আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গবেষণা করতে টাকা লাগে- কিন্তু গবেষণা না করলে আরো বেশী টাকা লাগে

আমি আমাকে জানার চেষ্টা করছি। বিশ্বে গবেষকগণ তাদের বহু পরিক্ষণে লব্ধ আবিস্কার শেয়ার, আবিস্কার সম্পর্কে অন্য এক্সপার্টগণের মতামত গ্রহন এবং এক-ই ক্ষেত্রে অতিসাম্প্রতিক উন্নয়ন জানার জন্য প্রায়শঃ সম্মেলনে উপস্থিত হন। আবিস্কার শেয়ার করেন কেননা এতে ওই ক্ষেত্রে গবেষণারত অথবা শিল্পে-কর্মরত (শিল্পপতি অথবা উর্ধ্বতন কর্মকর্তা) সবাই তার আবিস্কার সম্পর্কে জানবেন। আবিস্কার সম্পর্কে অন্য এক্সপার্টগণের মতামত গ্রহন করতে হয়, কেননা গবেষণাকে শিল্পেরূপ দিতে গেলে এর পুংখানুপুংখ ভাবে শুদ্ধ হওয়া চাই। গবেষণায় পরিপক্কতা অর্জনের জন্য অন্য এক্সপার্টগণের মতামতের বিকল্প নেই।

অতিসাম্প্রতিক উন্নয়ন জানা জরুরী, তা না হলে হয়তো একবার আবিস্কার হওয়া মতবাদ আবার আবিস্কারের পিছনে ছুটে মুল্যবান সময় অপচয়ের সম্ভাবনা অনেক বেশী। বস্ততঃ একটি ভালো মানের আন্ত্রর্জতিক সম্মেলনে উপস্থিত হতে গেলে একটা নতুন এবং পুর্নাঙ্গ গবেষণা থাকা চাই, যার বিভিন্ন আঙ্গিকে পরিক্ষা-নিরিক্ষা শেষ হয়েছে। আন্তর্জাতিক গবেষকগণ তাদের শিল্প এবং সরকারের সহযোগিতায় বিপুল পরিমানে অর্থ ব্যয় করছে। এটা বড় ধরণের একটা বিনিয়োগও বটে। শিল্পে কোন একটি আবিস্কার ব্যবহার করতে হলে বিপুল অংকের অর্থ দিয়ে তা কিনতে হয়।

বাংলাদেশের শিল্পও এই নিয়মের বাইরে নয়। গবেষণা করতে টাকা লাগে- পরীক্ষা-নিরিক্ষার জন্য এবং সম্মেলনের জন্য। কিন্তু গবেষণা না করলে আরো বেশী টাকা দিয়ে বাইরে থেকে প্যাটেন্ট কিনে শিল্পে ব্যবহার করতে হয়। কাজেই আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে আমরা একটা চক্রের মধ্যে ঘুরতে থাকি। টাকা নেই।

গবেষণা নেই। কাজেই প্যাটেন্ট নেই। কিন্তু শিল্পে ব্যবহারের জন্য অনেক অর্থ ব্যয় করে প্যাটেন্ট কিনতে হয়। আপনারা হয়তো পড়ে থাকবেন যে, আমার একটা গবেষণা পত্র হংকং বেস্ট পেপার হিসেবে নমিনেটেড হওয়ার পরও আমি টাকার অভাবে সেখানে যেতে পারি নাই। এটা একটা দৈনিকে সমসাময়িক সময়ে ছাপা হয়েছিলো।

আমি যেতে পারি নাই, কেননা একেকটা আন্তর্জাতিক সম্মেলনের রেজিস্ট্রেশন বাবদ খরচও নেহায়েত কম না। প্রায় ৩৫ হাজার টাকা বা তারও বেশী। আবার সেখানে যাওয়া, থাকা-খাওয়া। অনেক অর্থ দরকার। আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে এত টাকা কোথায় পাবো? তাহলে কি আমরা গবেষণা ছেড়ে দেবো? সেক্ষেত্রে আরো বেশী টাকা দিয়ে বাইরে থেকে প্যাটেন্ট কিনে শিল্পে ব্যবহার করতে হবে।

তাহলে উপায়? উপায় আছে বৈকি। আমরা গবেষণা ব্যয়টা সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে পারি। কিভাবে আমরা এই গবেষণা ব্যয় কমিয়ে আনতে পারি? একবার আবিস্কার হওয়া মতবাদ আবার আবিস্কারের পিছনে ছুটে মুল্যবান সময় এবং অর্থ অপচয় না করা। কিন্তু কেমন করে জানবো যে, যা নিয়ে আমি চিন্তা করছি তা আগেই আবিস্কৃত হয়েছে কিনা? আমি আগেই বলেছি, অতিসাম্প্রতিক উন্নয়ন জানা যায় সম্মেলনের মাধ্যমে। আর পুরাতন গবেষণা উন্নয়ন জানা যাবে গবেষণা পত্র পড়ে।

