আজ ভোর হয়নি। হয়তো কাল-ও হবেনা। চারিদিকে ভীষণ কাল। ভোর হবার প্রতিক্ষায়.... প্ল্যান-টা বলতে গেলে হুট করেই নেয়া।
কাছাকাছি ৩০ কিলোমিটারের কাছে দেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট আছে অথচ এখনও তা চক্ষুগোচর হয়নি এটা মেনে নেয়াটা খুব কষ্টকর ছিল।
যাবার আগের দিন আবিষ্কার করলাম কিভাবে যাবো,কই যাবো,কি কি লাগবে তার তেমন কিছুই দেখি জানিনা!অবশেষে কিছু ট্যুরিস্ট সাইট থেকে হাল্কার উপর ঝাপসা তথ্য নিয়ে আল্লাহর নামে শুরু হল আমাদের "অপারেশন রাতারগুল"...
যাহোক সকাল ৯টায় বের হবার কথা থাকলেও বাঙ্গালী ঐতিহ্য বহাল তবিয়তে রক্ষা করে সাড়ে ১০টা নাগাদ বের হলাম।
মানুষ ৭ জন আর বাহন ৩ চাক্কার সিএনজি... (এক সিএনজি তে ৭ জন ওঠা গিনেজ বুকে নাম লিখানোর চেয়ে কম কিছু না)
দুই জন কে তুলে দেয়া হল সিটের পেছনে ইঙ্গিনের উপর আর বাকি ৫ জনের অবস্থাও "রাস্তা ফুরাইলে কাইন্দা বাঁচি" অবস্থা...
দুপুর ১২টার দিকে সারিঘাট চলে আসলাম।
নাহ!সিএনজি আর না!যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে!
এবার গোয়াইনঘাট গামী হিউম্যান হলারে সওয়ার হলাম ৭জন।
রাস্তার একপাশে ইনফিনিটি মার্কা সবুজ আর অন্য পাশে মেঘালয়ের পাহাড়্গুলো যেন আমাদের দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে!
দুপুরের তুখোড় রোদে অমন পাহাড়ের রুপ দেখে সত্যি চোখ না পুড়ে যেয়ে থাকতে পারে না...
মুশকিল বাধল একখান যে,এলাকার কেউ-ই রাতারগুল বলে কিছু জানে না!আমরা তো ভয় পেলাম!ভুল যায়গায় আসলাম না তো?
এদিকে সঙ্গে আবার ৬জন-কে সাথে নিয়ে আসছি। ভুল হলে নগদ ধোলাই...
গোয়াইন ঘাট নেমে তাই সরাসরি বাজারের ওপার ফরেস্ট অফিসে চলে গেলাম।
(এইডা যে কোন আবুলে ফরেস্ট অফিস কয় আল্লাহ-ই জানে!নদীর পাড়ে একটা কোনরকম পাকা ঘর আর ঘরের ভিত্রে ছাগল সমেত মানুষ!মনে মনে কই ভুলে কি ছাগলের খামারে আইসা পড়লাম নাকি!!!)
অবশেষে পোদ্দার টাইপ কেও একজন এসে আমাদের জানে পানি সরবরাহ করে বললেন যে রাতারগুল সোয়াম্পফরেস্ট বলে যায়গাটা বাস্তবেই আছে!
তড়িত গতিতে একজন মাঝি-ও জুটে গেল। মাঝি জানালো নৌকায় যেতে দুই থেকে দেড় ঘন্টা লাগবে বনে,আর ঘুরে ফিরে আসতে ৩ঘন্টার মত লাগবে।
আমরা বলি ,কয় কি!৫ধন্টা নদীতে নৌকায়!আমি তো পারলে আনন্দে তখনই নদীতে ঝাপ দেই!
ভয় একখান...সাঁতার জানিনা...
