আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দিল্লী কা লাড্ডুর গল্প!!!

কিছুই নাই। জানতে চাইয়েন না। কারন,খেলতে খেলতে খেলোয়াড় হয়। আর আপনি জানতে চাইলেই হবেন জানোয়ার :-পি প্রথম কিস্তি... এটি একটি Break up hobar golpo :-) আজ(০৫.০৮.২০০৮) ওর শেষ পরীক্ষা সম্ভবত। আজকে যদি ওর দেখা না পাই তবে আর জীবনেও পাবো না।

এমন একটি আশা নিয়ে খুব জিদ করে যাই নিউ মার্কেট এ দেখা করতে। ওর সাথে দেখা হয়নি দীর্ঘ সাত মাস। ওর ক্লাসমেট ২ টা থেকে জানলাম আজকেই ওর পরীক্ষা শেষ এবং আজকের পরিক্ষার পরেই মনে হয় ওর ফ্যামিলি ওকে ট্রান্সফার করে চিটাগাং নিয়ে যাবে। এইসব আমি শুনেছি ওর ক্লাসমেট দের থেকে। মনের ভিতরে তো আরও ভয় ঢুকে গেল।

শালা,প্রেম করছে আমার সাথে,বিয়া হবে অন্যের সাথে। তা কিভাবে হয়? আজকে যেভাবেই হোক তুলে নিয়ে আসমুই ওরে। আমার একটা ফ্রেন্ড ও যাবেনা আমার সাথে। কারন ইডেন কলেজের সামনে কোন ঘটনায় তারা জড়াতে চায়না। জানে,কপালে শনি আছে তাদের এবং আমার যদি ধরা পরি।

ওর সিট পরেছে ঢাকা কলেজে। যেহেতু ও ইডেনের ছাত্রি। ঠিক ১ টায় পরীক্ষা শেষ হবে জানি। আমিও ওকে দেখায় আশায় সকাল থেকে না খেয়ে চন্দ্রিমা মার্কেটে সিগারেট একটা পর একটা মুখে নিয়ে দারিয়ে আছি। কখন যে আসবে ও।

১ টা বেজে গেছে। সব বের হচ্ছে ঢাকা কলেজ থেকে। আমি জানি ওকে চন্দ্রিমার সামনে দিয়ে যেতে হবে। যেহেতু ওকে যেতে হবে প্রতিদিনের মতই ফাল্গুনে করে রামপুরা মামার বাসায়। ১ টার পরে দেড়টা বেজে গেছে।

এখনো সেই আসছেনা। দিলাম Turjo রে কল। কিরে ব্যাটা এতো মাইয়া রে বের হইতে দেখি ওরে দেখিনা কেন?ও বলে,দেখ ভিড়ের মধ্যে তোর চোখ ফাকি দিয়ে চলে গেল কিনা। আমি বললাম,ওর আগা ছে গোঁড়া আমি চিনি। ও বোরকা পরুক আর নাই পরুক আর তালেবানি মহিলাদের মত পুরো শরীর ও যদি ঢিলা-ঢালা বোরকা দিয়ে ঢেকে আসে তবুও আমি হাজার মেয়ের মাঝে থেকে বেঁছে নিবো।

:-) ২ টা দশ বেজে গেছে। হঠাৎ দেখি তাহার মতই কেউ একজন আমার নজরে পরছে। সাথে ৩/৪ টা ইবলিশ টাইপ মাইয়া মানুষ। আমার জানা আছে এইগুলারে ভালো করে। তবে নেই একজন জল্লাদ নারী ওর ক্লোজ ফ্রেন্ড "জেরিন"।

এই মহা সুযোগ তাহলে। কেউ আমাকে আজকে আঁটকাতে পারবেনা। ঠ্যাং তো পুরাই কাপাকাপি শুরু হয়ে গেল। পিছু পিছু হেটে যাচ্ছি এই দলের সাথে ফাল্গুনের কাউন্টার এর দিকে। ঠ্যাং কাপাকাপি মাঝেও কল দিলাম আবার তুর্য রে।

কিরে ব্যাটা আমার তো এই অবস্থা। ও সামনে দল নিয়ে হাঁটছে। আমি পিছু পিছু যাচ্ছি। তখন আমি কেদেই দিলাম ওকে এত মাস পরে দেখতে পেয়ে। তুর্য আমাকে একটু সাহস দিয়েই কল কেটে দেয়।

