কিসমত খান।
খুব দারুন যৌনউত্তেজক ছবি কেননা রঞ্জিতের পাশে প্রকান্ড ভিড় পোস্টার দেখতে। সবার চোখ নায়িকার রানে আর অর্ধউন্মুক্ত বক্ষের দিকে। এটাও একটা অভিজ্ঞতা। রঞ্জিত এটাই এবার তার ফিচারে লিখবে,পাবলিক বেশ খাবে মনে হয়। ফিচারের ইনসেটে নায়িকার মোটা রান সবার চিত্তে বিনোদন দিতে বাধ্য।
তবে রঞ্জিতের জানতে ইচ্ছা মেয়েরা কি নায়ক কিসমত খানের ছবি দেখে যৌন উত্তেজনা বোধ করে কিনা। কেননা নায়ক কিসমত খান প্রায় সব পোস্টারে সেন্ডো গেঞ্জি পড়েই পোজ দেয়। মেয়েরা যৌন উত্তেজনা বোধ হয়তো করে,প্রযোজকের বউয়ের সুপারিশও থাকতে পারে এ ব্যাপারে। রঞ্জিত বেশ রসিয়ে রসিয়ে সবগুলো পোস্টারগুলো দেখছে। এখন আর সম্পূর্ণ উলঙ্গ নায়িকা দেখে সুখ নাই,অর্ধ উলঙ্গ নায়িকা অনুভূতি চড়িয়ে দেয় দ্বিগুণ।
একটা পোস্টারে দেখা যাচ্ছে বাংলা টাইটেল কিন্তু নায়িকা সাদা চামড়া বিকিনি পড়া, মনে হয় মাল ভাল। রঞ্জিত দুইটা টিকিট কাটে,দেখা যাক দোকলা পাওয়া যায় কিনা। একটু দূরে দেখা যাচ্ছে একটা মেয়ে (মহিলাও হতে পারে) দাঁড়িয়ে আছে। বোরকা আর নেকাব পড়ার কারণে মেয়ে না মহিলা বুঝা যাচ্ছে না। তবে ফিগার দেখে রঞ্জিতের মনে হচ্ছে ইনি অল্পবয়সী মেয়েই হবে।
শ্যামলা কপালে লাল টিপ। রঞ্জিত বারকয়েক পাশ দিয়ে ঘুরে,হাঁটাহাঁটি করে। দেখে মেয়েটা মোবাইলে কথা বলছে,গলাটা তো ভারী মিষ্টি! রঞ্জিত ভাবে একে নেওয়া যায় কিনা সঙ্গী হিসেবে। মেয়েটা রঞ্জিতকে খেয়াল করে। রঞ্জিত একটু হাসে।
মেয়েটা কাছে গিয়ে বলে-লাগব নাকি,পুরা ছবি দুইশ ট্যাকা,শুধু টিপাটুপি। রঞ্জিত একটু বিব্রত বোধ করে। কপালে হয়তো একটু ঘামও দেখা দেয়। রঞ্জিত একটু হাসে,বলে-আপনার নাম? মেয়েটা (অথবা মহিলাটা ) বলে-লাইলী। রঞ্জিত মনে মনে বলে ওঠে –তুমি লাইলী আমি মজনু।
মেয়েটা রঞ্জিতকে বলে-চলেন,টিকিট নিছেন না এখন নিবেন? রঞ্জিত তার হাতের টিকেট দেখিয়ে বলে-আছে,চলেন।
রঞ্জিত চোখ মেলে ,মাথাটা কেমন চক্কর দিয়ে ওঠে। রঞ্জিতের নিস্তেজ লাগে। রঞ্জিতের মনে পড়ে ছবি দেখা শেষে ক্ষুধার্ত-কামার্ত রঞ্জিত মেয়েটার সাথে একটা হোটেলে যায়। রুমে কাপড় খুলে শোয়,তারপর..রঞ্জিতের আর মনে পড়ে না।
মেয়েটা টয়লেটে ঢুকে তো বের হয়নি কিন্তু তার আগে কি যেন হল রঞ্জিতের ! ও কি রুমাল ঝেড়েছিল? রঞ্জিত হাসপাতালের স্যালাইনের রডটা ধরে। যে ওকে হাসপাতালে এনেছে তাকে আগে ধন্যবাদ দেওয়া দরকার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।