আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চ্যাটিং স্টোরী: ধ্বক্

'কেমন আছেন?' ইয়াসমিনের মেসেজে আমার বুকটা ধ্বক্ করে উঠল না। সম্ভবত আর কোনদিনও চ্যাটিং বক্সে তার কোন মেসেজ আমাকে হঠাৎ করে জাগিয়ে দেবে না, বুকের ভেতর ধক্ করে একটি পালস বিট মিস করাবে না। সাধারণ আর দশটা মানুষের ক্ষেত্রে যা হয়, তার মেসেজগুলো স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করবো আমি। 'ইয়াসমিন নাকি? কেমন আছেন? আমি ভালো, আলহামদুলিল্লাহ' ইয়াসমিনের সাথে আমার পরিচয় বছর দেড়েক আগে, ব্লগিং সূত্রে। সামহোয়্যারইনব্লগে কিংবা আমার পার্সোনাল ওয়েব দারাশিকো ডট কমে লেখা পড়ে অনেক পাঠকই ফেসবুকে আমাকে খুজে বের করে নেয়, ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়।

ইয়াসমিনও পাঠিয়েছিল। তারপর বিভিন্ন সময়ে অনলাইনে কথাবার্তা-আড্ডাবাজি, আরও অনেকের সাথে যেমন হয়। 'অনেকদিন পর --- অনলাইনে পাওয়াই যায় না আপনাকে' 'আমি ইরেগুলার, বসা হয় না তেমন একটা। কিন্তু আপনাকেও তো পাওয়া যায় না। ' 'অফলাইনে থাকা হয় বেশীরভাগ।

' 'তাই? কতদিন ধরে অফলাইন?' 'তিন মাস হচ্ছে। মাঝে মধ্যে অনলাইন হই। আজও তাই আর আপনিও নক করলেন। ' ইয়াসমিনের সাথে আমার শুরুর দিকের কথাবার্তাগুলো এরকমই ছিল - হালকা পাতলা, কথার পিঠে কথা, অগভীর। সপ্তাহে হয়তো একবার কিংবা দুবার।

তারপর সপ্তাহখানেক হয়তো বন্ধ অথচ দুজনেই অনলাইন। তারপর আস্তে আস্তে ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ল, কথাবার্তা ভারী হলো, কঠার পিঠে কথা নয় বরং বিষয়ভিত্তিক আলোচনা, সেখানে ফিল্ম ও ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, এপার বাংলা ওপার বাংলার সাহিত্য, ধর্ম, সাম্প্রতিক রাজনীতি, নানারকম স্ক্যান্ডাল নিয়ে কথা বার্তা তো হতই, আরও হত জীবন নিয়ে কথা - ফিউচার প্ল্যান, প্রেম-বিয়ে-সংসার, নৈতিকতা অনৈতিকতা ইত্যাদি ইত্যাদি। এই গভীর আলোচনাই ধীরে ধীরে বুকের ভিতর কলজেটাকে দুর্বল করে দিল। অনলাইনে না থাকলে মনমরা থাকে, নক করলেই ধ্বক্ করে উঠে। কোন এক সাহিত্যিক বলেছিলেন - যাকে তুমি ভালোবাসো তাকে দেখলেই তোমার ভেতর ধ্বক্ করে উঠবে।

অদ্ভুত! মোহনীয় সে! 'কেমন চলছে আপনার চাকরী?' 'চলছে। রমজান মাস, প্রেশার যাচ্ছে। আপনার পরীক্ষা শেষ?' 'হুম। ' 'গ্রাজুয়েট হয়ে গেলেন?' 'উহু। থিসিস সাবমিট করলাম গত পরশু।

ঈদের পর ভাইভা। তারপর। ' 'মাস্টার্স করবেন তো?' 'হুম। ' আমি টুক করে ইয়াসমিনের প্রোফাইলে ঘুরে এলাম। সিঙ্গল।

অবশ্য এই রিলেশনশীপ স্ট্যাটাস খুব বিশ্বাসযোগ্য নয়। আমার এই ফ্রেন্ডলিস্টে অন্তত এক ডজন বন্ধু আছে যারা বিয়ে করেছে বছর খানেক হয়ে গেল, কিন্তু স্ট্যাটাস এখনো সিঙ্গল। আমার স্ট্যাটাস শুরু থেকেই সিঙ্গল, কখনোই পরিবর্তন করিনি। ইয়াসমিনকে দেখলেই বুকের ভেতরে যখন থেকে ধ্বক্ করে উঠতে লাগল, তখন স্ট্যাটাস পরিবর্তন করে 'ইটস কম্প্লিকেটেড' লেখা যেত কিন্তু আমার আগ্রহ হয় নি। বরং তখন থেকেই আমি অপেক্ষা করে আছি - চাকরীটা পেয়ে গেলেই তাকে প্রস্তাবটা দেবো - প্রেম নয়, বিয়ে।