নিলখেত মোড়ের কাছে যেয়েই ওর ফ্রেন্ড রা রাস্তা পার হতে যেয়েই পেছনে তাকায় আর আমাকে দেখে ফেলে। দেখেই ওকে বলে দেয়,দেখ প্রিয়া,ইউসুফ তোর পেছনে। :-O ও আমার দিকে এমন ভাবে তাকায় যেদিন ওর সাথে আমার প্রথম দেখা হয় সেদিন যেমন ভাব নিয়েছিল আজকেও তেমন ভাব নিয়ে তাকিয়ে বলে,তুমি এখানে?কেন আসছ?চলে যাও এখান থেকে। নাহলে অবস্থা খারাপ হবে বলে দিলাম কিন্তু। এইসবে কি আমি আর তোয়াক্কা করি? ততক্ষনে উনার ফ্রেন্ড রা ভাগছে আমাকে দেখেই।

৫/৬ মিনিট রাস্তা পার না হয়েই বক বক করলাম দুজনেই। রাস্তা পার হয়ে ফাল্গুনের কাউন্টারে আর ওর যাওয়া হয়নি যেহেতু আমার হাতে ধরা পরছেই। কাউন্টার এর একটু আগেই শুরু হল দরবার দীর্ঘ ৭ মাসে যা যা অপকর্ম আমার দ্বারা হয়েছিল তার। এভাবেই তর্কাতর্কী তে সময় চলে যাচ্ছে। আমিও ওকে আজকে তুলে নিয়ে যাবই যাব।

কিন্তু আমি একলা। কিভাবে সম্ভব?বন্ধুদের ফোন দিলেও লাভ হচ্ছেনা। কেউ এই নিলক্ষেতের মোড়ে আসবেনা গেঞ্জাম করতে। ঠ্যাকা তো আমার। আমাকেই করতে হবে।

ওদের কথা,তুই কোনোরকম চিটাগাং রোডে নিয়া আয়। বাকি সব আমরা করবো। যাক,এই তর্কাতর্কী তে অনেক পাব্লিক এসে নাক গলাইছে। ভাই,কি হচ্ছে এইসব?বাসায় নিয়া যান। যা করার ওখানেই করেন।

আমি জবাব দিলাম,যায় না তো ভাই। গেলে তো এত কিছু হয়না। :-D ওর কথা,ও আমার সাথে যাবেই না। আসল কাহিনি হচ্ছে (অনেক দিন পরে জানলাম),আজকে ওকে ওর মামার বাসায় কোন একজন টাক মাথার এডভোকেট(চোর জাতি) ওকে দেখতে আসবেন। তাই উনার মন পরে আছে সেখানেই।

সেইদিন যদি আমি তাকে ছেড়ে দিতাম তবে আজকে সেই ব্যাটার বউ হইত সে। :-( সময় হয়ে গেছে বিকাল ৪ টা। সেই এক জায়গায় ই দুজনে দারিয়ে বক বক করেই যাচ্ছি। ও তো যাবেইনা। আর আমিও তাকে ছাড়া যাবোইনা।

অনেক সিএনজি কে ডাকলাম কিন্তু কেউই যাবেনা চিটাগাং রোডে। তাহলে উপায়?বোরাকে যেতে হবে। বোরাকের কাউন্টার রাস্তার ঠিক ওপারেই। ওর হাত ধরেই আছি আমি। ছেড়ে দিলেই পাখি উড়াল দিবেই মাস্ট।

:-D জোড় করে রাস্তা পার করালাম। রাস্তার দুপাশ থেকে মানুষজন দেখেই হাসাহাসি করতেছে। কি অবস্থা। :-O ওকে হাতে ধরে নিয়ে আসলাম গার্হ্যস্থ অর্থনীতি কলেজের গেটের সামনে। ওখানেই কাউন্টার।

গাড়ির জন্যে অনেকেই দারিয়ে আসছে। আমিও দাঁড়ালাম। আর উনি ভেগে যাওয়ার চিন্তা করতেছে। :-D আমি মানি ব্যাগ ১ হাতে নিয়ে টাকা দিলাম কাউন্টারে টিকিটের জন্যে। অন্য হাতে সে।

