আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গণভবনে ঈদ আপ্যায়ন ... আমিও ছিলাম আমন্ত্রিত

সবুজের বুকে লাল, সেতো উড়বেই চিরকাল বর্ষা আমার অনেক প্রিয় ঋতু হলেও, ঈদের দিনে কাদা মাখামাখিটা আমার কোনকালেই পছন্দের ছিল না। তো রোদ বৃষ্টির উপর তো মানুষের হাত নেই। তাই নিয়তিকে মেনে নিতেই হয়েছে। ইচ্ছা ছিল জাতিয় ঈদগাহ ময়দানে নামাজ পড়বো। কিন্তু ভাগ্যে লেখা ছিল বায়তুল মোকাররম।

বৃস্টি যতই বাধা দেক, মানুষের উদ্দিপনায় তা মোটেও বাধা দিতে পারেনি। তাই লোকে লোকারণ্য। চেনা অচেনা সব মানুষের সাথেই ঈদের কোলাকুলি শেষ বের হয়ে বাসায় ফিরবো, এই সময় পুলিশের গাড়ি। যাহ বাবা ! ঈদের দিনেও ক্যাচাল? মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। "স্যার স্যার, আমাদের সাথে চলেন।

" পুলিশ যখন স্যার স্যার করবে, তখন বুঝবেন কোন পুণ্যি করেছেন। আর উলটা হলে বুঝবেন কপালে শনি আছে। মনটা ভালো হয়ে গেলেও, একটা অস্বস্তির মধ্যে পড়লাম। এই ঈদের দিনে বাবা মার সাথে সময় কাটাবো ! এর মধ্যে হ্যাপা। "কোথায় যাবো?" "আপনারে গণভবনে যাতি হবি।

" গণভবন? ওখানে আমার কি কাজ? আমি সামান্য ছা পোষা মানুষ ! যে উৎসাহে স্যার স্যার করছে, তাতে হাজার অজুহাতেও যে এড়ানো যাবে না, সেটা বুঝতে পারলাম। অগত্যা গাড়িতে চড়ে বসলাম। দারোগার সাথে দুইজন কনস্টেবলও আছে। মুখ শুকনা। পথে যেতে যেতে হাত বাড়িয়ে ঈদের সৌজন্য বিনিময় করলাম।

গাড়ি থেকে নামার আগেই দারোগা সাহেব একটা পাস ধরিয়ে দিলেন। স্যার একদম ওই যে গেট দেখতিসেন, ওখানে গিয়ে পাস দেখালে যাতি পারবেন। কুনু সমস্যা হবে না। এলাহি কারবার ! সারি সারি গাড়ি থেকে হাজার হাজার টাকার জামা পড়া ভিয়াইপি লোকজন আসছে। নিজেকে বড় হীন দরিদ্র বলে মনে হলো।

বিশাল লাইনে দাড়ালাম। যিনি প্রধান অভ্যার্থনাকারি, আমার বেশভুষা দেখে পাসটি কয়েকবার উলটে পালটে দেখলেন। এর পর বললেন, মিজান সাহেব ইনাকে একটু দেখুন তো ! হায় রে বেশভুষা। শেখ সাদি অনেক আগেই মানুষ চিনেছিলেন। মিজান সাহেব হাতে যন্ত্র শুধু না, পারলে আমাকে উলঙ্গ করে খুত ধরেন।

এই রকম লোকের কাছে এই নিমন্ত্রনপত্র কি করে এলো, সেই দুঃশ্চিন্তায় তার মুখ কালো। যাই হোক, ছাড়া পেয়ে সামনের দিকে হাটা ধরলাম। অনেক অনেক পরিচিত মুখ। মানে, আম জনতা হিসাবে আমরা সবাই এদের চিনি, কিন্ত ইনারা অনেক উচুতলার বলে ইনারা আমাদের ভোটের সময় ছাড়া চেনেন না। চমৎকার ক্রিম কালার শাড়িতে বুবুকে খুব সুন্দর লাগছিলো।

মুখে মিস্টি হাসি। সবার সাথে কুশল বিনিময় করছিলেন। পাশে দেখি ভাগ্নিও আছে। তবে ভাগ্নি জামাইকে দেখলাম না। আমি কিন্ত আগেই বুঝতে পেরেছিলাম যে, আমার গণভবনে ঢোকার ছাড়পত্রটি বুবুই পাঠিয়েছে।

সম্ভবত তার অনুগতরা সবাই খুব ব্যাস্ত থাকায় দারোগাকে দিয়ে এখানে আনিয়েছে। বুবু আমাকে অনেক স্নেহ করেন। অন্যান্যদের মত আমিও লাইনে দাঁড়িয়ে এক সময় বুবুর মুখোমুখি হলাম। হাজার হোক আমরা বাঙালি। ঝুকে কদমবুসি করলাম।

"থাক থাক ভাই, সালাম লাগবে না। তোরে তো কোনদিন ধইরা আনা ছাড়া দেখা করাইতে পারলাম না। শামিম, বাচ্চুরে ওই ঘরে নিয়া যা। আমি একটু পর আসতেছি। " শশব্যাস্ত বুবুর এপিএস শামিম এসে সম্মানের সাথে আমাকে একটু দূরে একটা ঘরে নিয়ে গেলেন।