এখানেও অর্থলগ্নি ঘটে। কিন্তু যে পড়েছে তার কাছ থেকে মতামত নিলে অর্থলগ্নিটা কমে আসে। তার জন্যও দরকার সম্মেলন। কিন্তু সম্মেলনে যেতে অনেক অর্থ ব্যয় হয়। কিন্তু যদি আমরা দেশের মধ্যেই নতুন এবং পুরাতন গবেষকগণকে নিয়ে নিয়মিত সম্মেলন করি তাহলে ব্যয়টা কমে আসে বহুভাগে।

রেজিস্ট্রেশন, থাকা-খাওয়া সবই কম খরচে হয়ে যেতে পারে। উপরোন্ত আমরা যা অতিরিক্ত অর্জন করি তাহলোঃ ধীরে ধীরে গবেষণা ভিত্তিক কমিউনিটি তৈরি হয়। যেমনঃ একজন হয়তো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করছে। আমিও তাই। কাজেই আমি যদি তাকে জানতে পারি, তাহলে সহজেই তার সাথে আলোচনা করতে পারি।

এবং পারস্পরিক সহযোগিতার (কোলাবোরেশন) মাধ্যমে উন্নততর ফলাফল অর্জন করা সম্ভব হয়। কেমন হওয়া উচিত দেশের মধ্যেকার এই সম্মেলন? আমি আগেই বলেছি যে, একটি ভালো মানের আন্ত্রর্জতিক সম্মেলনে উপস্থিত হতে গেলে একটা নতুন এবং পুর্নাঙ্গ গবেষণা থাকা চাই, যার বিভিন্ন আঙ্গিকে পরিক্ষা-নিরিক্ষা শেষ হয়েছে। বিষয়টা একটু খোলাসা করা যাক। নতুন গবেষণা করার জন্য পুর্ববর্তী যাবতীয় উন্নয়ন সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা জরুরী। কিন্তু আমার যেখানে অর্থ নেই সেখানে আমি কেমন করে নতুন গবেষণার ধারণা পাবো।

আর নতুন ধারণা না পেলে গবেষণাপত্র গৃহীত হবে না। আবার নতুন ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করলাম, কিন্তু পরীক্ষা-নিরিক্ষার রূপরেখা পেলাম না। তাহলেও গবেষণাপত্র গৃহীত হবে না। ভাষাগত দুর্বলতার কারণেও তা অনেক এক্সপার্টগণের কাছে বিরক্তিকর মনে হতে পারে এবং গবেষণাপত্র গৃহীত হবে না। তাহলে শুধুমাত্র গৃহীত/নিগৃহিত দিয়ে আমাদের সামগ্রিক সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।

প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে একঝাক উচ্চশিক্ষিত সম্ভাবনাময় তরুণ-গবেষক বের হন। সুযোগ এবং সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে অনেকেই তার সৃজনশীলতাকে হারিয়ে বসেন। আমি মনে করি না যে, অর্থসঙ্কটের জন্য তাদের সৃজনশীলতা নষ্ট হওয়া উচিত, আমি মনে করি না যে, কোন গবেষণাপত্র ভালোমানের আন্ত্রর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত না হলেই তা নতুন ধারণা নয়। কাজেই, আমাদের এমন একটা সম্মেলন থাকা এখন সময়ের দাবি যেখানে তরুণ প্রজন্ম, বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ গবেষকগণ তাদের প্রতিষ্ঠানের সম্মানিত এক্সপার্টদের মূল্যবান মতামত সহ নাতিদীর্ঘ গবেষণাপত্র পাঠাবে এবং গৃহীত/নিগৃহিত নয় বরং প্রত্যেকে (যদি প্রতিষ্ঠানের সম্মানিত এক্সপার্টদের মতামত থাকে) সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে তাদের ধারণা উপস্থাপন করবে এবং এক্সপার্টগণের মূল্যবান মতামত নিয়ে তাদের গবেষণাকে এগিয়ে নেবেন। ফলস্রুতিতে তার গবেষণা পরিপক্কতা অর্জন করবে এবং আমাদের নিজস্ব প্যাটেন্ট বাড়তে থাকবে।

জাতীয়ভাবে আমাদের উন্নতি ত্বরান্বিত হবে। এই জাতীয় সম্মেলন উন্নত দেশে প্রায় সারাবছর-ই লেগে থাকে। এটা তরুণদের জন্য একটা গবেষণা প্রশিক্ষনও বটে। ইতোমধ্যে ফেসবুকে এই সঙ্কান্ত একটি পেজ খুলা হয়েছে। সম্মানিত পাঠক, আপনাদের মুল্যবান সুচিন্তিত মতামত একটি পরিকল্পিত সম্মেলনের যাত্রার সহায়ক হবে।

আপনারা এখানে অথবা নিম্নের ফেসবুক পেজ-এ গিয়ে আপনার মতামত ব্যক্ত করতে পারেন। https://www.facebook.com/DomesticConferences.bd ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.