আমি ১ হাতে টিকেট আর মানি ব্যাগে টাকা রাখতে পারছিলাম। তাই মানিব্যাগ টা টেবিলে রেখে ১ হাতে টাকা ঢুকাচ্ছি মানিব্যাগে। এই ফাকে উনি চান্স পেয়ে দিছে পাম্পের দিকে দৌড়। আমিও মানিব্যাগ ফেলেই দিলাম দৌড় উনার পেছনে পেছনে। উনাকে ধরে নিয়ে আসলাম আবার কাউন্টারে।

এসেই দেখি মানিব্যাগ ঠিক মতই আছে। কারন কাউন্টারের আশেপাশের সব আমার ব্যাপারে এতক্ষনে আন্দাজ করে ফেলেছেন। যাক গাড়ি আসলো। উনি গাড়িতে ও উঠেনা। সবাই উঠে গেল।

আমি ২ টা সিট রেখে দিলাম আগে থেকে চিৎকার দিয়ে। উনাকে কোলে নিলাম। নিয়ে কোন রকম গাড়িতে উঠে বসলাম আর গাড়ি ছেড়ে দিল। সব মানুষ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আমদের দিকে। :-O যাক,চিটাগাং রোডে এসে নামলাম আর পাশের একটি পরিচিত চাইনিজ রেস্টুরেন্টে আমার বন্ধুরা অপেক্ষমান আমাদের জন্যে।

সেখানে শুরু হল আরকটি দরবার বন্ধুদের নিয়ে। সে আমাকে বিয়েই করবেনা। এর মুল কারনঃ মাঝের ব্রেক আপ সময়ে তার ফ্যামিলির সাথে আমার অনেক বড় ঝামেলা হয়েছে। আমারই ভুল হয়েছে। অনেক হাঙ্গামা গেছে এই ৭ মাসের প্রথম ৩ মাসে যা ও জানতোনা।

এবং ও জানতে পারে অনেক পরে। আমার এই ভুলের প্রাঃশ্চিত্ব আমি আজো করছি। জানিনা কবে এর ক্ষমা আমি পাব। :-( যাইহোক,সন্ধ্যা ৭ টায় এই দরবার শেষ হয় তাকে রাজি করিয়ে যে আমাকে বিয়ে করবে। এর মাঝে তার মামা আমাকে ফোন দিয়ে বলেছিলেন,আমার ভাগ্নিকে সুস্থভাবে আমার বাসায় নিয়ে এসো।

নাহলে তোর... ব্লা ব্লা ব্লা । :-D আমি কি আর এইসবে কান দেই? ততক্ষনে উনি আমার নামে লালবাগ থানায় মামলা দিয়ে দিছেন। এটাও প্রিয়া নিজেই তুলে নেয় প্রায় ১ মাস পরে। এর মাঝেই পালিয়ে ছিলাম নিজের এলাকায়ই। আমিও ভয়ে ফোন অফ করে দিইলাম।

সিম চেঞ্জ করলাম কয়ক দফা। কারন আমার সব নাম্বার তার গোস্টির কাছে আছে। চলে গেলাম অনেক দূরে এক বন্ধুর বাড়ীতে। সেখান থেকে কাল আসব শহরে বিয়ে করতে। :-D লেখাটির প্রথম প্রকাশ আমার ফেসবুক দেওয়ালেই :-D দেখতে হলে এখানে ক্লিক করুন ▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬ দ্বিতীয় কিস্তি... ডেট লাইন ০৬.০৮.২০০৮ থেকে... কাল রাতে বাহিরে ছিলাম।

কারন,এক বন্ধুর বাসায় রাত্রিযাপন হয়েছে। গতকালের ঘটনা তো অনেক মজায় মজায় পড়লেন। আজকে হয়তো তা আর থাকবেনা। কারন কালকের টা রোমাঞ্চকর গল্প হলেও আজকের তা হরর এর মত এবং এর চেয়েও ভয়ঙ্কর। কারন এইটা একটা লাইফ এবং এর যে কত রকমের অর্থ আছে তা যে যার অবস্থানেই ভালো উপলব্ধি করতে পারবেন।