স্পেশাল বাহিনীর সশস্র লোকজন পাহারায়। কি বলবো ভাই। ঘরে ঢুকে আমার চোখ চড়াক গাছ। আমি কেন, আমার বাপ দাদার ১৪ পুরুষেও এমন আলিশান ঘর কোনদিন দেখেনি। ঘরটা দেখে মনে হলো, ঢাকার নবাবরা আসলেও কি রকম নবাব ছিল।

অবশ্য এর মধ্যে আধুনিকতার ছোয়া আছে। এসি চলছে নিঃশব্দে। বাইরের কোলাহল কোন কিছুই এই ঘরের মধ্যে পৌচ্ছাচ্ছে না। একটু ভয় ভয়ও লাগছে। এই রকম সাতপাচ ভাবনার মধ্যে প্রায় ৩ ঘণ্টা পার।

"কিরে বাচ্চু? অনেকক্ষণ দেরি করাইয়া দিলাম?" শুধু বুবু না, সাথে ভাগ্নি আর একটা বেশ সুন্দরি তরুণি। আর পেছন পেছন বিশাল ট্রে তে একগাদা খাবার নিয়ে জনৈক খেদমতগার। "পুতুল, এইটা হইলো বাচ্চু ! তোর আরেক মামা। সালাম কর " পুতুল খুব সুন্দর একটা হাসি দিয়ে সালাম দিলো। সাথের সুন্দরি তরুণি / যুবতিও হাসি দিলে সালাম দিলো।

হায় খোদা ! কিসের মধ্যে পড়লাম। পকেটে সম্বল শুধু ৫০০ টাকা। এদিয়ে আমার কয়েকদিন চলতে হবে। কিন্ত কি করা ! সেটাই পুতুলকে দিয়ে দিতে হলো। হলাম সমবয়সি, কিন্ত সম্পর্কে তো মামা।

সেই তরুণির পরিচয় না দিয়েই, বুবু বললেন, " মা তুমি তোমার বাচ্চু মামাকে খাবার তুলে দাও। " গণভবনের খাওয়া বলে কথা। কি নেই সেখানে। বাঙালি, ইন্ডিয়ান, পাকিস্থানি, চাইনিজ, ইরানি আরবি সব রকম খাওয়া। আমি শুধু বললাম, আরে বুবু ব্যাস্ত হইয়ো না তো।

তুমি বসো। তোমার উপর দিয়া তো অনেক ঝামেলা যাইতাছে। " আর কইস না ভাই। ঈদ তো না, যেন হাজারো মানুষের সাথে দাত কেলাইয়া থাকা। কি করমু? উপায় তো নাই।

" "বুবু তোমারে অনেক সুন্দর লাগতাছে। শাড়িটা কই থেকে কিনছো?" শুনে উনি অনেক খুশি হলেন। "আর সুন্দর। তোগোও যে কথা না। এই বুড়া বয়সে সুন্দর কি বান্দর কি ! আমি কি সারাজীবন শাড়ি কিন্না পড়ছি? শাড়িটা ওই মামনিটা গিফট দিছে।

" বলে ঐ তরুণীটার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করলেন। "বাচ্চু, তুই ভাই, খাওয়া শুরু কর। এই ফাকে তোর সাথে একটু আলাপ কইরা নেই। জানোসই তো ঈদের দিন। এক ফোটা টাইম নাই।

" এর পর পুতুল আর তরুণীকে বললেন, যাও মা তোমরা অন্য অতিথিদের দেখভাল করো। আর মেজর সোহেলরে বলবা, যেন ১০ মিনিট কেউরে ভিতরে ঢুকতে না দেয়। "এই মেয়েটা কে বুবু? চিনা চিনা লাগে। " "তোর তো চেনার কথা না। এইটা ফারুকের মেয়ে।

খুব লক্ষ্যি। আমার খুব পছন্দ। শোন কানে কানে কই, আমি চিন্তা করছি এরে আমার ঘরের বৌ বানামু। " "অ্যা ! কি কও বুবু? জয়ের না বউ আছে?" "আরে ধুর ! পোলাটারে বিয়া দিয়া শান্তি পাইলাম না। পয়লা কই থেইখ্যা শিখ মাইয়া ধইরা আইনা কয় বিয়া করুম।

ওইটারে কোনমতে সরাইলাম। এর পর এই সাদা বেটি ! না জানে আদব লেহাজ না জানে কিছু ! জানোস ! আম্রিকায় গেলে বেটি আমারে পাত্তাই দিতো না। অফিস অফিস কইরা গায়েব। হাজার আমি দেশের প্রধানমন্ত্রি, আমি তো শাশুড়ি নাকি? ওই হিসাবে আমার ইজ্জতের দাম আছে না? " "ঠিকই কইছো বুবু। ঐ সব বিদেশি মিদেশি দিয়া আমাগো চলবো না।

