আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রথম স্কুল ব্যাংকিং কনফারেন্স ২০১৩

এসো নীপবনে বাংলা সপ্তাহের শুরু হয় শনিবার দিয়ে। কারো মনে কি প্রশ্ন জেগেছে কেন? তবে এই শনিবার ২০ তারিখ হয়ে গেল স্কুল ব্যাংকিং এর প্রথম কনফারেন্স মিরপুরের বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমিতে। চমৎকার একটা সম্মেলন। সম্মেলনটি বাংলাদেশ ব্যাংক এর তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাংক কর্মকর্তা, ছাত্রছাত্রী আর অভিভাবকদের নিয়ে একটা চমৎকার মেল বন্ধন।

আমার এই সম্মেলনে যাওয়ার ইতিহাস বিচিত্র! আমার ব্যাংক থেকে যে দুইজন ছাত্র-ছাত্রী নির্বাচিত হয়েছে তাদের একজন আবার আমার ব্রাঞ্চ থেকে। সেই ছেলেটিকে সম্মেলনে নিয়ে যাওয়ার পর, প্রধান শাখার কর্মকর্তার বাবা হঠাৎ মারা যান। ফলে ছেলেটিকে সম্মেলন থেকে নিয়ে আসার দায়িত্ব পরে আমার। সেই সুবাদেই সম্মেলনে যোগদান করা। এমনি তে কোন পাস নেই, ঢুকতে দিবে কিনা এই নিয়ে সন্দিহান ছিলাম।

তারপর আবার ছেলেটিকেও চিনি না। তাই এক ম্যাসেঞ্জারকে সাথে নিয়ে নেই। সে আবার ছেলেটিকে চিনে। তবে প্রকৃত ঘটনা খুলে বলার পর, সকলেই সাহায্য করলেন। বুঝতে পারছিনা কিভাবে অংশগ্রহণ করবো।

সম্মেলন শুরু হয়ে গেছে। আমি বসে ছিলাম বাইরে। অনেককে দেখলাম সম্মেলন কক্ষে উঁকি ঝুকি মারছে। বাইরে বসে থাকার চেয়ে ভেতরে কি হয় এই জানতেই ঢুকে গেলাম ভেতরে। ততক্ষণে অনেকের বক্তৃতা শেষ।

বক্তারা ছিলেনঃ ১) অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ২)ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) ভাইস চেয়ারম্যান আলী রেজা ইফতেখার ৩) স্কুল ব্যাংকিং কনফারেন্সের আহবায়ক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এস এম মনিরুজ্জামান ৪) প্রধান অতিথি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান ৫) অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী। ডঃ মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এই সম্মেলনে আসবেন এমন কথা ছিলো না, তিনি হঠাৎ করেই এই সম্মেলনে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে সম্মেলনটিকে আরো প্রানবন্ত করেছেন। যদিও আমি তার বক্তৃতা শুনতে পাইনি। তবে কোমল মতি ছাত্র-ছাত্রীরা তাকে কাছ থেকে দেখার তার কথা শোনার সৌভাগ্য অর্জন করেছে। আমি যখন সম্মেলন কক্ষে প্রবেশ করি এর মধ্যে ৩/৪ জন অভিভাবক আর ছাত্র-ছাত্রী সহ আলী রেজা ইফতেখার, এস এম মনিরুজ্জামান আর ডঃ মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এর বক্তৃতা শেষ।

বক্তৃতা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান। এবার জানি, এই স্কুল ব্যাংকিংয়ের উদ্দেশ্য কী? স্কুল ব্যাংকিং এর উদ্দেশ্য হলো ছাত্র-ছাত্রীদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা। আর্থিক প্রতিষ্ঠান এর সাথে সম্পর্ক গড়ে দেয়া। আর তাদের সঞ্চয়ে উৎসাহিত করা। বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রীরা জন্মদিনে, ঈদে বা অন্যান্য সময়ে যে উপহার হিসেবে অর্থ পান সেই অর্থ মাটির ব্যাংকে না জমিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমানো।