যাক,একটা আশ্চর্যের কথা হচ্ছে,কাল যখন ওকে আনতে গিয়েছিলাম ওর কলেজের ওখানে তখন আমার পকেটে টোটালি তিনশো টাকার মতই ছিল। সব খরছ করে যখন চিটাগাং রোডে আসি এবং চাইনিজ রেস্টুরেন্টে দরবারে বসি তখনও আমার পকেটে একশো বা এর বেশি কিছু টাকা ছিল। আজকে একদম ফুরুত হয়ে গেছি আমি। আবার আজকে নাকি বিয়া করুম!!!! এখান থেকে বিদায় নিয়ে আবার চিটাগাং রোডের দিকে আসলাম। ওকে চিটাগাং রোডে এক বন্ধুর স্টুডিওতে বসিয়ে রেখে বাসায় আসলাম ড্রেস চেঞ্জ করতে।

ড্রেস চেঞ্জ করলাম আর বাসায় মিথ্যে বলে বের হয়ে গেলাম। কাল রাতে কোথায় ছিলাম এবং আজকে কোথায় যাচ্ছি এইসব আর কি। আজকেও অফিসে জাচ্ছিনা কেন এইসবে কান দিলাম না। শুধু ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম পাগলের মত। কারন আমার জন্যে আরেকজন অধির অগ্রহে বসে আছেন।

পকেত সম্পূর্ণ খালি। কাল তো বন্ধুদের থেকে নিয়েই চলছি। আজকেও অন্য বন্ধুদের খোঁজে বের হলাম এবং পেয়েও গেলামএকজন বন্ধু আমার অনেক হেল্প করেছে। জাকির এইসবে আবার পটু। ওকে দিয়ে হিসেব করলাম কাবিন/টাবিন এর টাকা কত লাগতে পারে?হিসেব করে জোগাড় করেই ওর কাছে আসলাম।

দুইজনেই বিয়ের জন্যে স্টুডিওতে ছবি তুললাম পাসপোর্ট সাইজের। তারপর বের হয়ে জাকির সহ চলে গেলাম নারায়নগঞ্জ কোর্টে একটা সিএনজি তে চেপে। যেতে যেতে ওর সাথে ফয়সালা করলাম কত কাবিন দিবো বা বিয়ের ব্যাপারে। ওরে বাপরে!!!!!!! কোর্টে যেয়ে দেখি কত ছাগল আমার মত দাঁড়িয়ে আছে এইসব ছাগলামি করতে। আমি দেখেই তো টাস্কি খাইলাম।

জাকিরের পরিচিত উকিল ছিল। বাহিরে বসে বসে দুজনে গল্প করছিলাম। আর জাকির বিয়ের প্রস্তুতির কাজে বিজি। আমি কাল থেকেই সিম চেঞ্জ করে ফেলায় কেউ আমাকে পাচ্ছেনা। এটা আমার মাথায়ই নেই।

আমি তো এখন নতুন স্বপ্ন নিয়েই আছি। :-D সময় তখন বারটা ওভার হয়ে গেছে। এক মহুরি বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে গেল। অনেক আগের ক্লাসমেট ছিল সে। যে কিনা এই কাজ করেই বিয়ে করেছে।

সে আমাদের দেখেই বুঝে গেছে। :-D ওকে কোন রকম লাম ছাম বুঝিয়ে বিদায় দিলাম। দুপুর একটায় উকিল দেকে পাঠালো আমাকে। - দেখেন,কোন গেঞ্জাম আছে কিনা যে এই মেয়ে কে বিয়ে করতে আনছেন? - কি বলেন?গেঞ্জাম কেন থাকবে?আর আপনি এইসব কেন বলছেন? - আরে নাহ ভাই। মেয়ে ঠিক আছে তো,তাকে যে আপনি বিয়ে করতে আনছেন? - আবার জিগায়।

আপনার কি মাথা ঠিক আছে নাকি?আপনার কি মনে হয় আমি পাগল? - বলেন কি?পাগল না হইলে কি এইখানে বিয়ে করতে কেউ আসে? এই কথা বলে উনি হেসে দিছে। আমি :-D - না না সে রাজি আছে। - আবার দেইখেন,ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে যদি মেয়ে উল্টা-পাল্টা কিছু করে তাইলে আপনি,আমি,জাকির সহ সব চৌদ্দ শিখের ভেতরে ঢুকে যাবো কিন্তু। - হায় হায়। নাহ এমন কিছুই হবেনা।

(মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ ডাকি যাতে প্রিয়া উল্টে না যায়। কালকে অনেক কষ্ট হইছে তাকে রাজি করাইতে ) - যাক তাহলে একটু পরে আমি ডাকছি আপনাদের। - আচ্ছা ঠিক আছে। অপেক্ষায় রইলাম জীবনের অন্য রকম একটি মঞ্চে উঠার। মনের ভিতর যে কি উল্লাস টা হয়তো কেউই বুঝবেন না।