নাস্তা-টাস্তা কিনে সবাই যে যার মতো কাড়াকাড়ি করে পছন্দ মতো জায়গা নিয়ে নিলাম ট্রলারে।
নৌকা তখন মাঝ নদীতে। হঠাত বিনা নোটিশেই বৃষ্টি!এ যেন মেঘ না চাইতেই সুনামি!
আমাদের আর পায় কে!
সবাই যেন একদিনের জন্য সবকিছু ভুলে গিয়েছে!
বিশাল নদীর মাঝে বৃষ্টিহত(বৃষ্টি দ্বারা আহত) ৭ যুবক আসলেই এক দিনের জন্য সব ভুলে গিয়েছে...
আমরা যখন পুরোদস্তুর কাকভেজা তখন থেমে গেল বৃষ্টি।
নদীর পানি হয়ে গেল ভয়ানক শান্ত।
পানিতে তাকালে মনে হয় উপরেও আকাশ নিচেও আকাশ। আমরা যেন স্বচ্ছ পারদের সমুদ্রে রয়েছি...
বনে ঢুকতে গিয়ে তো সবার মুখ হা!
আল্লাহ!এ কই আসলাম!এত্ত সুন্দর ক্যান???
দুই পাশে বন আর আমরা পানি কেটে এগুচ্ছি আর মুগ্ধ হচ্ছি!
কিভাবে সম্ভব এত মুগ্ধকর হওয়া!
বনটা সম্পুরনই ভেসে আছে পানিতে আর আমরা যাচ্ছি কিলবিল করে আঁকাবাকা জলাশয় ধরে...
আমি ভাবছি এর মাঝে হারিয়ে গেলেও বিনাদ্বিধায় জীবন পার করে দেয়া যাবে...
খুব একটা বেশিক্ষন থাকা হল না।
এবার চলে আসার পালা।
একরকম মনের সাথে জোর করেই নৌকা ঘুরল উল্টা পথে।
সবার চোখে ক্লান্তি আর মনে কিছু কিলবিলে অপূর্ব স্মৃতি...
*কিভাবে যাবেনঃসিলেট শহরের যেকোনো যায়গা থেকে সিএনজি সারিঘাট যাবে। ওখান থেকে সিএনজি বাঁ হিউম্যান হলারে গোয়াইন ঘাট নেমে বাজারের শেষ মাথায় পাবেন ফরেস্ট অফিস। সেখানেই পাবেন ট্রলার। বনের শুরুতেই ট্রলার ছেড়ে ছোট ডিঙ্গি নৌকা নিতে হবে।
*সতর্কতাঃ
১।
এই যায়গাটি মোটেও গতানুগতিক ট্যুরিস্ট বান্ধব যায়গা নয়। ৫ঘন্টা যখন পানিতে থাকবেন তাই ফার্স্ট এইড সাথে আনতে ভুলবেন না।
২। যায়গাটি খুব একটা নিরাপদ-ও বলা যায় না। তাই দুপুরের পর ওদিকে না যাওয়া উচিৎ।
আর যখন-ই যান গোয়াইনঘাট থানায় অবশ্যই জানিয়ে যাবেন।
৩। বৃষ্টি হতে পারে। এজন্য ছাতা নিয়ে যাবেন। আর ভেজার সখ থাকলে অন্তত পলিব্যাগ নিয়ে যাবেন যেন মোবাইল,ক্যামেরা না ভিজে।
৪। বনে সাপ,বিষাক্ত পোকা থাকে। এদের থেকে সাবধান।
#যারা যাচ্ছেন তাঁদের জন্য অগ্রিম শুভকামনা...
ইচ্ছে করেই বনের বেশী বিবরণ দেই নি। ছবিগুলো দেখে আন্দাজ করে নিন
আর ভাল ক্যামেরা নেই বলে ভাল ছবি-ও তুলতে পারি নি।
তাই আগে থেকেই স্বীকার করে রাখি,বনের ছবি গুলো আমার তোলা নয়
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।