স্কলাসটিকা স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী সিমরান তাবাসসুম আলী। ২০১১ সালে নিজের নামে একটি ব্যাংক হিসাব খুলেছে। স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় সে এই হিসাব খোলে। এই হিসাবে সঞ্চিত অর্থের একটি অংশ সে এখনই ব্যয় করছে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায়। এটা খুবই আশা ব্যঞ্জক কথা।

গভর্নর জানান, এই মুহূর্তে স্কুল ব্যাংকিং এর আওতায় হিসাব খোলা হয়েছে মোট ১ লক্ষ ৮৭ হাজার। এই হিসাবে জমা অর্থের পরিমান প্রায় ১১৪ কোটি টাকা। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় এক সময় বড় হয়ে যাবে। তখন এই অর্থ বিনিয়োগের উপযোগী হবে। দেশে ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় তিন কোটি।

এর মধ্যে অর্ধেক অনেক ছোট বলে কে বাদ দিলেও আরো দেড় কোটি ছাত্র-ছাত্রীর হিসাব খোলা সম্ভব। তখন এই তহবিল এর পরিমান হবে অনেক বিশাল। এই ছাত্র-ছাত্রীরাই যখন বড় হয়ে ব্যবসার কাজে এস, এম, ই ঋণ নিতে আসবে তখন ব্যাংক কর্মকর্তাদের আর নতুন করে KYC (Know Your Customer) করতে হবে না। তিনি আরো জানান ব্যাংক গুলো তাদের CSR এর ৩০% এই শিক্ষা খাতে ব্যয় করার কথা থাকলেও ৩২% ব্যয় করেছে যা খুবই উল্লেখ্যযোগ্য। তিনি এর সাথে আরো যোগ দেন, যে বৃত্তি দেয়া হয় তা যেন স্কুল ব্যাংকিং এর হিসাব খুলে দেয়া হয়।

Inclusive Banking এর ধারা হিসেবে স্কুল ব্যাংকিংকে জনপ্রিয় করতে আরো প্রচার এর উদ্যোগ নেয়া হবে। ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের ট্রেনিং একাডেমীতে গড়া হবে একটা ডিজিটাল অর্থ জাদুঘর। এই জাদুঘরে থাকবে বিশ্বের সকল দেশের মুদ্রা আর তার ইতিহাস। জনাব আতিউর রহমান, পরবর্তী সম্মেলন দেশের উত্তর বঙ্গের কোন একটা শহরে করার আশা ব্যক্ত করেন, যেন দেশের সকল অঞ্চলের শিশু এ ধরনের সম্মেলনে যোগদিতে পারে। এমন কি এই ধরনের সম্মেলনে যাতে ছাত্র-ছাত্রীরা বিদেশেও যেতে পারে সেই ব্যাপারেও সহায়তা করবে।

সবচেয়ে বেশি স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খুলে প্রথম হয়েছে ইসলামী বাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। তারা প্রায় ৮৫ হাজার স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খুলেছে। হিসাব খোলার ভিত্তিতে পাঁচটি ব্যাংককে সম্মাননা পুরস্কার দেয়া হয়। এর হলেন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, ইউসিবিএল, ইস্টার্ন ব্যাংক এবং ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। খাওয়া দাওয়া হয়েছে চরম।

আমার ব্রাঞ্চের ছেলেটির ভাষ্য ছিলো এরকম, 'এরা গরু মোটা তাজাকরন প্রকল্প নিয়েছে'। ২য় পর্বে ছিলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে নাচ, গান আর নাটক পরিবেশনা করা হয়। এর মধ্যে খুদে গান রাজ এর রাফি চমৎকার গান পরিবেশন করে। নাটকটির নাম মনে করতে পারছিনা।

তবে চমৎকার নাটক। ক্যামেরা নিতে পারিনি। তাই ছবি বেশি দিতে পারলাম না। সকলেই ভালো থাকুন।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৭ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.