কিন্তু এর পেছনেই আছে প্রচণ্ড ভয়। এক্সময় ডাক পড়ল আমাদের। গেলাম ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে। জাকির সমস্ত কাগজ পত্রের ব্যাবস্থা করে ফেলছে। আমরা শুধু গিয়ে বসলাম ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে।

বসেইতো আমার হাত-পা কাঁপা-কাপি শুরু হয়ে গেলো। সত্যি বলছি। ম্যাজিস্ট্রেটের প্রিয়াকেই জ্জিজ্ঞেস করলেন,আপনার পরিচয় পত্র বা আপনার আঠারো বছর হয়েছে কিনা। প্রিয়া তার ইডেন কলেজের আইডি কার্ড বের করে দেখায় এবং সাথে ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল এক্সাম এর প্রবেশ পত্র দেখায়। আমাকে বলে,আপনার?আমি বললাম,জি আমিও প্রাপ্ত বয়স্ক।

আমার মাথা পুরাই টাল হয়ে গেছে এই পরিস্থিতিতে। কি থেকে কি বলব মাথায় কিছুই ঢুকছেনা। তারপর কি কি যেন লেখালেখি করল এফিডেভিট পেপার/কাবিন নামা/স্ট্যাম্পে। দুজনের ছবি সহ এটাচ করল স্ট্যাম্পে। দুজনের সাইন নিবে এবার।

আমার হাতে কলম ধরিয়ে দিয়েছে উকিল। বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা,আমি আমার মায়ের জন্যে জীবনেও এত কাঁদিনি যতটা কেঁদেছি আজকে এই সাইন করতে যেয়ে কলম টা হাতে নিয়ে। আমার হাত কাঁপতে কাঁপতে সাইন ও হয়েছে বাঁকা। মা’কে অনেক মনে পড়ছে। এই ভেবে যে,জানিনা মা,তোমাকে খুসি করাতে পারবো কিনা তোমার এই পুত্রবধু দেখিয়ে।

আর তোমার অনুমতি ছাড়াই করছে এই বিয়ে। একই সাথে কান্না করছি প্রিয়ার কথা চিন্তা করে। সে ও ভেতরে ভেতরে না জানি কেমন অশ্রুসিক্ত হয়ে গেছে। কিন্তু বাহিরে তার কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে বলে,আপনি কাঁদছেন কেন?সসব সময় দেখে আসলাম মেয়েরা কাঁদে।

আর আজকে দেখছি ছেলেরা কাদছে। প্রিয়াও আমাকে সান্ত্বনা দিতে পারছেনা। আমি তখন তার ভিতরের টা দেখেছি। সে কেমন কান্না করছে ভিতরে ভিতরে। বিয়ের এই কাজ শেষে উঠে গেলাম বাহিরে।

তখনও কাঁদছি। জাকির ও আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। প্রিয়া চুপচাপ কাঁদছে। জাকির কে একটু পরে বিদায় দিলাম। এবার কোথায় যাবো দুজনে জানিনা।

আমার নতুন সিম থেকে প্রিয়ার বাসায় কল দিলাম যেন ও জানিয়ে দেয় যে সে বিয়ে করছে। ওর নানু কল ধরেছিলো। সে যে কি গালাগালি ওকে। ও বিয়ে করেছে এই কথা বলেই চুপ। ওপাশ থেকে কি কি বলছে আমি শুনেও না শুনার ভান করে আছি।

কি আর বলবে?কপালে যা আছে তাই হবে। কথা শেষে দুজনে গাড়িতে উঠে রওনা দিলাম আমার অফিসের দিকে। কারন আমার পকেট খালি। ওখানে যেয়েই বন্ধু ইঞ্জিনিয়ার হাসান এর সাথে দেখা করি এবং কিছু মেনেজ করি। ওখানে কয়েকজন কলিগ এর সাথে দেখা করতে করতেই সন্ধ্যা হয়ে গেল।

সেইদিন ছিলাম অফিসের পাশের একটি পরিচিত হোটেলে। পরের দিন অফিস করলাম ওকে হাসানের বাসায় রেখে। এর মধ্যে আমার বাসায় জানাজানি হয়ে যায় আমি এখন বিবাহিত। :-O তাও কিভাবে? প্রিয়ার বড় খালুর এক কলিগ আমার গ্রামের বাড়ির পাশের বাড়ির লোক। আই মিন আমার চাচাতো ভাই।