যোগ্যতা থাকলে প্রেম করে সময় ক্ষেপন কেন? 'ঈদ বরিশালেই করবেন?' 'হুম। আপনি বাড়ি যাচ্ছেন কবে?' '১৪ তারিখ নাইটে। মেজো ভাই গাড়ি নিয়ে যাচ্ছে, আমাকে পিক করে নেবে এখান থেকে। ' 'কতদিনের ছুটি?' 'লম্বা ছুটি। দশ দিন।

' 'বাহ। ঘোরাঘুরি হবে?' 'প্ল্যান আছে। আশে পাশের তিনটা জেলা ঘুরে দেখার প্রস্তুতি নিচ্ছি - দেখা যাক কতটুকু পারি। ' 'সিনেমা নিয়ে লিখবেন না?' 'অবশ্যই। 'সে আমার মন কেড়েছে' নিয়ে লিখবো ভাবছি।

' 'তিন্নির সিনেমা?' 'হুম। ' আমি জানি না কিভাবে যেন হঠাৎ আমাদের এই কথাবার্তা বন্ধ হয়ে গেল। ইয়াসমিন দুম করে অফলাইনে চলে গেল। আমি যে চাকরী পেয়েছি সেটা তাকে জানাতেই পনেরোদিন পার। ইয়াসমিনের ফোন নাম্বার আমার কাছে নেই, প্রয়োজন হয় নি কখনো।

আমি সারাদিনই অনলাইনে থাকি। ২৪ ঘন্টা। কিন্তু ইয়াসমিন অনলাইনে এল না। আমার অফলাইন মেসেজের রিপ্লাই ও দিল না। একদিন এল।

সামান্য কথাবার্তার পরেই চলে গেল। চাকরীর খবর শুনে কনগ্রাচুলেশন্স দিল, অন্যরা যেভাবে দেয়। আবার দেখা হল অনলাইনে, অনেকদিন বাদে, তেমন জমলো না। কিন্তু আমার বুকের ভেতর ধ্বক্ বন্ধ হল না। ইয়াসমিনের সাথে এত অল্প সময় কথা হতো যে তাকে কিছু বলার পরিবেশটুকুও তৈরী হত না।

অদ্ভুত! খুবই অদ্ভুত!! 'কাজ শেষ হলো? শোবে না?' 'এই আরেকটু। ' সমকালে প্রকাশের জন্য বলিউডের অ্যাকশন সিনেমাগুলো নিয়ে একটা লেখা তৈরী করেছিলাম বেশ কিছুদিন আগে। সেটাই এবার ঈদের সময় ব্লগে দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ঈদে লিখালিখির জন্য খুব বেশী সময় পাওয়া যাবে না, পরিবারের সবার সাথে দিনের বেশীরভাগ চলে যায়। পাঠকের জন্য ঈদ গিফটের আগাম প্রস্তুতি।

সাজানো শেষ, এখন পাবলিশ বাটনে ক্লিক করলেই হবে। 'ইয়াসমিন এবার যাই, ঘুম পাচ্ছে। ' 'ওকে। ' 'ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।

' 'বাই। ' আমি 'গো অফলাইন' এ ক্লিক করলাম। আমার ঘুম পাচ্ছিল না, তবে ঘুম দরকার। সকালে উঠতে হবে। রাতে ঘুমিয়েছি দেরী করে।

আড়াই ঘন্টা ঘুমিয়ে সেহরীতে উঠে খেয়ে নামাজ পড়ে ব্লগটা সাজিয়ে নিচ্ছিলাম। লাবনী সব গুছিয়ে এই মাত্র শুয়ে পড়েছে। শার্লক টিভি সিরিজ ডাউনলোড চলছে, তাই শুধু মনিটরটা বন্ধ করলাম। লাবনী গুটিশুটি মেরে চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল। আমি ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লাম।

লাবনী হাতটা জড়িয়ে ধরে একটু সরে আমার গভীরে ঢুকে পড়ল। ========= আমি বাদে বাকি চরিত্র কাল্পনিক/নাম পরিবর্তিত। ইয়াসমিনের খোজে ফ্রেন্ডলিস্ট ঘুটা দেয়ার দরকার নাই। ধন্যবাদ। - দারাশিকো ========== চার বছর হয়ে গেল ব্লগিং করছি।

নিজেরই অবাক লাগে। যখন শুরু করেছিলাম সে সময়কার জনপ্রিয় ব্লগারদের খুব অল্পই এখন ব্লগিং করেন। তাই প্রতিটা ব্লগ লিখলেই মনে হয়, না টিকে আছি এখনো। আরও অনেকদিন টিকে থাকতে চাই। সবাইকে স্বাগতম দারাশিকো'র ব্লগে।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।