তো বাজারে যে কথা আছে যে আমগো ভাইগ্নার লগে ওই বিদেশি বেটির নাকি ছাড়াছুট্টি হইয়া গেছে কথাটা তাইলে ঠিক। " "ঠিক। তয় এই সব কথা ৫ কান করার দরকার নাই। " "তো দেশের এত্ত এত্ত মাইয়া থাকতে ফারুকের মাইয়ারে কেন? শুনছি তোমার দয়ায় কোটিপতি হওয়ার আগে, ওর ফেমেলি খুব ভালো ছিল না। " "আমার দয়ায় কস ক্যান ভাই? জয় দেশে আসলে এই ফারুকই ওর মাইয়ারে আমার পুলার পিছে লেলাইয়া দিছিলো।

ফারুকের ১৪ গুস্টিরে ট্যাকা কামানোর লাইন কি আমি দিছি? সব তোর ভাইগ্নার কেরামতি। নারী জাতির ছলনায় পইড়া আমার পুলা আমারই বদমান কইরা ছাড়লো। " বলেই চোখ মুছলেন বুবু। "আরে করো কি করো কি বুবু? এই ঈদের দিনে চোখের পানি ফালাও কেন?" "সবই আমার কপাল। বিয়ার আগেই এই।

বিয়ার পর ফারুক তো আমার বাপের কবরটাও বেইচা দিবো। যদি পারোস কিছু কর। যাতে এই বিয়াটা না হয়। " "ধুরো তুমি চিন্তা কইরো না তো বুবু ! তোমার হাতে কি লুকজনের অভাব। " "বাচ্চা পোলাপানের মত কথা কইস না রে ভাই।

লুকজনরে দিয়া কিছু করাইলে আমার কি হাল হইবো বুঝতে পারোস? শেষে দেখা যাইবো, সেলিমের মত ফারুকও আমার বিরুদ্ধে চুরির সাক্ষি দিবো। ক, যার লেইগা করি চুরি সে কয় চোর। " "হুম। আচ্ছা দেখি, কি গিরিঙ্গিতে ফেলানো যায়। অহন চোখ মুছো বুবু।

" "আরেকটা কথা বাচ্চু। এরশাদদের পাঠাইলাম দিল্লিতে। আর ওই ব্যাটায় গিয়া নিজের মতলব হাসিল কইরা আইলো। আর এই মালুগুলিরও চরিত্র নাই। ওগো জন্য কি না করছি আমি।

আর আমার বিরুদ্ধেই এরশাদরে তাল দিলো?" "আরে এরশাদ তো তোমার আর ভাবির খুটিতে বান্ধা। উল্টা সিধা কিছু দেখলে ভিতরে ভড়তে কতক্ষন। " সত্যিকারের হাসি ফুটে উঠলো বুবুর মুখে। "কথাটা খুব ভালো কইসোছ। আমি তো ভুইলাই গেছিলাম।

যাউক তুই খা। আমি যাই দেখি ওদিকে কি হাল। " " আমিও উঠি বুবু। দোয়া রাইখো। " ঘর থেকে বের হতেই শয়তানের সাক্ষাত।

কাগু বেশ হাসি খুশি। আমাকে দেখেই ঈদের কোলাকুলি। "হাই ইয়াং ম্যান। ঈদ মুবারাক। হাউ আর উ?" "আমি তো ভালো।

কিন্তু আপনের চরিত্রের তো বদল নাই। এতদিন তলে তলে প্রনব আর মনমোহনের পাও চাটছেন। এখন দেখি পুরো ওপেনই। দুই কান কাইটা আপনি পুরাই বেহায়া। " এরশাদ পুরা শকড।

আমি ভাগার তাল করলাম। বুড়া হলেও মিলিটারি। থাবড়া খেলে আমি গেছি। তাছাড়া এখানে ডিউটি করা মিলিটারিদের মধ্যে ওর জুনিয়ারও অনেকে আছে। ওদের কানে খবর গেলে, আমাকে তক্তা বানিয়ে দেবে।

কিন্ত এত ভীড়ের মধ্যে পালাবো কই? কোনমতে ওখানেই একটা ঘর দেখে ঢুকে পড়ে, দরজা আটকে দিলাম। বেশিক্ষন না, ঠিকই মিলিটারিরা চলে এলো। এসেই বিশাল বিশাল ধাক্কা। আর হুংকার। আমার খবরই আছে।

মনে মনে আল্লা বিল্লা করছি। দরজার বাইরে দেকি নারী কন্ঠেরও হুংকার। আজকাল শুনি আর্মি আর পুলিশেও মহিলা আছে। ওরা নাকি পুরুষদের চেয়েও ভয়ংকর। আমার কি হবে? ধাক্কার চোটে দরজা খুলে গেলো।

চোখ খুলে দেখি মা। " কি ব্যাপার? এতক্ষন দরজা ধাক্কালাম, খুলিস না কেন? এই রকম মাতালের মত কেউ ঘুমায়? যা ওঠ একটু বাজারে যা। ঘি পোলাওয়ের চাল আর মুরগি নিইয়ে আয়। কাল ঈদ রান্না বান্না করতে হবে না?" "ও হ্যা। আচ্ছা টাকা আর ব্যাগ দাও, বাজারটা সেরেই আসি।

" ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.