সেই আমাদের পুরো গ্রাম জানিয়ে দিয়েছে যে আমি অমুকের মেয়ে কে বিয়ে করছি। গ্রামের বাড়ি(চট্টগ্রাম) থেকে খবর আসে আমার নিজ বাড়ীতে(ঢাকায়)। প্রিয়া মামা কিভাবে যেন আমার বাবার মোবাইল নাম্বার জোগাড় করেছেন। জানিয়ে দিলেন বাবার ছেলের কর্মকাণ্ড। বাবার মাথা পুরাই সিক্সটি নাইন।

বাবার মতই ভয় পেতাম বড় ভাইকে। মাথা সিক্সটি নাইন বাবার মতই বড় ভাইয়ের টা। আমি কি আর এই দেশে থাকতে পারি এখন???? আবার শুনলাম,আমার গ্রামের বাড়ীতেই ছলে গেছে মামলার ওয়ারেন্ট। আজকেই চলে যেতে হবে অচিনপুর। :-D ওকে নিয়ে বন্ধুদের খবর দিয়েই চলে গেলাম নারায়ানগঞ্জ এর শেষ সীমানায় এক বন্ধুর নানীর বাড়ীতে।

বাবা কিভাবে যেন আমার নতুন নাম্বার পেলেন। আর কল দিয়েই গালির বয়ান করলেন। আমিও শুনেই যাচ্ছি। কিছুক্ষন পরে বললেন,পুলিশের ঝামেলায় আমি নাই। আমি তোকে ত্যাজ্য করে দিবো।

আমি তো মনে মনে বলি,বাবা আপনি তো জানেন না যে,খালেদা আফা এই সিস্টেম টা ডিলিট করে দিছে বাংলাদেশের সংবিধান থেকে। মনে মনে এই আশ্বাসে অনেক খুশিই ছিলাম আমি। আমার মত সেম কথাটা প্রিয়াকেও ওর নানী বলছিলো। আমিও সেম মন্তব্য করেছিলাম মনে মনে তখন। :-D এর পর পালিয়ে বেড়ালাম ৪/৫ দিন বিভিন্ন জায়গায়।

শুনছি এবং খবরও আসছে বাসা/এলাকা থেকে পুলিশ ও নাকি কয়েকবার এলাকায় এসেছে। বাসায় আসেনি। বন্ধুরা ট্যাকেল দিয়েছে। বাবার সামনে পুলিশ আসলে মনে হয় বাবার অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যেতো। কারন এর আগে কখন আমাদের ফ্যামিলি এইসবে জড়ায়নি।

এরমাঝে আম্মু ছোট ভাইকে দিয়ে আমাদের জন্যে বিভিন্ন জিনিস পাঠাতো যেখানে পালিয়ে ছিলাম। ছোট ভাইকে বন্ধুরা নিয়ে যেতো আমার সাথে দেখা করার জন্যে। তবে খুব সতর্ক অবস্থায়। বড় ভাই তো পুরাই হট আমার উপর। এর ১ দিন পরেই মাথায় জেদ চেপে বসে।

কেন আমাকে মেনে নিবেনা বা আমি কেন পালিয়ে থাকবো?ছলে গেলাম নিজের এলাকায় এবং এক বন্ধুর বাড়ীতেই নিচ তলায় ফ্ল্যাট ভাড়া(নাম কা ওয়াস্তে) নিলাম। দেখি কে কি বলে এখানে থাকলে। বাবা কেও নাকি অনেকেই কথা শুনায়। জেই শুনাবেন চাপা চাপার জায়গায় রাখমুনা এমন একটা জেদ কাজ করছে। কিন্তু এই বাসায় রাতে ঘুমানোর সময় পুলিশের ভয় ঠিকই থাকতো যদি রাতেই চলে আসে!!! মোবাইলে অনেক টাকা ঢুকিয়ে রেখে দিতাম যদি এমন হয় তবে সবাইকে কল করে ডাকতে হবে।

