আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাহাবীদের সামনে স্বর্গীয় দূত মহান জিবরাঈল (আ) এর আত্মপ্রকাশ

বলুনঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল। [১৭:৮১-পবিত্র কুরআন] আমরা তো সবাই জানি যে, স্বর্গীয় দূত জিবরাঈল (আ) রাসূলুল্লাহ্ (সা) -র কাছে ওহী নিয়ে আসতেন, কখনোবা স্বরূপে, কখনোবা মানবাকৃতিতে। কিন্তু আমরা কি এই ঘটনা জানি যে, জিবরাঈল (আ) সাহাবীদের সামনেও আত্মপ্রকাশিত হয়েছিলেন। একজন নয়, একাধিক সাহাবীর সামনে।

আর এ ঘটনাটা বর্ণনা করেছেন সাহাবী আবু হুরায়রা (রা) এবং ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা স্বয়ং ওমর (রা)। খলিফা ওমর (রা) -এর বর্ণনামতে, একদিন ওমর (রা) সহ আরো কয়েকজন সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সা) -র সাহায্যে নিয়োজিত ছিলেন। এমন সময় একজন আগন্তুক তাদের কাছে এলেন। তার পরিধেয় পোশাকটি ছিল ধবধবে সাদা, মাথার চুল ছিল কুচকুচে কালো। তার মধ্যে ভ্রমণজনিত কোন ক্লান্তির ছাপ ছিল না।

সাহাবীদের কাছেও তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ অপরিচিত একজন ব্যক্তি। সেই অপরিচিত ব্যক্তিটি নিজের দুই হাঁটু রাসূলুল্লাহ (সা) -র দুই হাঁটুর সাথে লাগিয়ে বসে পড়লেন আর নিজের দুই হাত রাসূলুল্লাহ (সা) -র দুই উরুর উপর রাখলেন। তারপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে মুহাম্মাদ (সা) আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলুন। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, ইসলাম হলো তুমি এ কথার সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহ্ -র রাসূল। সালাত প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত প্রদান করবে, রামাদান মাসে রোযা রাখবে এবং বায়তুল্লাহ্ পৌছার সামর্থ্য থাকলে হজ্জ্ব পালন করবে।

আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। আগন্তুকের কথা শুনে সাহাবীরা বিস্মিত হলেন, কে এই অপরিচিত লোক? যে রাসূলুল্লাহ্ -কে প্রশ্ন করছে আবার তা সত্যায়িতও করছে। আগন্তুক আবারো প্রশ্ন করলেন, হে মুহাম্মাদ (সা) আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, ঈমান হলো আল্লাহ্ -র প্রতি, তার ফেরেশতাদের প্রতি, তার অবতীর্ণ ঐশী গ্রন্হগুলোর প্রতি, তার রাসূলগণের প্রতি, পরকালের প্রতি এবং তাকদীরের ভালো মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। আগন্তুক আবারো বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন।

এরপর সেই আগন্তুক আরেকটি প্রশ্ন করলেন, আমাকে ইহ্সান সম্পর্কে বলুন। রাসূল (সা) বললেন, ইহসান হলো, এমনভাবে ইবাদতে মনোনিবেশ করা, যেন মনে হয়, তুমি আল্লাহ্ -কে দেখছো। যদি তুমি তাকে নাও দেখো, তাহলে ভাববে তিনি তো তোমাকে দেখছেন। আগন্তুক আবারো বললেন, আমাকে কেয়ামত সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ (সা) নিজের অপারগতা প্রকাশ করে বললেন, এ বিষয়ে প্রশ্নকারীর চেয়ে যাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে তিনি অধিক অবহিত নন।

তখন আগন্তুক বললেন, আমাকে এর কিছু নিদর্শন সম্পর্কে বলুন। উত্তরে রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, যখন দাসী তার মনিবের জননী হবে, যখন দেখতে পাবে, নগ্নপদ, বিবস্ত্রদেহ, দরিদ্র মেষপালকেরা গর্বের সাথে বিরাট বিরাট অট্টালিকা তৈরীর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। ওমর (রা) -এর বর্ণনামতে এরপরেই আগন্তুক চলে গেলেন। কোন কোন উৎসমতে রাসূলুল্লাহ্ সাহাবীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন সেই আগন্তুককে পুনরায় ডেকে আনার জন্য, কিন্তু সাহাবীরা সেই আগন্তুককে আর খুজে পেলেন না। যা হোক, আগন্তুক চলে যাবার পর, ওমর (রা) সহ অন্যান্য সাহাবীরা বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন।

রাসূল (সা) উনাকে বললেন, হে ওমর! তুমি জানো এই প্রশ্নকারী কে? ওমর (রা) বললেন, আল্লাহ্ ও তার রাসূলই ভালো জানেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, তিনি জিবরাঈল। তিনি এসেছিলেন তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দিতে। উপরোক্ত ঘটনাটি একটি ঐতিহাসিক হাদীস যা হাদীসে জিবরাঈল নামে অধিক পরিচিত। হাদীসটি বিশুদ্ধ।

এই একটি হাদীসই যেন ইসলামের সারাংশ, মুহাম্মাদ (সা) -এর কথা ও কাজের উপর লিপিবদ্ধ হাদীসগুলোর মধ্যে অন্যতম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটি মুসলিম শরীফের ১ম বই কিতাবুল ঈমানের ১ম হাদীস। মুসলিম শরীফ শুরুই হয়েছে এই হাদীসটি দিয়ে। এ হাদীসটি বুখারী শরীফেও রয়েছে। তথ্যসূত্রঃ Sahih Muslim, The Book of Faith (Kitab Al-Iman) Sahih al-Bukhari, Belief, Volume 1, Book 2, Number 48 Hadith of Gabriel ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।