অবশ্য পুলিশ আসলেও এলাকার বাহিরে নিতে পারবেনা এটা সত্য। কারন,তেমন শেল্টার ও ছিল রেডি। :-D কাজের খাতিরে পুরনো সিম ওপেন করলাম। একদিন ফোন আসে লালাবাগ থানা থেকে। ওসি অনেক ভালো মানুষ তার কথায় বুঝলাম।

বলল আপনাদের কাবিননামা,নিকাহনামা আমাকে পাঠান কুরিয়ারে। এর দুইদিন আগে ছোট ভাইকে দিয়ে লালবাগ থানা থেকে মামালার ডুপ্লিকেট কপি আনিয়েছি। তখনও কিন্তু আমরা ইসলামিক দৃষ্টিতে স্বামী-স্ত্রি নই। কিন্তু আমাদের চলাফেরাও আল্লাহ দেখছেন যে আমরা কিভাবে ছিলাম। ইটস নত এ ম্যাটার।

নিকাহনামা কই পাবো?আসলে আমার তখন টাকার খুবই অভাব ছিল দেখে এই কাজটা বাকি ছিল। সেইদিন কিছু মেনেজ করলাম এক বন্ধু থেকে। সরাসরি আবার সেই কোর্টের কাজি অফিসে যেয়ে কাজ টি সারলাম ১৪ই আগস্ট ২০০৮ এ। অর্থাৎ আমাদের বিয়ে বার্ষিকী এই ১৪ তারিখ। :-D তারপর সেই কাগজ পত্র পাঠাইলাম থানায়।

ওসি বলল দেখা করতেই হবে আমাকে। আমার তো কলিজায় পানি নাই। একটা কথা না বললেই নয়। আমি কিন্তু বিয়ে করেছি আমার বড়জন আই মিন আমার মেঝ ভাইয়ের আগেই। সবাই আমাকে একটা কথাই বলে আর কথা শুনায় যে,তুই তোর বড় ভাইয়ের আগেই বিয়ে করে ফেলছস? আমার সোজা উত্তর,আরে ব্যাটা,জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে আল্লাহর হাতে।

জন্মের পরের দুইটা অংশের প্রথম টা আই মিন মৃত্যু টা যদি আমার মেঝ ভাইয়ের আগে হতে পারে তবে পরের অংশটা আমার মেঝ ভাইয়ের আগে হতে পারবেনা কেন? আশা করি আর কারো এই ব্যাপারে প্রস্ন থাকবেনা। বিয়েটাই আল্লাহর হাতে এটাকে মেনে নিতেই হবে। মেঝ ভাইয়ের সাথে এলাকায় দেখা হয় যখন তখন চিপায় চলে যাই। যদিও বড় ভাই তাই তার কাছে হাত জোড় করে ক্ষমা চেয়ে নিই। ক্ষমা পেলাম এক স্টেপ।

নেক্সট,আম্মু আসে সেই বাসায় হঠাৎ একদিন সন্ধার পরে। এসেই কান্নাকাটি করে। আমি আর প্রিয়া সালাম করেই মাফ চেয়ে নিলাম। আম্মু ওকে একটা রিং পরিয়ে দেয়। আর অনেক কাপড়-চোপড় ও আনে।

সাথে একটা বোরকা। :-O এর সাথে গৃহস্থালি জিনিস তো আছেই। এইসব আবার বড় ভাই আর আব্বু জানেনা। জানলেই আম্মুর খবর আছে। :-O যাইহোক,রমজান চলে আসে।

অনেক কষ্টে জীবন অতিবাহিত হচ্ছে নিজ পকেটের সামান্য টাকায়। দশ রমজানে বড় ভাই বাবার সাথে বাসায় আলাপ করলেন এই অবস্থায় থাকা যায়না। কিছু করতেই হবে। আমাকে ডেকে পাঠালেন এবং বড় ভাইয়ের একজন এডভোকেট ক্লাসমেট বন্ধুর ভিজিটিং কার্ড দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন। আমি আর প্রিয়া গেলাম সেইদিন লালবাগ থানায় বাবা সহ।

বাবাকে দেখেই ওসি অনেক সম্মান করলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। আমি সেখান থেকে পালিয়ে ইফতারির পরে মসজিদে আল্লাহ আল্লাহ করছিলাম। ওসি বাবাকে বললেন,আপনার ছেলে দাকুন। আমি কিছুই করবোনা তাকে। আমি আসলাম ওসির সামনে।

তারপর বললেন,শুধু মাত্র বাদী(আমার মামা শ্বশুর) এবং আপনার বাবার সম্মানে আমি আপনাকে এরেস্ট করছিনা। তবে আপনি বাদীর(আমার মামা শ্বশুর) সাথে ফোনে খুব খারাপ ব্যাবহার করেছেন,এটা ঠিক হয়নি। আমি জানি আপনার মন-মেজাজ তখন কেমন ছিল। কারন আমিও এই পথের পথিক। :-D:-D :-D (তখন আমি মনে মনে হাসছিলাম অনেক) আমি আপনাদেরকে ছেড়ে দিচ্ছি এখন।

কাল সকালে কোর্টে আসবেন আপনি (প্রিয়াকে বললেন)। এসেই ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে বিস্তারিত বললেই মামলা খালাস হয়ে যাবে। পরের দিন আমরাও রিস্ক না নিয়েও ভাইয়ার সেই এডভোকেট বন্ধুর দ্বারা মামলা খালাসের বেবস্থা করে ফেললাম। সকাল দশটায় ভিকটিমকে (প্রিয়াকে) মহিলা ম্যাজিস্ট্রেট(খুব ইয়াং ছিল ) ভেতরে নিয়ে পার্সোনালি জিজ্ঞেস করে এবং পরেও সে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে এখই কথা বললে মামলা খালাস হয়ে যায়। আমি তখন কোর্টের বাহিরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রিয়া যে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলছে তার কথা সেটা ভিডিও করেছিলাম।

পরে সেই ক্লিপ টা মোবাইলের মেমোরি কার্ড নষ্ট হয়ে যাওয়ায় হারিয়ে যায়। সেইদিনই দুপুরের পরে বাবা নিজেই আমাদের বাসায় নিয়ে যায় একসাথে ইফতারি করার জন্যে। এবং সেইদিনই আমাদের বাসায় মেনে নেয়। বাসায় গেলে বড় ভাবী আমাদের রিসিভ করেন। তখনও বড় ভাই আসেনি অফিস থেকে।

ভাইয়া যখন আসে তখন ভাবিকে শিখিয়ে দিলাম রুমে একলা থাকলে যেন আমাকে ডাক দেয় ইশারায়। আমিও সময় মত চলে যেয়ে পায়ে ধরে মাফ চেয়ে নিই। ব্যাস সব ঝামেলা শেষ আমার। !!!!!!!!!!!!!!!!!!!ওয়াও!!!!!!!!!!!!!!!!!! এভাবেই একসময় কিছু দিন পরেই নতুন চাকরি পেয়ে যাই। চলতে থাকে নিজের সংসার।

সময় চলে গেছে চার বছর। এখনো আল্লাহর রহমতে প্রিয়া আর আমি আছি একই ছাঁদের নিচে একই আত্মায়। মাগার শরীর দুইটা। :-D আর ওর ফ্যামিলির কথা এখানে উল্লেখ করিনি। এতোটুকুই বলে দেই যে,আমার জীবনে আমি ওর ফ্যামিলির গুটি কয়েকজনকে দেখেছি এবং কথা বলেছি।

তাও সামান্য কিছু সময়ের জন্যে। আমার শ্বশুর-শাশুড়ি,মামা-মামি,খালা-খালু,মেঝ মামা-মামি এদেরকেই শুধু। আর এখনো আমার কপালে জোটেনি শ্বশুরবাড়ির আদর। দোষ আমারই ১০০%। এতে কোন ভুল নাই।

এই ইতিহাস বললে ভাই আমি মারা যামু লিখতে লিখতে। তাই মারা যাইতে চাইনা। তাই লিখলাম ও না। সেখানেও অনেক সাহসের ব্যাপার আছে। আসলে সাহস তো না।

আমি যে বেয়াদব তার প্রমান আছে। বিয়ের আগে আমার মেজাজ আর কাজ কর্ম ছিল এখনের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং বিপদজনক। সবকিছু এই নারীই(আমার অর্ধাঙ্গিনী) চেঞ্জ করে দিয়েছে। যা আমি আর ভাষায় প্রকাশ করতে পারছিনা সবাইকে ধন্যবাদ আমার বক বক কষ্ট করে পড়ার জন্যে। সবাই ভালো থাকবেন।

এই লেখাটির প্রথম প্রকাশ আমার ফেসবুক দেওয়ালেই :-D দেখতে হলে এখানে ক্লিক করুন  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।